লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪১ কোটি টাকা বেশি নিট মুনাফা
Published: 12th, July 2025 GMT
দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল। জাহাজ আসা, কার্গো হ্যান্ডলিং, রাজস্ব আয়, নিট মুনাফাসহ সব ক্ষেত্রেই সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে বন্দরটি। ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যবস্থাপনায় উন্নতি আসায় এ সফলতা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দরে জাহাজ আসার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০টি। অর্থবছরটিতে বন্দরে ৮৩০টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আসার মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।
গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ দশমিক ৮০ লাখ টন। বন্দরে ১০৪.
গত অর্থবছরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার টিইইউজ, এ অর্থবছরে বন্দরে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪৫৬ টিইইউজ এবং ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে।
গত অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা বেশি। এ ছাড়াও বন্দরের নিট মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। নিট মুনাফা হয়েছে ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা বা ২০৩ শতাংশ বেশি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেছেন, বন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বন্দরের স্টেকহোল্ডার, শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, স্টিভেডরসহ সব ধরনের বন্দর ব্যবসায়ীকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ায় সফলতার এই অর্জন। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ ব্যবসা উন্নয়ন স্থায়ী কমিটি গঠন করার ফলে জাহাজ আসা বেড়েছে বলেও জানান তিনি।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আরও বলেন, মোংলা বন্দরে এখন জাহাজ জট নেই। দ্রুত কনটেইনার খালাস হচ্ছে। গাড়ি আমদানিকারকদের জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে। পর্যাপ্ত কনটেইনার রাখার জন্য সাতটি টি কনটেইনার ইয়ার্ড রয়েছে। টাগবোট, পাইলট বোট, মুরিং বোট, পাইলট ডেসপাস বোট, সার্ভে বোট, ড্রেজার ইউনিট ইত্যাদিসহ বন্দরে ৩৮টি সহায়ক জলযান রয়েছে। এ ছাড়া বন্দরের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইএসপিএস কোড যথাযথ অনুসরণ করার পাশাপাশি বিদেশি জাহাজ আগমন ও নির্গমনের সময় নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল বিদ্যমান। এ ছাড়াও এ বন্দর থেকে নিরাপদে কম খরচে সড়ক ও নৌপথে সহজে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পণ্য পরিবহনের সুবিধা রয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৪৪ কিলোমিটার বন্দর চ্যানেলে লাইটেড বয়া ও লাইট টাওয়ার স্থাপনের মাধ্যমে দিবারাত্রি নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নেভিগেশনাল সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে এবং বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের জন্য ৪৯টি পয়েন্টে বার্দিং সুবিধাও রয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মো. মাকরুজ্জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বন্দরের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে মোংলা বন্দর পরিদর্শন করে বন্দর উন্নয়ন ও মোংলা বন্দরের কার্যক্রম বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। এসব বিষয় মোংলা বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য বাড়ার পাশাপাশি গত অর্থবছরে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
বর্তমানে মোংলা বন্দর দিয়ে প্রধান আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে খাদ্যশস্য, সার, গাড়ি, এলপি গ্যাস, স্লাগ, লাইম স্টোন, সয়াবিন তেল, ভোজ্যতেল, জ্বালানি তেল, ফ্রেশ ফুড, সাধারণ পণ্য, জিপসাম, মেশিনারি যন্ত্রপাতি, কাঠের লগ, কয়লা, পাথর, ক্লিংকার, পাম অয়েল, ফ্লুড অয়েল, ফ্লাই অ্যাশ, আয়রন, অয়েল সিড, স্টিল পাইপ, চিটাগুড় ইত্যাদি।
মোংলা বন্দরের মাধ্যমে প্রধান রপ্তানি পণ্য হচ্ছে গার্মেন্টস পণ্য, পাট, পাটজাত পণ্য, চিংড়ি, সাদা মাছ, শুকনা মাছ, ক্লে, কাঁকড়া, মেশিনারি, কটনইয়ার্ন, হিমায়িত খাদ্য, সাধারণ পণ্য ইত্যাদি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ হ জ আস র জন য ব যবস দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৩ মাসে ১৬০ জন নিহত, বিএনপির কোন্দলেই ৮৫ জন
অন্তর্বর্তী সরকারের ১৩ মাসে (সেপ্টেম্বর ২০২৪—সেপ্টেম্বর ২০২৫) দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় অন্তত ১৬০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৮ হাজার ৫০ জন। শুধু বিএনপির অন্তঃকোন্দলে নিহত হয়েছেন ৮৫ জন। আহত হয়েছেন ৫ হাজার ১৭ জন।
আজ মঙ্গলবার হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের আগস্টে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলেও রাজনৈতিক সহিংসতা, মানবাধিকার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রত্যাশিত উন্নতি হয়নি। বরং নানা ধরনের সহিংসতা ও অপরাধের ঘটনায় জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
সহিংসতার বিস্তারএইচআরএসএসের তথ্যমতে, গত ১৩ মাসে অন্তত ১ হাজার ৪৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধ, সমাবেশকেন্দ্রিক সংঘর্ষ, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও স্থাপনা দখল—এসব কারণেই অধিকাংশ সহিংসতা ঘটেছে।
বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর অন্তঃকোন্দলে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ঘটেছে। শুধু বিএনপির ভেতরেই ৫৩৯টি ঘটনায় দলটির ৮৫ নেতা-কর্মী নিহত ও ৫ হাজার ১৭ জন আহত হয়েছেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ২২১টি সংঘর্ষে ৩৪ জন নিহত হন। আহত হয়েছেন ১ হাজার ১৪১ জন। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে ৪০টি সহিংসতার ঘটনায় ২ জন নিহত হন।
আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে ১১টি সংঘর্ষের ঘটনায় ২ জন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে ২০টি ঘটনায় ১ জন এবং আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলে ২৪টি সংঘর্ষের ঘটনায় ১২ জন নিহত হন। বিএনপি ও এনসিপির মধ্যে ১৮টি সহিংসতার ঘটনায় আহত হন ১৪০ জন।
ছাত্ররাজনীতিতেও সহিংসতা কমেনি। ছাত্রদলের অন্তঃকোন্দলে ৩৮টি ঘটনায় ৩ জন নিহত ও ৩২০ জন আহত হয়েছেন। এ সময়ে সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের হাতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অন্তত ১৭১টি ঘটনায় ১২০ জন নিহত হয়েছেন। রাজনৈতিক কার্যালয়, বাড়িঘর, দোকানপাট ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে সাত হাজারের বেশি।
সহিংসতার উল্লেখযোগ্য ঘটনাপ্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৫ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর, সুধা সদন ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নেতাদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’–কেন্দ্রিক সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত ও শতাধিক আহত হন। ৯ জুলাই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে যুবদলের কর্মী মো. সোহাগকে নির্মমভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২৯ আগস্ট কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের সামনে গণ অধিকার পরিষদ ও জাতীয় পার্টির সংঘর্ষের ঘটনায় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। পরদিন সেখানে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ৪৬০টি ঘটনায় ৮২ জন, ২০২২ সালে ৭৫৮টি ঘটনায় ৯২ জন এবং ২০২৩ সালে ৯২১টি ঘটনায় ৯৬ জন নিহত হয়েছিলেন। আর গত ১৩ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ জনে।
এইচআরএসএসের দাবি, গুম ও ক্রসফায়ারের মতো ঘটনা না ঘটলেও রাজনৈতিক সহিংসতা, মব (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ আক্রমণ) সহিংসতা, গণপিটুনি, নারী নির্যাতন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, কারাগারে মৃত্যু, সভা-সমাবেশে বাধা—এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাটি মনে করে, আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধি করতে না পারলে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে।