জাফর পানাহির সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ (It Was Just an Accident) এবারের ৭৮ তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণপাম (Palme d'Or) জিতে নিয়েছে। এই সিনেমাটি ইরানি সমাজে নিপীড়ন, রাজনৈতিক বন্দিত্ব এবং ন্যায়বিচারের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে নির্মিত একটি প্রতিশোধমূলক থ্রিলার।

গল্পে যা আছে
সিনেমার শুরুতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি তার গর্ভবতী স্ত্রী ও কন্যাকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। একটি কুকুরকে চাপা দিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। গাড়ির ক্ষতি মেরামতের জন্য তিনি একটি গ্যারেজে যান, যেখানে মেকানিক ভাহিদ তার পা খোঁড়া দেখে সন্দেহ করেন যে এই ব্যক্তি সেই নির্যাতক, যিনি তাকে কারাগারে নির্যাতন করেছিলেন। ভাহিদ তাকে অপহরণ করে এবং তার পরিচয় নিশ্চিত করতে আরও কয়েকজন প্রাক্তন বন্দিকে ডেকে আনেন। তারা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করেন, এই ব্যক্তি তাদের নির্যাতক কিনা এবং তাকে শাস্তি দেওয়া উচিত হবে কিনা।

থিম ও বার্তা
সিনেমাটি প্রতিশোধ, ন্যায়বিচার এবং ক্ষমার জটিল প্রশ্নগুলোকে কেন্দ্র করে নির্মিত। এটি দেখায় কিভাবে দীর্ঘদিনের নির্যাতন ও অবিচার মানুষের মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে দেয়, এবং সেই আগুন কিভাবে ন্যায়বিচারের সীমারেখা অতিক্রম করতে পারে। পানাহি তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা—কারাবাস, গৃহবন্দিত্ব এবং চলচ্চিত্র নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা—থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন।

নির্মাণ প্রেক্ষাপট
জাফর পানাহি ইরানে সরকারি অনুমতি ছাড়াই এই সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন, যা তার সাহসী প্রতিরোধের প্রতীক। তিনি অতীতে গৃহবন্দিত্বে থাকাকালীন কেকের ভেতরে পেনড্রাইভে করে তার সিনেমা আন্তর্জাতিক উৎসবে পাঠিয়েছেন। এই সিনেমাটিও তার সেই প্রতিরোধের ধারাবাহিকতা।

কান উৎসবে প্রতিক্রিয়া
‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’ কান উৎসবে প্রদর্শিত হওয়ার পর দর্শকরা দাঁড়িয়ে ১০ মিনিট ধরে করতালি দিয়েছেন। পানাহি তার বক্তব্যে বলেন, “আমি এখানে উপস্থিত হতে পেরে আনন্দিত, কিন্তু ইরানে এখনও অনেক শিল্পী কারাবন্দি। আমি কিভাবে আনন্দিত হতে পারি, যখন তারা এখনও বন্দি?”


এই সিনেমাটি শুধু একটি চলচ্চিত্র নয়, এটি একটি প্রতিবাদ, একটি প্রতিরোধ, এবং একটি সাহসী কণ্ঠস্বর। জাফর পানাহি তার কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, শিল্প কখনও থেমে থাকে না; এটি সবসময় সত্যের পক্ষে কথা বলে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ন চলচ চ ত র উৎসব এই স ন ম ট চলচ চ ত র

এছাড়াও পড়ুন:

কিয়েভে আবারো ব্যাপক হামলা রাশিয়ার

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বৃহস্পতিবার ভোরে রাশিয়া আবারো ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যা টানা দ্বিতীয় রাতের মতো দেশটিতে ভয়াবহ আক্রমণের ঘটনা। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া তার বোমা হামলা আরো বাড়িয়েছে। খবর বিবিসির।

কিয়েভের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের এই হামলায় কমপক্ষে দুজন নিহত এবং ১৩ জন আহত হয়েছেন। রাজধানীজুড়ে আগুন জ্বলছে। 

