চার বছরের পরীক্ষার ফল: রাজশাহী শহরে প্রতিবছরই শব্দদূষণ বাড়ছে
Published: 10th, May 2025 GMT
রাজশাহী শহরের শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে (রেলগেট) গত চার বছরে শব্দের মাত্রা বেড়েছে ৭ ডেসিবেলের বেশি। ২০২২ সালে এই চত্বরে শব্দের মাত্রা ছিল ৯০ ডেসিবেল। আর আজ শনিবার একই স্থানে শব্দের মাত্রা মেপে পাওয়া গেছে ৯৭ দশমিক ২ ডেসিবেল।
আজ স্থানীয় বরেন্দ্র পরিবেশ উন্নয়ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই পরীক্ষা পরিচালনা করেছে। পরিবেশবাদী এ সংগঠনটি চার বছর ধরে রাজশাহী শহরের কয়েকটি জায়গায় শব্দদূষণের মাত্রা পরীক্ষা করে আসছে। তবে এবার শুধু পরীক্ষা করা হয়েছে এই চত্বরে। শব্দের মাত্রা পরীক্ষার সময় তারা শব্দদূষণ সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক প্রচারও চালিয়েছে।
আজ দুপুরে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহর পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গত চার বছরে এই চত্বরে শব্দ মাপার পরিসংখ্যানও পাঠানো হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ২০২২ ও ২০২৩ সালে রেলগেট এলাকায় শব্দের মাত্রা পরীক্ষায় ৯০ ডেসিবেল পর্যন্ত পাওয়া যায়। এরপরের বছর ২০২৪ সালে এখানে পাওয়া যায় ৯৬ দশমিক ৩ ডেসিবেল। এবার একই স্থানে পাওয়া গেল ৯৭ দশমিক ২ ডেসিবেল।
পরীক্ষায় নেতৃত্ব দেন প্রকৌশলী জাকির হোসেন খান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অলি আহমেদ, রকি খান চৌধুরী, শামসুর রাহমান, কলি আহমেদ, ইশিতা, রুমানা আহমেদ, মতিউর রহমান, বাপ্পি দাস, আবু বক্কর সিদ্দিকি প্রমুখ।
বাংলাদেশ শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, শব্দের সর্বোচ্চ ঘনমাত্রার ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন এলাকাকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। নীরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা ও শিল্প এলাকা। এই বিধিমালায় বলা হয়েছে, আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় রাতে ৬০ ও দিনে ৭০ ডেসিবেল থাকতে হবে। এতে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস–আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এসব এলাকায় রাতে ৪০ ও দিনে ৫০ ডেসিবেল শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। শিল্প এলাকায় এ মাত্রা রাতে ৭০ ও দিনে ৭৫ ডেসিবেল এবং মিশ্র এলাকায় রাতে ৫০ ও দিনে ৬০ ডেসিবেল থাকার কথা বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শব্দের তীব্রতা নিয়ে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি ইউএনইপির (২০২২) প্রকাশ করা ‘ফ্রন্টিয়ারস ২০২২: নয়েজ, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে ঢাকাকে বিশ্বের প্রথম ও রাজশাহীকে বিশ্বের চতুর্থ শব্দদূষণকারী শহর হিসেবে দেখানো হয়। যেখানে রাজশাহীতে শব্দের পরিমাণ দেখানো হয় ১০৩ ডেসিবেল। এই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তখন থেকে প্রতিবছর শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে আসছে।
সংগঠনটি আরও বলছে, শহরের রেলগেটের মতো জনবহুল স্থানে দিনের বেলা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একই স্থানে শব্দের মান নির্ণয় করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় আজ সেখানে শব্দের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।
সংগঠনটির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, শহরের ব্যস্ততম মিশ্র এলাকা রেলগেট। এখানে আবাসিক হোটেলও আছে। আজ তাঁরা গড় শব্দের মাত্রা পেয়েছেন ৯৭ দশমিক ২ ডেসিবেল। মানুষের শ্রবণসীমা অনুযায়ী এটা দিনের বেলায় সর্বোচ্চ থাকার কথা ছিল ৬০ ডেসিবেল। এটি খুবই আশঙ্কাজনক। তিনি আরও বলেন, শব্দের মাত্রা মাপার সময় ওই এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিল। দেখা গেছে, এই যানবাহনসহ অন্য যানবাহন অযথা হর্ন বাজাচ্ছে। অটোরিকশাগুলোয় ভেঁপু হর্ন বাধ্যতামূলক করা উচিত।
