কুমিল্লায় নিহত যুবদল নেতা তৌহিদুলের পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস সেনাবাহিনীর
Published: 4th, February 2025 GMT
কুমিল্লায় নিহত যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের পরিবারের পাশে থেকে সব সহায়তা এবং ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ তারিক।
এর আগে সোমবার রাতে তৌহিদুলের পরিবারের সদস্যরা কুমিল্লা সেনানিবাসে মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ তারিকের সঙ্গে তাঁর অফিস কক্ষে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠককে তৌহিদুলের পরিবারের পক্ষে তার স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার, ভাগ্নি মাহবুবা উদ্দিন, সানজিদা খানম ও ভগ্নিপতি খানে আলম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া প্রফেসর মাহবুবা উদ্দিন মঙ্গলবার সমকালকে বলেন, মামার (তৌহিদুল) মৃত্যুতে জিওসি শোক প্রকাশসহ নিহতের পরিবারকে তিনি আশ্বস্ত করেন যে, এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই তদন্ত আদালতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে। বৈঠকে তৌহিদের পরিবার ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সব সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়।
মাহবুবা বলেন, বৈঠকে আলোচনা হয়েছে সামরিক আইনে ঘটনায় জড়িত সামরিক ব্যক্তিদের বিচার হবে, তবে বেসামরিক ব্যক্তিদের যেহেতু সেনা আইনে বিচার সম্ভব নয়, তাই ঘটনায় জড়িত বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতে মামলা দায়ের করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আইনজীবীর সঙ্গে কথা হচ্ছে। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে মামলা দায়ের করা হবে।
তৌহিদুলের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে আমাদের প্রতিবেশী ৫ ব্যক্তি ঘটনার রাতে সাদা পোশাকে অভিযানে অংশ নেয়। তাদের আমরা শনাক্ত করে সেনাবাহিনীর নিকট নাম প্রকাশ করেছি। প্রতারণার মাধ্যমে যারা সেনা ক্যাম্পে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছি। জিওসি মহোদয় সব সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা ঘটনায় জড়িত সবার কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে যৌথবাহিনীর পরিচয়ে তৌহিদুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয়। পরিবারের অভিযোগ প্রতিবেশী ৫ ব্যক্তির মিথ্যা অভিযোগে তাকে তুলে নেওয়ার পর রাতভর নির্যাতন করা হয়। অবস্থা সংকাটপন্ন হওয়ায় পরদিন পুলিশে সোপর্দ করার পর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তৌহিদুল জেলার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবি ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের মৃত মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র পর ব র র
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি পদ নিয়ে দুই নেতার ‘টানাটানি’
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি পদ নিয়ে দুই নেতার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। দুজনের দাবি, তিনিই সভাপতি। ‘ওই পদের প্রকৃত দাবিদার’ উল্লেখ করে তাঁরা এখন পদের দখল নিয়ে ‘টানাটানি’ করছেন। সর্বশেষ আজ সোমবার বিকেলে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় এতিমদের মধ্যে খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতি দাবিদার এক নেতা অপর পক্ষের নেতা-কর্মীদের তোপের মুখেও পড়েন।
স্থানীয় বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১০ মার্চ সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে মহানগর বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন নাছিম হোসেইন। তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় দেশের বাইরে থাকায় ২০২৪ সালের ১ আগস্ট নাছিমের বদলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) মিফতাহ্ সিদ্দিকীকে মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে গত বছরের ৪ নভেম্বর মহানগর বিএনপির ১৭০ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েস লোদীকে। সে কমিটিতে নাছিম হোসেইনের নাম ছিল না।
এদিকে গত ২৬ নভেম্বর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং দলের নীতি ও আদর্শপরিপন্থী কাজের জন্য মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাছিম হোসেইনের দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পর্যায়ের পদ স্থগিত করা হয়েছিল। তাঁর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে পরদিন রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত আরেকটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ভুলবশত নাছিম হোসেইনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল। মূলত তাঁর দলীয় পদ স্থগিত ছিল না।
