আসন্ন শিক্ষাবর্ষে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য পরিচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চাপ থাকলেও সার্বিকভাবে কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে বিপুলসংখ্যক আসন খালি থাকবে। এবার পাসের হার কম। তাই পাস করা সব শিক্ষার্থী কলেজ বা মাদ্রাসায় ভর্তি হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সাড়ে ১৩ লাখের মতো আসন খালি থাকবে।

অন্যান্য বছরও একাদশ শ্রেণিতে আসন খালি থাকে। কিন্তু এবার সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল হওয়ার কারণে এই সংখ্যা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। অনেক কলেজ-মাদ্রাসা কাঙ্ক্ষিতসংখ্যক শিক্ষার্থী পাবে না। এর ফলে কলেজগুলো, বিশেষ করে বেসরকারি কলেজ-মাদ্রাসাগুলো আর্থিকসহ নানা সমস্যায় পড়তে পারে।

এবারও আগের নিয়মেই অনলাইনে আবেদন গ্রহণ ও ভর্তির কাজটি করার সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বেশ কয়েক বছর ধরে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। নির্ধারিত আবেদন ফি জমা দিয়ে সর্বনিম্ন ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ বা সমমানের প্রতিষ্ঠানের জন্য পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করতে হয়। একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে আবেদন করবে, তার মধ্য থেকে শিক্ষার্থীর মেধা, কোটা (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) ও পছন্দক্রমের ভিত্তিতে ভর্তির জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তার অবস্থান নির্ধারণ করা হয়।

তাই পাস করা সব শিক্ষার্থী কলেজ বা মাদ্রাসায় ভর্তি হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সাড়ে ১৩ লাখের মতো আসন খালি থাকবে।

ঢাকার নটর ডেম কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সব কলেজ ও মাদ্রাসায় এই প্রক্রিয়ায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিগরি সহায়তায় কেন্দ্রীয়ভাবে অনলাইনে ভর্তির কাজটি হয়।

এই প্রক্রিয়ায় শুধু কলেজ ও মাদ্রাসার ভর্তির কাজটি হয়। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন ভর্তির কাজ আলাদাভাবে হয়ে থাকে।

এবারের ভর্তিপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান খন্দোকার এহসানুল কবির গতকাল শুক্রবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে শিগগিরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।

অবশ্য ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগের নিয়মেই ভর্তির কাজটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেভাবে প্রাথমিক প্রস্তুতিগুলোও নেওয়া হচ্ছে। ভর্তিযোগ্য আসনের তথ্যও প্রায়ন জানা হয়েছে।

এ বিষয়ে শিগগিরই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান খন্দোকার এহসানুল কবির বিপুলসংখ্যক আসন খালি থাকবে

গত বৃহস্পতিবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার গড় পাসের হার এবং ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে। সব পরীক্ষার্থী ফেল করেছে, এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। কমেছে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন পরীক্ষায় পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ; যা গতবার ছিল ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এবার গতবারের চেয়ে জিপিএ-৫ কমেছে ৩৮ হাজার ৮২৭।

মূলত তিনটি কারণে ফল খারাপ হয়েছে। প্রথমত, এসএসসি পরীক্ষার্থীরা গত পাঁচ বছরের শিক্ষাজীবনে করোনা মহামারিসহ নানা কারণে বিদ্যালয়ে ক্লাস পেয়েছে কম। দ্বিতীয়ত, ‘প্রশ্ন কঠিন’ হওয়ায় এবার গণিতে পাসের হার কম। তৃতীয়ত, উত্তরপত্র মূল্যায়নে অন্যান্য বছরের চেয়ে ‘কড়াকড়ি’ ছিল।

এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। মানে ৬ লাখের বেশি পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেনি।

প্রায় প্রতিবছরই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আসন খালি থাকে। আবার কিছু কলেজে ভর্তির জন্য চাপ পড়ে। এবার পাসের হার কম হওয়ায় আসন বেশি খালি থাকবে। বিশেষ করে মফস্‌সল এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশি খালি থাকবে। এ জন্য পরিকল্পনা করে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে।ঢাকার ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মো.

