জাপানকে পেছনে ফেলে ভারত এখন বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। ভারতের জাতীয় আয়োগ সংস্থার (নীতি আয়োগ) সিইও বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম শনিবার (২৪ মে) এই তথ্য জানিয়েছেন। 

রবিবার (২৫ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, নীতি আয়োগের সিইও সুব্রহ্মণ্যম বলেছেন, “ভারত এখন ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। ভারতীয় অর্থনীতি এখন জাপানের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে।” শনিবার দিল্লিতে নীতি আয়োগের দশম গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন। 

আরো পড়ুন:

বিএসএফের ঠেলে দেওয়া ২১ জন ফিরে গেল পরিবারে 

আকাশসীমা বন্ধের মেয়াদ বাড়াল পাকিস্তান ও ভারত

সংবাদ সম্মেলনে সুব্রহ্মণ্যম বলেন, “আমি যখন কথা বলছি তখন আমরা চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি। আমি যখন কথা বলছি তখন আমরা ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি।” তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তথ্য উদ্ধৃত করে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। 

নীতি আয়োগের সিইও আরো যোগ করেন, “এখন শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও জার্মানি ভারতের থেকে অর্থনীতিতে বড়। যদি আমরা আমাদের পরিকল্পিত পথেই চলি, তাহলে আগামী আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে আমরা জার্মানিকে ছাড়িয়ে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হব।”

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অ্যাপেলকে ভারতে আইফোন তৈরি না করে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করতে বলেছেন। তার শর্ত না মানলে অতিরিক্ত শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এই নিয়ে ভারতের কী মতামত, এই প্রশ্নের উত্তরে নীতি আয়োগের সিইও বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম বলেন, “ট্যারিফ কী হবে, তা অনিশ্চিত। বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করলে আমাদের এখানে আইফোন তৈরি করা সস্তা হবে।”

তিনি আরো উল্লেখ করেন, সরকারের সম্পদ নগদীকরণ পরিকল্পনার একটি নতুন দফা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এটি আগস্টে ঘোষণা করা হবে।

দিল্লির ভারত মণ্ডপে নীতি আয়োগের দশম গভর্নিং কাউন্সিলের সভায় সভাপতিত্ব করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠকে তিনি ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার জন্য সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

সভায় ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী মোদি জাতীয় উন্নয়নে সম্মিলিত প্রচেষ্টার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, “প্রত্যেক ভারতীয়ের আকাঙ্ক্ষা হলো দেশকে একটি ‘বিকশিত ভারত’ হিসেবে গড়ে তোলা। এটি কোনো দলের এজেন্ডা নয়, বরং ১৪০ কোটি ভারতীয়ের আকাঙ্ক্ষা। যদি সব রাজ্য এই লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে আমরা অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করব। আমাদের প্রতিটি রাজ্য, প্রতিটি শহর এবং প্রতিটি গ্রামের উন্নয়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া উচিত এবং তারপর ২০৪৭ সালের অনেক আগেই ‘বিকশিত ভারত’ অর্জন করা সম্ভব হবে।” 

সভায় ভারতের ২৪টি রাজ্য ও সাতটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী মুখ্যমন্ত্রী এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নররা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসনের ভবিষ্যৎ কেন অনিশ্চিত

দৃশ্যত এটি ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং দেশের তিন বাহিনীর প্রধানদের মধ্যে একটি রুদ্ধদ্বার নিয়মিত বৈঠক।

তবে ২০ মের এ বৈঠক এমন সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে, যখন সরকারের ভেতরের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত এমন একাধিক কর্মকর্তা আল–জাজিরাকে জানান, ঢাকায় ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার এক দ্বন্দ্ব চলছে। এ উত্তেজনাকে দেশের সামাজিক ও মূলধারার গণমাধ্যমে অন্তর্বর্তী প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে একধরনের ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এই টানাপোড়েন এখন ইউনূসের নেতৃত্বের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ৯ মাস আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে অপসারণের পর সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তিনি।

শেখ হাসিনা তাঁর ১৫ বছরের শাসনামলের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান। তাঁর বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনা সংঘটনের অভিযোগ উঠেছে।

ইউনূস পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন—এমন গুজব ছড়ানোর মধ্যে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে গতকাল শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের আরেক বৈঠকের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গেই আছেন, তিনি পদত্যাগের কথা বলেননি, অন্য উপদেষ্টারাও আছেন, আমরা আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি।’

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের রুদ্ধদ্বার একটি বৈঠকের পর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ বক্তব্য দেন। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ অচলাবস্থা এখনো কাটেনি।

দেশের সাম্প্রতিক অস্থিরতা এবং নির্বাচনী গণতন্ত্রে ফেরার ক্ষেত্রে দেশের অপরিপক্ব প্রচেষ্টার ওপর এর কী প্রভাব, তা খতিয়ে দেখা যাক:

সেনাবাহিনী ও সরকারের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে কেন

২০২৪ সালের জুলাই থেকে দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। গণবিক্ষোভের জের ধরে পরের মাসে শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন। সেই সময় বেসামরিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। পুলিশ বাহিনী দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকে, বহু থানায় পুলিশ সদস্যরা অনুপস্থিত থাকেন ও জনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। এ অবস্থায় সেনাবাহিনী মোতায়েন অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

যদিও গত আগস্টের মাঝামাঝি পুলিশ আবার কার্যক্রম শুরু করেছে, তারপরও দেশে চলমান অস্থিরতার কারণে বেসামরিক-সামরিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বজায় রাখা হয়েছে।

গত বুধবার সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান খোলাখুলি আহ্বান জানিয়ে বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত। তিনি সতর্ক করে বলেন, সেনাবাহিনীকে দীর্ঘ সময় ধরে বেসামরিক কাজে নিয়োজিত রাখলে তা দেশের প্রতিরক্ষা দুর্বল করতে পারে।

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেনারেল ওয়াকার ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে উচ্চপর্যায়ের এক সভায় বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রয়োজন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এটি শুধু একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই সম্ভব, অনির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের মাধ্যমে সম্ভব নয়।’ সেনাপ্রধান এই বক্তব্য এমন এক ভাষণে দেন, যেখানে ৩০ মিনিট বক্তব্য দেন তিনি। পরে এক ঘণ্টার বেশি সময় প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশি মিশন থেকেও কর্মকর্তারা এতে ভার্চ্যুয়ালি ও সরাসরি অংশ নেন। সবাই পূর্ণাঙ্গ সামরিক পোশাকে ছিলেন, যা ঐক্য ও সংকল্পের বার্তা দেয়।

শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা। এরপরই উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের অনির্ধারিত বৈঠক হয়। ওই বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে থাকছেন। উনি বলেননি যে উনি পদত্যাগ করবেন। অন্য উপদেষ্টারাও থাকছেন। আমাদের যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমরা সে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