‘মা মাটি কাটার কাজ করেন। ছোট ভাই রাজমিস্ত্রির জোগালে। আব্বুর মাথায় সমস্যা। পথে পথে ঘোরেন। আমি এক পায়ে লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটি। কষ্ট হয়, তারপরও হাঁটি। হেঁটেই কলেজে যাই, প্রাইভেট পড়াই। উপায় নেই। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কৃত্রিম পা কিনেছিলাম। নষ্ট হয়ে গেছে। আমার একটা পা আর চাকরি দরকার। চাকরি পেলে মাকে কাজ করতে দেব না।’

কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধোপাপাড়া গ্রামের সোনিয়া খাতুন। সোনিয়াদের কোনো জমি নেই। অন্যের জমিতে টিনের চালা করে বসবাস করেন। আগে নিজেদের বাড়ি ছিল। দুর্ঘটনার পর সেই বাড়িটি বিক্রি করে চিকিৎসা করা হয়েছে। অভাব অনটনের মধ্যেও চোখে তাঁর স্বপ্ন, সাহস আর আত্মবিশ্বাস।

সোনিয়া পুঠিয়ার ধোপাপাড়া বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, পুঠিয়া লস্করপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে (বিএম) এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে ধোপাপাড়া মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজে সম্মান (বিএ) দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। ইচ্ছে শিক্ষক হবেন। স্বপ্নের পথে বড় বাধা পা। এক লাখ টাকার অনুদান আর এনজিও থেকে ৭৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ২০২০ সালে একটি পা বানিয়েছিলেন। বেশিদিন টেকেনি।

২০০৩ সালে সোনিয়ার জন্ম। দুই বছর বয়সে মা আর চাচির সঙ্গে যাচ্ছিলেন নওগাঁয় ফুফুর বাড়িতে। সোনিয়া ছিলেন চাচি মমতাজ বেগমের কোলে। কিছুটা দূরে বড় বোন মর্জিনাকে নিয়ে আসছিলেন মা রহিমা বেগম। হঠাৎ পেছন থেকে একটি ট্রেন এসে চাপা দেয় মমতাজ বেগম ও সোনিয়াকে। ঘটনাস্থলেই মারা যান মমতাজ বেগম। কাটা পড়ে সোনিয়ার ডান পা ও হাতের কয়েকটি আঙুল।

এ দৃশ্য দেখে অচেতন হয়ে পড়েন মা রহিমা বেগম। সোনিয়াকে নেওয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মাকে অচেতন অবস্থায় নেওয়া হয় সদর হাসপাতালে। তাদের দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মানসিক ভারসাম্য হারান বাবা মজিবুর শেখ। এখন তিনি পথে পথে ঘুরে বেড়ান। পুরো পরিবারের দায়িত্ব রহিমা বেগমের কাঁধে। আট বছর আগে বিয়ে দিয়েছেন বড় মেয়ে মর্জিনা খাতুনের। সোনিয়ার পা না থাকলেও সে পড়াশোনা করছে।

রহিমা বেগম বলেন, ‘মানুষের বাড়ি কাজ করি। রাস্তার মাটি কাটি; যা পাই তা দিয়ে কষ্টে সংসার চলে। একদিন ছাওয়াল (সোনিয়া) বুললো মা, স্কুলে যাব। ফাইভ পাস করল। একদিন কলেজে ভর্তি হলো। আমারও জেদ চাপলো– ওকে এমএ পাস করাবোই। এখন বিটিক কেউ একটা চাকরি দিলে কষ্ট কমত।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ বন স গ র ম

এছাড়াও পড়ুন:

মিয়ানমারে বৌদ্ধ মঠে বিমান হামলায় নিহত ২৩

মিয়ানমারের সাগাইং অঞ্চলের একটি বৌদ্ধ মঠে বিমান হামলায় অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছেন। লিন তা লু গ্রামে শুক্রবার রাতভর চলা এই হামলায় ৩০ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 

কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা সংঘর্ষ থেকে বাঁচতে আশপাশের গ্রাম থেকে দেড় শতাধিক মানুষ মঠটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। খবর দ্য টেলিগ্রাফ

বিদ্রোহী গোষ্ঠীর এক সদস্য সংবাদমাধ্যমকে জানান, জঙ্গিবিমান রাত ১টার দিকে গ্রামের মঠের একটি ভবনে বোমা ফেলার পর চার শিশুসহ ২৩ বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। 

নিহতের সংখ্যা ৩০ হতে পারে বলে জানিয়েছে মিয়ানমারের স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক ভয়েজ অব বার্মা। দেশটির সামরিক বাহিনী এই হামলা নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