৩০ মিনিটে ১৩ কেজি চা পাতা উত্তোলন করেন ফটিকছড়ির নেপচুন চা বাগানের শ্রমিক জেসমিন আকতার। ২০২৪ সালে ৩৪ হাজার ৯৩৭ কেজি চা পাতা উত্তোলন করেছেন। এই কর্মবীরত্বের জন্য ‘দেশসেরা চা পাতা উত্তোলনকারী’র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ৪২ বছর ধরে চা পাতা তোলার কাজ করছেন জেসমিন।
১৬ বছর বয়সে বিয়ের পর কুমিল্লা থেকে স্বামী আবদুল বারেকের সঙ্গে জেসমিন চলে আসেন ফটিকছড়ির নেপচুন চা বাগানে। সংসার শুরুর পরপর স্বামীর সঙ্গে লেগে পড়েন চা বাগানের কাজে। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হাত ধরেই মূলত চা গাছের সঙ্গে পরিচয় তাঁর। একসময় জেসমিন হয়ে ওঠেন দক্ষ একজন চা শ্রমিক।
বলা যায়, যৌবনের শুরু থেকেই চা পাতা আর চা বাগানের সঙ্গে ভালোবাসা জেসমিনের। এই ভালোবাসা চলছে প্রায় চার দশক ধরে। একটি-দুটি পাতা উত্তোলন করতে করতে এখন তিনি হয়ে গেছেন দেশসেরা। জেসমিন আকতার টানা দ্বিতীয়বারের মতো পেলেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দেশসেরা সর্বোচ্চ পাতা উত্তোলনকারীর পুরস্কার।
জানা যায়, গত বুধবার ঢাকায় জাতীয় চা দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। টানা দুইবার শ্রেষ্ঠ চা পাতা উত্তোলনকারী হওয়ায় অতিথি পর্যায়ে বক্তব্য রাখার সুযোগ পান জেসমিন আকতার। সেই সময় তিনি তুলে ধরেন চা শ্রমিকদের কষ্টের কথা, বিভিন্ন দাবিদাওয়া।
দেশসেরা হওয়ার বিষয়ে অনুভূতি জানতে কর্মস্থল নেপচুন চা বাগানে গেলে দেখা হয় জেসমিনের সাথে। তিনি বলেন, ‘চা পাতা উত্তোলনের মাঝে রয়েছে এক ধরনের ছন্দ।’ কাজের ফাঁকে ফাঁকেই কথা হয়। সেরা হওয়ার পেছনে কী প্রেরণা কাজ করেছে? এমন প্রশ্নের জবাবে জেসমিন বলেন, ‘বেশি পাতা উত্তোলনের জন্য আমার স্বামীর প্রেরণা রয়েছে সবচেয়ে বেশি। ১৬ বছর বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসে কুমিল্লা থেকে স্বামী আবদুল বারেকের সঙ্গে চলে আসি ফটিকছড়ির নেপচুন চা বাগানে। সেখানে সংসার শুরুর পরপরই স্বামীর সঙ্গে চা বাগানের কাজ শুরু করি। স্বামীর সাথে সংসার শুরুর পর থেকে সব সময় চা পাতা নিয়েই থেকেছি আমরা। ভাবনা ছিল– কীভাবে দুটো পয়সা বেশি পাব, সেই চিন্তা থেকে অন্যদের চেয়ে একটু বেশি চা পাতা উত্তোলনের চেষ্টা করি। এ জন্য আমার চিন্তা-চেতনা, ধ্যান– সবকিছু চা পাতাকেন্দ্রিক। একাগ্রতা আর চা পাতার প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমার এই অর্জন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজ দেশসেরা হতে পেরে সত্যি আনন্দিত। পুত্র-কন্যা ও স্বামীসহ সংসারের আট সদস্য এই বাগানে কর্মরত। এতে আমি গর্বিত। আমার অর্জনে খুশি বাগানের অন্য শ্রমিকরাও।’ জেসমিন বলেন, ‘২০২৪ সালে আমি ৩৪ হাজার ৯৩৭ কেজি চা পাতা উত্তোলন করেছি। যার কারণে আমি আবারও সেরা চা পাতা উত্তোলনকারী হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছি।’
টানা দ্বিতীয়বারের মতো দেশসেরা হওয়া ও কাজের স্বীকৃতি পাওয়ায় বেশ উচ্ছ্বসিত জেসমিন আকতার। তিনি বলেন, ‘আমি খুব আনন্দিত। পরিবারের সবাই আনন্দিত। ২০২২ সালে আমাদের বাগানের আরেক শ্রমিক উপলক্ষী সেরা হয়ে পুরস্কার জিতেছিল। টানা দ্বিতীয়বার আমি সেরা চা উত্তোলনকারীর পুরস্কার পেলাম। বিশেষ করে সরকার প্রধানকে ধন্যবাদ জানাই আমাদের মতো ক্ষুদ্র
শ্রমিকদের কাজের মূল্যায়ন করার জন্য।
তার স্বামী বারেক পাতা সংগ্রহকারী না হলেও বাগানে অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাদের দুই ছেলে, দুই পুত্রবধূ, মেয়ে ও মেয়ে জামাইও চা বাগানে কাজ করেন। পরিবারের আট সদস্য চা শিল্পের সাথে জড়িত উল্লেখ করে জেসমিন আকতার আরো বলেন, নাতি-নাতনীদেরকে আমাদের মতো শ্রমিক পেশায় নিতে চাইনা। তাদেরকে লেখা পড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই।
