যশোরের ভবদহ অঞ্চলের বিলগুলোয় এবার বোরো ধান চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নদী দিয়ে ঠিকমতো পানি না নামায় এলাকার বিলগুলো এখনো জলাবদ্ধ। এমন অবস্থায় কৃষকেরা শ্যালো মেশিন দিয়ে বিলের পানি সরানোর চেষ্টা করছেন। এরপরও ভবদহ অঞ্চলের অন্তত ১১ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ ভবদহ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলে অন্তত ৫২টি ছোট-বড় বিল আছে। কিন্তু পলি পড়ে নাব্যতা হারানোয় এসব নদ–নদী দিয়ে এখন ঠিকমতো পানি নিষ্কাশন হয় না। এ অবস্থায় গত ১৩ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর টানা বর্ষণে ভবদহের ৩৩৮ দশমিক ২৭৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। অতিবৃষ্টিতে এলাকার বিলগুলো প্লাবিত হয়। বিল উপচে পানি ঢোকে আশপাশের গ্রামগুলোয়। পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়ে প্রায় দেড় লাখ মানুষ। এরপর শ্রী ও হরি নদ–নদীতে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে পাইলট (পরীক্ষামূলক) চ্যানেল কাটার কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। একপর্যায়ে বাড়িঘরের পানি নেমে গেলেও বেশির ভাগ বিল তলিয়ে রয়েছে।

অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভবদহ অঞ্চলে কৃষক আছেন প্রায় ৫০ হাজার। এখানকার ২৪ হাজার ৯০৪ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হতো। জলাবদ্ধতার কারণে এবার উপজেলার তিনটির ১১ হাজার ৮০২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

গত চার দিন অন্তত ১০টি বিল এলাকায় দেখা গেছে, বিলগুলো ভরে আছে পানিতে। বিল বোকড়, বিল কেদারিয়া, বিল কপালিয়া, বিল গান্ধীমারী, বিল গজালমারী ও বিল পায়রায় শুধু পানি আর পানি। বিলের কোথাও কোনো ধানখেত নেই। বিলের পানিতে ভাসছে কিছু আগাছা আর শাপলা। 

সোমবার (৬ জানুয়ারি) অভয়নগরে সুন্দলী ইউনিয়নের শুড়িরডাঙ্গা বিলে দেখা যায়, তিনটি শ্যালো মেশিন দিয়ে বিলের পানি সেচে খালে ফেলা হচ্ছে। পাশে বন্ধ পড়ে আছে আরও একটি শ্যালো মেশিন।

সেখানে দেখা হয় সুন্দলী গ্রামের কৃষক গোপাল মণ্ডলের সঙ্গে। বিলে তাঁর ৩ বিঘা (৪২ শতকে বিঘা) জমি আছে। গত বছর তিনি সব জমিতে ধান করেছিলেন। তিনি বলেন, ভবদহ স্লুইসগেট দিয়ে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় এবার প্রায় ৫০০ বিঘার শুড়িরডাঙ্গা বিলটি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। বিলে বুকসমান পানি ছিল। এক মাস ধরে কৃষকেরা মিলে বিঘাপ্রতি ২ হাজার ২০০ টাকা করে দিয়ে বিলের পানি সেচে বের করছেন। এখন বিলের ওপরের দিকে হাঁটু এবং নিচের দিকে কোমরসমান জল আছে। সেচের পর এবার বিলে প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করা সম্ভব হবে।

কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বোরো মৌসুম। বোরোর বীজতলা তৈরির সময় ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। বোরো ধানের চারা রোপণের সময় ১ থেকে ৩১ জানুয়ারি।

জলাবদ্ধতার বিষয়ে যশোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ভবদহ এলাকার পানিনিষ্কাশনে হরি নদে তিনটা এক্সকাভেটর ও একটি ড্রেজার, আপার ভদ্রা নদীতে দুটি এবং দুটি খালে দুটি এক্সকাভেটর দিয়ে পাইলট চ্যানেল কাটার কাজ চলছে। ভবদহ ২১-ভেন্ট স্লুইসগেটের ওপর ১৪টি এবং ৯-ভেন্ট স্লুইসগেটের ওপর পাঁচটি সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ফলে ভবদহ অঞ্চল থেকে ২ দশমিক ৪৯ ফুট পানি নেমে গেছে। দ্রুত পানি নামছে। আশা করছেন বেশির ভাগ জমিতে বোরো চাষ সম্ভব হবে।

তবে এ বিষয়ে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ‘ভবদহ ২১-ভেন্ট স্লুইসগেট থেকে ভাটিতে পাউবোর হরি নদ খননের দীর্ঘসূত্রতায় বিলগুলোয় বোরো চাষে সংশয় দেখা দিয়েছে।  এ অবস্থা চলতে থাকলে এলাকার বেশির ভাগ জমিতে বোরো ধান চাষ সম্ভব হবে না।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এই সিনেমা শুধু শিশুদের জন্য নয়

সিডনির এডমন্ডসন পার্কের ইডি স্কয়ারে শনিবার সন্ধ্যায় যেন সিনেমা হলে ঢোকার আগেই গল্প শুরু হয়ে যায়। প্রবেশপথের সামনে উপচে পড়া ভিড়, শিশুদের হাতে রঙিন পপকর্নের বাক্স, গোলাপি আর হালকা সবুজ রঙের পোশাকে সাজানো দর্শক—সব মিলিয়ে স্পষ্ট বোঝা যায়, আজকের সন্ধ্যাটা আর দশটা মুভি নাইটের মতো নয়। ‘উইকেড: ফর গুড’ দেখতে আসা দর্শকেরা যেন ইচ্ছাকৃতভাবেই সিনেমার জগৎটাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন বাস্তব জীবনে। মনে হচ্ছিল, হলে ঢোকার আগেই সবাই ঢুকে পড়েছে এক রঙিন রূপকথার আবহে।
এই ছবি দেখার ব্যাপারে কয়েক দিন ধরেই মেয়ের আবদার চলছিল। সময় আর টিকিট—দুটোর সমন্বয় হচ্ছিল না। অবশেষে শনিবার সন্ধ্যায় সেই অপেক্ষার ইতি হলো। স্ত্রী আর দুই সন্তান—জারা ও জোহানকে নিয়ে সিনেমা হলে ঢোকার সময় টের পেলাম, আমরা শুধু একটি ছবি দেখতে যাচ্ছি না; বরং পরিবার নিয়ে ভাগ করে নেওয়ার মতো একটি অভিজ্ঞতার দিকে এগোচ্ছি। আলোঝলমলে লবি, চারপাশে ভেসে বেড়ানো পরিচিত মিউজিক্যাল সুর, আর শিশুদের চোখে খাঁটি উচ্ছ্বাস—সব মিলিয়ে ছবির শুরু হওয়ার অনেক আগেই তৈরি হয়ে যায় আলাদা এক আবহ। মনে হচ্ছিল, পর্দায় গল্প শুরু হওয়ার আগেই আমরা তার ভেতরে ঢুকে পড়েছি।

ব্রডওয়ের জনপ্রিয় মিউজিক্যাল ‘উইকেড’ অবলম্বনে নির্মিত প্রথম সিনেমার সিকুয়েল ‘উইকেড: ফর গুড’। প্রথম ছবির সাফল্যের পর প্রত্যাশার চাপ ছিল স্বাভাবিকভাবেই প্রবল। পরিচালক জন এম চু এবার সেই চাপ সামলাতে গিয়ে রঙিন জাঁকজমকের পাশাপাশি গল্পের আবেগময় স্তরটিকে আরও গভীর করেছেন। আগের পর্বের দৃশ্যবৈভব আর উজ্জ্বলতার ঝলক এখানে কিছুটা সংযত হলেও সম্পর্ক, দ্বন্দ্ব আর বিশ্বাসঘাতকতার সূক্ষ্ম টানাপোড়েনে এই পর্বটি আলাদা মাত্রা পায়।

আলোঝলমলে লবি, চারপাশে ভেসে বেড়ানো পরিচিত মিউজিক্যাল সুর, আর শিশুদের চোখে খাঁটি উচ্ছ্বাস—সব মিলিয়ে ছবির শুরু হওয়ার অনেক আগেই তৈরি হয়ে যায় আলাদা এক আবহ। মনে হচ্ছিল, পর্দায় গল্প শুরু হওয়ার আগেই আমরা তার ভেতরে ঢুকে পড়েছি।‘উইকেড : ফর গুড’–এর দৃশ্য। আইএমডিবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