রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছুটা স্বস্তির সময় কাটানোর নগরবাসীর অন্যতম পছন্দের স্থান। এর পাশেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। আর কোলঘেঁষেই শাহবাগ থানা। ফলে নগরবাসীও সেখানে যেতে নিরাপদ বোধ করতেন। তবে পর্যাপ্ত নজরদারি ও তদারকির অভাবে উদ্যানটি হয়ে উঠেছিল মাদক কারবারি ও মাদকসেবীদের ‘অভয়ারণ্য’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার পর একে একে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অন্ধকার দিক। ১৩ মে দিবাগত ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার। তিনি স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মূলত তিনটি প্রধান চক্র সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রতিদিন গড়ে ৩০–৪০ কেজি গাঁজা বিক্রি করত। এসব চক্রকে বলা হয় ‘গ্রিপ’। প্রতিটি চক্র এলাকা ভাগ করে উদ্যানে মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ করত।

উদ্যান ঘিরে বিভিন্ন ধরনের অপরাধপ্রবণতা রয়েছে। হত্যার তদন্তে সেখানকার অপরাধপ্রবণতাসহ সম্ভাব্য সব বিষয়ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম, ডিবির যুগ্ম কমিশনার

অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদকের তিন চক্রের প্রধান হলেন মেহেদী, পারুলী আক্তার ওরফে পারুল ও নবী। তাঁদের অধীনে ৮–১০ জন গাঁজা বিক্রি করতেন। এই তিন চক্রপ্রধানের বাইরে ফারুক নামের এক ব্যক্তিও সেখানে গাঁজা ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। গাঁজা বিক্রি করা হতো সাদা কাগজে মুড়িয়ে ছোট ছোট ‘পুরিয়া’ বানিয়ে। গাঁজা সংগ্রহ থেকে সেবনকারীদের কাছে বিক্রি—এই পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলেন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।

গাঁজা বিক্রির এই চক্র ঘিরে পুরো উদ্যানেই গড়ে উঠেছে ভয়ংকর অপরাধজগৎ। গাঁজার ব্যবসার পাশাপাশি সীমিত পরিসরে হেরোইন ও ইয়াবাও বিক্রি হতো উদ্যানটিতে। অনেক ক্ষেত্রে বাইরে থেকে অন্যান্য মাদকদ্রব্য নিয়ে এসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সেবন করা হতো। উঠতি বয়সীরাই মূলত এই মাদকের ক্রেতা।

উদ্যানের অপরাধজগৎ সম্পর্কে বুঝতে সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করেন ও ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা রয়েছে, এমন আটজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁরা বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণ–তরুণীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে মাদক সেবন করেন। মূলত সন্ধ্যার পর থেকে রাত দেড়টা–দুইটা পর্যন্ত চলে মাদকের কারবার। দিনের বেলায় বহু মানুষের সমাগম হয় ঐতিহাসিক এই উদ্যানে। এই আগমন ঘিরে বিপুলসংখ্যক হরেক রকমের খাবারের দোকান গড়ে উঠেছিল উদ্যান এলাকায়।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রগুলো বলছে, মাদক কারবারের পাশাপাশি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল চোর চক্র এবং ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয়। আবার বিভিন্ন সময় যুগলদের ধরে নগদ অর্থ ও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়া হয়। এই ব্ল্যাক মেইলিংয়ে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বা ছাত্রসংগঠনের নেতা পরিচয় দেওয়া তরুণদের একাধিক গ্রুপ। মূলত এই চক্রটিই বিভিন্ন সময়ে খুন, জখম, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। আর এই চক্রের পেছনে বিভিন্ন সময়ে ছাত্রনেতাদের রাজনৈতিক আশীর্বাদের কথা সামনে এসেছে।

শাহরিয়ার হত্যার পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। সমালোচনার মুখে উদ্যানের নিরাপত্তা জোরদারে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেয় সরকার। এর অংশ হিসেবে ১৫ মে উদ্যানে উচ্ছেদ অভিযান চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অভিযানে উদ্যানে গড়ে ওঠা অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকানপাটসহ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনসোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দিনদুপুরে কী চলেছে ১৫ মে ২০২৫এলাকা ভাগ করে মাদক কারবার

উদ্যানে আগে একসময় শুধু চা–সিগারেটের ভ্রাম্যমাণ দোকান ছিল। তবে ধীরে ধীরে ফাস্টফুড, ফুচকা ও চটপটিসহ বিভিন্ন দোকান গড়ে ওঠে। আর দোকানগুলো ঘিরে ব্যাপক জনসমাগম হয়। মূলত এই দোকানের আশপাশসহ সুনির্দিষ্ট কিছু স্থান ঘিরে চলে মাদক কারবার।

