রংপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছে রংপুর পদাতিক-বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি যৌথ নাট্যোৎসব। ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া উৎসবের শেষ দিন ২ ফেব্রুয়ারি সমাপনী নাটক ‘মুক্তির কণ্ঠ’। নাটকটি রচনা করেছেন রঞ্জন সরকার।

আফ্রিকান বিদ্রোহী কবি বেঞ্জামিন মলোয়েস এর ফাঁসী নিয়ে সারা বিশ্বে যে আলোড়ন উঠেছিল তা উঠে এসেছে এই নাটকে। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন লুকমান শারীফ। প্রযোজনা উপদেষ্টা ও নেপথ্যকর্মী হিসাবে কাজ করেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক দীপংকর দীপন। সমাপনী দিনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার রংপুর বিভাগের পরিচালক মো.

আবু জাফর, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুল হাসান রুমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বিভাগীয় সদস্য ইফতেখারুল আলম রাজ।

এই নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ হয় ঢাকা থিয়েটারের ‘একটি লৌকিক ও অলৌকিক স্টিমার’. তীরন্দাজের ‘কণ্ঠনালিতে সূর্য’, ম্যাড থেটারের ‘রবীন্দ্রনাথের দ্বিতীয় বিজয়া’, ভূমিজ পঞ্চগড়ের ‘মায়াচর’, পাবনা ড্রামা সার্কেলের ‘কেনারাম বেচারাম’, প্রচ্ছদ কুড়িগ্রামের ‘ঘর জামাই’, সারথি নাট্য সম্প্রদায় রংপরের ‘কি হচ্ছে এসব’।

এই নাট্যোৎসবে অংশ নিয়ে অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘অনেক দিন আগে রংপুরে মুনতাসির ফ্যান্টাসি নাটক মঞ্চায়ন করেছিলাম- এবার উৎসবে অংশগ্রহণ করে খুব ভাল লেগেছে। দর্শক ও আয়োজকদের স্বতঃস্ফূর্ততা ও আন্তরিকতা আমাদের মুগ্ধ করেছে।’


অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ বলেন, ‘আমাদের নাটক চলার সময় দর্শকদের এমন রেসপন্স পেয়েছি যে, তা আমার সারাজীবন মনে থাকবে।’

দীপংকর দীপন বলেন ‘রংপুরে নাট্যর্চার মাধ্যমেই আমার সাংস্কৃতিক জীবনের শুরু। অনেকে বলে রংপুরের নাট্যচর্চায় নাকি ভাটা পড়েছে, আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতাম সেটা সত্যি নয়। সেটাই প্রমাণ হয়েছে এই উৎসবের মাধ্যমে। প্রতিদিন হাউসফুল মঞ্চে দর্শক নাটক দেখছেন─এই দৃশ্য দেখে আগত প্রতিটি দলই অভিভূত।’
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন ট য উৎসব ন ট য ৎসব

এছাড়াও পড়ুন:

১১ বছর পেরিয়ে গেলেও দগদগে ব্রাজিলের সেই ক্ষত

হেক্সা জয়ের বড় স্বপ্ন নিয়ে ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল ব্রাজিল। তবে সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে স্বাগতিকরা আটকে যায় সেমিতেই। সেবার বেলো হরিজেন্তের মিনেইরো স্টেডিয়াম সেমিফাইনালে জার্মানি গুণে গুণে ৭ বার বল ঢুকিয়েছিল ব্রাজিলের জালে। যা ফুটবল সমর্থকদের কাছে ‘সেভেন আপ’ নামে পরিচিত। ৮ জুলাই ২০১৪, এই তারিখটা দগদগে ক্ষত হয়ে থাকবে ব্রাজিলের ফুটবলে। সেই ম্যাচের ১১ বছর পূর্তি হল আজ। প্রতি বছর এ দিনটা এলেই দগদগে হয়ে ভেসে ওঠে ভয়াবহ সে স্মৃতি। ৭ শব্দটাই একটা ট্রমাতে পরিণত হয় ব্রাজিলের জন্য।

