খুলনায় সন্ত্রাসীদের মেরূকরণ হয়েছে। দীর্ঘদিন পর এলাকায় ফিরে নতুন করে সংগঠিত হয়েছে সন্ত্রাসী পলাশ গ্রুপের সদস্যরা। পুরোনো সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবু, আশিক বাহিনীর অনুসারীদের মধ্যে প্রায়ই তাদের সংঘাত হচ্ছে। নগরীতে সশস্ত্র মহড়া, প্রকাশ্যে খুনের ঘটনাও বাড়ছে। মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, বিগত দিনে হামলা ও হত্যার প্রতিশোধ, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খুন-সংঘাত বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা সন্ত্রাসীদের অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) তথ্য বলছে, গেল নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে খুলনা মহানগরীতে ১০টি খুনের মামলা হয়েছে। বছরের শেষ ৬ মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ২৩টি। অন্যদিকে ২০২৩ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে খুন হয়েছিল মাত্র একটি। শেষ ৬ মাসে হত্যা মামলা ছিল ১১টি। গত জানুয়ারি মাসেই দুটি হত্যা এবং ৬ জনকে কুপিয়ে ও গুলি করে জখম করা হয়েছে। 
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খুলনায়ও পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়ে। এই সুযোগে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসী ও মাদক বিক্রেতারা এলাকায় ফিরে আসে। অনেকে জেল থেকে ফিরে আগের তৎপরতায় জড়িয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।
কর্মকর্তারা জানান, ৫ আগস্টের আগে খুলনায় গ্রেনেড বাবু, আশিক ও নূর আজিম গ্রুপের তৎপরতা ছিল বেশি। এর মধ্যে আশিক ও নূর আজিম নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় তৎপরতা চালাত। কিন্তু নগরজুড়ে আধিপত্য ছিল গ্রেনেড বাবুর তৈরি ‘বি কোম্পানির’। নগরীর মাদক সিন্ডিকেটের বড় অংশ ছিল তার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। 
গত ১ জানুয়ারি নূর আজিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আশিকের ভাই সজীবসহ পরিবারের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর তালিকায় নাম থাকায় দেশে ফেরেনি শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবু। শক্তি প্রদর্শন করতে তৎপর হয়ে ওঠে পলাশ গ্রুপ। গত দুই মাসে ৯ জনকে কোপানাে ও ৩ খুনে গ্রুপটির নাম এসেছে।
সন্ত্রাসীদের তৎপরতার বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন এমন দুই ব্যক্তি জানান, মাত্র দুই মাসের মধ্যে বাহিনী তৈরি করে বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে পলাশ গ্রুপ। দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, লোকবল তৈরি করে তার উত্থান অবিশ্বাস্য রকম দ্রুততার সঙ্গে ঘটেছে। গ্রেনেড বাবুর সঙ্গে বিরোধ ছিল এমন সন্ত্রাসী ট্যাঙ্কি শাওন, কালা লাভলু এবং দেলোও পলাশের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। এছাড়া পুরোনো সন্ত্রাসী সুমন শেখ ওরফে বোমা সুমন, কালা রনি, দাদো মিজান সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, ১২  সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তারে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। আরও অভিযান চলছে। 
আলোচিত ৫ খুন, মামলা গতিহীন
গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের ১০টি খুনের মধ্যে রিকশাচালক তাসিনুরকে হত্যা করে রিকশা ছিনতাই, হরিণটানার কৃষ্ণপদ হত্যা, অজ্ঞাত দুটি লাশ উদ্ধার এবং সাবেক এমপি মন্নুজান সুফিয়ানের ভাগনে রূপম হত্যা মামলার সুরাহা হয়েছে। অন্য ৫টি মামলা নিয়ে আলোচনা চলছে নগরজুড়ে। এসব মামলায় মোট আসামি ছিলেন ৪২ জন। এর মধ্যে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত ২ নভেম্বর রাতে নগরীর আলকাতরা মিল এলাকায় সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে আশিকুর রহমান ওরফে পঙ্গু রাসেলকে হত্যা করে। 
গত ২৯ নভেম্বর রাতে নগরীর টুটপাড়া এলাকায় গুলি ছুড়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আমিন মোল্লা বোয়িংকে গুরুতর আহত করে সন্ত্রাসীরা। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ ডিসেম্বর তার মৃত্যু হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, আশিকের ভাই সজীবসহ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
১৮ ডিসেম্বর হাজী মুহসীন রোডে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে রংমিস্ত্রি মো.

সোহেলকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক তৈমুর ইসলাম বলেন, ফাকাব্বির পলাশ গ্রুপের সঙ্গে জড়িত। অন্যরাও একই গ্রুপের। 
গত ২০ জানুয়ারি পুরাতন রেলস্টেশন এলাকায় ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মানিক হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মেহেদী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। 
সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি রাতে নগরীর তেঁতুলতলা মোড়ে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অর্ণব কুমার সরকারকে হত্যা করে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও পলাশ গ্রুপ জড়িত।
কেএমপি কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের টহল, চেকপোস্ট, গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানো হচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে। খুব শিগগির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর এল ক য় নগর র

এছাড়াও পড়ুন:

আর কতদিন আইনহীনতায় বসবাস

গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত আইনের শাসন। গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার কি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে?  

