ভারত পাকিস্তানে হামলা চালালে কী হবে
Published: 7th, May 2025 GMT
পাকিস্তানকে ঘিরে ভারতের পদক্ষেপগুলো সাধারণত ঘটে থাকে পরিচিত একটি ছকে। প্রথমে ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে হামলা হয়। পাকিস্তানের ওপর এর দায় চাপিয়ে দেয় নয়াদিল্লি।
এরপর ভারতের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো যুদ্ধের দামামা বাজানো শুরু করে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় আমন্ত্রণ জানানো হয় দেশটির অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের। সেখানেই তাঁরা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং জয় ছিনিয়ে আনেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির উত্থান এবং সামাজিক মাধ্যমের কারণে এই উন্মাদনা এখন তুঙ্গে।
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর পরিস্থিতি আবারও একই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। আবারও ভারত থেকে পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। সামান্য কয়েকজন, যাঁরা তাড়াহুড়া করে নেওয়া কোনো পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক, তাঁরাও ভয়াবহ যুদ্ধ না বাধিয়ে কীভাবে পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়া যায়, সে কথা ভাবছেন।
একটি বিষয় খোলাসা করা যাক। ভারত যদি পাকিস্তানের ওপর সীমিত আকারে হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তারা কী করতে পারে। এখানে একটি বিষয় হলো সীমিত হামলা যে শেষ পর্যন্ত সীমিতই থাকবে, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর অর্থ এই নয় যে ভারতের হিসাবে ভুল হবে না। অনেক সময় ভুল হিসাব থেকেই যুদ্ধ শুরু হতে দেখা গেছে।
ধরে নেওয়া যাক, পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ভারত। এমনকি তা দিলও। ওই শাস্তি কেমন হবে, তা নিয়ে চিন্তা নেই। তবে পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ায় এই যুক্তি দেখানো যেতে পারে যে ওই শাস্তি সীমিত হবে। আরেকটু বড় পরিসরে ভাবলে এমনটা মনে করা যায় যে এক পর্যায়ে গিয়ে পাকিস্তান সিদ্ধান্ত নিল তারা ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে না। এর ফলে কি ‘যুদ্ধে’ ভারতের জয় হবে? উত্তরটা হবে—হ্যাঁ, যদি তারা রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়। আর সফল না হলে, উত্তরটা হবে ‘না’।
যদি পাকিস্তানকে শাস্তি দেওয়ার পর ভারত দেশটিকে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত না রাখতে পারে? ধরা যাক এসব পদক্ষেপ ভারতের স্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করে নয়াদিল্লি। তাহলে যে কাল্পনিক চিত্রপট তৈরি করা যায়, তাতে নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হবে ভারত।
হিসাব জটিল করবে পারমাণবিক অস্ত্রপাকিস্তানে হামলা চালানোর ক্ষেত্রে ভারতের যে হিসাব–নিকাশ, তা আরও জটিল করে তুলবে ইসলামাবাদের হাতে থাকা পারমাণবিক অস্ত্র। এর কারণ এটা নয় যে পাকিস্তান তাদের পারমাণবিক সক্ষমতা প্রথমে বা সংঘাতের শুরুর দিকে কাজে লাগাতে পারে। বরং কারণ এটি যে দেশটির এই সক্ষমতা রয়েছে এবং হামলাকারীদের তা বিবেচনায় নিয়েই সামনে এগোতে হবে।
২০০১–০২ সালের সংকটের পর থেকেই অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে একটি নীতি অনুসরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। পারমাণবিক হামলা এড়িয়ে কীভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়েও স্নায়ু যুদ্ধের সময় বিস্তর আলোচনা হয়েছে। এ থেকে ‘সীমিত যুদ্ধের’ একটি ধারণা সামনে এসেছে। এই ধরনের যুদ্ধ এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যেন সর্বাত্মক পারমাণবিক হামলা শুরু না হয়।