সেদিনের সেই ম্যাচের আগে ব্রাজিলের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্রাজেডির নাম ছিল মারাকানাজো। ১৯৫০ সালের সেই বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে শুধু ড্র হলেই চলত ব্রাজিলের। এমন উপলক্ষ্যে দুই লাখ দর্শক হাজির হয়েছিলেন মাঠে। কিন্তু উৎসবের সেই ম্যাচ বিষাদে পরিণত হয় উরুগুয়ের বিপক্ষে ব্রাজিলের ২-১ গোলের হারে। লাখো জনতার স্রোতে থেমে যায় সাম্বার উৎসব। ওই ট্রাজেডির ৬৪ বছর পর মিনেইরো স্টেডিয়ামের সেই বিপর্যয়ের পর থেকেই তুলনা চলে, মারাকানাজো নাকি মিনেইরাজো- বিপর্যয়ের মাত্রা বেশি কোনটিতে।

বিশ্ব ফুটবলে সবচেয়ে সফল দল ব্রাজিল, কিন্তু ব্রাজিলিয়ানরাও জানেন এই ইতিহাস আর পাল্টানো যাবে না। যতবার বিশ্বকাপ দরজায় কড়া নাড়বে ততোবার ঘুরে ফিরে আসবে ওই গল্প। সেই দিনের হারার যন্ত্রণাময় মুহূর্ত নিশ্চয়ই এখনও বেশ মনে লেগে আছে বহু সেলেসাও সমর্থকের হৃদয়ে। মিনেইরাজোর সেই ট্রমা ব্রাজিলের প্রাণভোমরা নেইমারও ভুলতে পারেননি।

২০২২ কাতার বিশ্বকাপের আগে এক সাক্ষাৎকারে নেইমার জানিয়েছিলেন, ‘আমি বলবো না সেটা (ঘরের মাঠে জার্মানির বিপক্ষে ৭-১ গোলে হার) আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে মুহুর্ত। তবে এটি অবশ্যই সবচেয়ে কঠিন মুহুর্তগুলির মধ্যে একটি ছিল। আমার প্রথম বিশ্বকাপ, আমার নিজের দেশে, তাই আমি খুব জিততে চেয়েছিলাম।’

ব্রাজিলের সে সময়ের তারকা স্ট্রাইকার ফ্রেডের বাড়ি ছিল হরিজেন্তেই। জার্মানির কাছে ওমন বিধ্বস্ত হওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, ‘ম্যাচ শেষ হওয়ার পর আমি একটা গর্তে লুকিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। যেখান থেকে আর কখনোই ফিরে আসতে হবে না।’

সে ট্রাজেডির অনেক পরে সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে কথা বলেছেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক হুলিও সিজার। যাকে ফাঁকি দিয়েই জার্মানরা একে একে সাতবার বল জড়িয়েছিল জালে। সিজার বলেছিলেন, ‘এখনো যখন আমি শুয়ে থাকি, ম্যাচটি নিয়ে চিন্তা করি। আমি কল্পনা করি সেই দিনটির কথা, বহু বছর পর যেদিন সংবাদমাধ্যমে ঘোষণা হবে- হুলিও সিজার, ৭ গোল খাওয়া গোলরক্ষক মারা গেছেন।’

সেলেসাওদের তখনকার কোচ ছিলেন ব্রাজিলের ২০০২ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক লুইস ফিলিপ স্কলারি। তিনি বলেছিলেন, ‘এটা আমার জীবনের সবচেয়ে খারাপ দিন। আমি সম্পূর্ণ দায় নিচ্ছি।’ ম্যাচ শেষে কাঁদতে কাঁদতে জাতির উদ্দেশে ক্ষমাও চেয়েছিলেন অধিনায়ক ডেভিড লুইজ।