আমরা যেদিকে তাকাই, আইনের শাসনের বদলে জবরদস্তির শাসন দেখি। ‘মব ভায়োলেন্স’ প্রত্যক্ষ করি। কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও অসহায়। আবার তাদের কেউ কেউ অতীতের মতো চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হচ্ছে।

২৮ জুন কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠে। কয়েকজন ব্যক্তি সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। মানুষ কতটা নীচ হতে পারলে এ কাজ করে! একই দিন ভোলার তজুমদ্দিনে আরেক নারী সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হওয়া স্বামীকে উদ্ধার করতে গিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। কুমিল্লার ঘটনায় রাজনীতির যোগ না থাকলেও ভোলার ঘটনার সঙ্গে শ্রমিক দল ও যুবদলের নেতা–কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ উদ্দিনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

মুরাদনগরে নারী ধর্ষণের রেশ না কাটতেই সেখানে একই পরিবারের তিন সদস্যকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেন স্থানীয় লোকজন। ওই পরিবারের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনে এলাকাবাসীকে মাইকে উসকে দিয়ে বৃহস্পতিবার তাঁদের খুন করা হয়। মাদকব্যবসা করা অপরাধ। তাই বলে কেউ মাদকব্যবসা করলে তাকে পিটিয়ে মারা যায়? দেশে আইন কোথায়, থানা–পুলিশ আছে কেন?

সোমবার রাতে খোদ ঢাকায় বনানী থানা যুবদলের আহ্বায়ক মনির হোসেনের নেতৃত্বে মহাখালীর জাকারিয়া হোটেলে দল বেঁধে ঢুকে দুই নারীর ওপর হামলা করেন একদল লোক। বনানী থানায় করা মামলায় বলা হয়, মনির নামের এক ব্যক্তি এসে ভিআইপি কেবিন চান; কিন্তু কেবিনটি তখন অন্য অতিথির জন্য বরাদ্দ থাকায় তাঁকে সেটি দেওয়া সম্ভব হয়নি। পরের দিন ১ জুলাই রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে মনির ২০-২৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে রেস্টুরেন্টে ঢোকেন। তাঁরা ঢুকেই গ্লাস ছুড়ে ভাঙচুর শুরু করেন। এই হলো যু্বদল নেতার কাণ্ড।

একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য ছিনতাই–চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আইন যথাযথ প্রয়োগ করতে গিয়ে মব ভায়োলেন্সর শিকার হচ্ছেন। রাজনৈতিক দলের নেতাদের কেউ কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হচ্ছেন। আবার কেউ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে থানা থেকে দণ্ডিত আসামি ছিনিয়ে নিচ্ছেন। এটা সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থার লক্ষণ নয়।

সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যেমন বিএনপির নেতা–কর্মীদের নাম আসছে, তেমনি অঘটনের শিকারও হচ্ছেন তাঁরা। মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে দুর্বৃত্তদের হামলায় মো. মিন্টু নামের এক বিএনপি নেতা খুন হন। তিনি ২৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির ৩ নম্বর ইউনিটের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।

বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় ধূমপান করাকে কেন্দ্র করে মারামারিতে লিপ্ত হয় এলাকার কিশোরদের দুটি পক্ষ। তাদের থামাতে গিয়ে খুন হন সাবেক যুবদল নেতা মুহাম্মদ আলমগীর। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি গ্রামে আসতে পারেননি। গত বছর ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর  গ্রামে আসেন। ১১ মাসের মাথায় তাঁকে জীবন দিতে হলো কিশোর গ্যাংয়ের হাতে।

আরেকটি চাঞ্চল্যকর খবর হলো থানা–হাজত থেকে আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়া।  চাঁদা আদায়ের অভিযোগে ইজারাদারের দুই কর্মচারীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা হয়েছে। বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ২০০ থেকে ২৫০ জনের একটি দল থানায় ঢুকে ভাঙচুর করে সাজাপ্রাপ্ত ওই দুজনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে থানার সামনে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

আরও পড়ুন‘মব ভায়োলেন্স প্রশ্রয় দেওয়া হবে না’, কিন্তু প্রশ্রয় দিচ্ছে কে৩০ জুন ২০২৫

রাজধানীর শাহ আলী এলাকায় এক নারীকে মারধরের অভিযোগে স্থানীয় বিএনপি নেতা জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারী মামলায় অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় বিএনপি নেতা জাকির হোসেন তাঁকে মারধর করেছেন। পরে ভুক্তভোগী নারী মামলা করার জন্য শনিবার রাত ১০টার পর শাহ আলী থানায় আসেন।

সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আইন রক্ষার নসিয়ত করা হয়। কিন্তু সেই আইন রক্ষা করতে গিয়ে  চট্টগ্রামের পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরকে শাস্তি ভোগ করতে হলো। নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের দীপঙ্কর দে নামের এক কর্মীকে ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা পটিয়া থানায় নিয়ে যান। তাঁর নামে কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি। কিন্তু একে কেন্দ্র করে পটিয়ায় পুলিশ ও আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের মধ্যে যে ঘটনা ঘটল তা অনাকাঙ্খিতই বলতে হবে।

মানুষ অপরাধের শিকার হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে যান; কিন্তু সেই বাহিনী কী করছে, সেটিও দেখা দরকার। রাজধানীর মতিঝিলে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ৩০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে মতিঝিল থানা-পুলিশ। এ সময় ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত হাইয়েস মাইক্রোবাস ও ৮৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

২৬ জুন দুপুরে ওয়ারীর নবাবপুর এলাকার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে মো. খলিল মিয়া ও ইব্রাহীম হোসেন রিফাত নামের দুই কর্মচারী ৩০ লাখ টাকা নিয়ে মতিঝিলের সিটি ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। বেলা পৌনে একটার দিকে মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেলের সামনে পৌঁছালে ছয়–সাত ব্যক্তি নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাঁদের একটি হাইয়েস মাইক্রোবাসে তুলে নেন। পরে অস্ত্রের মুখে ভয় দেখিয়ে ও মারধর করে তাঁদের কাছে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেন।

বগুড়ায় আটকের ভয় দেখিয়ে ৭০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালানোর সময় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) এক সদস্যসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এপিবিএনের সদস্য আল হাদীর গ্রামের বাড়ি সোনাতলা উপজেলার চারালকান্দি গ্রামে। পাশের কাতলাহার গ্রামের শফিকুর রহমানের সঙ্গে তাঁর পরিবারের বিরোধ আছে। গ্রেপ্তার ছয়জন এপিবিএনের একটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে কাতলাহার গ্রামে গিয়ে পুলিশ পরিচয়ে অনলাইন জুয়া খেলার অভিযোগে শফিকুরের ছেলে ওয়ালিদকে আটকের চেষ্টা করেন। এ সময় শফিকুর রহমান ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে নেন। পরে শফিকুর রহমান জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে পুলিশ পরিচয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি জানালে গাবতলী ও সদর থানা-পুলিশ পিকআপটি আটকে অভিযানে নামে।

একদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্য ছিনতাই–চাঁদাবাজি করে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ আইন যথাযথ প্রয়োগ করতে গিয়ে মব ভায়োলেন্সর শিকার হচ্ছেন। রাজনৈতিক দলের নেতাদের কেউ কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হচ্ছেন। আবার কেউ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে থানা থেকে দণ্ডিত আসামি ছিনিয়ে নিচ্ছেন। এটা সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থার লক্ষণ নয়।

মুরাদনগরে নারী ধর্ষণ ও নিগ্রহের ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘এই দেশে কি আমি নিরাপদ। উত্তরটা সহজ নয়। এখানে বেঁচে থাকার জন্য আমরা জী (সব কিছু মেনে নেওয়া) করি। আমরা সহ্য করি, মানিয়ে নিই।’

এ মানিয়ে নেওয়ার বিষয়টি কেবল ব্যক্তির নয়, পুরো সমাজের। সমাজের সীমাহীন নীরবতা ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের কারও কারও আইন হাতে তুলে নেওয়ায়ই দেশে নিরাপত্তাহীন পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের উপায় কী।

সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক ও কবি
*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘মবের’ বিষয়ে সরকার অত্যন্ত কঠোর: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগের তদন্ত হোক
  • করাচিতে পাঁচতলা ভবন ধসে নিহত ১৪
  • জঙ্গি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তসহ ৭০০ বন্দী এখনো পলাতক, উদ্ধার হয়নি ২০ আগ্নেয়াস্ত্র
  • আর কতদিন আইনহীনতায় বসবাস
  • এ. কে. আজাদের বাড়িতে মিছিল নিয়ে চড়াও হওয়ার ঘটনায় গণসংহতি আন্দোলনের ক্ষোভ
  • এ. কে. আজাদের বাড়িতে চড়াও হওয়ার ঘটনায় গণসংহতি আন্দোলনের ক্ষোভ
  • ‌‘মব’ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা অন্তর্বর্তী সরকারের বিশাল ব্যর্থতা: গণসংহতি আন্দোলন
  • কোনো যুক্তিতে ‘মব সন্ত্রাস’ অনুমোদন করা যাবে না: বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি
  • ফরিদপুরে এ. কে. আজাদের বাড়িতে চড়াও হওয়ার ঘটনায় সাইফুল হকের নিন্দা