পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আমাদের তিনটা মোটা দাগের দায়িত্ব- সংস্কার, বিচার ও ইলেকশন। তিনটিই কঠিন দায়িত্ব। ‌শুধু ইলেকশন করার জন্য আমরা দায়িত্বটা নিইনি। শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে বাংলাদেশ প্রাণিবিদ্যা সমিতির ২৪তম জাতীয় সম্মেলন এবং বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

দায়িত্ব পালন করতে পারছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, ‘অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা অনেক দূর এসেছি। সংস্কার কমিশনগুলো তাদের রিপোর্ট দিয়েছে। সে রিপোর্টের উপর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সকল রাজনৈতিক দল সেখানে অংশগ্রহণ করছে। আমরা একটা নির্বাচনের সময়সীমা বলে দিয়েছি। বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগে ট্রাইব্যুনাল একটা ছিল, এখন দুইটি হয়েছে। আগামীকাল থেকে ট্রায়ালের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এই কাজগুলো আমরা সঠিক প্রক্রিয়ায় শেষ করতে চাই। এতে সবার সহযোগিতা চাই।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়সীমার বাইরে একদিনও যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যেই হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদ কাজ করে যাচ্ছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কাজেই নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলার সুযোগ হওয়ার প্রয়োজন ছিল না। কারণ বারবারই বলা হচ্ছে, একটা সময়সীমা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

আপনারা কোন চাপে আছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা পারফর্ম করতে পারছি কিনা- আমাদের বিবেচনা ও বিবেকে ওইটাই একমাত্র চাপ। আপনি চাইলেই হঠাৎ করে সচিবালায় যেতে পারবেন না। অথচ এ রকম অনেক দাবি আছে, যেগুলো রাস্তা বন্ধ না করে আলাপ-আলোচনার মধ্যেই সমাধান করা যায়।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যার যত দাবি আছে, তা নিয়ে রাস্তা আটকে দিচ্ছে। ঢাকা শহর অচল হয়ে যাচ্ছে। সেই অচল অবস্থা নিরসনে আমরা কিছু করতে পারছি কিনা। আমরা ক্ষমতা নিইনি, জাতীয় দায়িত্ব পালন করছি। এই দায়িত্বটা তখনই পালন করতে পারব যখন সকলের সহযোগিতা পাব। আমরা চিন্তা করেছি, আসলেই আমরা দায়িত্ব পালন করতে পারছি কিনা। বড় দাগে তিনটা দায়িত্ব পালন করার জন্য যে প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, এই প্রতিবন্ধকতা আমরা কীভাবে মোকাবিলা করব, আদৌ মোকাবিলা করতে পারবো কিনা, যদি মোকাবিলা করতে পারি- কীভাবে করব, যদি মোকাবিলা করতে না পারি তাহলে আমাদের কী করণীয় হবে- আমরা সকলে মিলে এটা চিন্তা করছি। আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি তাহলে দায়িত্বে থাকাটা প্রাসঙ্গিক। আর যদি না পারি, আমাদের নিজস্ব অনেক কাজ আছে, আমরা সেই কাজে ফিরে যাব। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে দায়িত্বে থাকাটা আর প্রাসঙ্গিক থাকছে না।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জওয় ন উপদ ষ ট উপদ ষ ট র র জন আম দ র র জন য র জওয

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে ঢাকা

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক নিয়ে দ্বিতীয় দফার আলোচনার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায় যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তর (ইউএসটিআর)। বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার রাত ৯টায় ওয়াশিংটনে এ আলোচনা শুরু হয়েছে। চলবে ১১ জুলাই পর্যন্ত। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত বাড়তি শুল্ক কমানোর পাশাপাশি সার্বিকভাবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে ঢাকা। আলোচনায় দরকষাকষির মাধ্যমে ভালো কিছু আশা করা হচ্ছে। 

গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিঠিতে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানানো হয়। আগামী ১ আগস্ট থেকে নতুন এই শুল্ক আরোপ হওয়ার কথা। এটি কার্যকর হলে দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক দাঁড়াবে ৫১ শতাংশ। 
এর আগে গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে ৬০ দেশের পণ্যে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশসহ বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তখন বাংলাদেশের পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়, যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ৯ এপ্রিল। তবে সে সময় তিন মাসের জন্য দেশভিত্তিক বাড়তি শুল্ক আরোপ স্থগিত করা হয়। এ শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণ করেছেন ট্রাম্প। এতে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে নতুন করে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। 

একই দিন বাংলাদেশের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক চুক্তি করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ট্যারিফ শিডিউল ডকুমেন্ট পাঠানো হয়েছে। এর ওপর আলোচনার আমন্ত্রণ জানায় ইউএসটিআর। এরই অংশ হিসেবে ৯ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরীসহ ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান ঢাকা থেকে সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। 

গতকাল বৈঠক শুরুর আগে মোবাইল ফোনে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সমকালকে বলেন, সচেতনভাবেই সার্বিক ইস্যুটি পর্যালোচনায় রয়েছে। শুধু শুল্ক ইস্যু নয়, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে দেশের জন্য যেটা সবচেয়ে ভালো, সে বিষয়গুলো নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হবে। সার্বিকভাবে দেশের স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে ভালোকিছু পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। তাই পাল্টা শুল্ক কমানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সরকারি খাতে খাদ্যশস্য বিশেষ করে গম কেনায় যুক্তরাষ্ট্রকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উড়োজাহাজ এবং সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় তুলে ধরা হবে। 

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে শুল্ক, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রক শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রস্তাবের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। শুল্ক কমানোর পাশাপাশি বাণিজ্য-সংক্রান্ত অশুল্ক বাধা কাটিয়ে ওঠারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। এ ছাড়া দেশটি থেকে তুলা আমদানিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমেরিকান তুলা আমদানি বাড়াতে দেশে কিছু অবকাঠামোও তৈরি করা হবে। বেসরকারি পর্যায়েও যাতে করে বাণিজ্য বাড়ানো সম্ভব হয় সে বিষয়েও সরকার নীতি সহায়তা দেবে। 

লবিস্ট নিয়োগে আগ্রহী নয় সরকার 

শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষিতে সরকারের উদ্যোগ যথেষ্ট ছিল না বলে মনে করেন রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা। প্রথম দফা ৩৭ শতাংশ শুল্ক ঘোষণার পর গত প্রায় তিন মাসে বলার মতো কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি সরকার। কয়েকজন রপ্তানিকারক সমকালকে বলেন, কী আলোচনা হচ্ছে, কারা আলোচনা করছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি সরকারের তরফ থেকে। শুল্ক কমাতে ওয়াশিংটনকে রাজি করাতে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি সামনে আনে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ। 

তবে গতকাল সন্ধ্যায় সরকারের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো লবিস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে লবিস্ট মোটেও জরুরি না। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে আলোচনা করছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