প্রিয় সাইকেলটি চুরি হওয়ায় তিন বোনের মন খারাপ
Published: 8th, May 2025 GMT
প্রায় এক মাস আগে রাজধানীর ধানমন্ডির সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টারের পঞ্চম তলা থেকে এক সহকারী সচিবের তিন মেয়ের পুরোনো একটি সাইকেল চুরি হয়। এ ঘটনায় মামলা হয় ধানমন্ডি থানায়।
কিন্তু সাইকেলটি এখনো উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। চোরও ধরা পড়েনি। প্রিয় সাইকেলটি উদ্ধার না হওয়ায় তিন বোনের মন খুব খারাপ।
সহকারী সচিব শেখ তৈয়েবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পয়লা বৈশাখের আগের দিন দিবাগত রাত তিনটার দিকে এক চোর পঞ্চম তলা থেকে সাইকেলটি চুরি করে নিয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে মনঃকষ্টে আছে তিন মেয়ে।
এই কোয়ার্টারে ৭২টি পরিবার বসবাস করে। বাসিন্দাদের অধিকাংশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব ও সহকারী সচিব পদমর্যাদার। সাইকেল চুরির বিষয়টি নিয়ে কোয়ার্টারের প্রতিবেশী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন তৈয়েবুর রহমান। পরে মামলা করা হয়। কোয়ার্টারের এক নিরাপত্তারক্ষী বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
তৈয়েবুর রহমান বলেন, ‘আমরা সবাই একমত হই যে কোয়ার্টারে ঢুকে ভবনের প্রধান ফটকের তালা খুলে পাঁচতলায় উঠে দুটি তালা কেটে যে চোর সাইকেল চুরি করতে পারে, সে সাধারণ নয়। তাই মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়।’
তৈয়েবুর রহমান, মামলার বাদী ও ধানমন্ডি থানার পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোয়ার্টারে প্রবেশের পথে একটি পুরোনো ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা) আছে। কোয়ার্টারের চারপাশে আছে উঁচু দেয়াল। কোয়ার্টারে প্রবেশপথে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তারক্ষী থাকেন। এই প্রবেশপথ থেকে কিছুটা দূরের দেয়াল টপকে একজন চোর কোয়ার্টারের ভেতরে ঢোকে। তার মুখমণ্ডল গামছা দিয়ে ঢাকা ছিল। সে ভবনের প্রবেশফটকের তালা খুলে সিঁড়ি দিয়ে পঞ্চম তলায় ওঠে। ফ্ল্যাটের বাইরে জানালার সঙ্গে দুটি তালা দিয়ে সাইকেলটি আটকানো ছিল। তালা দুটি কেটে সাইকেলটি নিয়ে দেয়াল টপকে চলে যায় চোর।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার শাহ মোস্তফা তারিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সাইকেল চুরির ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন তাঁরা। তবে সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চোরের সুস্পষ্ট মুখ অবয়ব দেখা যায়নি। তারপরও তাঁরা সাইকেলটি উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
স্মৃতির সাইকেলতৈয়েবুর রহমানের তিন মেয়ে—তনিমা রহমান, অনিমা রহমান ও রাইয়ানা রহমান। তৈয়েবুর রহমান একটি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত। তাঁর স্ত্রী গৃহিণী। এই দম্পতির বড় মেয়ে তনিমা উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। মেজ মেয়ে অনিমা উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আর ছোট মেয়ে রাইয়ানা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।
ধানমন্ডির সরকারি অফিসার্স কোয়ার্টারের সামনে প্রশস্ত খোলা জায়গা রয়েছে। সেখানে কোয়ার্টারের ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করে। কেউ কেউ সাইকেল চালায়।
তনিমা যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, তখন সে দেখত, কোয়ার্টারের সমবয়সীরা বাসার সামনে সাইকেল চালায়। তনিমা বাবার কাছে বায়না ধরে, তাকে একটি সাইকেল কিনে দিতে হবে। পরে মেয়ের জন্য একটি সাইকেল কিনে আনেন তৈয়েবুর রহমান। বাবার সহযোগিতায় তনিমা সাইকেল চালানো শেখে। এরপর একা একাই সাইকেল চালাতে শুরু করে।
তনিমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাবার কিনে দেওয়া সেই কালো রঙের সাইকেলের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। গত পয়লা বৈশাখের আগের দিন সাইকেলটি চুরি হওয়ায় আমার মন অনেক খারাপ।’
শুরুতে সাইকেল চালাতে গিয়ে বারবার পড়ে যাওয়া, আবার ওঠাসহ অনেক স্মৃতিচারণা করেন তনিমা। একপর্যায়ে তিনি দক্ষ হয়ে ওঠেন। সেই শৈশব-কৈশোরে বন্ধুদের সঙ্গে বাসার সামনে সাইকেল চালানোর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে দারুণ আনন্দ পেতেন তিনি। সাইকেল নিয়ে এসব স্মৃতি এখন তাঁর মাথায় সারাক্ষণই ঘুরছে বলে জানালেন তিনি।
নবম শ্রেণি পর্যন্ত নিয়মিত সাইকেলটি চালাতেন তনিমা। একই সময় অনিমাও সাইকেলটি চালাত। ফলে সাইকেলটি নিয়ে দুই বোনের অনেক গল্প আছে। আর একদম ছোট বোন রাইয়ানা সম্প্রতি সাইকেল চালানো শিখছিল।
তনিমা প্রথম আলোকে বলল, ‘রাইয়ানা রোজ ঘুমানোর সময় আমাকে বলছে, “আপু, আমাদের সাইকেলটি পাওয়া গেছে?” আমরা তাকে কোনো জবাব দিতে পারছি না। ওর মন সব থেকে বেশে খারাপ। আমি মানতেই পারছি না, পঞ্চম তলায় দুটি তালা লাগানো অবস্থায় আমাদের সাইকেলটি কীভাবে চুরি হয়ে গেল?’
