মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উপদেষ্টার ছবির জায়গায় কেন শিশুর ছবি
Published: 26th, May 2025 GMT
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারতেই উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের ছবির পরিবর্তে চোখে পড়ছিল চশমা পরা এক শিশুর ছবি। প্রথম দেখায় অনেকেই ভেবেছেন, ওয়েবসাইটটি হয়তো হ্যাকড (নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে চলে যাওয়া) হয়েছে। আদতে হ্যাকড নয়, মেরুন রঙের শার্ট পরা শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক নিখোঁজ শিশু দিবসে সচেতনতা তৈরিতেই মন্ত্রণালয়ের এই অভিনব উদ্যোগ।
গতকাল ২৫ মে ছিল আন্তর্জাতিক শিশু নিখোঁজ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ছবি পরিবর্তনের এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে আজ সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে আবার উপদেষ্টার ছবি ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টার একান্ত সচিব তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক শিশু নিখোঁজ দিবস উপলক্ষে সচেতনতামূলক প্রচারের অংশ হিসেবে এক দিনের জন্য শিশুটির ছবি দেওয়া হয়। ওয়েবসাইট হ্যাকড হয়নি। মন্ত্রণালয়ের আইটি বিভাগ থেকে ছবিটা কী উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে, তা উল্লেখ করে ক্যাপশন দেওয়ার কথা ছিল। সেটা না করায় কিছু ভুল–বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।
যেভাবে নিখোঁজ হয় শিশুটি
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, মো.
মো. কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার দুপুরে আলিফ ও তার ফুফাতো ভাই (৬) সেলুনের পাশেই এক দোকান থেকে রুটি কেনে। এরপর তাদের পায়ে হেঁটে বাসায় ফেরার কথা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ওই দোকানের সামনেই এক বোরকা পরিহিত নারীর খপ্পরে পড়ে শিশু দুটি। হঠাৎই তারা আনমনা হয়ে ওই নারীর সঙ্গে হেঁটে গিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ওঠে। তবে কিছু দূর যাওয়ার পর একজনকে রেখে শুধু আলিফকে কোলে নিয়ে বাসে উঠে যান ওই নারী।
অটোরিকশার চালকের বরাত দিয়ে মো. কাসেম বলেন, রিকশা থামিয়ে ওই নারী এক শিশুকে দাঁড় করিয়ে রেখে অন্যজনকে কোলে করে বাসে ওঠায় রিকশাচালকের সন্দেহ হয়। তবে তৎক্ষণাৎ দৌড়ে গিয়েও তিনি বাস থামাতে পারেননি। পরে অন্য শিশুটি আলিফের মাকে গিয়ে বিষয়টি জানালে এলাকায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। অটোরিকশাচালক তাঁদের ওই নারীর পোশাক ও ঘটনার বিস্তারিত বলেন।
এদিকে অপহরণের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া শিশুটি জানিয়েছে, অটোরিকশায় ওঠার পর থেকেই তার মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাব শুরু হয়। খারাপ লাগার কথা জানিয়ে সে প্রশ্ন করে, তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? প্রশ্ন শুনে অটোরিকশা থামিয়ে শিশুটিকে ওই নারী বলেন, ‘তুমি দাঁড়াও। আমরা মিষ্টি নিয়ে আসতেছি।’ এরপর ওই নারী আলিফকে কোলে নিয়ে বাসে উঠে পড়েন।
এ ঘটনায় ওই দিনই আলিফের বাবা টঙ্গী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। একমাত্র সন্তানকে খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় র্যাব-১ ও গাজীপুর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তাঁকে আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে শুধু আলিফ নয়, প্রতিনিয়তই দেশে শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটছে। মৃত্যুর খবরও শোনা যায় প্রায়ই। দুই সপ্তাহ আগে তেজগাঁওয়ে ময়লার স্তূপের পাশে নালা থেকে রোজা মনি (৫) নামের এক কন্যাশিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধারের ঘটনা সবাইকে স্তব্ধ করে দেয়।
গত বছর প্রকাশিত পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে শিশু অপহরণের ঘটনায় ৬৯৫টি মামলা হয়েছে। সরাসরি থানায় ও আদালত থেকে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় শিশু অপহরণ ও পণবন্দীর (জিম্মি) মামলায় ৯ মাসে উদ্ধার করা হয়েছে ৪৯১ শিশু। সে হিসাবে প্রায় ২৯ শতাংশ শিশুই উদ্ধার হয়নি।
আলোচনায় ‘অ্যামবার অ্যালার্ট’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিখোঁজ শিশু খোঁজার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ‘অ্যামবার অ্যালার্ট’ পদ্ধতি। কোনো শিশু হারিয়ে গেলে বা অপহৃত হলে এর মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ ওই এলাকার বাসিন্দাদের মোবাইলে জরুরি বার্তা চলে যায়। ফলে শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।