উদ্যানকেন্দ্রিক একাধিক সূত্র জানায়, সাধারণত উদ্যানে এক পুরিয়া গাঁজা বিক্রি হয় ১০০ টাকায়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয়ে কেউ কেউ টাকা না দিয়েই পুরিয়া নেন, এমন ঘটনাও রয়েছে। ঘুরে ঘুরে গাঁজার পুরিয়া বিক্রি করা হয়। এমনকি শাহরিরয়ার হত্যার পর দুই দিন এই এলাকায় নিয়মিত গাঁজা সেবন চলে। এখনো লুকিয়ে–চুরিয়ে গাঁজা বিক্রি চলছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেহেদী, পারুলী ও নবী এলাকা ভাগ করে মাদকের নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের হয়ে কাজ করেন অর্ধশতাধিক ব্যক্তি।

উদ্যানের দক্ষিণ–পশ্চিম পাশের পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন মেহেদী। তাঁর গ্রুপের রবিন ও প্রপেলসহ পাঁচ–ছয়জন এই অংশদের মাদক কারবার দেখভাল করেন। গাঁজা কিনে উদ্যানের মুক্তমঞ্চে প্রকাশ্যেই সেবন করা হয়। আর রমনা কালীমন্দিরের পেছনের অংশে হেরোইন বিক্রি করা হয়। পাশাপাশি এখানে অল্প পরিমাণে ইয়াবার কেনাবেচাও হয়। মূলত কয়েক বছর ধরে উদ্যানের এই অংশটিই তরুণ–তরুণীদের কাছে মাদক সেবনের সবচেয়ে ‘নিরাপদ স্থান’ হয়ে উঠেছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি)–সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটক থেকে মাঝখান পর্যন্ত স্থানে মাদকের নিয়ন্ত্রণ করেন পারুল। তবে মাস ছয়েক ধরে পারুলে নিয়মিত উদ্যানে আসেন না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বর্তমানে তাঁর হয়ে মাঠে গাঁজা বিক্রির সমন্বয় করেন হাসিনা নামের এক নারী। পারুল মাদকের কারবার করে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক সম্পদ গড়ে তুলেছেন বলে জানিয়েছে উদ্যানের ভ্রাম্যমাণ অনেক দোকানিসহ অন্য ব্যক্তিরা। পারুলের স্বামীর নাম ইমন। তিনিও স্ত্রীর মাদক কারবারের অন্যতম সহযোগী। ইমন বর্তমানে কারাগারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বিপরীতে উদ্যানের উত্তর-পশ্চিমাংশ নিয়ন্ত্রণ করেন নবী নামের এক ব্যক্তি। এর বাইরে উদ্যানের পুব পাশে এবং অন্যান্য এলাকায় আরও ছোট ছোট কয়েকটি চক্র ইয়াবা কারবারে জড়িত বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

সূত্রমতে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গাঁজা আনা হয়। আবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য অভিযানের সময় উদ্ধার হওয়ার গাঁজার একটি অংশ কারবারিদের কাছে বিক্রি করেন। শাহবাগ থানার সাবেক একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ছিল। বর্তমানে কর্মরত একজন এসআইও এই চক্রে রয়েছেন বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। তাদের ভাষ্য, মাদক বিক্রির টাকার একটি অংশ পুলিশের অসাধু সদস্যদের কাছে যায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মূলত তিনটি প্রধান চক্র সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ কেজি গাঁজা বিক্রি করত। এসব চক্রকে বলা হয় ‘গ্রিপ’। প্রতিটি চক্র এলাকা ভাগ করে উদ্যানে মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ করত।মাদক কারবারিদের হাতে ‘সুইচ গিয়ার’

উদ্যানের বিভিন্ন ঘটনায় এখন পর্যন্ত অনেক অপরাধীই ধরা পড়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেওয়া ওই অপরাধীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখানকার মাদক কারবারীদের বড় অংশই সঙ্গে সুইচ গিয়ার (চাকু) অথবা টেজার (ইলেকট্রিক শক স্টানগান) রাখেন। শাহরিয়ার হত্যার পর উদ্যানে দীর্ঘদিন ধরে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায় জড়িত এমন তিনজন ব্যক্তিও প্রথম আলোকে এই দুই ধরনের অস্ত্রের কথা জানিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূলত গ্রেপ্তার এড়াতে এবং প্রতিপক্ষের সঙ্গে ঝামেলার সময় আত্মরক্ষার জন্য মাদক কারবারিরা সুইচ গিয়ার ও টেজার সঙ্গে রাখেন। আবার মাদক কারবারিদের হয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কাছ থেকেও বিভিন্ন সময় টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য মাদক কারবারে জড়িত ব্যক্তিরা সব সময় সঙ্গে অস্ত্র রাখেন।

