টানা তিন দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়, কাল আরও বাড়তে পারে
Published: 10th, May 2025 GMT
টানা তৃতীয় দিনের মতো দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায়। কয়েক দিনের মৃদু, মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহের পর আজ শনিবার জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা চারদিকে, কোথাও স্বস্তি নেই।
এমন পরিস্থিতিতে কোনো সুখবর দিতে পারেননি আবহাওয়াবিদেরা। তাঁরা বলছেন, আগামীকাল তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে।
পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার বিকেল তিনটায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ২৩ শতাংশ। আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত এটিই সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শুক্রবার ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। ওই দুই দিনও সারা দেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
গরমে লোকজন অনেকটাই ঘরবন্দী হয়ে পড়লেও খেটে খাওয়া মানুষের নিস্তার নেই। চুয়াডাঙ্গা–মেহেরপুর মহাসড়ক ঘেঁষে সদর উপজেলার দৌলাতদিয়াড়ে বিএডিসির শস্য গুদাম এবং হাতিকাটা, আলুকদিয়া ও ভালাইপুরে গড়ে ওঠা খাদ্যশস্যের অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হাজারো শ্রমিক কর্মরত আছেন। তাঁরা প্রচণ্ড রোদের মধ্যেই দিনভর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
আজ শনিবার দুপুরে হাতিকাটা গ্রামে এনামুল হকের খাদ্যগুদাম–সংলগ্ন চাতালে ১৪ জন শ্রমিককে ধান শুকাতে ও বস্তা ভর্তি করে গুদামজাত করতে দেখা গেল। কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাঁরা সঙ্গে থাকা বোতল থেকে পানি খাচ্ছিলেন, আবার কেউ খানিক দূরের নলকূপ থেকে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে আসছিলেন।
কথা হয় শ্রমিক সরদার ৫৫ বছর বয়সী মিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। ৩০ বছর ধরে শ্রমিকের কাজ করা মিরাজুল বলেন, ‘সূয্যুর তাপে গা-ডা পুড়ে যাচ্চে। সেদিক দেকতি গেলি তো সুংসার চলবে নারে বাবা।’
আলুকদিয়া এলাকায় একটি গুদামের চাতালে বিপুলসংখ্যক শ্রমিককে শুকানো ধান বস্তায় ভর্তি করতে দেখা গেল। আলাপকালে শ্রমিকেরা জানান, এক বস্তা ধান (৫০ কেজি) গুদাম থেকে বের করে রোদে দেওয়া, শুকানো এবং শুকানোর পর বস্তায় ভর্তি করে গুদামে সাজালে বস্তাপ্রতি ১৮ টাকা করে পেয়ে থাকেন। শ্রমিক রিংকু মিয়া বলেন, ‘গরিপ হয়ে জন্মায়চি, কাজ কইরেই খাতি হবে। এই কাজের ওপরই আমার পাঁচ জুনের সুংসার। রোদির জন্নি তো বাড়িত বইসে থাকলি সুংসার চলবে না।’ অন্যান্য শ্রমিকদের বক্তব্যও একই রকমের।
স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, সকাল থেকেই আকাশ মেঘমুক্ত-পরিষ্কার। কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই এবং পশ্চিম থেকে গরম হাওয়া প্রবেশ করায় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। তাপপ্রবাহের রেকর্ড ভেঙেছে। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে। পরশু থেকে তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও তাপপ্রবাহ আরও কয়েকস দিন অব্যাহত থাকবে। পশ্চিমা লঘুচাপ নিষ্ক্রিয় থাকা এবং জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে চলমান অস্বস্তিকর অবস্থা আরও কয়েক দিন থাকবে। এই লঘুচাপ সক্রিয় হলেই স্বস্তি ফিরে আসবে।’
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ৩৬ ডিগ্রি থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে।
২০০২ সাল থেকে চলতি মৌসুম পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল গত বছরের ৩০ এপ্রিল। এদিন রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২০১৪ সালের ২১ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২৪ বছরের রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সবচেয়ে বেশি রেকর্ড এপ্রিল মাসে, ১৪ বার। এ ছাড়া, মে মাসে ছয় ও জুন মাসে চারবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র কর ড কর স লস য় স র র কর ড দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল
ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।
বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।
প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে
জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সাড়ে চারটায় জামায়াতআজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলনজোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসআসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।
একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।
আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।