টেস্টে ক্যাচের বিশ্ব রেকর্ড গড়ে যে গল্প বললেন রুট
Published: 12th, July 2025 GMT
রেকর্ডটি গড়তে একদম মানানসই ক্যাচ।
জো রুট নিশ্চয়ই খুশি হয়েছেন? বেন স্টোকসের বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন ভারতের করুন নায়ার। ৩৪ বছর বয়সী রুট যে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে বাঁ দিকে ডাইভ দিয়ে ক্যাচ নিলেন, সেটা স্লিপে ফিল্ডিং করা তরুণদের জন্য রেফারেন্স পয়েন্ট হতে পারে। ক্যাচটি নিয়েই খুশির চোটে বল ছুড়ে মেরেছেন শূন্যে। রুট নিশ্চয়ই জানতেন, রাহুল দ্রাবিড়কে পেছনে ফেলে রেকর্ডটি এখন তাঁর দখলে।
লর্ডস টেস্টে গতকাল দ্বিতীয় দিনে নায়ারের ক্যাচটি নিয়ে দারুণ এক রেকর্ড গড়েছেন রুট। টেস্ট ক্রিকেটে ফিল্ডার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ নেওয়ার রেকর্ড এখন তাঁর। সেঞ্চুরি পাওয়ার দিনে দ্রাবিড়ের ২১০ ক্যাচ নেওয়ার রেকর্ডও পেছনে ফেলে সবার ওপরে উঠেছেন রুট।
আরও পড়ুনসেঞ্চুরির পর ফিল্ডিংয়ে নেমে রুটের রেকর্ড, লড়াই করছে ভারত১১ ঘণ্টা আগে১৬৪ ম্যাচে ৩০১ ইনিংসে ২১০ ক্যাচ নিয়ে রেকর্ডটি এত দিন দখলে রেখেছিলেন ভারতের কিংবদন্তি দ্রাবিড়। রুট তাঁর চেয়ে কম ম্যাচ ও ইনিংস খেলে রেকর্ডটি ভাঙলেন। ১৫৬ ম্যাচে ২৯৬ ইনিংসে ২১১ ক্যাচ নিলেন রুট।
টেস্টে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ এই রান সংগ্রাহক ও সেঞ্চুরিয়ানকে সাধারণত প্রথম স্লিপেই ফিল্ডিং করতে দেখা যায়। বিবিসি স্পোর্ট জানিয়েছে, রুটের এই স্লিপে দাঁড়ানোর ইচ্ছাটা জন্ম নিয়েছিল ২৫ বছর আগে শেফিল্ড কলেজিয়েট ক্রিকেট ক্লাবে। সংবাদমাধ্যমটিকে রুট নিজেই বলেছেন সেই গল্প, ‘আট-নয় বছর বয়সে ফাইন লেগে ফিল্ডিং করতাম। এভাবে ক্রিকেটে শিক্ষানবিশ সময় কাটছিল। একটু বেশি খেলার পর নিজের জায়গাটা খুঁজে পাই।’
কীভাবে সেই জায়গা খুঁজে পেলেন, সেই গল্পও বলেছেন রুট, ‘ম্যাচে আরও বেশি মনঃসংযোগ বাড়াতে সিনিয়র খেলোয়াড়দের একজন জানতে চাইতেন (ওভারে) আর কয়টি বল বাকি আছে? আমরা ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারলে ২০ পেন্স (পেনি) পেতাম। আমরা যদি ভালোভাবে এটা করতে পারতাম তাহলে ম্যাচ শেষে ক্রিস্প অ্যান্ড পপ (পটেটো চিপস ও কোমল পানীয়) কেনার টাকা হয়ে যেত। এভাবে ওখানে (স্লিপ ফিল্ডিং) চলে আসি।’
আরও পড়ুন২৪ ঘণ্টা পরই মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখলেন সাকিব১১ ঘণ্টা আগেব্যাপারটি আরেকটু বুঝিয়ে বলা যায়। স্লিপ ফিল্ডিংয়ে যাঁরা দাঁড়ান, সাধারণত তাঁরা ওভারে বল সংখ্যার হিসাব রাখার পাশাপাশি ম্যাচের পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখেন। রুট সম্ভবত এই খেয়াল রাখার কাজটি খুব ভালোভাবে করতে করতেই স্লিপে জায়গা করে নেন। যদিও বিবিসি স্পোর্ট এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।
তবে টেস্টে রুটের প্রথম ক্যাচ কিন্তু স্লিপে নয়। ২০১৩ সালে স্টিভেন ফিনের বলে নিউজিল্যান্ডের পিটার ফুলটনের ক্যাচ নিয়েছিলেন লং অনে—ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্টে সেটা তাঁর প্রথম ক্যাচ। এর ১২ বছর পর ভাঙলেন দ্রাবিড়ের রেকর্ড।
১৪৯ ম্যাচে ২৭০ ইনিংসে ২০৫ ক্যাচ নিয়ে সর্বোচ্চ ক্যাচ নেওয়ার তালিকায় তিনে শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি মাহেলা জয়াবর্ধনে। তিনি অবসর নেওয়ায় বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে রুটকে ধরার সুযোগ আছে শুধু অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথের। ১১৮ ম্যাচে ২২৫ ইনিংসে ২০০ ক্যাচ নিয়েছেন স্মিথ। টেস্টপ্রতি রুটের ক্যাচ নেওয়ার গড় হার ০.
