সচিবালয়ে নিরাপত্তা জোরদার, বিজিবি মোতায়েন
Published: 27th, May 2025 GMT
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াট ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
সচিবালয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফলে মঙ্গলবার (২৭ মে) সকাল থেকে সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া কেউ ঢুকতে পারছেন না।
দাবি আদায়ে সোমবার (২৬ মে) টানা তৃতীয় দিনের মতো সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। আন্দোলনের সময় বেশ কিছু সময় সচিবালয়ের ফটকগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। উত্তাল হয়ে উঠে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু-সচিবালয়। এ সময় জনপ্রশাসন সচিবের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন। আজ আবারো বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আরো পড়ুন:
রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা আলোচনা জুনে
‘নাগরিক সেবা বাংলাদেশ’র যাত্রা শুরু
এদিকে, সচিবালয় ও তার আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
রাতে ডিএমপি এক নির্দেশনায় জানায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সচিবালয় ও সংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা ১০ মে জারিকৃত গণবিজ্ঞপ্তির ধারাবাহিক অংশ হিসেবে কার্যকর থাকবে।
ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, “কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদনের পর রবিবার গেজেট আকারে জারি হয়। এর আগে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর থেকেই কর্মচারীরা এটি বাতিলের দাবিতে মিছিল সমাবেশ করে আসছে।
তারা অভিযোগ করেন, এই আইন সরকারি কর্মচারীদের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করবে এবং চাকরির নিরাপত্তা অনিশ্চিত করে তুলবে।
অধ্যাদেশে যা আছে: অধ্যাদেশটিতে চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতায় এনে তিনটি শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো বরখাস্ত, অব্যাহতি এবং বেতন ও পদের গ্রেড কমিয়ে দেওয়া।
যেসব অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া যাবে সেগুলো হলো- অনানুগত্য দেখানো ও কাজে বাধা দেওয়া, একক বা সমবেতভাবে কাজে অনুপস্থিত থাকা, কাউকে কাজ থেকে বিরত থাকতে উস্কানি দেওয়া এবং কাউকে কাজ করতে বাধা দেওয়া।
অধ্যাদেশের সরকারি কর্মচারীদের আচরণ ও দণ্ড সংক্রান্ত বিশেষ বিধান সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়েছে- কোনো সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য কোনো কর্মচারীদের মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কাজে বাধা তৈরি করে তাহলে সেটি হবে একটি অসদাচরণ।
এমন অপরাধের জন্য পদ বা বেতন গ্রেড অবনমিতকরণ, চাকরি হতে অপসারণ এবং এমনকি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে।
আবার কেউ যদি একক বা দলবদ্ধভাবে ছুটি বা যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই কাজে অনুপস্থিত থাকেন বা এ ধরনের কাজ করতে কাউকে উস্কানি দেন বা কাউকে কাজ করতে বাধা দেন তাহলে তার জন্য একই শাস্তি প্রযোজ্য হবে।
এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বা এ বিষয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অভিযোগ গঠন করে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শাও নোটিশ দেবেন।
নোটিশের জবাব পেলে সেটি বিবেচনা করে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে কিংবা তাকে কেন দণ্ড দেওয়া হবে না সেজন্য নোটিশ জারির সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাও নোটিশ দিবেন কর্তৃপক্ষ।
এরপর অভিযুক্ত ব্যক্তি কারণ ব্যাখ্যা করে জবাব দিলে তা বিবেচনা করে বা জবাব না দিলে অধ্যাদেশে যেসব শাস্তির কথা বলা হয়েছে তার যেকোনো দণ্ড দেওয়া যাবে।
কোনো কর্মচারীকে দণ্ড দেওয়া হলে তিনি ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।
তবে রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে না। যদিও দণ্ডপ্রাপ্ত কর্মচারী আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে পারবেন। এরপর রাষ্ট্রপতি যেভাবে মনে করবেন সেভাবে আদেশ দিতে পারবেন।
কর্মচারীদের যে কারণে আপত্তি: সরকারি কর্মচারীরা আশঙ্কা করছেন, এ অধ্যাদেশের কারণে সরকারি কর্মচারীদের যে কোনো নিবর্তনমূলক সিদ্ধান্তও বিনা প্রতিবাদে মেনে নিতে হবে। পাশাপাশি তাদের মত প্রকাশের অধিকারও ক্ষুণ্ণ হতে পারে।
কারণ কাজ বন্ধ করে সভা সমাবেশ কিংবা কর্মবিরতির মতো প্রতিবাদ কর্মসূচি তারা আর করতে পারবেন না, যেটিকে তারা তাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার বলে তারা মনে করেন।
আবার এটি প্রয়োগ করে যে কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার মাধ্যমে ভিন্নমতে বিশ্বাসীদের জন্য চাকরি করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলেও তারা অনেকে মনে করেন।
ঢাকা/এএএম/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র প রব ন র জন য সরক র ধরন র
এছাড়াও পড়ুন:
অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।
এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।
বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশএমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।
এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।
কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেইএমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।
এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।
সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।
গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতাঅক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।
সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।