নিজ খামারের পাঁচটি গরু নিয়ে রোববার সকালে হরগজ হাটে এসেছেন মো. আজম আলী। বিকেল পর্যন্ত কোনোটিই বিক্রি হয়নি। সবগুলো গরুর দামই দেড় লাখ টাকার ওপরে। ক্রেতারা ৯০ হাজার থেকে এক লাখের বেশি দাম বলছেন না। এ নিয়ে হতাশার কথা জানান মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চারিগ্রামের এই ব্যক্তি।
জেলার সাটুরিয়ার হরগজ হাটটি উপজেলার বৃহত্তম। এখানে আসার আগে আরও দুটি হাট ঘুরে এসেছেন আজম আলী। তিনি বলেন, যে খরচ হয়েছে, দেড় লাখের নিচে বিক্রি করলে তাঁর লোকসান হবে। আশা অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় মন খারাপ তাঁর।
এই হাটে আসা বিক্রেতাদের বেশির ভাগই হতাশ। তারা বলছেন, হাটজুড়ে গরু আর গরু। কিন্তু সেই তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা কম। তাই আশা অনুযায়ী দর হাঁকছেন না কেউই। বিশেষ করে গরু নিয়ে আসা ব্যক্তিদের মধ্যেই হতাশা বেশি। তারা বলছেন, স্থানীয় কোরবানিদাতারা ছোট ও মাঝারি গরুই বেশি কিনছেন।
তাদের মতোই পরিস্থিতিতে পড়েছেন মুন্সীগঞ্জের খামারিরা। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার পূর্ব শিলমন্দির খামার মালিক মো.

রোস্তম শেখের ভাষ্য, গত কোরবানির ঈদের এক মাস আগেই তাঁর ৮টি গরু খামার থেকে বিক্রি করেছেন। এবার ঈদের দুই সপ্তাহ বাকি। রোববার পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে পারেননি। খামারেই আছে এবারের জন্য প্রস্তুত করা ২১টি গরু।
একই এলাকার খামারে ২২টি গরু কোরবানির জন্য তৈরি করেছেন শিল্পী বেগম। তিনি জানান, বিগত বছরগুলোতে পাইকার ও ক্রেতারা ভিড় জমাতো খামারে ও বাড়িতে। এবার ঈদের দুই সপ্তাহের কম সময় বাকি। কোনো পাইকার বা ক্রেতা আসেনি।
মিরকাদিমের খামারের মালিক ইমন ব্যাপারী জানান, এ বছর ৭০টি গরু প্রস্তুত করেছেন। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন আসছে, দামাদামি করছে। ভারত থেকে এবার গরু না এলে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন। 
সবারই দুশ্চিন্তা বড় গরু বিক্রি নিয়ে। তবে ছোট ও মাঝারি গরুর বিক্রেতাদের অনেকেই সন্তুষ্ট। মানিকগঞ্জর সদর থেকে রোববার হরগজ হাটে গরু নিয়ে আসা মো. ইউনুচ আলী বলেন, বাড়িতে লালন-পালন করা মাঝারি আকারের ষাঁড় বিক্রি করেছেন। এক লাখ টাকা দাম চাইলেও তাঁকে বিক্রি করতে হয়েছে ৯০ হাজার টাকায়। এই দামে তিনি সন্তুষ্ট।
একই হাট থেকে ৭০ হাজার টাকায় কেনা বকনা গরু নিয়ে ফিরছিলেন সাজাহান মিয়া। তিনি এসেছিলেন ঢাকার ধামরাই উপজেলার কুশরা থেকে। তাঁর ধারণা, গরুটিতে প্রায় তিন মণ মাংস হবে। গতবার একই আকারের গরুর বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ হাজার টাকায়।
মুন্সীগঞ্জ জেলায় এবার কোরবানির পশুর হাট বসছে ৩৯টি। এর মধ্যে অস্থায়ী হাট ৩১টি, স্থায়ী হাট ৮টি। কোরবানির ঈদ ঘিরে সব হাটেই বেচাকেনার চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। এর বাইরে খামারগুলো থেকে সরাসরি গরু-ছাগল
বেচাকেনার জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইন। সেখানেও বিক্রি হচ্ছে।
এ বছর ৮১ হাজার ৭৭৫টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানান মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নজরুল ইসলাম। তাঁর দেওয়া তথ্যমতে, এগুলোর মধ্যে গরু ৬৯ হাজার ৮৭৭টি, ছাগল ১৮ হাজার ৬৩৭টি, ভেড়া ৩ হাজার ১৩৯টি ও মহিষ ২২২টি। এই কর্মকর্তা বলেন, জেলায় এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ৬৯ হাজার ৭৭০টি। উদ্বৃত্ত থাকবে ১২ হাজার ১০৫টি পশু। অন্যদিকে এবার মিরকাদিমের ধবল গরু রয়েছে ২০০টি। এগুলোর বেশির ভাই বিক্রি হবে রাজধানীর পুরান ঢাকার রহমতগঞ্জের হাটে। ৩৯টি পশুর হাটে সেবাদানের জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ ৩৯টি চিকিৎসক দল তৈরি রেখেছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গর ক রব ন র প রস ত ত ন র জন য কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

লোকালয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কালোমুখ হনুমানের দল

খুলনার ডুমুরিয়ায় হঠাৎ করেই দেখা দিয়েছে ১৫ সদস্যের কালোমুখ হনুমানের একটি দল। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে হনুমানের দলটিকে দেখা যায়। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, টানা বর্ষণের কারণে খাবার সংকটে যশোরের কেশবপুর থেকে হনুমানগুলো এই এলাকায় চলে আসে। 
উপজেলার খর্নিয়া বাজারের মহাসড়কের পাশে একটি টিনের চালায় প্রথম দেখা যায় হনুমানের দলটিকে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি শাবকও রয়েছে। তবে বাজারের লোকজন জানিয়েছেন, মানুষ কোনো খাবার দিলে সেগুলো নিচ্ছে না হনুমানেরা। উল্টো তারা খাবারের দোকানে হানা দিচ্ছে। বাগানে ঢুকে পেয়ারা, কলা, আমড়া, বেগুনসহ অন্যান্য সবজিক্ষেত নষ্ট করছে। 
খর্নিয়ার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সকাল থেকে হনুমানের দলটি খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে শোভনা ও শৈলগাতিয়া সড়ক, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। মাঝেমধ্যেই এগুলো দোকানপাট থেকে রুটি, কলা ও বিস্কুট ছিনিয়ে নিচ্ছে। 
খর্নিয়া বাজারের চা দোকানি জাহাতাব হোসেন জানান, প্রাণীগুলোকে খুবই ক্ষুধার্ত মনে হচ্ছে। তবে মানুষের দেওয়া খাবার হনুমানগুলো খাচ্ছে না। বরং মুখ নিচে নামিয়ে নিচ্ছে। এক সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে খাদ্য সংকটে পড়েই হনুমানগুলো এ এলাকায় আসতে পারে। 
একই রকম মন্তব্য করেন ডুমুরিয়ার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আরশাফুল কবির। তিনি বলেন, মূলত যশোরের কেশবপুরে এ হনুমানগুলোর বসবাস। ধারণা করা হচ্ছে, খাদ্য সংকটে প্রাণিগুলো এই অঞ্চলে এসেছে। সরকারিভাবে হনুমানকে খাদ্য সরবরাহ ও সংরক্ষণ দরকার। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