ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ঢাকামুখী লেন বন্ধ করে সমাবেশ করেছে গণঅধিকার পরিষদ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল-সাওঘাট এলাকায় সমাবেশ করে তারা। এ জন্য সকাল থেকেই পুরো এলাকায় যানজট দেখা দেয়। ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় লোকজন ও ঢাকাগামী যাত্রীরা।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর আওয়ামী লীগের গণহত্যার বিচার ও দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ, ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ রক্ত দিয়েছেন শোষণমুক্ত করার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ একাত্তরের চেতনা বিক্রি করে লুটেপুটে খেয়েছে।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে দেশের ছাত্র-জনতা এক কাতারে দাঁড়িয়ে নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছে বলেও উল্লেখ করেন নুরুল হক নুর। তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটের মাধ্যমে পছন্দের দলকে নির্বাচিত করবে।
দলটির সমাবেশের জন্য মঞ্চ তৈরি করা হয় ঢাকামুখী সড়কে। বৃহস্পতিবার রাতেই চেয়ার এনে রাখা হয় সেখানে। শুক্রবার ভোর থেকেই এ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সিলেটগামী সড়ক দিয়েই দুই পাশের যানবাহন চলাচল করতে থাকায় মহাসড়কে ব্যাপক যানজট দেখা দেয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
সমাবেশস্থলের অদূরেই ভুলতা-গাউছিয়া মার্কেট, তাঁতবাজার, হাজী শপিং কমপ্লেক্স, রেদওয়ান টাওয়ার ও গুরুত্বপূর্ণ হাটবাজারের অবস্থান। সেখানকার ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী মহাসড়কে সৃষ্ট যানজটে দুর্ভোগের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, রূপগঞ্জে সমাবেশ করার জন্য অনেক মাঠ রয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দেশের অন্যতম ব্যস্ত মহাসড়ক। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। এমন সড়কে সমাবেশের আয়োজন নিন্দনীয়।
এ বিষয়ে গণঅধিকার পরিষদের রূপগঞ্জ উপজেলা সভাপতি কাউসার আহমেদের দাবি, তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়ে সমাবেশের অনুমতি নিয়েছেন। সড়কে মঞ্চ করা হলেও যানবাহন চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা রাখেন।
এমন বিষয় জানা নেই বলে দাবি করেন রূপগঞ্জ উপজেলার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশিকুর রহমান। তিনি ইউএনওর সঙ্গে কথা বলবেন। নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) মেহেদী ইসলাম বলেন, গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে সমাবেশের জন্য একটি চিঠি দিয়েছে। তবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক বন্ধ করে সমাবেশের জন্য মঞ্চ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। বিষয়টি দেখছেন তারা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সম ব শ র পগঞ জ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে গণঅধিকার পরিষদের কমিটি ঘোষণার তিন দিন পর সভাপতিসহ ৫৯ জনের পদত্যাগ
গোপালগঞ্জে গণঅধিকার পরিষদের জেলা কমিটি ঘোষণার তিন দিন পর সভাপতিসহ ৫৯ নেতা পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। আজ সোমবার সংগঠনের সভাপতি আল আমিন সরদার স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে ২৪ অক্টোবর ৭৯ সদস্যের গণঅধিকার পরিষদের গোপালগঞ্জ জেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এতে বিভাগীয় উপকমিটির বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতি এবং সাবেক যুবলীগ নেতা ও মাঠে না থাকা ব্যক্তিদের পদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
এ বিষয়ে আজ দুপুরে আল আমিন সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নবগঠিত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে যাঁকে রাখা হয়েছে, তিনি কখনোই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না এবং এখনো নেই। এ ছাড়া টুঙ্গিপাড়া উপজেলা যুবলীগের এক সদস্যকে কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি পদে রাখা হয়েছে। এতে কমিটিতে থাকা নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। যার ফলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। এতে মনোক্ষুণ্ন হয়ে আমিসহ ৫৯ সদস্য পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি। মূলত এখানে স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বজনপ্রীতি করেছে বিভাগীয় উপকমিটি।’
আল আমিন সরদার জানান, গতকাল রোববার কেন্দ্রীয় কমিটির ই-মেইলে সবাই পৃথকভাবে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি) গোপালগঞ্জ জেলার নবঘোষিত কমিটি গঠনের পর থেকেই দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। নতুন কমিটির সভাপতি আল আমিন সরদার, সাংগঠনিক কে এম নাজমুল ইসলামসহ ৫৯ জন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। পদত্যাগকারী ব্যক্তিদের অভিযোগ, নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় দলের মূলনীতি, যোগ্যতা ও মাঠপর্যায়ের ত্যাগ-তিতিক্ষা কোনোভাবে বিবেচনা করা হয়নি। অনেক পরিশ্রমী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতা–কর্মীকে বঞ্চিত করে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ও পক্ষপাতের মাধ্যমে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। যা গণঅধিকার পরিষদের আদর্শ ও গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘আমরা সব সময় দলের প্রতি অনুগত থেকেছি, কিন্তু যে কমিটিতে আস্থা ও ন্যায়বিচার নেই, সেখানে থেকে কোনো দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। তাই আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমরা সম্মিলিতভাবে আমাদের পদ থেকে পদত্যাগ করছি। তবে আমরা গণঅধিকার পরিষদের মূল আদর্শ, নীতি ও গণমানুষের রাজনীতিতে বিশ্বাসী।’