পরপর দু'বার তার এ সাফল্যে খুশি বাগানের অন্যান্য শ্রমিকরাও। তারা জানান, আমাদের বাগান থেকে প্রথমে উপলক্ষ্মী ত্রিপুরা এর পর টানা দু'বার জেসমিন চা-পাতা তুলে দেশসেরার পুরস্কার পেয়েছে। এ জন্য আমরা অনেক খুশি! আমরা গর্বিত। আমরা চাই সে আরো সফল হোক।
দেশের সনামধন্য শিল্পগোষ্ঠিএম এম ইস্পাহানি গ্রুপের মালিকানাধীন নেপচুন চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো.
উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় ২ হাজার ৭০০ একর আয়তন বিশিষ্ট পাহাড়-সমতল এলাকায় গড়ে উঠে ইস্পাহানি গ্রুপের নেপচুন চা বাগান। ২০০৯ সালে বৃক্ষরোপণে দেশসেরা চা বাগান মনোনীত হয় বাগানটি। ২০২০ সালে গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড মনোনীতও হয় এ বাগান। দীর্ঘ ৬৫ বছরে এ বাগান নানা সফলতার পাশাপাশি চা উৎপাদনেও শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপদ ষ ট র প রস ক র আনন দ ত র জন য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিভিন্ন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁরা এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
আজ সোমবার বিকেলে হিন্দু নেতারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান। এ সময় তাঁদের কাছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি তাঁদের বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে সব সময় দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সুযোগ হয় না। পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সামনাসামনি দেখা হয়, কথা বলার সুযোগ হয়।’
হিন্দুধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারা দেশে পূজামণ্ডপ তৈরির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে।
নেতারা বলেন, ধর্ম উপদেষ্টা নিয়মিতভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মন্দির পরিদর্শন করেন। দুর্গাপূজা উৎসবমুখর করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতবারের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদ্যাপন হবে বলে তাঁরা আশা করছি।
এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এ জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুই দিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। গত বছর ৮ আগস্ট দেশে ফেরার পরপরই আপনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন করে বলেছিলেন, আমরা সবাই এক পরিবার। আপনার বক্তব্য আমাদের মনে গভীরভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সঙ্গে একমত, আমরাও চাই এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক।’
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে বলেন, ‘আপনি দায়িত্বে থাকাকালীন দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, এক বছর ধরে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম–বর্ণ–জাতিনির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।’
বৈঠকে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সব ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি।’ এ সময় তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সে জন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণানন্দ (একক), বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্ণা রায় দাস, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সর্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার উপস্থিত ছিলেন।