জাকির হোসেন খান পরামর্শ দিয়ে বলেন, শব্দদূষণের প্রভাব শুধু মানুষের ওপর নয়, প্রতিটি পশুপাখির ওপর পড়ে। গাছ শব্দের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে যথেষ্ট কার্যকর। আমের শহর রাজশাহীতে আম ও জামজাতীয় ফলের গাছ, নিম ও শজনে–জাতীয় উপকারী গাছ লাগানো যেতে পারে, যেগুলো বড় হলে শব্দ ও বায়ুদূষণ রোধে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। শজনেগাছ বায়ু থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্রহণ করে অক্সিজেন নির্গমনে কার্যকর গাছগুলোর মধ্যে অন্যতম।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এল ক য় র ত চ র বছর স গঠনট পর ক ষ ক এল ক দশম ক শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০টি হীরার খনির ৫টিই এক দেশে
১আইখাল, রাশিয়া
রাশিয়ার সাখা অঞ্চলে আইখাল খনির অবস্থান। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় হীরার খনি। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে এই খনিতে মজুতের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৭ কোটি ৫৫ লাখ ৬০ হাজার ক্যারেট। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত এটি ওপেন-পিট বা উন্মুক্ত খনি ছিল। এরপর এটিকে ভূগর্ভস্থ খনিতে রূপান্তর করা হয়।
আইখাল হীরার খনি থেকে প্রতিবছর প্রায় ১৩ লাখ ক্যারেট হীরা উত্তোলন করা হয়। বিশ্বের অপরিশোধিত হীরার এক-তৃতীয়াংশ এখান থেকেই উত্তোলন করা হয়ে থাকে। রাশিয়ার আংশিক রাষ্ট্রায়ত্ত হীরা কোম্পানি আলরোসার অধীনস্থ আইখাল মাইনিং কোম্পানি এই খনি পরিচালনা করে।
২জোয়ানেং, বতসোয়ানাবতসোয়ানার কালাহারি মরুভূমিতে জোয়ানেং খনির অবস্থান। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হীরার খনি। ডি বিয়ার্স ও বতসোয়ানা সরকারের যৌথ উদ্যোগ হিসেবে পরিচিত ডেবসওয়ানা ডায়মন্ড কোম্পানি খনিটি পরিচালনা করে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুসারে, এ খনিতে হীরার সম্ভাব্য মজুতের পরিমাণ ১৬ কোটি ৬৬ লাখ ক্যারেট। বর্তমানে খনিটির ৪০০ মিটার গভীরে খননকাজ চলছে। ২০৩৪ সাল পর্যন্ত এ খনি থেকে হীরা উত্তোলন করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৩উদাচনি, রাশিয়াউদাচনি খনির অবস্থান রাশিয়ার ইয়াকুতিয়া অঞ্চলের সাখা রিপাবলিকে। রুশ ভাষায় ‘উদাচনি’র অর্থ ‘ভাগ্যবান’। আলরোসা কোম্পানি এ খনি পরিচালনা করে।
১৯৭১ সালে এ খনিতে হীরা উত্তোলন শুরু হয়। তখন এটি উন্মুক্ত খনি ছিল। বর্তমানে, খনিটি থেকে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে হীরা উত্তোলন করা হয়। এ খনিতে সম্ভাব্য মজুতের পরিমাণ ১৬ কোটি ৪৪ লাখ ৬০ হাজার ক্যারেট।
৪জুবিলি, রাশিয়াজুবিলি খনির অবস্থানও রাশিয়ার ইয়াকুতিয়া অঞ্চলের সাখা রিপাবলিকে। এটি উন্মুক্ত পদ্ধতির হীরার খনি। ২০১৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত হিসাব অনুসারে এই খনিতে সম্ভাব্য মজুতের পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি ৩০ লাখ ক্যারেট। এর মধ্যে ৫ কোটি ১০ লাখ ক্যারেট হীরা ভূগর্ভে মজুত আছে।
১৯৮৬ সাল থেকে এটি আলরোসার আইখাল মাইনিং ও রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন হীরা কোম্পানি আলরোসার প্রসেসিং ডিভিশনের যৌথ মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। ২০২২ সালে এ খনি থেকে প্রায় ৪৯ লাখ ৯০ হাজার ক্যারেট হীরা উত্তোলন হয়।
৫নিউরবা, রাশিয়ানিউরবা খনি রাশিয়ার সাখা অঞ্চলে অবস্থিত। এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম হীরার খনি। এ খনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে হীরা উত্তোলন করা হয়। ২০১৮ সালের জুলাই মাসের হিসাব অনুসারে এ খনিতে মজুতের পরিমাণ ১৩ কোটি ৩০ লাখ ক্যারেট।
৬ওরাপা, বতসোয়ানাবতসোয়ানার ফ্রান্সিসটাউন থেকে ২৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট এলাকায় ওরাপা খনির অবস্থান। ডি বিয়ার্স ও বতসোয়ানা সরকারের যৌথ মালিকানার কোম্পানি ডেবসওয়ানা এ খনি পরিচালনা করে থাকে। ১৯৭১ সাল থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে এখান থেকে হীরা উত্তোলন করা হচ্ছে।
২০১৮ সালের হিসাব অনুসারে এ খনিতে সম্ভাব্য মজুতের পরিমাণ প্রায় ১৩ কোটি ১২ লাখ মেট্রিক টন। ২০২২ সালে ওরাপা খনি থেকে প্রায় ৮ কোটি ৮৫ লাখ ক্যারেট হীরা উত্তোলন করা হয়েছে।
৭কাটোকা, অ্যাঙ্গোলাকাটোকা খনি