পেশাদার ফুটবলকে বিদায় বলেছেন ব্রাজিলের সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি মার্সেলো। ফুটবলার হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ হলেও ফুটবলে তার অনেক কিছু দেওয়ার আগে বলে অবসর বার্তায় জানিয়েছেন লস ব্লাঙ্কোস এই ডিফেন্ডার।
মার্সেলো ভিডিও বার্তায় অবসর ঘোষণায় বলেন, ‘১৮ বছর বয়সে রিয়াল মাদ্রিদ আমার দরজায় কড়া নাড়ে এবং আমি ব্লাঙ্কোস হয়ে যাই। আমি গর্বের সঙ্গে এখন বলতেই পারি, আমি প্রকৃত মাদ্রিলিনো। স্ত্রী ছাড়াও বার্নান্যুতে আমার একটি পরিবার ছিল। ১৬ মৌসুম, ২৫ শিরোপা, যার ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, একটি আবার অধিনায়ক হিসেবে, বার্নাব্যুতে অনেক জাদুকরী রাত কেটেছে। কী অসাধারণ যাত্রা! ফুটবলার হিসেবে আমার পথ এখানেই ফুরলো।’
পেশাদার ফুটবল ছাড়লেও ফুটবলের সঙ্গে থাকতে চান মার্সেলো। গুঞ্জন ছিল, কোচিংয়ে ক্যারিয়ার শুরু করবেন তিনি। আবার ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদেও দেখা যেতে পারে তাকে। অবসর বার্তায় দিয়েছেন ওই ইঙ্গিতও, ‘এখনো ফুটবলে আমার দেওয়ার আছে অনেক কিছু। ধন্যবাদ।’
মার্সেলো ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেন্সে দুই মৌসুম খেলে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন। রিয়ালে ১৬ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫৪৬ ম্যাচ খেলে ৩৮ গোল করেছেন তিনি। রিয়ালের সঙ্গে চুক্তি শেষে গ্রিক ক্লাব অলিম্পিয়াকোসে যোগ দেন। সেখান থেকে পুনরায় ফ্লুমিনেন্সে ফেরেন। কিন্তু স্বদেশি ক্লাবে দ্বিতীয় মৌসুমে কোচের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে চুক্তি বাতিল হয় তার। এরপর ফ্রি এজেন্ট থাকা ৩৬ বছর বয়সী ফুটবলার অবসরের পথেই হেঁটেছেন।
মার্সেলো ব্রাজিলের হয়ে ১২ মৌসুমে ৫৮ ম্যাচ খেলে ৬ গোল করেছেন। রিয়ালে তিনি ৬টি লা লিগা, ৫টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন। ব্রাজিলে জিতেছেন কোপা লিবার্তোদোস। ব্রাজিলের হয়ে কনফেডারেশন কাপ ও দুটি অলিম্পিক মেডেল আছে তার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ টবল র
এছাড়াও পড়ুন:
৬৪ বছরের রেজাউল করিম ফ্রিল্যান্সার
রাজধানীর নিউ ইস্কাটন এলাকার বাসিন্দা শেখ রেজাউল করিমের বয়স ৬৪ বছর। নিয়ম করে প্রতিদিন অন্তত দুই ঘণ্টা কাটান রমনা পার্কে। ৭ থেকে ১০ কিলোমিটার হাঁটেন অথবা দৌড়ান। অবসরে গান শোনেন। এই রুটিনেই অভ্যস্ত তিনি। দেখে মনে হবে একজন সুখী মানুষ। এই বয়সে তাঁর অবসর যাপন করার কথা। কিন্তু কাজকর্মে এখনো ব্যস্ত থাকেন তিনি। কাজটি অবশ্য তরুণদের। তিনি এই বয়সে মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করছেন।
শেখ রেজাউল করিমের জীবনের গল্পটাই এক বিস্ময়। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে বসে তিনি নিজের গল্প শোনান।
২০০৩-০৪ সাল। ঢাকায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশনে চাকরি করতেন শেখ রেজাউল করিম। সীমিত বেতনে সংসারের ব্যয় মেটানো দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছিল। বাড়তি আয়ের আশায় চার-পাঁচ লাখ টাকা জোগাড় করে বিনিয়োগ করেন শেয়ারবাজারে। লভ্যাংশ পুনর্বিনিয়োগ এবং কিছু নতুন বিনিয়োগও করেন। ২০১০ সালের শুরুতে সেই বিনিয়োগ দাঁড়ায় প্রায় ৬০ লাখ টাকায়। ব্রোকারেজ হাউস থেকে ঋণ নিয়ে আরও ১৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন রেজাউল করিম। ওই বছরের জুলাই মাসে তাঁর বিনিয়োগের বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ১৪ লাখ টাকায়।
মাসে গড়ে লাখ টাকার ওপরে আয় হয় আমার। অবসর জীবনটাকে উপভোগ করি বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে। ফ্রিল্যান্সিং তার মধ্যে একটি। মাসে কত টাকা উপার্জন করছি, এর চেয়ে আমার কাছে সুস্থভাবে বেঁচে থাকাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।রেজাউল করিমনিজেকে সফলতম মানুষদের একজন মনে হচ্ছিল শেখ রেজাউল করিমের। কিন্তু ওই বছরেই তাঁর জীবনে আসে ভয়ংকরতম ধাক্কা। হঠাৎ শেয়ারবাজারে দরপতন শুরু হয়। একই সময়ে জিবিএস রোগে (গুলেন ব্যারি সিনড্রোম) আক্রান্ত হন তাঁর স্ত্রী হাসানাত উন নাহার। এটি স্নায়ুজনিত রোগ, এতে দেহের মাংসপেশি ধীরে ধীরে শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাঁর সুস্থ স্বাভাবিক স্ত্রী, মাত্র তিন-চার দিনের মধ্যে পুরোপুরি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়লেন। সব ফেলে ছোটাছুটি শুরু হলো স্ত্রীকে নিয়ে। এর মধ্যে শেয়ারবাজারের পতন আরও বাড়ল। তাঁর বিনিয়োগ কমে প্রায় এক-দশমাংশ হয়ে পড়ে। তখন ঋণ পুনরুদ্ধারের জন্য ‘ফোর্সড সেলের’ (জোরপূর্বক বিক্রি) মাধ্যমে তাঁর সব শেয়ার বিক্রি করে দেয় ব্রোকারেজ হাউস। নিঃস্ব হয়ে পড়েন রেজাউল।
এদিকে সরকারি চাকরি থেকে অবসরের সময়ও এগিয়ে আসতে থাকে। অবসরজীবনে কী করবেন ভেবে ২০১৭ সালে গরুর একটা খামার শুরু করেন নিজ এলাকা বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার শৈলদাহ গ্রামে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি অবসরে যান। আগে থেকেই তাঁর ধ্যানে-জ্ঞানে ছিল খামার। এটি ভবিষ্যতের অবলম্বন হিসেবে ভেবেছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারি তাঁর সব পরিকল্পনা এলোমেলো করে দেয়। বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তিতাস অফিস থেকে ঋণ নিয়েছিলেন ৩০ লাখ টাকা। তাই অবসরে পাওয়া এককালীন টাকা থেকে সেটা কেটে নেওয়া হয়। তখন তিনি ১৪ লাখ টাকার মতো পান।
ল্যাপটপে কাজ করছেন রেজাউল করিম