সাইকেলটি দেখে রাখত রাইয়ানাতনিমা-অনিমা বড় হয়ে যাওয়ায় সাইকেলটি আর চালাত না। তাদের ছোট বোন রাইয়ানা সাইকেলটি চালানো শিখছিল। তাই সে-ই সাইকেলটি দেখে রাখত।
পাঁচতলা থেকে সাইকেলটি বাসার সামনের চত্বরে নিয়ে রাইয়ানাকে চালানো শেখাত তনিমা-অনিমা। তনিমা বলেন, ‘রাইয়ানা বাসা থেকে বেরিয়ে সাইকেলের বেলটি বাজাত। সে যখন বেলটি বাজাত, তখন আমি চলে যেতাম শৈশবের দিনগুলোয়। আমিও ছোটবেলায় সাইকেলের বেল বাজাতাম। সাইকেলের গায়ে লেগে থাকা ধুলো মুছে রাখত রাইয়ানা। সাইকেল চুরি হওয়ার পর থেকে তার মন অনেক খারাপ।’
গত সোমবার রাইয়ানাকে নিয়ে তার স্কুলে যাচ্ছিলেন বাবা তৈয়েবুর রহমান। তখন বাসার অদূরে তাঁর মেয়েদের সাইকেলটির মতো একটি সাইকেল দেখতে পান। সাইকেলটি দেখে রাইয়ানা তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিল, তাদের সাইকেলটি পাওয়া গেছে কি না? জবাবে তৈয়েবুর রহমান বলেন, ‘মা, দেখতে একই রকমের হলেও এটি তোমাদের সেই সাইকেল না। এটি অন্য কারও সাইকেল।’
মামলাটির তদারক কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ আবদুল আলীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইকেলটি চুরি হওয়ার পর থেকে তিন বোনের মন খারাপের ব্যাপারটি আমরা জানি। তাদের বাসায় পুলিশ গিয়ে কথা বলেছে। সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সাইকেলটি উদ্ধার করতে।’
ছোট বোন রাইয়ানার মন ভালো করার জন্য হলেও পুলিশ যেন স্মৃতিবিজড়িত প্রিয় সাইকেলটি উদ্ধারের ব্যবস্থা করে, সেই আকুতি তনিমার।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তারক চন্দ্র শীল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইকেল চুরি হওয়ার পর আমরা বাসাটিতে গিয়ে তিন বোনের সঙ্গে কথা বলেছি। সাইকেলের সঙ্গে তাদের আবেগ জড়িত। আমরা আশা করি, তিন বোনের চুরি হওয়া সাইকেলটি উদ্ধার করে ফেরত দিতে পারব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত য় ব র রহম ন প রথম আল ক কর মকর ত ধ নমন ড প রব শ র স মন ন র মন সহক র
এছাড়াও পড়ুন:
লক্ষ্মীপুরে ঝগড়ার পর স্ত্রীসহ নিজের গায়ে আগুন দিলেন স্বামী
লক্ষ্মীপুরে ঝগড়ার জের ধরে স্ত্রীসহ নিজের গায়ে আগুন দিয়েছেন স্বামী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রায়পুর উপজেলার উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের চরপক্ষী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে তাঁরা চিকিৎসাধীন।
দগ্ধ দুজন হলেন উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের গাইয়ারচর এলাকার আবদুল হামিদের মেয়ে রহিমা বেগম। একই ইউনিয়নের চরপক্ষী গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে নুরুল আলম। নুরুল আলম স্থানীয় একটি ইলেকট্রিকের দোকানি।
আগুনে রহিমা বেগমের শরীরের প্রায় ৫০ শতাংশ ও আর তাঁর স্বামীর শরীরের ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরূপ পাল। তিনি বলেন, দগ্ধ অবস্থায় দুজন রোগীকে হাসপাতালে আনার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয় তাঁদের।
পুলিশ জানায়, কয়েক বছর আগে নুরুল আলম একই ইউনিয়নের গাইয়ারচর এলাকার রহিমাকে বিয়ে করেন। আজ দুপুরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে নুরুল আলম তাঁর স্ত্রী ও নিজের শরীরে মিনি গ্যাস সিলিন্ডারের সাহায্যে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে স্থানীয় লোকজন আগুন নিভিয়ে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এ বিষয়ে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। আলামত হিসেবে ছোট গ্যাস সিলিন্ডারটি জব্দ করা হয়েছে। স্বামী-স্ত্রী দুজন বর্তমানে চিকিৎসাধীন।