আন্তর্জাতিক নিখোঁজ শিশু দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ গতকাল এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘পৃথিবীজুড়ে হারিয়ে যাওয়া শিশুর সংখ্যা কম নয়, বরং অনেক জায়গায় বাড়ছে। এই শিশুগুলো নানা রকম সংকটে পড়ে। তারা প্রতারিত, পাচার ও ধর্ষণের শিকার হতে পারে। পরিবারের জন্যও এটা কঠিন বিড়ম্বনার সময়।’
এই উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক দেশেই হারিয়ে যাওয়া শিশুদের নিয়ে অ্যামবার অ্যালার্ট নামে একটা অ্যালার্ম সিস্টেম বিরাজমান। ফলে দ্রুত এই শিশুদের রক্ষা করে পরিবারের কাছে ফেরত আনা সম্ভব হয়। আমাদের দেশেও এটা ভাবা হচ্ছে।’
মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশে খুব জরুরিভাবে এ রকম একটি ব্যবস্থা চালু করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে শারমীন এস মুরশিদ আরও বলেন, ‘আজকের (২৫ মে) এই দিবসে আমরা চাইব, এই নিখোঁজ শিশুদের খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে আমার মন্ত্রণালয়ও ব্রত নেবে এবং উদ্ধার করার কাজটি করবে। তাদের উদ্ধারে অ্যামবার অ্যালার্টের মতোই একটি ব্যবস্থা চালু করব।’
বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে এ রকম একটি উদ্যোগ চালুর চেষ্টা করছিলেন সাদাত রহমান নামের এক তরুণ। তাঁর উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ‘অ্যামবার অ্যালার্ট ফর বাংলাদেশ’ নামে একটি ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজও চালু আছে। যেখানে নিখোঁজ শিশুর তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সাদাত রহমান বলেন, ‘অ্যামবার অ্যালার্ট ফর বাংলাদেশ’ দ্রুত চালুর ব্যাপারে উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেছেন। আইসিটি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সব সরকারি ওয়েবসাইটে যেন সংশ্লিষ্ট এলাকার শিশু নিখোঁজের সংবাদ উল্লেখ থাকে, সে ব্যাপারেও কাজ চলছে। এ ছাড়া ‘অ্যামবার অ্যালার্ট’ চালু হলে সরাসরি মানুষের মুঠোফোনেই বার্তা চলে যাবে। তবে প্রযুক্তিগত কিছু বিষয় জড়িত থাকায় কিছুটা সময় লাগতে পারে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অ য মব র অ য ল র ট উপদ ষ ট র র বর ত ওই ন র
এছাড়াও পড়ুন:
বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড পেলেন রাইজিংবিডির রুমন চক্রবর্তী
কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেসক্লাবের আয়োজনে ক্লাবের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বেস্ট রিপোটিং অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১ নভেম্বর) রাতে স্থানীয় একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে এর আয়োজন করা হয়।
এতে বেস্ট রিপোটিং অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ উপলক্ষ্যে চারটি ক্যাটাগরিতে চারজন সাংবাদিককে সেরা প্রতিবেদকের সম্মাননা প্রদান করা হয়। জুরি বোর্ডের চারজন বিচারকের সংবাদ বিশ্লেষণের ভিত্তিতে “কিশোরগঞ্জে পানি উঠছে না নলকূপে, খাবার পানির তীব্র সংকট” অনুসন্ধানমূলক সংবাদের জন্য ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে রাইজিংবিডি ও একুশে টেলিভেশনের জেলা প্রতিনিধি রুমন চক্রবর্তীকে বেস্ট রিপোটিং অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ প্রদান করা হয়।
এছাড়াও মাল্টিমিডিয়া থেকে ডিবিসি জেলা প্রতিনিধি রাকিবুল হাসান রোকেল, প্রিন্ট মিডিয়া থেকে আজকের পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি সাজন আহমেদ পাপন ও অনলাইন মিডিয়া থেকে খবরের কাগজের জেলা প্রতিনিধি তাসলিমা আক্তার মিতুকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
ক্লাবের সভাপতি ও মানবজমিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আশরাফুল ইসলাম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. শরীফুল আলম অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী কিশোরগঞ্জ জেলা আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক এবং সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ।
কিশোরগঞ্জ সেন্ট্রাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও নয়াদিগন্ত পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি মো. আল-আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে সকল আগত অতিথিরা সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। এরপর শুরু হয় বেস্ট রিপোটিং অ্যাওয়ার্ড ২০২৫ সম্মাননা প্রদান।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে অতিথিরা বলেন, জেলা পর্যায়ে এমন আয়োজন সাংবাদিকদের কাজের প্রতি দায়িত্ব ও স্বচ্ছতা বাড়িয়ে দেবে। তাই এমন আয়োজন বছরে অনন্ত একবার হলেও প্রয়োজন। সাংবাদিকরা হলো রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, তাদের সম্মাননা করা মানে সমাজের প্রতি আরো বেশি দায়িত্ব নিয়ে কাজে আগ্রহ করা।
ঢাকা/রুমন/এস