পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর দুই দেশের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা চূড়া ছুঁয়ে যায়। উভয় দেশে যুদ্ধপরিস্থিতি বিরাজ করছে। সীমান্তে গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে; খবর আসছে হতাহতের। ভারতের হামলার কী ধরনের জবাব দেয় পাকিস্তান, তার ওপর যুদ্ধের পরিসর নির্ভর করছে। 

ফোর্বস সাময়িকীর অনলাইন সংস্করণে ভারত-পাকিস্তান সামরিক উত্তেজনার ওপর পর্যালোচনা হাজির করা হয়েছে। 

বুধবার (৭ মে) গভীর রাতে পাকিস্তানে হামলার পরই ভারতের সেনাবাহিনী তাদের এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে বলেছিল, “ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” ওই টুইট বার্তায় বলা হয়, ভারত কোনো বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়নি। সন্ত্রাসী আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে ভারতে হামলার পরিকল্পনা ও পরিচালনা করা হতো।

আরো পড়ুন:

শ্রীপুরে ছাত্র আন্দোলনে হামলা মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

ভারত-পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নীতি কী?

ওই বার্তা থেকে ইঙ্গিত মেলে পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৭ জন নিহত হওয়ার বদলা নিয়েছে ভারত। এর বিরুদ্ধে পাকিস্তান যদি প্রতিক্রিয়া না দেখায়, তাহলে হামলা হয়তো ওই পর্যন্তই থাকবে। তবে পাকিস্তান সমুচিত জবাব দেওয়ার কথা বলেছে। 

পাকিস্তান দাবি করেছে, তার ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। অবশ্য ভারত এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। 

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ভারত কী করে তার ওপর নির্ভর করবে। তিনি ব্লুমবার্গ টিভিকে বলেন, “ভারত আক্রমণ করলে আমরা জবাব দেব। ভারত যদি পিছু হটে, তাহলে আমরা অবশ্যই পরিস্থিতি গুটিয়ে নেব।”

তবে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি জরুরি বৈঠক করার পর জানিয়েছে, পাকিস্তান এই হামলার জবাব দেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে।

বৈঠকের পর দেওয়া বিবৃতিতে এই কমিটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানায়, তারা যেন ভারতের ‘উসকানিমূলক ও অবৈধ’ কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এবং আন্তর্জাতিক মান ও আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের জন্য ভারতকে জবাবদিহিতার আওতায় আনে।

ভারতের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ভবিষ্যৎ কোনো হামলার পরিকল্পনা আছে কি না, তা স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। তবে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং বলেন, “পাকিস্তানের যেকোনো ধরনের আগ্রাসন বা দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ডের মোকাবিলায় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত।”

পাকিস্তানের ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রাণহানি ও স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার পর এর সমুচিত জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানি সেনারা ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে মুহুর্মুহু গোলা বর্ষণ করে চলেছে; ভারতও পাল্টা গোলা ও গুলি ছুড়ছে। ফলে সীমান্তে যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে দুই দেশ।

তবে চিরবৈরী ভারত ও পাকিস্তান বিধ্বংসী পারমাণবিক অস্ত্রের মালিক। দুই দেশ হামলা ও পাল্টা হামলায় প্রচলিত অস্ত্রের ব্যবহার করছে। তবে যুদ্ধের মোড় ঘুরে গেলে তারা কী পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করতে পারে; পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কী নীতি রয়েছে দুই দেশের। 

ফোর্বস সাময়িকীর অনলাইন সংস্করণে ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নীতির বিষয়ে বলা হয়েছে, ভারত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারে প্রচলিত নীতি মেনে চলার কথা বলে। ‘প্রথমে ব্যবহার না করার’ (নো ফার্স্ট ইউজ) নীতিতে অটল তারা। এর মানে হলো, ভারত কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না, যদি না তাদের ওপর প্রথমে পারমাণবিক হামলা হয়।

অন্যদিকে, পাকিস্তান এই নীতিতে বিশ্বাস করে না। ভারতের বিপরীতে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারে ছোট আকারের ট্যাকটিক্যাল ওয়ারহেড আছে বলে ধারণা করা হয়, যেগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য তৈরি, যেমন ছোট ক্ষেপণাস্ত্র ‘নাসর’  দিয়ে এসব অস্ত্র ছোড়া যায়।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এই ধরনের ছোট ওয়ারহেড পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কারণ- এগুলোর ব্যবহার হলে পরিস্থিতি দ্রুত বৃহৎ পরিসরের পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, যা কোনো পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধক্ষেত্রে বিপজ্জনক মাত্রায় উত্তেজনার ঝুঁকি বাড়ায়।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (সিআইএ) ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক অনুযায়ী, ভারতের প্রায় ১৫ লাখ সক্রিয় সামরিক সদস্য রয়েছে, যা বিশ্বে অন্যতম বৃহৎ সেনাবাহিনী। অন্যদিকে, পাকিস্তানে প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজার সক্রিয় সামরিক সদস্য রয়েছে।

তবে সেনাসংখ্যায় এগিয়ে থাকলেও ভারতের বাহিনী চীনের সঙ্গে উত্তরের এবং উত্তর-পূর্বের বিতর্কিত সীমান্তে নজর দিতে গিয়ে অনেকটাই ছড়িয়ে আছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশানল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবলিশ নিউক্লিয়ার ওয়েপনসের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারে আনুমানিক ১৬৪টি ওয়ারহেড রয়েছে, আর পাকিস্তানের আছে আনুমানিক ১৭০টি পারমাণবিক অস্ত্র।

তবে একটি বড় পার্থক্য হলো, ভারতের রয়েছে একটি পারমাণবিক ট্রায়াড (triad), অর্থাৎ তারা স্থল, আকাশ ও পানির নিচ থেকে পারমাণবিক অস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা রাখে। এই সুবিধা পাকিস্তানের নেই।

৭ মে রাতে পাকিস্তানের ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হতাহতের ঘটনার সমুচিত জবাব দেওয়ার কথা বলেছেন পাকিস্তানের নেতারা। এখন দুই দেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা চরমে রয়েছে; কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর গোলাগুলি চালছে, হতাহতের খবরও আসছে।

ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ নেতা এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে একের পর এক বৈঠকের খবর আসছে। সর্বশেষ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ পার্লামেন্টে যে ভাষণ দিয়েছেন, তাতে সর্বাত্মক যুদ্ধের ইঙ্গিত নেই। তিনি হামলার জন্য ভারতের কড়া সমালোচনা করেছেন। এই হামলাকে ‘কাপুরুষোচিত’ বলে বর্ণনা করেছেন। বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা বিলাওয়াল ভুট্টোও একই সুরে কথা বলেছেন। অবশ্য তিনি বলেছেন, যে যত বড়, তার পতনও তত বড়।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র র বল ছ ন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম প্রান্তিকে কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের মুনাফা কমেছে

পুঁজিবাজারে বিমা খাতে তালিকাভুক্ত কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি থেকে মার্চ, ২০২৫) অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) কমেছে ৩.১২ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে বুধবার (৭ মে) কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হয়।

চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ০.৬২ টাকা। আগের হিসাববছরের একই সময়ে এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৬৪ টাকা। সে হিসাবে আলোচ্য প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা কমেছে ০.০২ টাকা বা ৩.১২ শতাংশ।

২০২৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৩.৩৭ টাকা।

ঢাকা/এনটি/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