Prothomalo:
2025-10-18@17:45:08 GMT

মহানবী (সা.)–কে কতটা মানতে হবে

Published: 13th, July 2025 GMT

আল্লাহ-তাআলা বলেন, ‘আমি একমাত্র এ-উদ্দেশ্যেই রাসুল প্রেরণ করেছি, যেন আল্লাহর নির্দেশ-অনুযায়ী তাঁকে মেনে চলা হয়।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৬৪)

সকল রাসুলের ক্ষেত্রে আল্লাহর একই রীতি, তারা যে-বিধান নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন তা পৌঁছে দেবেন এবং অনুসারীদের কর্তব্য হলো, তাকে মান্য করবে এবং নির্দেশ বাস্তবায়ন করবে। কোরআনের অনেক আয়াতে নবীজির আনুগত্য করতে বলা হয়েছে। অধিকাংশ তাকে মান্য করতে বলা হয়েছে আল্লাহর আদেশ মানার কথার সঙ্গে মিলিত হয়ে।

যেমন, আল্লাহ-তাআলা বলেছেন, ‘ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলকে মানো’ (সুরা আনফাল: ২০)।

কোরআনের অনেক আয়াতে নবীজির আনুগত্য করতে বলা হয়েছে। অধিকাংশ তাকে মান্য করতে বলা হয়েছে আল্লাহর আদেশ মানার কথার সঙ্গে মিলিত হয়ে।

‘বলুন, তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের মান্য করো’ (সুরা আলে ইমরান: ৩২)। ‘আর তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের আদেশের অনুগত থাকো, যাতে তোমাদের ওপর দয়া করা হয়’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩২)।

‘যে ব্যক্তি রাসুলকে মান্য করল, সে আল্লাহকে মানল’ (সুরা নিসা: ৮০)।

আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.

)০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এই অনুগত থাকা বা মান্য করার অর্থ কী, সে-বিষয়টিও কোরআনে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, ‘রাসুল তোমাদের যা দিয়েছেন তা গ্রহণ করো এবং তোমাদের যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকো।’ ‘সুরা হাশর, আয়াত: ৭)

কোরআনের পাশাপাশি অনেক হাদিসেও আল্লাহ ও রাসুলের আদেশ মানতে বলা হয়েছে। কতটা? তা বোঝার জন্য একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়। আবু সাইদ ইবনে মুয়াল্লা (রা.) বলেন, ‘‘মসজিদে নামাজ পড়ছিলাম, এমন সময় নবীজি আমাকে ডাকলেন, আমি সাড়া দিলাম না। নামাজ শেষে বললাম, আল্লাহর রাসুল, আমি তো নামাজ পড়ছিলাম।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ কি বলেননি, ‘তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের ডাকে সাড়া দাও, যখন তিনি তোমাদের ডাকেন, কেননা, তাতে রয়েছে তোমাদের জীবন’ (সুরা আনফাল: ২৪)।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৪,৪৭৪)

আবার বিদায় হজের সময় যাদের কোরবানির পশু ছিল না, তাদের বললে ইহরামমুক্ত হয়ে যেতে এবং হজের বদলে ওমরা করে নিতে। অনেকে ইতস্তত করছিল। নবীজি (সা.) রাগ করলেন, কেন তারা তারা গড়িমসি করেছে। সাহাবিদের দ্বিধাও ছিল রাসুলের কাছে অবাধ্যতা। ফলে তিনি আল্লাহর অভিশাপ পড়ার আশঙ্কা করেছিলেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১.২১১)

আর তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের আদেশের অনুগত থাকো, যাতে তোমাদের ওপর দয়া করা হয়।সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩২)

