মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারতেই উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের ছবির পরিবর্তে চোখে পড়ছিল চশমা পরা এক শিশুর ছবি। প্রথম দেখায় অনেকেই ভেবেছেন, ওয়েবসাইটটি হয়তো হ্যাকড (নিয়ন্ত্রণ অন্যের হাতে চলে যাওয়া) হয়েছে। আদতে হ্যাকড নয়, মেরুন রঙের শার্ট পরা শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক নিখোঁজ শিশু দিবসে সচেতনতা তৈরিতেই মন্ত্রণালয়ের এই অভিনব উদ্যোগ।

গতকাল ২৫ মে ছিল আন্তর্জাতিক শিশু নিখোঁজ দিবস। দিবসটি উপলক্ষে উপদেষ্টার পক্ষ থেকে ছবি পরিবর্তনের এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে আজ সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে আবার উপদেষ্টার ছবি ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।

উপদেষ্টার একান্ত সচিব তারেক মোহাম্মদ জাকারিয়া প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক শিশু নিখোঁজ দিবস উপলক্ষে সচেতনতামূলক প্রচারের অংশ হিসেবে এক দিনের জন্য শিশুটির ছবি দেওয়া হয়। ওয়েবসাইট হ্যাকড হয়নি। মন্ত্রণালয়ের আইটি বিভাগ থেকে ছবিটা কী উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে, তা উল্লেখ করে ক্যাপশন দেওয়ার কথা ছিল। সেটা না করায় কিছু ভুল–বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।

যেভাবে নিখোঁজ হয় শিশুটি

মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, মো.

আলিফ নামের চার বছরের শিশুটি গত শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে নিখোঁজ হয়। শিশুটির বাবা মো. কাসেম গাজীপুরের টঙ্গীর ছোটবাজার এলাকার এরশাদ নগরে একটি সেলুনের দোকান (নগর হেয়ার কাটিং সেলুন) চালান।

মো. কাসেম প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার দুপুরে আলিফ ও তার ফুফাতো ভাই (৬) সেলুনের পাশেই এক দোকান থেকে রুটি কেনে। এরপর তাদের পায়ে হেঁটে বাসায় ফেরার কথা। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ওই দোকানের সামনেই এক বোরকা পরিহিত নারীর খপ্পরে পড়ে শিশু দুটি। হঠাৎই তারা আনমনা হয়ে ওই নারীর সঙ্গে হেঁটে গিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ওঠে। তবে কিছু দূর যাওয়ার পর একজনকে রেখে শুধু আলিফকে কোলে নিয়ে বাসে উঠে যান ওই নারী।

অটোরিকশার চালকের বরাত দিয়ে মো. কাসেম বলেন, রিকশা থামিয়ে ওই নারী এক শিশুকে দাঁড় করিয়ে রেখে অন্যজনকে কোলে করে বাসে ওঠায় রিকশাচালকের সন্দেহ হয়। তবে তৎক্ষণাৎ দৌড়ে গিয়েও তিনি বাস থামাতে পারেননি। পরে অন্য শিশুটি আলিফের মাকে গিয়ে বিষয়টি জানালে এলাকায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। অটোরিকশাচালক তাঁদের ওই নারীর পোশাক ও ঘটনার বিস্তারিত বলেন।

এদিকে অপহরণের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া শিশুটি জানিয়েছে, অটোরিকশায় ওঠার পর থেকেই তার মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাব শুরু হয়। খারাপ লাগার কথা জানিয়ে সে প্রশ্ন করে, তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? প্রশ্ন শুনে অটোরিকশা থামিয়ে শিশুটিকে ওই নারী বলেন, ‘তুমি দাঁড়াও। আমরা মিষ্টি নিয়ে আসতেছি।’ এরপর ওই নারী আলিফকে কোলে নিয়ে বাসে উঠে পড়েন।

এ ঘটনায় ওই দিনই আলিফের বাবা টঙ্গী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। একমাত্র সন্তানকে খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় র‍্যাব-১ ও গাজীপুর পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তাঁকে আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

তবে শুধু আলিফ নয়, প্রতিনিয়তই দেশে শিশু অপহরণের ঘটনা ঘটছে। মৃত্যুর খবরও শোনা যায় প্রায়ই। দুই সপ্তাহ আগে তেজগাঁওয়ে ময়লার স্তূপের পাশে নালা থেকে রোজা মনি (৫) নামের এক কন্যাশিশুর বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধারের ঘটনা সবাইকে স্তব্ধ করে দেয়।

গত বছর প্রকাশিত পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে শিশু অপহরণের ঘটনায় ৬৯৫টি মামলা হয়েছে। সরাসরি থানায় ও আদালত থেকে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় শিশু অপহরণ ও পণবন্দীর (জিম্মি) মামলায় ৯ মাসে উদ্ধার করা হয়েছে ৪৯১ শিশু। সে হিসাবে প্রায় ২৯ শতাংশ শিশুই উদ্ধার হয়নি।

আলোচনায় ‘অ্যামবার অ্যালার্ট’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিখোঁজ শিশু খোঁজার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ‘অ্যামবার অ্যালার্ট’ পদ্ধতি। কোনো শিশু হারিয়ে গেলে বা অপহৃত হলে এর মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ ওই এলাকার বাসিন্দাদের মোবাইলে জরুরি বার্তা চলে যায়। ফলে শিশুটিকে খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।

