Samakal:
2025-07-12@11:42:07 GMT

এশিয়ায় হতাশা, জয়-পরাজয় কার

Published: 12th, July 2025 GMT

এশিয়ায় হতাশা, জয়-পরাজয় কার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে এশিয়ার নেতারা হতাশায় পড়েছেন। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ মার্কিন মিত্র দেশগুলোর মধ্যে ক্ষোভ দেখা গেছে। জাপান সংকট এড়াতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। টোকিওর জন্য ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত কঠিন হয়ে উঠেছে। জাপানি গাড়ি নির্মাতারা ছাড় চাইছেন। এই অবস্থায় এশিয়ার শুল্ক কর্মকর্তারা নিরলস আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা ইতোমধ্যে ট্রাম্পের পদক্ষেপে বিরক্ত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শুল্কের কারণে এশিয়ায় চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। অঞ্চলটি এখন দুই পরাশক্তির বাণিজ্যিক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় শুল্ক পদক্ষেপ বাস্তবায়নে মরিয়া ওয়াশিংটন। প্রশ্ন উঠেছে, জয়-পরাজয় আসলে কার? শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব বিশ্লেষণ উঠে এসেছে।

এশিয়ায় চীন-যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দিক দিয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লিপ্ত বছরের পর বছর। ট্রাম্প সম্প্রতি এশিয়ার ১৪ দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন। এই অঞ্চলে শুল্কনীতি বাস্তবায়ন চায় ওয়াশিংটন। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, শুল্ক নিয়ে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি জটিল হতে পারে। এমনকি ট্রাম্প আবারও সময়সীমা বাড়িয়ে শুল্ক পদক্ষেপ বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের অর্থনীতির অধ্যাপক ডেভিড জ্যাকস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দর-কষাকষির অবস্থানে দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। কারণ তারা যতটা চায়, ততটা হয়তো পাবে না। এই অবস্থায় শুল্ককেন্দ্রিক চুক্তিগুলো সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন, তার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হতে পারে।

ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের প্রভাষক অ্যালেক্স ক্যাপ্রি মনে করেন, কূটনৈতিক চ্যানেলের পরিবর্তে অনলাইনে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি ট্রাম্পের জন্য বুমেরাং হতে পারে। এটি মূলত ‘রাজনৈতিক নাটক’। এ বিষয়গুলো চীনের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে। তা ছাড়া ভিয়েতনাম থেকে জাপান পর্যন্ত অঞ্চলে চীনকে টেক্কা দিয়ে মার্কিন বাজার প্রতিস্থাপন করা সহজ হবে না। এই অবস্থায় এশিয়ার বাণিজ্যযু্দ্ধে কে জিতবে তা বলা কঠিন। 

জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ট্রাম্পের সর্বশেষ শুল্ক হুমকিকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। দেশটির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। গত এপ্রিলে ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির পর থেকে জাপানের শুল্ক কর্মকর্তা কমপক্ষে সাতবার ওয়াশিংটন সফর করেছেন। আলোচনা দীর্ঘায়িত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টোকিওর জন্য ট্রাম্পের পদক্ষেপ কঠিন থেকে কষ্টকর হয়ে উঠছে। 

এরই মধ্যে গতকাল শুক্রবার ট্রাম্প কানাডার ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যারা চিঠি পায়নি, তাদেরও ২০ বা ১৫ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। আগামী ১ আগস্ট চূড়ান্ত সময়সীমা দিয়েছেন ট্রাম্প। এই সময়ের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্তে আসতে হবে দেশগুলোকে। ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাংকের গবেষণাপ্রধান সুয়ান টেক কিন বলেন, আশাব্যঞ্জক বিষয় হলো, ওই সময়সীমার আগে আরও আলোচনায় অংশ নেওয়ার চাপ রয়েছে। 
অর্থনীতিবিদরা বিবিসিকে বলেন, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার মতো ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশগুলো সংকটের সমাধান খুঁজতে বিশেষভাবে আগ্রহী হবে। 

অ্যালেক্স ক্যাপ্রি মনে করেন, সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর নজর রাখার জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন হবে। এটি একটি ধীর, দীর্ঘমেয়াদি এবং বিকশিত প্রক্রিয়া; এতে তৃতীয় পক্ষ, প্রযুক্তি কোম্পানি কিংবা লজিস্টিক অংশীদার যুক্ত থাকবে। ফলে শুল্ক বিশ্ববাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তুলতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং চীনের কোম্পানিগুলো বিশ্বব্যাপী ব্যবসার ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে পড়তে পারে। 

এদিকে এশিয়ার মধ্যে ভিয়েতনাম প্রথম চুক্তিতে পৌঁছেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে দেশটির খুব কম সুবিধা রয়েছে এবং এখন তারা ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের মুখোমুখি হচ্ছে। কম্বোডিয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। দরিদ্র দেশ হিসেবে দেশটি রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল। ট্রাম্প ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।   
অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান হয়তো দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে পারবে। কারণ দেশগুলো ধনী এবং শক্তিশালী ভূরাজনৈতিক সুবিধা রয়েছে। ভারতেরও নিজস্ব সুবিধা রয়েছে, তাদের এখনও চিঠি দেওয়া হয়নি।  