বিভিন্ন সময়ে উদ্যানে যাওয়া ব্যক্তিদের ওপর হামলার ঘটনায়ও জড়িয়েছেন এই অপরাধীরা। যেমন কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীর ছেলেকে মারধর করেছিলেন মেহেদী ও তাঁর সহযোগীরা। পরে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে ঘটনাটি আপসরফা হয়।

আরও পড়ুনশাহরিয়ার হত্যার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা২৬ মে ২০২৫শাহরিয়ার হত্যার দিন কী হয়েছিল

১৩ মে দিবাগত রাত ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে শাহরিয়ার গুরুতর আহত হন। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও সংশ্লিষ্ট এলাকার আশপাশে ছিলেন, এমন পাঁচজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে পেরেছে প্রথম আলো। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া গেছে।

ওই ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, শাহরিয়ার তাঁর দুই বন্ধু রাফি ও বায়েজিদকে নিয়ে উদ্যানে মোটরসাইকেলে করে ঘুরতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁদের ওপর আক্রমণ করেন মেহেদী গ্রুপের সদস্যরা। তাঁরা প্রথমে শাহরিয়ারকে টেজার দিয়ে আক্রমণ করেন। একপর্যায়ে শাহরিয়ার তাঁদের থামানোর চেষ্টা করলে সুইচ গিয়ার দিয়ে তাঁর উরুতে আঘাত করা হয়। এ সময় পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা আরেকটি মোটরসাইকেল পরে যায়। সেটি ছিল কয়েকজন মাদকসেবীর। তখন ওই গ্রুপটিও শাহরিয়ারদের ওপর হামলায় অংশ নেয়। আবার মেহেদী গ্রুপের লোকজনও ওই মাদকসেবীদের শাহরিয়ারদের পক্ষে লোক মনে করে তাঁদের ওপর হামলা চালায় এবং সম্রাট নামের একজনের উরুতে সুইচ গিয়ার দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করা একজন প্রথম আলোকে বলেন, শাহরিয়ারকে আঘাত করা ব্যক্তি ছিলেন সাদা পোশাক পরা। ঘটনার পরপরই তিনি একটি মোটরসাইকলে চড়ে পালিয়ে যান।

শাহরিয়ার হত্যা মামলাটি বর্তমানে তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উদ্যান ঘিরে বিভিন্ন ধরনের অপরাধপ্রবণতা রয়েছে। হত্যার তদন্তে সেখানকার অপরাধপ্রবণতাসহ সম্ভাব্য সব বিষয়ই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আরও পড়ুনসোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অবৈধ দোকান–স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে১৫ মে ২০২৫ঢাবি উপাচার্যের সঙ্গে পুলিশের সাক্ষাৎ

এদিকে শাহরিয়ার হত্যার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল রোববার পুলিশের বরাত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

শিগগিরই পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.

নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে দেখা করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম, সহকারী কমিশনার (প্যাট্রোল) মো. আমজাদ হোসেন এবং শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে পুলিশ জানায়, অধিকতর তদন্তের স্বার্থে এখন পর্যন্ত যে অগ্রগতি হয়েছে, সেটি সবাইকে জানানো সম্ভব হচ্ছে না। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের পাশাপাশি তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুনশাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিলেন প্রত্যক্ষদর্শী বন্ধু১৪ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ভ ন ন সময় ক রব র দ র প রথম আল স ত রগ ল রক ষ ক র ন ম র এক দ র ওপর র তদন ত ন এল ক এল ক য় ভ গ কর ব যবস ঘটন য় র সময় র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ

চলতি অক্টোবর মাসে দেশে অজ্ঞাতনামা লাশ এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় বেশ খানিকটা বেড়েছে। এ তথ্য তুলে ধরেছে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। প্রতিষ্ঠানটির অক্টোবর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এমএসএফ বলেছে, এসব ঘটনায় জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ দুই ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আছে।

