চোখের জলে, উষ্ণ অভ্যর্থনায় ম্যানসিটি ছাড়লেন ডি ব্রুইন
Published: 21st, May 2025 GMT
ম্যানচেস্টার শহরের আকাশে আজ অন্যরকম রঙ। উচ্ছ্বাস আর বিষাদের এক অদ্ভুত মিশ্রণ। প্রায় এক দশকের সম্পর্কের শেষ অধ্যায় লিখলেন বেলজিয়ান মিডফিল্ড জাদুকর কেভিন ডি ব্রুইন। মঙ্গলবার (২০ মে) রাতে বোর্নমাউথের বিপক্ষে মাঠে নামা ম্যাচটি ছিল তার ম্যানচেস্টার সিটি অধ্যায়ের শেষ। আর সেই মঞ্চে আবেগ যেন ছাপিয়ে গেল ফুটবলকে।
৭০ মিনিট মাঠ মাতিয়ে, সমর্থকদের করতালির ভেতর দিয়ে বিদায় নিলেন এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা প্লেমেকার। তার চোখের কোণে ছিল জল। ঠোঁটে ছিল স্মৃতিমাখা হাসি। গ্যালারির ৫০ হাজার দর্শক যেন একযোগে জানালেন ভালোবাসা, আর ডি ব্রুইনের প্রতিটি পদক্ষেপে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল স্মৃতির সুর।
২০১৫ সালে জার্মান ক্লাব উলফসবার্গ থেকে ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দিয়েছিলেন ডি ব্রুইন। তারপরের ইতিহাস শুধুই সাফল্যের। ৬ বার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জেতা, ২০২৩ সালের ঐতিহাসিক চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়, দু’বারের পিএফএ বর্ষসেরা খেলোয়াড়— এই সবই রয়েছে তার ঝুলিতে।
আরো পড়ুন:
ম্যাচ জিতিয়ে মর্মাহত ডি ব্রুইনে জানালেন, চুক্তি নবায়নের প্রস্তাব পাননি
গার্দিওয়ালার ভয়, চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা হারালে বড় ট্রান্সফার করতে পারবেন না
তবে শুধু ট্রফি নয়, ডি ব্রুইনে হয়ে উঠেছিলেন মাঠে সিটির ছন্দের যোগানদাতা। তার পাসিং, ভিশন এবং নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে অসংখ্য গোলের মুহূর্ত। যা ইংলিশ ফুটবল ইতিহাসে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।
ম্যাচ শেষে ডি ব্রুইনে যখন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কথা বলেন, তখন গ্যালারির আবেগ আর ধরে রাখা যাচ্ছিল না, ‘‘এই শহরেই আমার সন্তান বড় হয়েছে। এখানেই আমার বন্ধুরা, আমার হৃদয়। ১০ বছর যে এভাবে কেটে যাবে, কখনো ভাবিনি। এখন আমি যাচ্ছি। কিন্তু ফিরে আসব—একজন বন্ধু হয়ে, একজন পরিবারের সদস্য হয়ে।’’
এসময় আবেগ ধরে রাখতে পারছিলেন না ম্যানসিটি কোচ পেপ গার্দিওলা। একজন প্রিয় শিষ্যের বিদায় তার চোকে জল এনে দেয়।
সিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ডি ব্রুইনের সম্মানে ক্লাব ক্যাম্পাসে স্থাপন করা হবে একটি মূর্তি। এটি শুধুই তার কীর্তির স্বীকৃতি নয়, বরং প্রতীক হয়ে থাকবে কীভাবে একজন খেলোয়াড় একটি ক্লাবের ইতিহাস হয়ে উঠতে পারেন।
ডি ব্রুইনের পরবর্তী ঠিকানা নিয়ে জল্পনা চলছে। কেউ বলছেন, হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের এমএলএস লিগে পাড়ি দেবেন তিনি। আবার কেউ বলছেন, ইউরোপেই থাকতে চান এই বেলজিয়ান তারকা। তবে এখনো তিনি নিজেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাননি।
ফুটবল শুধু গোল, পয়েন্ট আর ট্রফির খেলা নয়; এটি আবেগ, সম্পর্ক আর ভালোবাসার গল্পও বটে। কেভিন ডি ব্রুইনের বিদায় সেই কথাই আরও একবার প্রমাণ করে দিল। ম্যানচেস্টার সিটি হয়তো এবার অন্য কাউকে খুঁজে নেবে মাঝমাঠে। কিন্তু ‘কেভিন’ নামটা থেকে যাবে চিরকাল।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ব র ইন র
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