পতিতদের পুনর্বাসন চায় না জনগণ: তারেক রহমান
Published: 10th, May 2025 GMT
দেশের মানুষ রাজনীতিতে কোনোভাবেই গুম, খুন, দুর্নীতি-লুটপাট, টাকা পাচার ও বর্বর বন্দিশালা আয়নাঘরের প্রতিষ্ঠাতা পতিত পলাতক পরাজিত অপশক্তির পুনর্বাসন চায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শনিবার বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপিসহ বাংলাদেশের পক্ষের প্রতিটি রাজনৈতিক দল জনগণের এই দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। যারা সংবিধান বার বার লঙ্ঘন করেছে, দেশে অবৈধ সংসদ এবং সরকার গঠন করেছে, যারা সংবিধান লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।
কেউ যেন ভোটের অধিকার কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেজন্য জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ।
তিনি বলেন, সেজন্য জনগণের দায়বদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে বিএনপি দেশে এমন একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।
তারেক রহমান বলেন, নিরাপদ ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বের এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রই একমাত্র উত্তম বিকল্প। গণতান্ত্রিক বিশ্বে যারা গণতন্ত্রবিরোধী তারা গণতন্ত্রের অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশে বিগত দশক ধরে যারা অথবা যে দলটি ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষণ চালিয়েছিল দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে তারা অপশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তিনি বলেন, আমরা যদি ’৭১ সাল, ৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, ’৯০ সাল এবং সর্বশেষ ’২৪ সালে বীর জনতার রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের যে ধারাবাহিকতা দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ বর্তমান দুইটা বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে একমত। তা হলো বাংলাদেশকে যাতে আর কেউ ভবিষ্যতে তবরদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে না পারে এবং গণতন্ত্রবিরোধী পলাতক অপশক্তি যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। এই দুইটা বিষয়ে জনগণ আর কোনো কোনো আপস করতে রাজি নয়।
ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের দুঃশাসন ও দুষ্কর্মসমূহের চিত্র এবং জুলাই-আগস্টের ঘটনাবলী বেশি করে প্রকাশের জন্য বাংলাদেশের গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
ফ্যাসিবাদী দেড় দশকে কক্সবাজারের রামু, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, রংপুর, গাইবান্ধা, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘু ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর বাড়ি-ঘর-উপাসনালয় ঘটনাবলী নিয়েও গণমাধ্যমের কাছে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধ করে তিনি বলেন, কারা এসব ঘটনার নেপথ্যে ছিল, এসব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে আগামী দিনে আর কেউ দেশের ধর্মী জনগোষ্ঠীকে নিয়ে দলীয় রাজনীতিতে ব্যবহারের সাহস করবে না।
তিনি বলেন, আগামী দিনে বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ফ্যাসিবাদী দেড় দশকে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে যে অপ্রীতিকর, অনাহত ঘটনা ঘটেছে তার নেপথ্য কারণ খুঁজে বের করতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ের একটি সর্বদলীয়, সর্বধর্মীয় ‘নাগরিক তদন্ত কমিশন' গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তারেক রহমান বলেন, দলমত ধর্ম নির্বিশেষে দেশে প্রতিটি নাগরিকের প্রথম এবং প্রধান গর্বিত পরিচয় হচ্ছে, আমরা বাংলাদেশি। নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস বা সাংস্কৃতিক স্বকীয়তা বজায় রেখেই বাংলাদেশি হিসেবে প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্র ও সমাজের সমান এবং ন্যায্য অধিকার ভোগ করবে এটি বিএনপির নীতি।
বিএনপির ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক দীপেন দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও সুভাষ চন্দ্রা চাকমার সঞ্চালনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ব এনপ গণত ন ত র ক ত র ক রহম ন ন ব এনপ র গণতন ত র জনগণ র অপশক ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মনে হবে প্রধান উপদেষ্টা গ্রহণযোগ্য বক্তব্য দিয়েছেন, কিন্তু এর মধ্যেও দ্বিমত থাকতে পারে