আন্তর্জাতিক নিখোঁজ শিশু দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ গতকাল এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘পৃথিবীজুড়ে হারিয়ে যাওয়া শিশুর সংখ্যা কম নয়, বরং অনেক জায়গায় বাড়ছে। এই শিশুগুলো নানা রকম সংকটে পড়ে। তারা প্রতারিত, পাচার ও ধর্ষণের শিকার হতে পারে। পরিবারের জন্যও এটা কঠিন বিড়ম্বনার সময়।’

এই উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক দেশেই হারিয়ে যাওয়া শিশুদের নিয়ে অ্যামবার অ্যালার্ট নামে একটা অ্যালার্ম সিস্টেম বিরাজমান। ফলে দ্রুত এই শিশুদের রক্ষা করে পরিবারের কাছে ফেরত আনা সম্ভব হয়। আমাদের দেশেও এটা ভাবা হচ্ছে।’

মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশে খুব জরুরিভাবে এ রকম একটি ব্যবস্থা চালু করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে শারমীন এস মুরশিদ আরও বলেন, ‘আজকের (২৫ মে) এই দিবসে আমরা চাইব, এই নিখোঁজ শিশুদের খুঁজে বের করার ক্ষেত্রে আমার মন্ত্রণালয়ও ব্রত নেবে এবং উদ্ধার করার কাজটি করবে। তাদের উদ্ধারে অ্যামবার অ্যালার্টের মতোই একটি ব্যবস্থা চালু করব।’

বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে এ রকম একটি উদ্যোগ চালুর চেষ্টা করছিলেন সাদাত রহমান নামের এক তরুণ। তাঁর উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। বর্তমানে ‘অ্যামবার অ্যালার্ট ফর বাংলাদেশ’ নামে একটি ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজও চালু আছে। যেখানে নিখোঁজ শিশুর তথ্য প্রকাশ করা হয়।

সাদাত রহমান বলেন, ‘অ্যামবার অ্যালার্ট ফর বাংলাদেশ’ দ্রুত চালুর ব্যাপারে উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেছেন। আইসিটি বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে সব সরকারি ওয়েবসাইটে যেন সংশ্লিষ্ট এলাকার শিশু নিখোঁজের সংবাদ উল্লেখ থাকে, সে ব্যাপারেও কাজ চলছে। এ ছাড়া ‘অ্যামবার অ্যালার্ট’ চালু হলে সরাসরি মানুষের মুঠোফোনেই বার্তা চলে যাবে। তবে প্রযুক্তিগত কিছু বিষয় জড়িত থাকায় কিছুটা সময় লাগতে পারে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অ য মব র অ য ল র ট উপদ ষ ট র র বর ত ওই ন র

এছাড়াও পড়ুন:

‘ওজোনস্তর ক্ষয়ে স্বাস্থ্য, কৃষি ও প্রাণিজগৎ ঝুঁকির মুখে’

ওজোনস্তর ক্ষয়ের ফ‌লে মানবস্বাস্থ্য, কৃষি উৎপাদন ও প্রাণিজগৎ ঝুঁকির মুখে প‌ড়ে‌ছে ব‌লে মন্তব‌্য ক‌রে‌ছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তি‌নি বলেছেন, “ওজোনস্তর রক্ষায় রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য।”

বিশ্ব ওজোন দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকার আগারগাঁওয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা ব‌লেন, “মন্ট্রিয়ল প্রটোকলের মতো কার্যকর আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কারণে পৃথিবী আজ ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। এটি একটি দৃষ্টান্ত যে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে আন্তর্জাতিক আইনও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।”

উন্নত দেশগুলো অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সহায়তা করায় ওজোনস্তর রক্ষায় বৈশ্বিক সাফল্য এসেছে মন্তব‌্য ক‌রে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায়ও একইভাবে উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি ও সহযোগিতা অপরিহার্য। আমরা চাই, সমালোচনাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপে রূপান্তরিত করা হোক। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক আচরণে পরিবর্তন আনলেই টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব।”

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন মানিক।

এতে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. জিয়াউল হক এবং ইউএনডিপির প্রতিনিধি।

অনুষ্ঠানে বিশ্ব ওজোন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজকীয় ভোজে ট্রাম্প–মেলানিয়াকে কী কী খাওয়ালেন রাজা চার্লস
  • দুর্গাপূজায় নিরাপত্তায় সতর্ক অবস্থায় থাকবে পুলিশ: আইজিপি
  • শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে সিঙ্গাইরের ৭৭ মণ্ডপে অনুদান বিতরণ
  • শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন উপলক্ষে বন্দরে প্রস্তুুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত 
  • পটিয়ায় ব্যবসায়ীকে অপহরণ, দুই ঘণ্টা পর উদ্ধার
  • মোদির জন্মদিনে ট্রাম্পের ফোন, মেসির উপহার
  • বেনাপোল দিয়ে ইলিশের প্রথম চালান গেল ভারতে
  • সদর উপজেলায় শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা
  • ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি পেল ৩৭টি প্রতিষ্ঠান
  • ‘ওজোনস্তর ক্ষয়ে স্বাস্থ্য, কৃষি ও প্রাণিজগৎ ঝুঁকির মুখে’