৫ মে ইসরায়েল স্থায়ীভাবে পুনরায় গাজা দখলের ইচ্ছা ঘোষণা করতে গিয়ে কেবল সামরিক আগ্রাসনের একটি নতুন ধাপের কথা জানায়নি, বরং সম্প্রসারণবাদী রাষ্ট্রটি তাদের নির্মূলকরণ ও পদ্ধতিগতভাবে নিশ্চিহ্নকরণের অভিযান তীব্রতর করার ইঙ্গিতও দিয়েছিল। এই পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে প্রতিটি সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকের জন্য একটি উদ্বেগজনক বার্তা হওয়া উচিত। এটি কেবল একটি আঞ্চলিক দখলদারিত্ব নয়, বরং সত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরা প্রথম লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন।

গাজায় নিহত গণমাধ্যমকর্মীর বিস্ময়কর সংখ্যা এ ব্যাপারে যথেষ্ট নজির রাখে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুটি বিশ্বযুদ্ধ, আফগানিস্তান এবং প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া ও ভিয়েতনাম যুদ্ধে সর্বমোট যে সংখ্যক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, গাজায় তার চেয়ে বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এটি পেশাদার সংবাদমাধ্যমকর্মীদের ক্ষেত্রে জানা তথ্য অনুসারে সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত। গাজার সরকারি সংবাদমাধ্যমগুলোর অফিসিয়াল রেকর্ড বলছে, যুদ্ধে ২২২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।

ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং (আইএমইইউ) এই শোচনীয় পরিস্থিতির সারসংক্ষেপ করে বলেছে, ‘ইসরায়েল আধুনিক ইতিহাসে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় হত্যাকারী।’ এটি কেবল যুদ্ধের পরিণতি নয়। এটি মূলত রক্তপাত ও সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে জবরদস্তিমূলক সংবাদমাধ্যগুলো নিশ্চিহ্ন করার একটি কৌশল। 
গত রোববার ছিল সাম্প্রতিক মাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিনগুলোর একটি। ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী দেইর এল-বালাহে দম্পতি সাংবাদিক খালেদ আবু সাইফ ও নুর কান্দিলকে তাদের ছোট মেয়েসহ হত্যা করেছে। উত্তর গাজায় আলোকচিত্রী আজিজ আল-হাজ্জার ও তাঁর স্ত্রী- সন্তানদের এবং দক্ষিণ গাজায় সাংবাদিক আব্দুল রহমান আল-আবাদালাহকেও একই সময়ে হত্যা করা হয়। 
গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিক হাসান সামুর ও আহমেদ আল-হালু ইসরায়েলি দুটি হামলায় নিহত হন। এই সপ্তাহে খান ইউনিসের সবেমাত্র অকার্যকর নাসার মেডিকেল কমপ্লেক্সে সাংবাদিক হাসান এসলাইহকে লক্ষ্য করে একটি ইসরায়েলি ড্রোন হামলা চালানো হয়। ৭ এপ্রিল আইওএফ একটি মিডিয়া তাঁবুতে বোমা হামলা চালালে এসলাইহ আহত হয়ে সেরে উঠলেও তাঁর সহকর্মী হিলমি আল-ফাকাওয়ি দগ্ধ হয়ে মারা যান।

এ গণহত্যাকালের একজন খ্যাতনামা আলোকচিত্রশিল্পী সাংবাদিক ফাতিমা হাসোনা, যার জীবন নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও নির্মিত হয়েছে, ১৭ এপ্রিল ইসরায়েলি সেনারা তাঁর পরিবারের ১০ সদস্যের সঙ্গে নিজ বাড়িতে হত্যা করে। তার এক দিন আগে তিনি জানতে পারেন, প্রামাণ্যচিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হবে। ৭ মেতে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন, যাদের মধ্যে আছেন সাংবাদিক ইয়েহিয়া সুবেইহ ও নূর আল-দিন আবদু। 
গাজায় সংবাদমাধ্যম নিশ্চিহ্নকরণের চেষ্টায় ইসরায়েল যে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এগুলো তার মধ্যে কয়েকটি মাত্র। আরও অনেক সাংবাদিক আছেন, যারা বেঁচে গেছেন। কিন্তু সেই আঘাত তাদের নীরব করে দিয়েছে।

ইসরায়েল সাংবাদিকদের গাজা থেকে স্বাধীনভাবে রিপোর্ট করার অনুমতি দিচ্ছে না। এ ব্যাপারে বিদেশি সাংবাদিকরা আর চুপ করে থাকতে পারেন না। সাংবাদিকদের উচিত ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর সঙ্গে বিযুক্ত হওয়া এবং মিডিয়া যা দেখাতে চায় কেবল তার অংশ হতে সরাসরি অস্বীকার করা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রবেশাধিকার ছাড়া গাজা যুদ্ধ বধ্যরঙ্গমঞ্চ হয়ে থাকবে। এটি এমন এক জায়গা যেখানে অপরাধ অদৃশ্যভাবে চলতে পারে। গাজায় ক্যামেরার অনুপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি করা বোমার মতোই ভয়াবহ হবে।
এখনই সময় সাংবাদিক, সম্পাদক ও সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রবেশাধিকার দাবি করার। কেবল পেশাদারিত্বের অধিকার হিসাবে নয়, বরং একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা হিসেবেও এ দাবি তুলতে হবে। যতক্ষণ তা দেওয়া হবে না, ততক্ষণ সংবাদপত্র ও নিউজ নেটওয়ার্কগুলোর নিয়মিত পাঠক ও দর্শকদের মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে, তাদের সাংবাদিকদের ইসরায়েলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। 
এটি কেবল ফিলিস্তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের ব্যাপার নয়, বরং সাক্ষ্য দেওয়ার অধিকার, ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা যেসব গল্প গোপন রাখতে চান, সেগুলো নথিভুক্ত করার অধিকারের বিষয়।
এখনই গাজায় প্রবেশের সময়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে অবশ্যই সে পদক্ষেপ নিতে হবে। হত্যাকাণ্ড বন্ধ বা ইসরায়েলের অনুমতির অপেক্ষা নয়, এখনই ঢুকে পড়তে হবে।