অর্থনীতিবিদ জেসপার কোল বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও জাপানকে এশিয়ার অন্য বাণিজ্য অংশীদারের মতোই বিবেচনা করা হচ্ছে। ট্রাম্পের শুল্ক তাদের সম্পর্ক বদলে দিতে পারে। তিনি মনে করেন, জাপান সহজে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড় দেবে না। কারণ দেশটির রয়েছে বিশাল আর্থিক রিজার্ভ। দীর্ঘ সময়ের জন্য ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে খেলতে প্রস্তুত টোকিও।  

শুল্ক নিয়ে ট্রাম্পের পদক্ষেপের কঠোর সমালোচক হয়ে ওঠা জাপানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পও এখন বিরক্ত। কারণ চালের ঘাটতির কারণে দাম বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও জাপানি প্রধানমন্ত্রী ইশিবা মার্কিন চাল কিনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি দেশের কৃষকদের রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির জন্য মার্কিন দাবির কাছে তাঁর সরকার নতি স্বীকার করতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র এই অবস থ য় শ ল ক আর প পদক ষ প র জন য র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

তিন কারণে পণ্য রপ্তানিতে আগের মতোই প্রণোদনা পাবেন ব্যবসায়ীরা

চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ৪৩ খাতে রপ্তানি প্রণোদনা ও নগদ সহায়তা আগের মতোই বহাল রেখেছে সরকার। জাহাজীকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে রপ্তানি প্রণোদনা এবং নগদ সহায়তার হার পণ্যভেদে দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, তিন কারণে রপ্তানি খাতে আর্থিক প্রণোদনা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহারের সময়সীমা আরও পাঁচ মাস পিছিয়ে দিয়েছে সরকার। আগামী বছরের (২০২৬) জুলাই থেকে এটি কার্যকর করার কথা ছিল। এখন তা পিছিয়ে আগামী বছরের নভেম্বর মাস নির্ধারণ করা হয়েছে।

সূত্রটি জানায়, যে কারণে এই সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অধিক হারে শুল্কারোপ, স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে ভারতের বিধিনিষেধ এবং গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিল্প খাতে অস্থিরতা। বিগত সাত অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি খাতে প্রণোদনা দেওয়ার পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এই আর্থিক প্রণোদনার সিংহভাগ (৮০ ভাগের বেশি) পেয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার গত বছরের দুই দফায় রপ্তানি প্রণোদনা কমায়। তখন বলা হয়, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হবে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধান অনুসারে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর কোনো ধরনের রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দেওয়া যায় না। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর একবারে সহায়তা প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই ধাপে ধাপে সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

কোন খাতে কত প্রণোদনা

নগদ সহায়তার সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত। দেশি সুতা ব্যবহার করে উৎপাদিত তৈরি পোশাক নতুন বাজারে রপ্তানি করলে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ৯ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে; যা গত বছরের জুনের আগে ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ।
বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা ১০ শতাংশ এবং ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদারে ৬ শতাংশ প্রণোদনা মিলবে। এ ছাড়া প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ মিলবে।

কয়েক বছর ধরেই পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমছে। তারপরও বৈচিত্র্যময় পাটপণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা বহাল থাকবে। এ ছাড়া পাটজাত পণ্যে ৫ শতাংশ এবং পাট সুতায় প্রণোদনা মিলবে ৩ শতাংশ। একইভাবে হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ১০ শতাংশ, ওষুধের কাঁচামালে ৫ শতাংশ, বাইসাইকেল রপ্তানিতে ৩ শতাংশ এবং আসবাব পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা থাকবে ৮ শতাংশ। এ ছাড়া হিমায়িত চিংড়ি, মোটরসাইকেল, ইলেকট্রনিকস, পেট বোতল ফ্লেক্স, জাহাজ, প্লাস্টিক পণ্য, হাতে তৈরি পণ্য যেমন হোগলা, খড়, আখ বা নারিকেলের ছোবড়া, তৈরি পোশাক কারখানার ঝুট, গরু, মহিষের নাড়ি, ভুঁড়ি, শিং ও রগ, কাঁকড়া, কুঁচে, আগর, আঁতর ইত্যাদি পণ্য রপ্তানিতেও নগদ সহায়তা আগের মতো থাকবে।

জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানিতে নগদ সহায়তার অর্থ পেতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয় ব্যবসায়ীদের। এটি কমিয়ে আনতে প্রবাসী আয়ের বিপরীতে যেভাবে প্রণোদনা দেয়, সেভাবে রপ্তানিকারকদেরও দিতে পারে সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভারত বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহ দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশে ঘটছে উল্টো। এদিকে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি খরচ বাড়লেও প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি কীভাবে মোকাবিলা করছে দেশগুলো, বাজারের কী প্রতিক্রিয়া
  • ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম ও মহানবী (সা.)-কে কটূক্তির অভিযোগ, চুয়েট শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার
  • তিন কারণে পণ্য রপ্তানিতে আগের মতোই প্রণোদনা পাবেন ব্যবসায়ীরা
  • এত কিছুর পরও নির্বাচন নিয়ে ফেব্রুয়ারি-এপ্রিলের দোলাচল কেন
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের পরীক্ষা স্থগিত