এমএসএফ প্রতি মাসে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে। আজ শুক্রবার অক্টোবর মাসের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন এবং নিজস্ব তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এমএসএফ মানবাধিকার প্রতিবেদন তৈরি করে।

বেড়েছে অজ্ঞাতনামা লাশ

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্টোবর মাসে মোট ৬৬টি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এটি অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়; বরং নাগরিক জীবনে নিরাপত্তাহীনতার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) এর সংখ্যা ছিল ৫২। এসব অজ্ঞাতনামা লাশের বেশির ভাগই নদী বা ডোবায় ভাসমান, মহাসড়ক বা সড়কের পাশে, সেতুর নিচে, রেললাইনের পাশে, ফসলি জমিতে ও পরিত্যক্ত স্থানে পাওয়া যায়। অল্পসংখ্যক মৃতদেহ গলাকাটা, বস্তাবন্দী ও রক্তাক্ত বা শরীরে আঘাতের চিহ্নসংবলিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

এমএসএফ বলেছে, অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা বেড়েই চলেছে এবং তা জনজীবনের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জোরালোভাবে সবার সামনে প্রতিফলিত হচ্ছে। পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় উদ্ধারে অপারগতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১টি শিশু, ১ কিশোর, ১১ জন নারী ও ৫৩ জন পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭ বছর বয়সী শিশু; ১৫ বছর বয়সী কিশোর; ২০ থেকে ৩০ বয়সী ১৫ জন পুরুষ ও ২ জন নারী; ৩১ থেকে ৪০ বয়সী ১৯ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী; ৪১ থেকে ৫০ বয়সী ১ নারী ও ৫ জন পুরুষ এবং ৫০ বছর বয়সের বেশি ১১ জন পুরুষ ও ১ নারী রয়েছেন। এর মধ্যে অজ্ঞাতনামা তিনজনের বয়স শনাক্ত করা যায়নি।

এমএসএফ বলেছে, শুধু অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না; বরং পরিচয় জানার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। পরিচয় উদ্ধার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

কারা হেফাজতে মৃত্যু বাড়ছেই

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে কারা হেফাজতে মোট ১৩ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল মোট ৮। এ মাসে ছয়জন কয়েদি ও সাতজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে।

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চারজন কয়েদি ও দুজন হাজতি, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন কয়েদি ও শেরপুর জেলা কারাগারে একজন কয়েদি মারা যান। এ ছাড়া খুলনা জেলা কারাগারে, টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে, চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে, সিরাজগঞ্জ কারাগারে ও মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন করে হাজতি বন্দী মারা যান। সব বন্দীর মৃত্যু হয় কারাগারের বাইরে হাসপাতালে।

এমএসএফের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কারা হেফাজতে মৃত্যু এবং অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বৃদ্ধি মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতির চিত্র তুলে ধরে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই লাশ উদ্ধার করেই ক্ষান্ত হচ্ছে। কিন্তু এসব লাশ উদ্ধার করে তার পরিচয় শনাক্ত করা এবং সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত করে মৃত্যুর কারণ উদ্‌ঘাটন করাই শুধু নয়, এসব লাশ আত্মীয়-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব বাহিনীর কাজ। কিন্তু একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আর কোনো কাজ নেই।

সাইদুর রহমান বলেন, অজ্ঞাতনামা লাশের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং হেফাজতে মৃত্যু বৃদ্ধি জনমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করে।

গণপিটুনিতে হত্যা চলছেই, বেড়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা

অক্টোবর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নিহত এবং ৫৪৭ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজন গুলিবিদ্ধ এবং নিহত ব্যক্তিরা বিএনপির কর্মী–সমর্থক। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৩৮টি ঘটনা ঘটেছিল।

সহিংসতার ৪৯টি ঘটনার মধ্যে ১১টি ঘটনায় রাজনৈতিক বিরোধ ও সহিংসতাকে কেন্দ্র করে পার্টি অফিস, বসতবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও অগ্নিকাণ্ড এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

অক্টোবর মাসে মোট গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে ৪৪টি। আগের মাসে এ ঘটনা ঘটেছিল ৪৩টি। এ মাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ১২। আগের মাসে নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতা ভিন্ন
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ, নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা
  • ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
  • গণভোট নিয়ে উত্তাপ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না: প্রেস সচিব
  • অজ্ঞাতনামা লাশ আর কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে, শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় জনমনে সন্দেহ: এমএসএফ
  • কথার আগে গুলি চালায় ‘কাকন বাহিনী’, দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পদ্মার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল