পানি নামছে না, বোরো চাষে অনিশ্চয়তা
Published: 11th, January 2025 GMT
যশোরের ভবদহ অঞ্চলের বিলগুলোয় এবার বোরো ধান চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নদী দিয়ে ঠিকমতো পানি না নামায় এলাকার বিলগুলো এখনো জলাবদ্ধ। এমন অবস্থায় কৃষকেরা শ্যালো মেশিন দিয়ে বিলের পানি সরানোর চেষ্টা করছেন। এরপরও ভবদহ অঞ্চলের অন্তত ১১ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা সম্ভব হবে না বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ ভবদহ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলে অন্তত ৫২টি ছোট-বড় বিল আছে। কিন্তু পলি পড়ে নাব্যতা হারানোয় এসব নদ–নদী দিয়ে এখন ঠিকমতো পানি নিষ্কাশন হয় না। এ অবস্থায় গত ১৩ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর টানা বর্ষণে ভবদহের ৩৩৮ দশমিক ২৭৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। অতিবৃষ্টিতে এলাকার বিলগুলো প্লাবিত হয়। বিল উপচে পানি ঢোকে আশপাশের গ্রামগুলোয়। পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়ে প্রায় দেড় লাখ মানুষ। এরপর শ্রী ও হরি নদ–নদীতে মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে পাইলট (পরীক্ষামূলক) চ্যানেল কাটার কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। একপর্যায়ে বাড়িঘরের পানি নেমে গেলেও বেশির ভাগ বিল তলিয়ে রয়েছে।
অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভবদহ অঞ্চলে কৃষক আছেন প্রায় ৫০ হাজার। এখানকার ২৪ হাজার ৯০৪ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হতো। জলাবদ্ধতার কারণে এবার উপজেলার তিনটির ১১ হাজার ৮০২ হেক্টর জমিতে বোরো চাষে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
গত চার দিন অন্তত ১০টি বিল এলাকায় দেখা গেছে, বিলগুলো ভরে আছে পানিতে। বিল বোকড়, বিল কেদারিয়া, বিল কপালিয়া, বিল গান্ধীমারী, বিল গজালমারী ও বিল পায়রায় শুধু পানি আর পানি। বিলের কোথাও কোনো ধানখেত নেই। বিলের পানিতে ভাসছে কিছু আগাছা আর শাপলা।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) অভয়নগরে সুন্দলী ইউনিয়নের শুড়িরডাঙ্গা বিলে দেখা যায়, তিনটি শ্যালো মেশিন দিয়ে বিলের পানি সেচে খালে ফেলা হচ্ছে। পাশে বন্ধ পড়ে আছে আরও একটি শ্যালো মেশিন।
সেখানে দেখা হয় সুন্দলী গ্রামের কৃষক গোপাল মণ্ডলের সঙ্গে। বিলে তাঁর ৩ বিঘা (৪২ শতকে বিঘা) জমি আছে। গত বছর তিনি সব জমিতে ধান করেছিলেন। তিনি বলেন, ভবদহ স্লুইসগেট দিয়ে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় এবার প্রায় ৫০০ বিঘার শুড়িরডাঙ্গা বিলটি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। বিলে বুকসমান পানি ছিল। এক মাস ধরে কৃষকেরা মিলে বিঘাপ্রতি ২ হাজার ২০০ টাকা করে দিয়ে বিলের পানি সেচে বের করছেন। এখন বিলের ওপরের দিকে হাঁটু এবং নিচের দিকে কোমরসমান জল আছে। সেচের পর এবার বিলে প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করা সম্ভব হবে।
কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বোরো মৌসুম। বোরোর বীজতলা তৈরির সময় ১৫ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত। বোরো ধানের চারা রোপণের সময় ১ থেকে ৩১ জানুয়ারি।
জলাবদ্ধতার বিষয়ে যশোর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, ভবদহ এলাকার পানিনিষ্কাশনে হরি নদে তিনটা এক্সকাভেটর ও একটি ড্রেজার, আপার ভদ্রা নদীতে দুটি এবং দুটি খালে দুটি এক্সকাভেটর দিয়ে পাইলট চ্যানেল কাটার কাজ চলছে। ভবদহ ২১-ভেন্ট স্লুইসগেটের ওপর ১৪টি এবং ৯-ভেন্ট স্লুইসগেটের ওপর পাঁচটি সেচযন্ত্র দিয়ে সেচ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। ফলে ভবদহ অঞ্চল থেকে ২ দশমিক ৪৯ ফুট পানি নেমে গেছে। দ্রুত পানি নামছে। আশা করছেন বেশির ভাগ জমিতে বোরো চাষ সম্ভব হবে।
তবে এ বিষয়ে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ‘ভবদহ ২১-ভেন্ট স্লুইসগেট থেকে ভাটিতে পাউবোর হরি নদ খননের দীর্ঘসূত্রতায় বিলগুলোয় বোরো চাষে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এলাকার বেশির ভাগ জমিতে বোরো ধান চাষ সম্ভব হবে না।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ
কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন দলটির একাংশের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা এ আসনে বিএনপির বুড়িচং উপজেলা সভাপতি এ টি এম মিজানুর রহমানকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানান।
আজ বুধবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে বুড়িচং উপজেলার নিমসার বাজার এলাকায় প্রথমে মহাসড়কের ঢাকামুখী লেন অবরোধ করেন মিজানুরের অনুসারী বিএনপি নেতা-কর্মীরা। প্রায় আধা ঘণ্টা পর নেতা-কর্মীরা চট্টগ্রামমুখী লেনও অবরোধ করেন। এতে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল হক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমানের অনুসারীরা মহাসড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
৩ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে বিএনপির প্রাথমিক প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এ টি এম মিজানুর রহমানের অনুসারীরা।
মহাসড়ক অবরোধ করে নেতা-কর্মীরা ‘দুঃসময়ের মিজান ভাই, মনোনয়নে তাঁকে চাই’, ‘অবৈধ মনোনয়ন মানি না, মানব না’, ‘৩ তারিখের মনোনয়ন মানি না, মানব না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। মহাসড়ক অবরোধে নারীদের উপস্থিতিও ছিল। তাঁরা মহাসড়কের ওপর বসে পড়ে মিজানুর রহমানকে প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানান।
মিজানুর রহমানের অনুসারীদের ভাষ্য, কুমিল্লা-৫ আসনে যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তিনি বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে রাজনীতি করেছেন। তাই নেতা-কর্মীরা এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করছেন। দ্রুত এ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করা না হলে সামনে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির কর্মী ইউনূস আহমেদ বলেন, ‘এ টি এম মিজানুর রহমান দলের দুঃসময়ের কান্ডারি। তাঁকে মনোনয়নবঞ্চিত করার তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ চলছে। আমরা এই মনোনয়ন মানি না।’
বুড়িচং উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবু দারুল নাঈম বলেন, ‘এই আসনের দলের সকল নেতা-কর্মী মিজানুর রহমানকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান। কিন্তু দলের নেতা-কর্মীদের মতামত অপেক্ষা করে গত তিন নভেম্বরে এই আসনে আরেকজনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এ সিদ্ধান্তের পরিবর্তনের দাবি জানাই।’