শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আপ্লুত ফখরুল
Published: 15th, January 2025 GMT
‘দিন যায় কথা থাকে’ বিখ্যাত গানের এই কথাটি যেন প্রতিটি মানুষের জীবনে সুনিপুণভাবে গাঁথা। একটি মানুষ যখন বার্ধক্যে পৌঁছায় তখন পেছনের স্মৃতিগুলো চোখের সামনে যেন জীবন্ত হয়ে ভেসে ওঠে।
তেমনি নিজের শৈশবের দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকায় হাওলাদার হিমাগার লিমিটেড প্রাঙ্গণে শৈশবের বন্ধুদের আয়োজিত মিলনমেলায় উপস্থিত হন এই প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পেইজ ও আইডি থেকে ওই আয়োজনের ভিডিও লাইভ করা হয়। সেখানেই স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ের মির্জা ফখরুল।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি স্থানে বসে মাইক হাতে নিয়ে কথা বলছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য কিংবা পরামর্শ নয়। ভিডিওর সবটুকু সময় জুড়ে এই রাজনীতিবিদ স্মৃতিচারণা করেছেন। নিজের শৈশব ও কৈশোরের। স্মরণ করেছেন স্কুল জীবনের বন্ধুদের। যারা বেঁচে নেই তাদের কথা বলতেই চোখের কোণে জল গড়িয়েছে বন্ধুমহলে অপূরণীয় শূন্যতার জন্য। এ যেন এক লুকানো মির্জা ফখরুল। যাকে এর আগে কখনো দেখা যায়নি! এ আয়োজনের একাধিক ফেসবুক লাইভের কমেন্টবক্সে মানুষের মন্তব্যজুড়ে ভালোবাসা আর শুভেচ্ছার ছড়াছড়ি। স্মৃতীর ভেলায় ভেসেছেন কেউ কেউ। কমেন্টেও করেছেন স্মৃতিচারণ।
মির্জা ফখরুল পুরনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে স্মরণ করিয়ে দেন ফেলে আসা দিনের কথা। নিজেই বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা আবৃত্তি করে শোনান বন্ধুদের।
শৈশবের বন্ধুদের স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়া বন্ধুদের স্মরণ করে বলেন, “আমার ঘনিষ্ট বন্ধু কুদ্দুস আমাদের মাঝে থেকে অনেক আগেই চলে গেছে। মনোয়ার চলে গেছে, যার সাথে সারাদিনে একবার দেখা না হলে খারাপ লাগতো। অনেকেই আমাদের কাছ থেকে চলে গেছে। যারা এখনো বেঁচে আছি, আমরা একটু বাঁচার মতো বাঁচতে চাই। এই বাঁচাটা হচ্ছে নিজেকে অনুভব করা। আমি আছি, আমি বেঁচে আছি।”
এসময় তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সুন্দর আয়োজনের জন্য। তিনি বলেন, “আমরা যারা বেশিরভাগ ঘর থেকে বের হই না, যেমন হুমায়ন স্যার, রবি দা এনারা ঘর থেকে বের হন না। তাদের আমরা আজ আবার ঘর থেকে বের করে নিয়ে এসে এক সাথে করার সুযোগ করেছি।”
তিনি বলেন, “আমাদের বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ। আজ সকালে বন্ধু আনিসুরকে দেখতে গিয়েছিলাম। একেবারেই শয্যাশায়ী। নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছে। জানি না আমরা কে কখন চলে যাব। কিন্তু যাওয়ার আগে অন্তত আজকের দিনটা আমাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
তিনি আরো বলেন, “যখন স্কুলে পড়ি, খুবই দুষ্টু ছিলাম এবং বখরান সাহেব ছিলেন আমাদের ক্যাপ্টেন। আমরা দুষ্টুমী করতাম আর ক্যাপ্টেন আমাদের নামে হেড স্যার রোস্তম আলী স্যারকে নালিশ করলেন। কিছুদিন পর হেড স্যার আমাদের সবাইকে ডেকে পাঠালেন। ঘরের ভিতরে লাইন করে দাঁড় করালেন এবং সবাইকে একটা করে বেত দিলেন। আমাদের সেই শৈশব ও স্কুলের জীবন আমি কখনই ভুলতে পারি না। সেই দিনগুলো যদি আমার ফিরে পেতাম!”
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “স্বাধীনতার পরে বন্ধুদের সঙ্গে রংপুরে এক কাজে গিয়েছিলাম। রাতের বেলা কী করব? ঠিক করলাম সিনেমা দেখবো। কিন্তু সিনেমা দেখার জন্য তখন আমাদের হাতে টিকেট ছিলো না। তারপরেও ভিড় ডিঙিয়ে টিকিটের ব্যবস্থা করে সিনেমা দেখেছি। এগুলো আমার কাছে এখনো মধুর স্মৃতি হয়ে আছে।”
এসময় কবিতা আবৃত্তির অনুরোধ করা হলে তিনি বলেন, “একসময় আবৃত্তি করতাম, এখন করি না বক্তৃতা করি। তার পরেও আমি চেষ্টা করব কবিতা আবৃত্তি করার। একসময় আমিও নাটক করেছি, রঙ মেখেছি, একসময় নাট্যগোষ্ঠী করতাম।”
পরে তিনি তাঁর প্রিয় কবিতা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ আবৃত্তি করে শোনান বন্ধুদের।
ঢাকা/হিমেল/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন ত স মরণ ফখর ল
এছাড়াও পড়ুন:
তুরস্কের যে কৌশলে ‘জিহাদি’ শারা হয়ে উঠলেন সিরিয়ার ‘আমির’
২০১৯ সালের বসন্ত। রুশ বিমানবাহিনীর সহায়তায় সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ইদলিবের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। তৈরি হয় জরুরি পরিস্থিতি।
হায়াত তাহরির আল–শামের (এইচটিএস) নেতা আবু মোহাম্মদ আল–জোলানি (আহমেদ আল–শারা নামে বেশি পরিচিত) তখন ইদলিবের কেন্দ্রস্থলে একটি নিরাপদ বাড়িতে তাঁর সহযোগী ও কয়েকজন বিদেশি অতিথির সঙ্গে বসেছিলেন। অতিথিদের মধ্যে তুর্কিও ছিল।
রাত বেড়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে আল–শারা মন খুলে নিজের ব্যক্তিগত কিছু গল্প বলতে শুরু করলেন। ‘আমি ছোটবেলায় একবার স্বপ্ন দেখেছিলাম’, ধীরে, গভীর মনোযোগ নিয়ে বলতে থাকেন তিনি। ‘স্বপ্নে দেখেছিলাম, আমি দামেস্কের আমির হয়েছি।’
আশ–শারা বলেছিলেন, সেই স্বপ্ন ছিল শুভ ইঙ্গিত, নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে স্রষ্টার একধরনের বার্তা। তাঁর বিশ্বাস ছিল, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট স্বৈরশাসক বাশার আল–আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা কঠিন হবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জেতা সম্ভব। তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা, যাঁদের মধ্যে সালাফি পটভূমির লোকও ছিলেন। বলেছিলেন, সেই স্বপ্ন সত্যি তিনি বিশ্বাস করতেন।
ওই গল্প বলার প্রায় পাঁচ বছর পর আহমেদ আল–শারা তাঁর বিদ্রোহী খেতাব কাটিয়ে সিরিয়ান আরব রিপাবলিকের অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট, অর্থাৎ সেই ‘আমির’ হন, যার স্বপ্ন তিনি একসময় দেখেছিলেন।
রাত বেড়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে আল-শারা মন খুলে নিজের ব্যক্তিগত কিছু গল্প বলতে শুরু করলেন। ‘আমি ছোটবেলায় একবার স্বপ্ন দেখেছিলাম’, ধীরে, গভীর মনোযোগ নিয়ে বলতে থাকেন তিনি। ‘স্বপ্নে দেখেছিলাম, আমি দামেস্কের আমির হয়েছি।’এখন জোলানি নিজের জন্মনাম আহমেদ আল–শারা নামে পরিচিত। ৪৩ বছরের শারা খুব দ্রুতই নিজের পরিচয় পাল্টে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন। একসময়ের ‘জিহাদি সন্ত্রাসী’ (যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কথায়) থেকে এখন রাষ্ট্রনেতা তিনি। ইরাক থেকে সিরিয়া। দীর্ঘ সময় আল–কায়েদা ঘরানার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীতে সক্রিয় থাকার পর এমন পরিবর্তন বিস্ময়করই বলা যায়।
আসাদ পরিবারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর শারা এখন সেসব বিশ্বনেতার সঙ্গেও মিশছেন, যাঁদের তিনি একসময় এড়িয়ে চলতেন। তিনি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে জনসমক্ষে উপস্থিত হন, শ্মশ্রু ছোট করেছেন, পাগড়ি ও থোব (ঐতিহ্যবাহী দীর্ঘ ঢিলেঢালা পোশাক) ছেড়ে স্যুট–টাই পরছেন। সব মিলিয়ে এমন একটি নতুন রাষ্ট্র গড়ার চেষ্টা করছেন, যেখানে স্পষ্ট ইসলামি প্রভাব নেই।
কিন্তু এ রূপান্তর কীভাবে সম্ভব হলো
তুরস্কসহ আঞ্চলিক কর্মকর্তারা, সিরীয় সূত্র, বিশেষজ্ঞ, এমনকি সিরিয়ার সরকারি শাসনব্যবস্থার ভেতরের লোকেরাও মনে করেন, ইদলিবে শারার শাসনামলেই ধীরে ধীরে তাঁর ব্যক্তিত্ব ও ভূমিকার এ পাল্টে যাওয়া শুরু হয়। ইদলিব মূলত একধরনের অনানুষ্ঠানিক ‘ক্ষুদ্র রাষ্ট্র’ হয়ে উঠেছিল, যা শারার ভাবমূর্তিকে পুনর্গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছে।
‘তাঁর (আল–শারা) রূপান্তরে তুরস্ক খুবই বাস্তব ভূমিকা রেখেছে’, এইচটিএসের নেতা থাকাকালীন শারার সঙ্গে দেখা করা একজন তুর্কি কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে বলেন।
তুরস্কের সঙ্গে প্রথম বড় যোগাযোগ
তুর্কি কর্মকর্তার মতে, শারার নিজেরও বদলে যাওয়ার কারণ ছিল। সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে টিকে থাকতে হতো, আর তুরস্কই ছিল তাঁর একমাত্র ভরসা। কারণ, তিনি এমন এক এলাকায় আটকে ছিলেন, যেখানে আঙ্কারা ছিল তাঁর জীবনসঞ্চারণী রেখার মতো।
সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে, ১৪ মে ২০২৫