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া ভাষণের বিষয়ে এখনো কারও কারও দ্বিমত থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে যাওয়ার একমাত্র বিকল্প নির্বাচন।
‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৬: জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক নির্বাচনী সংলাপে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এ কথাগুলো বলেন বিএনপি মহাসচিব। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে এ সংলাপের আয়োজন করে ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এফএসডিএস)।
এ সময় জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন, এটা নিঃসন্দেহে অনেকেই হয়তো মনে করবেন যে, সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটা বক্তব্য তিনি দিয়েছেন। কিন্তু এর মধ্যেও দ্বিমত থাকতে পারে, আপনার অন্য মত থাকতে পারে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটা নির্বাচন দিয়ে জনগণের একটা পার্লামেন্ট (সংসদ) নির্বাচিত করা হবে। সেই পার্লামেন্টই জনগণের সমস্ত যে ইস্যুগুলো আছে, সেই ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করে সুনির্দিষ্ট একটা পথ বাতলে দিতে পারবে।’
বাংলাদেশে বারবার গণতন্ত্রের চর্চা ব্যাহত হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বরাবর গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিয়েছি, লড়েছি, সংগ্রাম করেছি; কিন্তু গণতন্ত্র চর্চা করার কোনো সুযোগ পাইনি।’ পাকিস্তান আমল থেকেই গণতন্ত্রের চর্চাকে নষ্ট করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশে দুর্ভাগ্যক্রমে একটা গণতান্ত্রিক শক্তি প্রথম গণতন্ত্র ধ্বংস করে একদলীয় বাকশাল কায়েম করেছিল।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ‘গণতন্ত্রকে কার্যকর করার জন্য আমার জানামতে একটি মাত্র পন্থা রয়েছে। সেই পদ্ধতিটি কিন্তু হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচনটা যদি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ না হয়; তাহলে কিন্তু কখনো গণতন্ত্র কোনো দেশে কার্যকর হতে পারে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সবাই একমত— নির্বাচন ছাড়া এই জাতির ক্ষতে মলম দেওয়ার আর কোনো উপায় নেই।’ সে জন্য আগামী নির্বাচনে গণরায় মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করারও আহ্বান জানান তিনি।
নির্বাচন চেয়ে গৃহযুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা
সংলাপে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেন, দেশে এখন যাঁরা সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচনের দাবি করছেন, তাঁরা দেশে গৃহযুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, সংবিধানে লেখা আছে, নির্বাচন হবে পাঁচ বছর পরে; ২০২৪–এর পরের নির্বাচন ২০২৯ সালে।
কোন সাংবিধানিক যুক্তির ভিত্তি থেকে নির্বাচন চাওয়া হচ্ছে, সে প্রশ্নও তোলেন ফরহাদ মজহার। দেশের প্রচলিত আইন মানার বাধ্যবাধকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যদি আপনারা মনে করেন ঠিক আছে উপদেষ্টার সরকার (অন্তর্বর্তী সরকার) শেখ হাসিনার সংবিধান মেনেছে, তাহলে ২০২৯ সালের নির্বাচন আপনাকে মেনে নিতে হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমরা মনে করি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্পষ্ট করে ঘোষণা দিয়েছে যে বাংলাদেশ কোনো দেশের কাছে এবং বিশেষভাবে ভারতের যে কর্তৃত্ব আছে বাংলাদেশের ওপরে, সার্বভৌমত্বের ওপরে; এটা কোনোভাবেই আর গ্রহণ করবে না।’ সে জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত এবং জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার ওপর জোর দেন তিনি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো বিপদে থাকলে ঐক্যবদ্ধ হয় উল্লেখ করে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘আজকের এই মিটিং থেকে আমি প্রস্তাব করব একটা প্রস্তাব দেওয়ার জন্য যে আমরা কোনো রাজনৈতিক দল কারও ব্যাপারে হেট স্পিচ দেব না (ঘৃণা ছড়াব না)।’
‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৬: জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক নির্বাচনী সংলাপে আলোচকেরা