এর একদিন আগেই, বুধবার ভোরে ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় বিমান হামলা চালায় রাশিয়া। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের মতে, সেই হামলায় ৭২৮টি ড্রোন ও ১৩টি ক্রুজ বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল, এতে অন্তত একজন নিহত হন। 

আরো পড়ুন:

পুতিনের ওপর চটেছেন ট্রাম্প

ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রাশিয়ার কুরস্কে নিহত ৩

গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিয়েভে আরো অস্ত্র পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়ার এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের তীব্র সমালোচনা করার পরপরই টানা দুইরাত ইউক্রেনে ভয়াবহ হামলা চালাল রাশিয়া। 

বৃহস্পতিবার ভোরে, কিয়েভের সামরিক প্রশাসন ছয়টি শহর জেলায় রাশিয়ার ড্রোন হামলার খবর দিয়েছে।

টেলিগ্রামে একটি পোস্টে কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান টাইমুর তাকাচেঙ্কো বলেছেন, আবাসিক ভবন, যানবাহন, গুদাম, অফিস এবং অন্যান্য ভবনে আগুন লেগেছে। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের দুজন নাগরিক নিহত হয়েছেন। এটি একটি ভয়াবহ ক্ষতি।”

তাকাচেঙ্কো শহরের বাসিন্দাদের আশ্রয়েকেন্দ্রে থাকতে এবং জানালা ও বারান্দা এড়িয়ে চলতে আহ্বান জানিয়েছেন, কারণ ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হামলা প্রতিহত করতে কাজ করছে।

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী রাজধানী ছাড়াও বেশ কয়েকটি অঞ্চলে রাতভর রাশিয়ার ড্রোন হামলার কথা জানিয়েছে।  কিয়েভের বাইরে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কিনা তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।

রাশিয়ার সামরিক বাহিনী সর্বশেষ হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে একদিনের মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেই প্রতিশ্রুতি তিনি পালন করতে পারেনি।

ট্রাম্প ও পুতিন নিয়মিত যোগাযোগে রয়েছেন, কিন্তু তাদের মধ্যেকার আলোচনা এখনও পর্যন্ত ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির দিকে বাস্তব পদক্ষেপে রূপান্তরিত হতে ব্যর্থ হয়েছে। 

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে মন্ত্রিপরিষদ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্প পুতিনের ওপর তার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। 

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে হাজার হাজার সেনা প্রাণ হারাচ্ছেন উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, “আমি আপনাদের এটুকু বলতে পারি, পুতিনের বিষয়ে আমি সন্তুষ্ট নই। তাকে সবসময় খুব ভদ্রোচিত দেখায় তবে দিনশেষে সবই অর্থহীন। পুতিনের আমাদের সঙ্গে অনেক বেশি বাজে বকেন।”

ট্রাম্প জানান, তিনি সিনেটে এমন একটি বিলকে সমর্থন করবেন কিনা তা বিবেচনা করছেন, যা যুদ্ধের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। ট্রাম্প বলেন, “আমি বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।”

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “মস্কো এ বিষয়ে বেশ শান্ত। ট্রাম্পের কথা বলার ধরন সাধারণত বেশ কঠোর, বিশেষ করে তিনি যে বাক্যাংশ ব্যবহার করেন।”

জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে আসছেন কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি।

পুতিন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আরো ৭ দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প
  • কিয়েভে আবারো ব্যাপক হামলা রাশিয়ার
  • চর্যাগানের সুরে আদি সংস্কৃতির দ্যোতনা
  • স্বর্ণ জয়ের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ায়
  • বিএআরএফের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
  • নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে চলছে তারুণ্যের উৎসব
  • চর্যাপদ পুনর্জাগরণ উৎসব শুরু
  • লাঙ্গলবন্দে মন্দিরের কমিটি দখলে সন্ত্রাসী হামলা, মামলায় আসামী ১৭
  • ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও দগদগে ব্রাজিলের সেই ক্ষত
  • একুশ বছরে বাতিঘর, উৎসবে সাজবে কাল