মহানবীর (সা.) আদেশ মানলে এবং তার আনীত বিধানে অনুগত থাকলে কী প্রতিদান পাবে, তা-ও আল্লাহ বলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আর যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের আদেশ মান্য করবে, তারা তাদের সঙ্গী হবে যাদের প্রতি আল্লাহ পুরস্কার দিয়েছেন। তারা হলেন নবী, সত্যবাদী, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৬৯)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আমার প্রতিটি উম্মত বেহেশতে প্রবেশ করবে; তবে সে নয়, যে অস্বীকারকারী।’ সাহাবিগণ বললেন, ‘আল্লাহর রাসুল, অস্বীকারকারী কে?’ তিনি বললেন, ‘যে আমার আনুগত্য করবে সে বেহেশতে যাবে। যে আমার অবাধ্যতা করবে, সে-ই অস্বীকারকারী।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৭,২৮০)

আরও পড়ুনভালো প্রতিবেশী আল্লাহর প্রিয়জন১৩ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ ও র স ল র ম ন য কর ক রআন য করত

এছাড়াও পড়ুন:

শোক, শ্রদ্ধা ও প্রীতির স্পর্শে স্মৃতির মানুষকে ফিরে পাওয়া

স্বজন, সুহৃদেরা তাঁকে ভুলতে পারছেন না। সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে তাঁরা রেখেছেন স্মৃতিতে অম্লান। রেখেছেন স্মরণে নিরন্তর। তাঁকে হারিয়ে শোক, শ্রদ্ধা, প্রীতির স্পর্শে যেন নতুন করে ফিরে পেলেন বেঙ্গল শিল্পালয়ে। আজ শনিবার বিকেলে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের স্মরণসভার আয়োজন করেছিল বেঙ্গল ফাউন্ডেশন।

নির্ধারিত সময় ঠিক বিকেল চারটায় শুরু হয়েছিল বিষাদময় এই আয়োজন। কয়েক প্রজন্মের প্রিয় শিক্ষক, কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক, নন্দনতত্ত্ববিদ, অনুবাদক এবং সর্বোপরি আপাদমস্তক সজ্জন ইমেরিটাস অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম অনেকটা আকস্মিকভাবেই চলে গেলেন ১০ অক্টোবর। তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩ অক্টোবর। সুস্থই ছিলেন। সেদিন ইউল্যাবে ক্লাস নিতে যাচ্ছিলেন। তার পরের ঘটনা তো ইতিমধ্যে সবারই জানা। সেই শোকের ছায়া প্রিয়জনের মন থেকে যে সরেনি, এই স্মরণসভাতেও তার প্রকাশ দেখা গেল। ঢাকার দুর্বিষহ যানজটের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাঁর অনুরাগীরা অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগেই এসে পুরো কক্ষ পূর্ণ করে তুলেছিলেন। আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকে। বাইরে চেয়ার পাতা হলো। সেখানেও অচিরেই সব আসন পূর্ণ হলো। বাইরেও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ডিজিটাল পর্দায় ভেতরের কার্যক্রম দেখছিলেন অনেকে।

শুরুতেই বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক লুভা নাহিদ চৌধুরী সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বহুমুখী প্রতিভা ও কাজের পরিচিতি তুলে ধরেন। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের তিনি ছিলেন সহসভাপতি। বেঙ্গল গ্যালারির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে তাঁর যুক্ততা ছিল। জড়িত ছিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের শিল্পকলাবিষয়ক পত্রিকা যামিনী, জীবনধারা পত্রিকা চারবেলা চারদিক, আইস টুডের সঙ্গে। দেশের চারুকলার পরিচিতি বিদেশে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এখন তিনি কাছের মানুষ থেকে স্মৃতির মানুষে পরিণত হয়েছেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে তাঁর প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

আলোচনা পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের সহকর্মী অধ্যাপক ফখরুল আলম বলেন, মনজুরুল ইসলামের সঙ্গে দীর্ঘ ৫১ বছরের সম্পর্ক। বড় মাপের লেখক ছিলেন। বহুমাত্রিক প্রতিভাবান ছিলেন তিনি। আড্ডা দিতে ভালোবাসতেন। একটা সময় প্রায় প্রতিদিন তাঁরা আড্ডা দিয়েছেন। সুরসিক ছিলেন। সংবেদনশীল ছিলেন। বহু মানুষকে তিনি বহুভাবে উপকার করেছেন। তাঁর কাছে কেউ কিছু চেয়ে বিফল হননি। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার চাকরিটাও তাঁর সহায়তায় হয়েছে’ বলে তিনি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সেই স্মৃতিচারণা করেন। মৃত্যুর দিন পনেরো আগে তাঁর সঙ্গে আড্ডায় মনে হয়েছিল তিনি যেন কিছুটা অসুস্থ। কিন্তু অসুস্থতার কথা তিনি আড়ালে রেখেছিলেন। সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের চলে যাওয়ার দুঃখটা তাঁর মনে চেপে বসেছে বলে জানালেন।