মাকসুদ উদ্দিন

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে কেবল কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ২৬ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি। এই তথ্য বলছে, কারিগরি ছাড়াই যদি সব শিক্ষার্থী কলেজ-মাদ্রাসায় ভর্তি হয়, তাহলেও একাদশ শ্রেণিতে সাড়ে ১৩ লাখের আসন ফাঁকা থাকবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ৫ লাখ ৪০ হাজারের বেশি। এ ছাড়া কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার, রাজশাহীতে ৩ লাখ ৮৬ হাজার, যশোরে ২ লাখ ২০ হাজার, চট্টগ্রামে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার, বরিশালে ১ লাখ ৭০ হাজার, সিলেট ১ লাখ ৪১ হাজার, দিনাজপুর বোর্ডে ৩ লাখ ২৮ হাজার, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে ১ লাখ ৩৫ হাজার এবং বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন একাদশ শ্রেণিতে আসন আছে ৩ লাখ ২৮ হাজারের মতো। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবার অনেক কলেজ শিক্ষার্থীর সংকটে ভুগবে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে কেবল কলেজ ও মাদ্রাসাগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন আছে ২৬ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি। এই তথ্য বলছে, কারিগরি ছাড়াই যদি সব শিক্ষার্থী কলেজ-মাদ্রাসায় ভর্তি হয়, তাহলেও একাদশ শ্রেণিতে সাড়ে ১৩ লাখের আসন ফাঁকা থাকবে।

ঢাকার ন্যাশনাল আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ মো. মাকসুদ উদ্দিন এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় প্রতিবছরই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আসন খালি থাকে। আবার কিছু কলেজে ভর্তির জন্য চাপ পড়ে। এবার পাসের হার কম হওয়ায় আসন বেশি খালি থাকবে। বিশেষ করে মফস্‌সল এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশি খালি থাকবে। এ জন্য পরিকল্পনা করে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কল জ ও ম দ র স ম দ র স য় ভর ত সব শ ক ষ র থ প স র হ র কম কল জ ম দ র স পর ক ষ র থ ভর ত র ক জ ১৩ ল খ র আসন খ ল ল কল জ প স কর র আসন

এছাড়াও পড়ুন:

দুই স্কুলের ২২ শিক্ষক পাস করাতে পারেননি ৩০ শিক্ষার্থীকে!

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিশ্বনাথপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও সাঘাটা উপজেলার ঘুরিদহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কেউ পাস করেনি।

শুক্রবার (১১ জুলাই) দুপুরে এমপিওভুক্ত দুটি বিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান। এর আগে, গতকাল এসএসসির ফল প্রকাশিত হয়।

জানা যায়, সাঘাটা উপজেলার ঘুরিদহ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর ২৪ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১০ জন ও মানবিক বিভাগ থেকে ১৪ জন। তবে, তাদের একজনও পাস করেনি। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ১৭ জন। তার মধ্যে শিক্ষক ১২ জন।

আরো পড়ুন:

কুড়িগ্রামের ৩ বিদ্যালয়ে কেউ পাস করেনি 

জবিতে দুই শিক্ষক ও বাগছাসের নেতাদের ওপর ছাত্রদলের হামলা

অপরদিকে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিশ্বনাথপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ১২ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে শিক্ষক ১০ জন। বিদ্যালয়টি থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন মানবিক বিভাগের ৬ জন শিক্ষার্থী। তবে সবাই ফেল করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে ঘুরিদহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. শাহেদা বেগম এবং বিশ্বনাথপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসাইনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তারা রিসিভ করেননি।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘‘গত ২ জুলাই আমি এখানে যোগদান করেছি। রেজাল্ট সংক্রান্ত বিষয়ে আগামী রবিবার বিস্তারিত বলতে পারব। তবে, জেলায় পাসের হার ৬২ শতাংশ এবং একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি, এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা দুটি।’’

তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘‘প্রতি মাসে শিক্ষকদের এত টাকা বেতন দেওয়ার পরও একজন শিক্ষার্থী পাস করতে না পারার বিষয়টি অত্যন্ত লজ্জার। প্রতিষ্ঠান দুটিকে শতভাগ জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি যেসব বিদ্যালয়ে ফেলের হার উদ্বেগজনক, তাদেরকেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।’’

ঢাকা/মাসুম/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চোয়ালের সঙ্গে কলম চেপে লিখে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে লিতুন জিরা
  • সাংবাদিক দম্পতি পেলেন জিপিএ ৪.১১
  • শারীরিক সীমাবদ্ধতা জয় করে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে তানিশা
  • জিপিএ ৫ পেলেও কলেজে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তায় সুব্রত
  • বন্দরে মালেক সিকদারের নাতি ফাইয়াজ জিপি-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ  
  • পাকস্থলীতে গুলি লাগা সেই জুবায়ের এসএসসি পাস করেছেন
  • ২২ শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী ৩০, পাস করেনি কেউ
  • এসএসসি পরীক্ষায় সেনাবাহিনী পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর দারুণ সাফল্য
  • দুই স্কুলের ২২ শিক্ষক পাস করাতে পারেননি ৩০ শিক্ষার্থীকে!