পরপর দুটি বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও বিভ্রান্তিতে পড়েন। তাঁরা জানিয়েছেন, বিজ্ঞপ্তির ভাষা অনেকটা অস্পষ্ট। এতে নাছিম হোসেইন আবারও সভাপতি হয়েছেন কি হননি, সেটা পরিষ্কার হয়নি। তবে প্রথম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর নাছিম হোসেইন নিজেকে আবারও মহানগর বিএনপির সভাপতি দাবি করে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি দাবি করেন, নির্বাচিত সভাপতি থাকলেও এত দিন তিনি দায়িত্বে ছিলেন না, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হওয়ায় দায়িত্ব ফিরে পেয়েছেন।
যোগাযোগ করলে নাছিম হোসেইন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁর পদ স্থগিত হয়নি কিংবা তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করাও হয়নি। জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে তিনি দেশের বাইরে থাকায় তখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতেও সভাপতির পদটি শূন্য রেখে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়ে কমিটি ঘোষিত হয়। তাঁর পদ যে কখনোই স্থগিত ছিল না, সেটা দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট হয়েছে। তাই তিনি এখনো মহানগর বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি।
তবে মহানগর বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর একাধিক অনুসারী দাবি করেছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে যখন বিএনপির নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে, তখন নাছিম হোসেইন কেন্দ্রকে ভুল বুঝিয়ে প্রথমে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করিয়ে ফেলে। পরে এটি জানতে পেরে কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রথম বিজ্ঞপ্তিটিকে খারিজ করে দেওয়া হয়।
রেজাউল হাসানের অনুসারীদের দাবি, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময়ও নাছিম হোসেইন দেশের বাইরে ছিলেন। তাই কেন্দ্র তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। এ কারণেই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাঁর নাম ছিল না। তিনি বহিষ্কৃতও ছিলেন না। তবে কোনো পদেও তাঁকে রাখা হয়নি। তাই তাঁর সভাপতি পদে পুনর্বহালেরও সুযোগ নেই। এ অবস্থায় রেজাউল হাসান কয়েস লোদী স্বপদে বহাল আছেন। অথচ নাছিম হোসেইন ভুল করে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে মিথ্যাচার চালাচ্ছেন।
মহানগর বিএনপির সভাপতি পদ নিয়ে সৃষ্ট ঝামেলার বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) মিফতাহ্ সিদ্দিকীর মুঠোফোনে কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে কেন্দ্রের একটি সূত্র জানিয়েছে, নাছিম হোসেইন বর্তমানে মহানগরে কোনো পদে নেই। এখন পর্যন্ত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।
এদিকে সভাপতির পদ নিয়ে কয়েক দিন ধরে পাল্টাপাল্টি এমন অবস্থানের মধ্যে আজ সোমবার দুপুরে রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর অনুসারীদের তোপের মুখে পড়েন নাছিম হোসেইন। নগরের মক্তবগলি কাজীটোলা এতিমখানা মাদ্রাসায় বেলা আড়াইটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির চেয়ারপারসনের সুস্থতা কামনায় নাছিম হোসেইনের উদ্যোগে মাদ্রাসার অন্তত ২০০ এতিম শিশুর মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণের আয়োজন করা হয়। এ সময় কর্মসূচির ব্যানারে সিলেট মহানগর বিএনপির নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে নাসিম হোসেইনের নাম লেখা ছিল। এটা দেখে ক্ষিপ্ত হন রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর অনুসারীরা। তাঁরা দাবি করেন, নাছিম হোসেইন মহানগর বিএনপির কোনো পদে নেই। তাঁর নাম ব্যানারে রেখে কোনো কর্মসূচি করা যাবে না। এ অবস্থায় নাছিম হোসেইনের নাম ব্যানার থেকে ফেলে দিয়ে তবেই দোয়া মাহফিল ও খাবার বিতরণ করা হয়।
এ বিষয়ে নাছিম হোসেইন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি দলের চেয়ারপারসনের সুস্থতা কামনা করে এতিমদের খাবার বিতরণ করার উদ্যোগ নিয়েছি। সেখানে তারা গিয়ে বাধা দেয়, ব্যানার ছিঁড়তে উদ্যত হয়। তখন আমিই বলেছি, আমার নাম সরিয়ে দিয়েই ব্যানার লাগাও, তবু ঝামেলা করার দরকার নেই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজাউল হাসান কয়েস লোদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা মহানগর বিএনপির কর্মসূচি ছিল। কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সেখানে কোনো ঝামেলা হয়েছে, এমনটা আমার জানা নেই। আমি কর্মসূচির শেষ সময়ে গিয়ে উপস্থিত হয়েছি। তবে কোনো ঝামেলা আমার চোখে পড়েনি।’