নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের লেখা উপন্যাস ‘সুলতানার স্বপ্ন’ আশা বাঁচিয়ে রাখে, স্বপ্ন দেখার শক্তি জোগায়। নারীবাদী চিন্তার সাংস্কৃতিক সংযোগে এই উপন্যাসের বৈশ্বিক গুরুত্বও রয়েছে। যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক লিন্ডসে ক্যাথেরিন হোরনার সুলতানার স্বপ্ন সম্পর্কে এভাবেই নিজের ভাবনা তুলে ধরেন।

আজ শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আয়োজিত এক বিশেষ বক্তৃতায় লিন্ডসে হোরনার এসব কথা বলেন। সুলতানার স্বপ্ন (সুলতানা’স ড্রিম) উপন্যাসটি জাতিসংঘের শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর স্বীকৃতি লাভ করায় উদ্‌যাপনের অংশ হিসেবে এ আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

লিন্ডসে হোরনার সুলতানার স্বপ্ন উপন্যাসকে বিভিন্ন আঙ্গিকে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, পরিবর্তন যে সম্ভব, তা বিশ্বাস করতে সহায়তা করে এই উপন্যাস।

লিন্ডসে হোরনার এ উপন্যাসটি দেখেছেন শরণার্থী সুরক্ষা, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং মৃত্যুদণ্ডবিরোধিতা ও পুনর্বাসনব্যবস্থার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়ার সময়কার ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনামলে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার মানবিক দিকও ছিল সুলতানার স্বপ্নে।

ধর্মীয় সহনশীলতার প্রসঙ্গ টানতে গিয়ে সুলতানার স্বপ্ন উপন্যাসের একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরেন এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ধর্ম, জাতি নির্বিশেষে সবার প্রতি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সম্মান প্রদর্শনের ওপর জোর দিয়েছেন বেগম রোকেয়া।

লিন্ডসে হোরনার বলেন, নারীবাদী চিন্তার সাংস্কৃতিক সংযোগেও ভূমিকা রয়েছে সুলতানার স্বপ্ন উপন্যাসের। এর বৈশ্বিক গুরুত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, এটা পশ্চিমা শিল্প-সভ্যতার মূল্যবোধকে নিয়ে চিন্তা করতে শেখায়। পাশাপাশি সহযোগিতামূলক ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের পক্ষে কথা বলে। আগামীর বিশ্ব কেমন হবে, সে সম্পর্কে ব্যক্তিগত চিন্তা-ভাবনাকে উৎসাহিত করে।

নারী অধিকার নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রসঙ্গ টেনে এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, উচ্চশিক্ষা, বেতন ও প্রযুক্তিতে সেখানে এখনো লিঙ্গবৈষম্য রয়েছে। এ ছাড়া পারিবারিক সহিংসতা ও নিরাপত্তার মতো বিষয়ও রয়েছে। তিনি বলেন, যদিও সুলতানার স্বপ্ন অনেক আগে লেখা। তবে এতে উপনিবেশবিরোধী, বর্ণবৈষম্যবিরোধী ও শিক্ষাবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গির বর্তমান যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্তিমূলক নারীবাদের মিল পাওয়া যায়।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হকের মাধ্যমে লিন্ডসে হোরনার সুলতানার স্বপ্ন উপন্যাসটি পান। তাঁর আফসোস এটা কেন আরও আগে পড়তে পারেননি তিনি। বেগম রোকেয়ার লেখার রসবোধেরও প্রশংসা করেন যুক্তরাজ্যের এই শিক্ষক।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, সুলতানার স্বপ্ন উপন্যাসটি এক শক্তিশালী গল্প। নারীর দৃষ্টিভঙ্গির নানা দিক এই বইটিতে উঠে এসেছে। এর নিজস্ব এক শক্তি রয়েছে।

মফিদুল হক উপন্যাসটির ইউনেসকোর স্বীকৃতি পাওয়ার প্রক্রিয়াটি তুলে ধরেন। পাঠ্যক্রমের বিভিন্ন স্তরে রোকেয়া চিন্তাভাবনা তুলে ধরার কথা জানান। বাংলাদেশের বাস্তবতায় বেগম রোকেয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটাও তুলে ধরেন তিনি।

আরও পড়ুনইউনেসকোর তালিকায় রোকেয়ার সুলতানা’স ড্রিম১২ মে ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ক ত য দ ধ জ দ ঘর ব গম র ক য় হ রন র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাস্থ্য ও জলবায়ু নীতিতে তরুণদের সংযুক্তিতে ‘ইয়ুথ ক্যাটালিস্ট’ প্রকল্প উদ্বোধন

জাতীয় পর্যায়ে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার এবং জলবায়ু সহনশীলতা সংশ্লিষ্ট নীতিতে তরুণ জনগোষ্ঠীর মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষে শুরু হয়েছে ‘ইয়ুথ ক্যাটালিস্ট প্রজেক্ট’। এটি একটি যুব-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ। গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। 

ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের এই প্রকল্পটি সুইডিশ উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা সিডা’র অর্থায়নে এবং সিরাক-বাংলাদেশ এর নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পটি বিশেষভাবে প্রান্তিক ও জলবায়ু-সংবেদনশীল তরুণ জনগোষ্ঠীর প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ও জলবায়ু সহনশীলতা সংশ্লিষ্ট জাতীয় নীতিমালায় পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কাজ করবে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, গবেষক, এবং উন্নয়ন সহযোগীরা অংশ নেন। 

বক্তব্যে ডা. বারী- স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জলবায়ু ও সামগ্রিক সামাজিক উন্নয়নের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে যুব-কেন্দ্রিক ও আন্তঃখাত নীতিগত সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি সংস্কারের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এখনই সময়, তরুণদের সক্রিয়ভাবে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার। তাদের কণ্ঠ, চাহিদা ও স্বপ্নকে নীতিমালার কেন্দ্রে রাখতে হবে। কারণ যুবশক্তিকে ক্ষমতায়ন মানেই ইতিবাচক পরিবর্তনের পথ তৈরি।’

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফী আহমেদ বাল্য বিবাহ ও কিশোরী গর্ভধারণের সমস্যা সমাধানে জরুরি পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, সকল শ্রেণি ও জনগোষ্ঠীর তরুণদের কাছে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সঠিক ও সহজলভ্য তথ্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের চিফ অব হেলথ ড. ভিভাবেন্দ্র সিং রঘুবংশী প্রকল্পটির সূচনা প্রক্রিয়ার বিবরণ দেন এবং সরকারের সক্রিয় সম্পৃক্ততা ও সিডা-র দৃঢ় অংশীদারিত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, বিভাগীয়, জেলা এবং জাতীয় পর্যায়ে পরামর্শমূলক সভার মাধ্যমে একটি জাতীয় যুব পজিশন পেপার তৈরি করা হবে।

সুইডেন দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি ফেলিক্স হেলগেসন বলেন, এসআরএইচআর এবং জলবায়ু ন্যায়বিচার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো এগিয়ে নিতে যুব নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ, এবং এই প্রকল্পের লক্ষ্য সুইডেনের পররাষ্ট্র নীতি ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক যুব আন্দোলনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. হালিদা হানুম আখতার, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়-সিসিএইচপিইউ এর প্রফেসর ড. ইকবাল কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. সুলতান আহম্মেদ। 

সভায় সিরাক-বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত প্রকল্পের রোডম্যাপ উপস্থাপন করেন এবং তৃণমূলের যুব কণ্ঠস্বর ও জাতীয় অঙ্গীকারসমূহের মধ্যে শক্তিশালী সেতুবন্ধন তৈরির বিষয়ে এ প্রকল্পটি কাজ করবে বলে জানান।

ইউএনএফপিএ-র এসআএইচআর বিশেষজ্ঞ ডা. এএসএম হাসান বলেন, ‘নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় যুব অংশগ্রহণ আর ঐচ্ছিক নয়; বরং এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভবিষ্যত-নির্ভর স্বাস্থ্য ও জলবায়ু অভিযোজন প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য।’

এসময় অন্যান্য বক্তারা যুব-সংশ্লিষ্ট, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তরুণদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ হেলথ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক' এবং 'ইয়ুথ কোয়ালিশন ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’ নামে দুটি জাতীয় যুব অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন করা হয়। এই দুটি প্ল্যাটফর্ম তরুণদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা এবং নেতৃত্বকে আরও সুসংগঠিত ও প্রভাব বিস্তারকারী করে তুলবে। বিশেষ করে, জাতীয় জনসংখ্যা নীতি, পরিবার পরিকল্পনা কৌশল পরিকল্পনা (২০২৪-২০৩০), জাতীয় কিশোর স্বাস্থ্য কৌশল (২০১৭-২০৩০), এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (২০২৩-২০৫০)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালায় যুবদের অবদানকে দ্রুততর ও কার্যকর করতে এই প্ল্যাটফর্মগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সিনিয়র সহকারী সচিব সাইনী আজিজ-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উন্মুক্ত সংলাপ-এ সারা দেশে থেকে আসা যুব প্রতিনিধিরা নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তুলে ধরেন। যেমন পোশাক খাতে মাসিক স্বাস্থ্যসুরক্ষা, দুর্যোগকালে সেবা বিঘ্নতা, প্রতিবন্ধী যুবদের প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তি, ও আশ্রয়কেন্দ্রে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা ইত্যাদি। এই আলোচনার ফলাফলসমূহ জাতীয়, যুব-নেতৃত্বাধীন একটি পজিশন পেপার তৈরিতে প্রতিফলিত হবে, যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও জলবায়ু সহনশীলতা নীতিতে যুব-নীতি সংলাপের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্বাস্থ্য ও জলবায়ু নীতিতে তরুণদের সংযুক্তিতে ‘ইয়ুথ ক্যাটালিস্ট’ প্রকল্প উদ্বোধন