সীমিত যুদ্ধ দুই ধরনের হতে পারে। এক ধরনের যুদ্ধে দুটি পরাশক্তি সরাসরি মুখোমুখি হয় না। তৃতীয় পক্ষগুলোর মধ্যে এই যুদ্ধ হয়, যেমনটা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় এরই মধ্যে ঘটেছে। আরেকটি যুদ্ধ হলো পূর্ণমাত্রায় সংঘাতে না জড়িয়ে সীমিত আকারে পারমাণবিক হামলা। এতে কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র সীমিত আকারে ব্যবহার করে দুই পক্ষ। এমন যুদ্ধ হলেও উভয় পক্ষে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্যাসপার ওয়াইনবার্গার ‘প্রাউড প্রফেট’ ছদ্মনামে একটি অতি-গোপনীয় ‘যুদ্ধ মহড়ার’ আয়োজন করেছিলেন। তাতে সীমিত পরিমাণে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের তত্ত্বগুলো যাচাই–বাছাই করা হয়েছিল। ‘প্রাউড প্রফেট’ মহড়ার পর যুদ্ধের দ্বিতীয় ধারণাটি বাতিল হয়ে যায়। ২০১৬ সালে ওই মহড়া–সংক্রান্ত নথিগুলো প্রকাশ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
সংঘাতে আধিপত্যতবে সীমিত আকারে পারমাণবিক হামলার পরিকল্পনাও করছে না ভারত। তারা সীমিত আকারে গতানুগতিক হামলা চালাতে চায়। একই সঙ্গে হয়তো তারা এমনভাবে এই সংঘাতকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে চায় যেন পাকিস্তান পারমাণবিক হামলা করার পর্যায়ে না পৌঁছায়।
এমনকি ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ও ব্রিটিশসহ পশ্চিমা কৌশলবিদেরা এই যুক্তি দেখাচ্ছেন যে এটা করা সম্ভব। এর মাধ্যমে পাকিস্তানকে শাস্তি দিতে পারবে ভারত, সংঘাত নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে দেশটি এবং সংঘাতে নিজেদের আধিপত্যও ধরে রাখতে পারবে। আর এমন পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে নয়াদিল্লির সমস্যার সমাধান হবে।
ভারতের এই সুযোগ রয়েছে যে তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সীমিত সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারবে। কারণ, প্রচলিত যুদ্ধ সক্ষমতার দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে নয়াদিল্লি। পাকিস্তানকে দোষী সাব্যস্ত করে ভারত এমন হামলা চালানোর পরিস্থিতি তৈরির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্য যথেষ্ট কূটনৈতিক সক্ষমতা দেশটির রয়েছে।
আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তানের অত্যাধুনিক সমরসজ্জা সংঘাতের শঙ্কা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে১২ ঘণ্টা আগেআর এই হামলায় পাকিস্তান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রতিশোধ নেওয়া তাদের জন্য কঠিন হবে। কারণ, এ জন্য দেশটিকে বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে সামরিক ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে পাকিস্তান। ফলে সংঘাত বৃদ্ধি পাক, তা চাইবে না তারা। আর পাকিস্তান সংঘাত বৃদ্ধির পথে না এগোলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারতের আধিপত্য থাকবে।
পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের উত্তেজনার মধ্যে সীমিত যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত সীমিত পরিসরে না–ও থাকতে পারে। দুই পক্ষই রক্ত ঝরাতে ঝরাতে আরও সংঘাতের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। শুধু আত্মসম্মান নয়, বরং প্রতিপক্ষকে প্রতিরোধের জন্য তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া সংঘাত থামানোর জন্য প্রস্তুত না–ও থাকতে পারে তারা। আর সংঘাতে দুই পক্ষই যখন নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তখন কোনো একটি পক্ষ যে পরিকল্পনা নিয়ে সংঘাত শুরু করে, তা ভেস্তে যেতে পারে।
আরও পড়ুনভারতে যুদ্ধকালীন তৎপরতার মহড়ার জন্য বিভিন্ন রাজ্যকে নির্দেশ১৫ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনভারতের মোকাবিলায় ‘ছায়া থেকে প্রকাশ্যে’ বেরিয়ে আসছেন পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি০৫ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নয় দ ল ল পদক ষ প র জন য ধরন র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।