রাশিয়ার জ্বালানি খাতে নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, বাড়ল তেলের দাম
Published: 11th, January 2025 GMT
রাশিয়ার জ্বালানি খাতে গতকাল শুক্রবার নিষেধাজ্ঞা জারির ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। বৃহৎ রুশ জ্বালানি তেল কোম্পানি গাজপ্রম নেফটও এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেওয়ার মাত্র কয়েক দিন আগে এল এ ঘোষণা।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ বলেছে, জ্বালানি খাত থেকে রাশিয়ার আয় কমানোর জি–৭-এর প্রতিশ্রুতি রক্ষায় দেশটির ১৮০টির বেশি জাহাজের পাশাপাশি জ্বালানি তেল কোম্পানি গাজপ্রম নেফট ও সারগাটনেফত গ্যাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
একই সময় যুক্তরাজ্য সরকার দুটি রুশ কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, এগুলোর মুনাফা ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অর্থের জোগান দিচ্ছে এবং যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করছে।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রুশ জ্বালানি তেল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে নেওয়া এ পদক্ষেপ যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থের জোগান খালি করবে। পুতিনের হাত থেকে আমাদের কেড়ে নেওয়া প্রতিটি রুবল ইউক্রেনীয়দের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে।’
যুক্তরাজ্য সরকার দুটি রুশ কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, এগুলোর মুনাফা ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে অর্থের জোগান দিচ্ছে এবং যুদ্ধকে ত্বরান্বিত করছে।এ ছাড়া হোয়াইট হাউসে গতকাল শুক্রবার বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুতিন এ মুহূর্তে কঠিন অবস্থায় আছেন। আর আমি মনে করি, এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ যে তিনি যেসব ভয়াবহ কাজ করে চলেছেন, তা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর যেন নিশ্বাস ফেলার জায়গা না থাকে।’
রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজপ্রম নেফট নিষেধাজ্ঞাকে ‘ভিত্তিহীন’ ও ‘অবৈধ’ উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছে।
এদিকে নিষেধাজ্ঞার ওই খবরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম বেড়েছে ব্যারেলপ্রতি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এ কারণে প্রতি ব্যারেলের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৬৮ ডলার।
পুতিন এ মুহূর্তে কঠিন অবস্থায় আছেন। আর আমি মনে করি, এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ যে তিনি যেসব ভয়াবহ কাজ করে চলেছেন, তা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর যেন নিশ্বাস ফেলার জায়গা না থাকে।-জো বাইডেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টপেট্রলের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে বাইডেন বলেন, প্রতি গ্যালনে তিন থেকে চার সেন্ট পর্যন্ত ব্যয় বাড়তে পারে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এ নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার ওপর আরও গভীর প্রভাব ফেলবে।’
নিষেধাজ্ঞার খবরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম বেড়েছে ব্যারেলপ্রতি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। এতে প্রতি ব্যারেলের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৬৮ ডলার।আনুষ্ঠানিকভাবে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসার আগেই এ নিয়ে গুজব ছড়ায়। তখন যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানান ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাইডেন প্রশাসন নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ‘যতটা সম্ভব কঠিন উত্তরাধিকার’ রেখে যাচ্ছেন।
তেল সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত করার এ পদক্ষেপ রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রের (প্রেসিডেন্ট পুতিন) আর্থিক ভিত্তির ওপরে বড় আঘাত হানবে। -ভলোদিমির জেলেনস্কি, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টমার্কিন অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সব মিলিয়ে রাশিয়ার ৪০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৮৩টি জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ, রুশ জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও তেলক্ষেত্র পরিষেবাদাতা, রাশিয়ার দুটি বৃহৎ জ্বালানি তেল কোম্পানি এবং এদের অধীন দুই ডজনের বেশি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ নিষেধাজ্ঞার প্রশংসা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘তেল সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত করার এ পদক্ষেপ রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রের (প্রেসিডেন্ট পুতিন) আর্থিক ভিত্তির ওপর বড় আঘাত হানবে।’
জি-৭ সম্মেলনে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্ররাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আরটির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞারাশিয়ার পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্ররাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় কাজ হচ্ছে না, বলেছেন দুবাইয়ের ব্যবসায়ী নেতাইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তার অভিযোগে ভারতে ১৯ প্রতিষ্ঠান ও ২ ব্যক্তির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।
ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।
১৫ দফা প্রস্তাবনা
সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।