ড.

ঘাদা এজিল: কানাডার আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল হত য ক ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষ হাতে পরিচালনা  করছেন সদর ইউএনও জাফর সাদিক

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী শত ব্যস্ততার মধ্যেও দক্ষতার সঙ্গে একাই পরিচালনা করছেন সদর উপজেলার ২৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা।

একইসাথে বক্তাবলী ইউনিয়নের প্রশাসকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।গত ১১ সেপ্টেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ইউএনও জাফর সাদিক অনিয়ম ও দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। 

পূর্ববর্তী সভাপতিদের আমলে যে দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য ও কোচিং নির্ভরতা ছিল, তা নির্মূল করে শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে নিরলস কাজ করছেন তিনি।

তিনি ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নীতিমালা-২০২৩’ বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়োগ করেন। অনিয়ম তদন্তে গঠন করেন ভিন্ন ভিন্ন কমিটি। ফান্ডের অর্থ অপব্যবহার ঠেকাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

পুনর্জন্ম পেয়েছে পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়

পূর্বে সাবেক এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠদের দ্বারা পরিচালিত পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ে দুর্নীতি, ৮ মাসের শিক্ষক বেতন বকেয়া, জমির রেজিস্ট্রি জটিলতা ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে গত বছর ১৫ আগস্ট শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।

ইউএনও জাফর সাদিক যোগদানের পর মাত্র ছয় মাসে ১৭টি সভা করে ফান্ড স্বচ্ছতা, শিক্ষক বেতন পরিশোধ, প্রভিডেন্ট ফান্ড ঋণ শোধ, জমির রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে নেতৃত্ব দেন।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেলিনা সুলতানা বলেন, “স্যার দুইবার বিদ্যালয় পরিদর্শন করে বাস্তব পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এখন নিয়মিত বেতন হচ্ছে, ড্রেন নির্মাণ চলছে।”

দখলদার উচ্ছেদ ও অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান

ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সাবেক প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারীর আর্থিক অনিয়মের তদন্তে সরাসরি মাঠে নামেন ইউএনও। বিদ্যালয়ের ২০ শতক জমি দখলমুক্ত করে ইটের দেয়াল অপসারণের নির্দেশ দেন। ঘুষের মাধ্যমে দেয়া পুকুর ইজারাও বাতিল করেন।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আফরোজা বলেন, “ইউএনও স্যারের উদ্যোগে জমি উদ্ধার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনও প্রক্রিয়াধীন।”
বক্তাবলীর কানাইনগর সোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের জমি দখলমুক্ত করতেও সরাসরি পুলিশি সহায়তায় দখলদার উচ্ছেদ করেন ইউএনও।

শিক্ষা সফর ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে নতুন প্রাণ

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা শিক্ষা সফর, বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পুনরায় চালু করে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন উদ্দীপনা তৈরি করেছেন ইউএনও জাফর সাদিক। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা বেতনে ও অর্ধ-বেতনে পড়ার সুযোগও তৈরি করেছেন।

প্রশংসিত হচ্ছেন সর্বত্র

সদর উপজেলার ৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগের সভাপতির দায়িত্বে থেকে ইউএনও জাফর সাদিক যে স্বচ্ছতা, দৃঢ়তা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন, তা এলাকায় প্রশংসিত হচ্ছে। সচেতন মহলের মতে, যেখানে পূর্ববর্তী সভাপতিরা শিক্ষা ফান্ডের অর্থ আত্মসাতে ব্যস্ত ছিলেন, সেখানে কোনো আর্থিক সুবিধা ছাড়াই এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষভাবে পরিচালনা একজন প্রকৃত কর্মবীরের পরিচয় বহন করে।

ইউএনও নির্বাহী অফিসার জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছি।

নিজ কাজের অতিরিক্ত এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে এটা যেমন সত্যি, তেমনি নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে আমি অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকার যখন যে দায়িত্ব আমাকে অর্পণ করবেন সেটাকেই জনকল্যাণমুখী করে ভবিষ্যতেও কাজ করে যেতে চাই।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় বিনিয়োগের এখনই সময়
  • এক সপ্তাহে যৌথ অভিযানে আটক ৩৪৫
  • চাঁদাবাজি সন্ত্রাস দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার হোন: নাহিদ ইসলাম
  • ২৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দক্ষ হাতে পরিচালনা  করছেন সদর ইউএনও জাফর সাদিক