ট্রাম্প-ইরানের সম্ভাব্য চুক্তিতে নতুন মধ্যপ্রাচ্যের দিশা
Published: 12th, July 2025 GMT
১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে মার্কিন-ইরান সম্পর্কে সবচেয়ে অন্ধকার সময় ছিল। তারপরও বিচক্ষণ পর্যবেক্ষকরা কখনও এটা বুঝতে পারেননি যে, উভয়ের মধ্যকার তীব্র বিভেদ অপূরণীয়ভাবে হারিয়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষের চেয়ে বরং পুনর্মিলনের জন্য কাতর একটি বিচ্ছিন্ন সম্পর্কের মতো ভাঙা ছিল। যদি পুনর্মিলনে এত সময় লাগে তবে এর কারণ ছিল এটি এমন এক সম্পর্ক, যেখানে স্মৃতি আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিশে ছিল।
এ কারণেই ২২ জুন ফরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্র ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ফেলার পর থেকে যে নাটকীয়তা শুরু হয়েছিল, তা এক পরাবাস্তব চেহারা ধারণ করে, যেখানে ছবিগুলো অদ্ভুতভাবে পরস্পর মিশে গিয়েছিল, যেমনটা স্বপ্নে ঘটে। যদি কেউ এই জটিল বিষয়কে কল্পনা থেকে বাস্তবে টেনে আনতে পারেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি একবার ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ নামে একটি রিয়েলিটি শোর আয়োজন করেছিলেন, যা ২০০৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এনবিসিতে ১৫টি মৌসুমজুড়ে বিভিন্ন ধরনে প্রচারিত হয়েছিল। এতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, যারা ট্রাম্পের এক সম্পত্তির পক্ষে প্রচার চালাতে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বিনিময়ে এক বছরের চুক্তির জন্য প্রতিযোগিতা করেছিলেন।
আজ যে সম্পত্তি প্রস্তাব করা হচ্ছে তা হলো গাজা রিভেরা। দ্য অ্যাপ্রেন্টিসের মতো যার ২০টি স্থানীয় সংস্করণ ছিল; গাজা রিভেরাও একটি বহুমুখী জিনিস যেখানে ইরানম ইসরায়েলসহ সবার জন্য কিছু না কিছু আছে। কিন্তু সেটা ছিল এক প্রকার অন্ধকারে ঝাঁপ দেওয়া।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, মিডনাইট হ্যামার (ইরানে সাম্প্রতিক মার্কিন অভিযানের নাম) কী অর্জন করেছিল? খুব কমই কেউ লক্ষ্য করেছে যে, ট্রাম্প ইরানের পক্ষ থেকে একটি প্রাচীন ভুলের প্রতিশোধ নিয়েছে। এর সৌন্দর্য হলো, ইরানের জিম্মি সংকটের পর্দা নামাতে ৪৪৪টি যন্ত্রণাদায়ক দিন লেগেছিল। আর ট্রাম্পের সেই অন্ধকার অধ্যায়টি চূড়ান্তভাবে বন্ধ করতে এবং টাইম মেশিনকে মার্কিন-ইরান সম্পর্কের একটি অগ্রাধিকারমূলক ইতিহাসে নিয়ে যেতে এক ঘণ্টারও কম সময় লেগেছিল।
এই মুহূর্ত থেকে ট্রাম্পের পক্ষে ইরানের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ সম্পর্কের জন্য মার্কিন অবস্থান উল্টে দেওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। ইরানভীতি এখন ভালোভাবেই সমাহিত হচ্ছে। এটিই প্রথম জিনিস।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প ২২ জুন মধ্যরাতে ইরানের পারমাণবিক সমস্যার সমাধান করেন, যখন তিনি দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘নিশ্চিহ্ন’ করে দেন। ট্রাম্পের এই ঘোষণা তাঁর বিরোধীদের একটি সম্পূর্ণ নতুন শিল্পকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়, যারা জোর দিয়ে বলে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এখনও জীবিত এবং সক্রিয়, যার মধ্যে আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসিও ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে অটল থাকেন। এক ধাক্কায় তিনি মার্কিন-ইরান স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়ায় ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের যে কোনো সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছেন।
৮ জুলাই মঙ্গলবার ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, মিডনাইট হ্যামারকে ‘আক্রমণ’ বলে গর্ব করার আর কোনো কারণ নেই। সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রশিক্ষিত পেশাজীবী মনোবিজ্ঞানী স্ত্রী সারার জন্য আয়োজিত এক নৈশভোজে ট্রাম্পের মন্তব্যে তার দ্বিধা ক্ষণিকের জন্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ট্রাম্পের স্বজ্ঞাত জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস এতটাই প্রবল, তিনি আসলে নেতানিয়াহুকে মিডিয়ার সামনে কথা বলতে দিতে পছন্দ করেছিলেন, যাতে তিনি মার্কিন-ইরান আলোচনা ফের শুরু করার মূল কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেন। নেতানিয়াহু যখন স্পষ্ট ভাষায় বক্তব্য রাখছিলেন, তখন ট্রাম্পের অভিব্যক্তিহীন মুখ দেখাটা বেশ আনন্দদায়ক ছিল।
কিন্তু যখন একজন সাংবাদিক নেতানিয়াহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসরায়েল এখনও ইরানে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন চায় কিনা; তখন তিনি সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়েছিলেন, এটি ইরানি জনগণের সিদ্ধান্ত! ট্রাম্প স্টিভ উইটকফকে এ ঘোষণা দিতে উৎসাহিত করেন যে, আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকেই মার্কিন-ইরান আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে পারে। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, আলোচনায় একটি নথি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত হতে পারে এবং ইরানের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেন।
তৃতীয়ত, তেহরান সময় নষ্ট না করে স্বীকার করে যে, আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি বিবেচনাধীন। অবশ্য তেহরান দাবি করেছে, এই উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এসেছে। ইরানি গণমাধ্যম দাবি করেছে, ‘এ প্রসঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্কিন দাবির প্রয়োজনীয়তা, বৈধতা ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা নির্ধারণ এবং আরোপিত ১২ দিনের যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ পেতে কীভাবে নতুন দফা আলোচনা করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে।’
কঠিন আলোচনার আগে কূটনীতিতে কিছুটা ঝগড়াঝাঁটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ট্রাম্পের মতো ইরানের বাগাড়ম্বরও এখন বন্ধ। তাই মার্কিন-ইরান আলোচনা ফের শুরু করতে উভয় পক্ষের সম্মতিকে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্য গঠনের পথে বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা উচিত।
এম কে ভদ্রকুমার: ভারতের সাবেক কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক; ইন্ডিয়ান পাঞ্চলাইন থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ছ ল ন র জন য য ক তর ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে সোহাগকে হত্যা: ডিএমপি
ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।
তিনি বলেন, চাঁদাবাজি নয়, ভাঙারি ব্যবসা এবং একটি দোকানে কারা ব্যবসা করবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগ এবং হত্যাকাণ্ড যারা ঘটিয়েছে তাদের একসঙ্গে ব্যবসাও ছিল।
বিস্তারিত আসছে...