ক্রিকভিজ–এর বরাত দিয়ে বিবিসি স্পোর্ট জানিয়েছে, ২০১২ সালে টেস্ট অভিষেকের পর এ পর্যন্ত ক্যাচ নেওয়ার দক্ষতায় ছয়ে রুট। তাঁর অভিষেকের পর অন্তত ৭৫টি ক্যাচ নিয়েছেন, এমন ফিল্ডারদের বিবেচনায় নিয়ে হিসাবটি করা হয়েছে। রুটের দক্ষতার হার ৭৬.৮ শতাংশ। এ সময় ৭৬টি ক্যাচ নেওয়া নিউজিল্যান্ড কিংবদন্তি কেইন উইলিয়ামসন ৮৮.৩ শতাংশ ক্যাচ নেওয়ার হারে সবার ওপরে।
ক্যাচ মিস করলে কেমন লাগে, সেটাও জানতে চাওয়া হয়েছিল রুটের কাছে। উত্তর শুনুন রুটের মুখেই, ‘এমন সময় আসবে যখন আপনার মনে হবে, মাটি চিরে দুই ভাগ হোক, আমি সেখানে হারিয়ে যাই। শুধু একভাবেই একটু ভালো বোধ করা সম্ভব, সেটা হলো আরেকটি (ক্যাচের) সুযোগ পাওয়া এবং সেটি ধরা।’
ক্রিকভিজ জানিয়েছে, অন্য যে কোনো বোলারের চেয়ে স্টুয়ার্ট ব্রডের বলে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ ছেড়েছেন রুট—১২টি। জেমস অ্যান্ডারসনের বলে ছেড়েছেন ৯টি, জ্যাক লিচের বলে ৭টি, বেন স্টোকসের বলে ৬টি ও ক্রিস ওকসের বলে ৪টি ক্যাচ ছেড়েছেন রুট।
ইংল্যান্ড দলে ব্রডের সঙ্গে ১১৪ ও অ্যান্ডারসনের সঙ্গে ১১০ ম্যাচ খেলেছেন রুট। তবে স্লিপ ফিল্ডার হিসেবে এই দুই কিংবদন্তির কেউ কিন্তু রুটের সবচেয়ে পছন্দের বোলার নন, ‘কন্ডিশন সুইং বান্ধব হলে ক্যাচ দিতে বাধ্য করার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা আছে বেন স্টোকসের।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র র কর ড প রথম বদন ত সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
‘সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের’ শর্তে রাজসাক্ষী মামুনকে ক্ষমার আদেশ ট্রাইব্যুনালের
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যার ঘটনায় নিজের এবং মামলার প্রধান আসামির অপরাধ সম্পর্কিত ‘সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের’ শর্তে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ক্ষমা করার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গত বৃহস্পতিবার দুই পৃষ্ঠার এ লিখিত আদেশ দেন। যা শনিবার গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট ৫টি অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ জুলাই তিন অভিযুক্ত- শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ৩(২)(এ), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৪(১), ৪(২), ৪(৩) এর অধীনে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আদেশের দিন অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অপর দুই আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক।
অভিযোগ গঠন করার পর তা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পড়ে শোনানো হয় এবং তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি দোষী স্বীকার করবেন কি না। তখন তিনি দোষ স্বীকার করেন এবং জানান যে, তিনি সংশ্লিষ্ট অপরাধসমূহ এবং এই অপরাধ সংঘটনে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির সম্পর্কে তার জ্ঞাতসারে জানা সব তথ্য ‘সৎভাবে ও সম্পূর্ণভাবে’ প্রকাশ করতে ইচ্ছুক। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে তার আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ ক্ষমা প্রদান করার জন্য একটি আবেদন করেন ট্রাইব্যুনালে।
আদেশে এ বিষয়ে বলা হয়, প্রধান কৌঁসুলি এই শর্তে ক্ষমা প্রদানের বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেন যে- অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ‘সম্পূর্ণ ও সত্য তথ্য প্রদান করবেন’, যা অভিযোগের অপরাধের বিচার কার্যক্রমে সহায়ক হবে। উপর্যুক্ত তথ্য ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ট্রাইব্যুনাল মনে করে যে, অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ক্ষমা প্রদান করা উপযুক্ত এবং সেই মোতাবেক তাকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা প্রদান করা হয়েছে যে- তিনি সংশ্লিষ্ট অপরাধসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তি সম্পর্কে তার জানা সব তথ্য ‘সম্পূর্ণ ও সত্যভাবে’ প্রকাশ করবেন। ‘অভিযুক্ত এ শর্তে ক্ষমা গ্রহণ করেছেন এবং সে অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল তাকে সাক্ষী হিসেবে পরবর্তীতে সাক্ষ্যদানের জন্য ডাকবে।’
আদেশে বলা হয়, ‘চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন যেহেতু ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং তা গ্রহণ করেছেন, তাই তাকে কারাগারে অন্যান্য বন্দিদের থেকে আলাদা রাখার প্রয়োজন। সে মোতাবেক সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো যেন তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাকে অন্য বন্দিদের থেকে আলাদা করে রাখা হয়।’
এই আদেশের একটি অনুলিপি সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করতে এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত ১০ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল।
আদেশের সময় ট্রাইব্যুনাল সাবেক আইজিপিকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি অভিযোগ স্বীকার করছেন কি না? এরপরই মামুন নিজের অভিযোগ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। পরে আদালত মামুনের আবেদন মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন।
আদালতে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।’