ব্রাজিলিয়ান দৈনিক গ্লোবো ম্যাচটার স্মৃতি নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিল তখনকার জার্মান কোচ জোয়াকিম লো। তাদের দেওয়া সাক্ষাৎকারে এখনও ম্যাচের স্মৃতি তরতাজা জোয়াকিমের, ‘ঘরের মাঠে সেমিফাইনাল খেলাটা সবসময় চাপের। ব্রাজিলও সেই চাপে ছিল। আমি সেই বিশ্বকাপের কথা প্রতিদিনই স্মরণ করি, কারণ এটা বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল। ব্রাজিলের মতো ঐতিহ্যবাহী দেশে বিশ্বকাপ জেতাটা বিশেষ কিছু।’

মারাকানায় ব্রাজিলকে ৭-১ গোলে হারানো নিয়ে জোয়াকিম বলেন, ‘ব্রাজিলের জাতীয় সঙ্গীত বাজার পর থেকে দর্শকরা আবেগী হয়ে পড়েছিল। প্রথম কয়েক মিনিট ব্রাজিলই ভালো খেলেছে। কিন্তু প্রথম ১০ মিনিটে গোল পেয়ে গেলাম আমরা (১১ মিনিটে করেছিলেন মুলার)। এটা আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয়।’

সেই ম্যাচে দুর্দান্ত খেলেন জার্মানির ক্লোসা, মুলার, ক্রুস এবং ওজিল। সবাই মিলে গোল উৎসবে মেতে উঠেছিলেন। জার্মানির সেই বিজয়ী দলের খেলোয়াড় ম্যাটস হামেলস পরে জানিয়েছিলেন, তারা ইচ্ছা করেই বিরতির পর আর কোনো জাদুকরি খেলা খেলতে চাননি। তারা শুধু চেয়েছিলেন ম্যাচটি শেষ করতে। ম্যাটস হামেলস বলেন, আমরা শুধু চেয়েছি খেলায় মনোযোগী থাকতে। খেলার মধ্যে সেলেসাওদের কোনোভাবেই অপমান করতে চাইনি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, খেলার মধ্যে সিরিয়াস থাকতে হবে। তবে ব্রাজিলকে অপমান করা হয়, এমন কিছু থেকে বিরত থাকব। খেলার মধ্যে জয়-পরাজয় থাকবেই। তবে প্রতিপক্ষকে সম্মান দেখাতে হবে। আমরা সে কাজ করেছি। দ্বিতীয়ার্ধের পর আমরা কোনো জাদুকরি খেলা দেখাইনি।

যদিও পরবর্তীতে ম্যাটস হামেলসের এমন কথা উড়িয়ে দিয়েছেন জার্মান কোচ জোয়াকিম। তার কথায়, ‘এটা বাজে কথা। বরং আমি মনে করিয়ে দিয়েছিলাম বাছাইপর্বে সুইডেনের কাছে শুরুতে ৪ গোল দিয়ে শেষ ৩০ মিনিট ৪ গোল হজম করার কথা। ফুটবলে যে কোনও কিছু ঘটতে পারে। তবে খারাপ লাগছিল ব্রাজিলের জন্য। কারণ এর আগে ঘরের মাঠে ২০০৬ বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে এভাবে বাদ পড়ার বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমাদেরও। নিজেদের দলের জন্য গর্ব হলেও ব্রাজিলের জন্য খারাপ লাগছিল আমার।’

সেই হারের ১১ বছর পরও বড় কোনো শিরোপা জিততে পারেনি ব্রাজিল। গত কোপা আমেরিকায়ও সেলেসাওরা ছিল পরিষ্কার ফেভারিট। তবু কোয়ার্টারেই থামতে হয়েছে তাদের। উরুগুয়ের বিপক্ষে নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য ড্র করার পর টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হেরে আসর থেকেই বিদায় নেয় দরিভাল জুনিয়রের দল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লাঙ্গলবন্দে মন্দিরের কমিটি দখলে সন্ত্রাসী হামলা, মামলায় আসামী ১৭
  • ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও দগদগে ব্রাজিলের সেই ক্ষত
  • একুশ বছরে বাতিঘর, উৎসবে সাজবে কাল
  • বড় কিছুর আশায় পবিত্র নগরীতে মিরাজরা
  • ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