আরেক সহকর্মী ও বন্ধু অধ্যাপক কায়সার হক বললেন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ফখরুল ইসলাম ও তিনি একসঙ্গে বহু কাজ করেছেন। ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল তাঁদের। সেই বন্ধন ছিন্ন হলো। তাঁকে নিয়ে এখন শোকসভা হচ্ছে। যেখানেই তাঁর কথা আলোচনা হচ্ছে, তাঁর অনুরাগী ও ছাত্রছাত্রীদের অনেকে তাঁর জন্য কেঁদেছে। তাঁর প্রতি এই ভালোবাসা সবার মনে থেকে যাবে। সাহিত্যে অবদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মনজুরুল ইসলাম কবিতা দিয়ে তাঁর লেখালেখি শুরু করলেও পরে গদ্যের দিকে চলে যান। বিশেষ করে অভিনব ছিল তাঁর ছোট গল্পগুলো। গল্প লেখার ক্ষেত্রে একটি বিশেষ রীতি ছিল তাঁর। তাঁকে আমরা মনে রাখব, তিনি যা করে গেছেন, সেখান থেকে যা শিক্ষণীয়, তা অনুসরণ করব।’

শিল্পী অধ্যাপক ফরিদা জামান দীর্ঘদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিকের একই ভবনে থাকতেন। তিনি সেসব দিনের স্মৃতিচারণা করে বলেন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম শিল্পকলার উঁচু স্তরের সমালোচক ছিলেন। বিদেশে দেশের চারুকলার প্রচার-প্রসারে তাঁর বিশেষ অবদান রয়েছে। শিল্পকলাকে তিনি খুব ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারতেন। সহজবোধ্যভাবে লিখতেন। শিল্পী যে আনন্দ ও বেদনা তাঁর সৃষ্টিতে অনুভব করেছেন, বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে তিনি সেই অনুভব সহজভাবে ব্যাখ্যা করতেন। এ জন্য সাধারণ পাঠক ও দর্শকেরাও তা বুঝতে পারতেন। বাংলাদেশে শিল্পকলার প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তাঁর ভূমিকার কথা উল্লেখ করতেই হবে।

ইউল্যাবের উপাচার্য অধ্যাপক ইমরান রহমান বলেন, শিক্ষকতার বাইরেও ছিল তাঁর বিশাল ভুবন। ইউল্যাবে শিক্ষকতা ছাড়াও অনেক কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। অসাম্প্রদায়িক, উদার মানসিকতা ও মুক্তচিন্তার মানুষ ছিলেন। তিনি যে মূল্যবোধ ধারণ করেছেন, তা পরের প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।

পরিবারের পক্ষে তাঁর ভাগনে ড. শামিম সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ বলেন, তাঁর সঙ্গে কথা বলা ছিল আনন্দময় অভিজ্ঞতা। তিনি ছাত্রদের কাছে বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। কাছের মানুষেরা তাঁর থেকে উপকৃত হয়েছেন। এমনি আন্তরিক ছিলেন তিনি যে প্রত্যেকেই মনে করতেন তাঁর সঙ্গেই তাঁর সম্পর্ক সবচেয়ে নিবিড়। সফল মানুষেরা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। কিন্তু সার্থক মানুষেরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে থাকেন। তিনি সার্থক মানুষের জীবন যাপন করেছেন।

লেখক ও সিটি ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর আরেফিন তাঁর প্রিয় শিক্ষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের দীর্ঘ স্মৃতিচারণা করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন। অসংখ্য মানুষের জন্য তিনি ছিলেন আলোকবর্তিকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