অদম্য নিবিড়: হতাশা পেরিয়ে দেশসেরা হওয়ার গল্প
Published: 12th, July 2025 GMT
একটি নাম্বার, মাত্র এক নাম্বার- পাঁচ বছর আগে যে ছেলেটির বাবার স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছিল, সেই ছেলেই আজ দেশের সেরা। সদ্য প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে ১৩০০ নম্বরের মধ্যে ১২৮৫ পেয়ে সারাদেশের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে নিজেকে অবতীর্ণ করেছেন চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের চৌকস মেধাবী ছাত্র নিবিড় কর্মকার।
নিবিড় যখন প্রাথমিকের শেষ স্তরে ৫ম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়- নিবিড়ের বাবা জীবন কর্মকার চেয়েছিলেন ছেলে চট্টগ্রামের বিখ্যাত কলেজিয়েট স্কুলে পড়ুক। যথারীতি ভর্তি পরীক্ষায়ও অবতীর্ণ হয় নিবিড়। কিন্তু এক নম্বরের জন্য নাম উঠেনি চূড়ান্ত তালিকায়। কলেজিয়েটে আর ভর্তি হওয়া হয়নি নিবিড়ের। ওই সময়ের হতাশা আজও বাবার গলায় কাঁপুনি ধরায়। অথচ সেই ব্যর্থতার মাঝেই নতুন শুরু হয়েছিল নিবিড়ের যাত্রা চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে, যেখানে শক্তি ছিল তার মেধা, অধ্যাবসায় আর বাবা-মায়ের অটল সমর্থন।
বোর্ডের রেজাল্ট প্রকাশের দিনের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে নিবিড় বলেন, “আমি যেভাবে পরীক্ষা দিয়েছি তাদের আমি ভালো ফলাফল করবো এটা আত্মবিশ্বাস ছিল। কিন্তু সারাদেশের মধ্যে শীর্ষে থাকব এতোটা স্বপ্ন দেখিনি। তবে আমার হিসেবে ১২৮০ এর মধ্যেই আমার মার্ক থাকবে বলে আমার ধারণা ছিল। শেষ পর্যন্ত ১৩০০ মার্কের মধ্যে ১২৮৫ মার্ক অর্জন করতে পেরেছি। এই ফলাফলে আমি অনেক আনন্দিত। এই ফলাফল গৌরবের।”
নিবিড় বলেন, “সৃষ্টিকর্তার পরে বাবা-মায়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমি বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটাতে পেরেছি, এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
জীবন কর্মকার ও রিপা রায় দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে নিবিড় কর্মকার বড়। নিবিড়ের ছোট বোন রয়েছে। সে বর্তমানে ৯ম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা জীবন কর্মকার চট্টগ্রামে র্যাংকস গ্রুপের শিপিং লাইনে চাকরি করেন অত্যন্ত সুনামের সাথে। বাবা মায়ের অত্যন্ত আদরের সন্তান নিবিড়। জীবন কর্মকার সংসারের চাহিদা মিটিয়ে সন্তানের জন্য স্বপ্ন বুনেছেন মা রিপা রায়ের সঙ্গে মিলে।
মা রিপা রায় বলেন, “আমার ছেলে সারা দেশে প্রথম, এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত নিজেই পড়িয়েছি, কোনো প্রাইভেট টিচার রাখিনি। কখনো শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে ওকে গাইড করেছি। সন্তান কাঁচা মাটির মতো, মা-বাবাই এর প্রকৃত কারিগর।”
বাবা জীবন কর্মকার বলেন, “পড়াশোনায় নিবিড়ের মূল শক্তি ছিল টেক্সটবুক আর সময়ের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ। দিনে ৮-১০ ঘণ্টার পড়াশোনা করেছে সে। তার মা সব সময় তাকে সাপোর্ট দিয়েছে। রাত-দিন সন্তানকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। বিগত বছরের বোর্ড প্রশ্নপত্রের অনুশীলন আর শূন্যে রচনার খাতায় চার্ট-চিত্র এঁকে ধারণা স্পষ্ট করা—এই ছিল নিবিড়ের গোপন অস্ত্র।”
সহপাঠী আর শিক্ষকদের অবদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে নিবিড় বলে, “শিক্ষকদের গাইডলাইন মেনে চলেছি, নিয়মিত ক্লাস করেছি। বন্ধুরাও পাশে ছিল।”
ছবি আঁকার শখ ছিল ছোটবেলা থেকে। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছে, স্কুলের রচনা প্রতিযোগিতায় বারবার প্রথম—সবই নিবিড়ের বহুমাত্রিক মেধার প্রমাণ। জুনিয়রদের উদ্দেশ্যে নিবিড়ের পরামর্শ সহজ, “টেক্সটবুক লাইন বাই লাইন পড়তে হবে, কনসেপ্ট পরিষ্কার রাখতে হবে। শুধু গণিতে নয়, সব বিষয়ে সমান গুরুত্ব দিতে হবে।”
বাবা-মায়ের স্বপ্ন এখন নিবিড়ের চোখে নতুন করে জ্বলছে। নিবিড় চায় দেশের একজন গুণী প্রকৌশলী হতে, বুয়েটে পড়তে, দেশের জন্য কিছু করতে।
বাবা জীবন কর্মকার বলেন, “আমার সব আশা আর প্রার্থনা আমার ছেলের জন্য। আমি চাই প্রথমে ছেলে মানুষ হোক, তারপর দেশের সেবা করুক। আজ যে ফল সে পেয়েছে, তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ওর মায়ের। এক নম্বরের জন্য কলেজিয়েটে ভর্তি হয়নি- কিন্তু সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছে ছিল, ও এখান থেকেই দেশের সেরা হোক।”
হতাশার এক নাম্বার থেকে শুরু হয়ে যে গল্পের শেষ প্রান্তে সাফল্যের সোনালী আলো জ্বলছে, সেটি নিবিড় কর্মকার আর তার পরিবারের কঠোর পরিশ্রম, মেধা আর অটল বিশ্বাসের এক অমলিন উদাহরণ হয়ে থাকল।
ঢাকা/রেজাউল/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রক শ র জন য ফল ফল
এছাড়াও পড়ুন:
ডাকসুর বিবৃতি: বিএনপি তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে
জুলাই সনদে সই করলেও বিএনপি ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে, এমন বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। রোববার বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার সম্মিলিত বিপ্লব। শুধু সরকার পরিবর্তন নয়, বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ ও একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোনো প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে সই করলেও বিএনপি ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।
ডাকসুর বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে, যা সরাসরি ছাত্র-জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহাহিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়। কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে ছাত্র-জনতা সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে।