Prothomalo:
2025-09-18@13:15:42 GMT

গণহত্যার প্রহরী

Published: 26th, May 2025 GMT

কলাকেন্দ্রে কালো দেয়ালের আবহে মিশে ছিল ধোঁয়াটে হলুদ আলো, আর তার মধ্যেই চলছিল প্রদর্শনী ‘কালের হালখাতা’। এই প্রদর্শনীতে শিল্পী সাইদুল হক জুইস এক হিসাবরক্ষকের ভূমিকায়, তবে তাঁর খাতায় লেখা হচ্ছে মানুষের রক্তের হিসাব। প্রদর্শনীটি গণহত্যাকে কেন্দ্র করে নির্মিত। এটি একাধারে গভীর শোকের প্রকাশ এবং রাষ্ট্রীয় ও সাম্রাজ্যিক দানবীয়তার বিরুদ্ধে এক তীক্ষ্ণ অবস্থান।

এই প্রদর্শনীতে শিল্পী কাজ করেছেন গণহত্যা নিয়ে। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের নিহত মানুষেরা যেন বর্তমান দর্শকদের সামনে উপস্থিত হয়ে তাঁদের চেতনার পরীক্ষা নিতে এসেছে। লালমাটিয়ার কলাকেন্দ্রে সাইদুল হক জুইসের শিল্পকর্ম নিয়ে ‘কালের হালখাতা’ নামে অনুষ্ঠিত হয় এই শিল্প প্রদর্শনী।

প্রদর্শনীর জন্য কলাকেন্দ্রের গ্যালারি পরিণত হয়েছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত এক পরিসরে। আলো ছিল নরম ও উষ্ণ, আর তা আছড়ে পড়ছিল দেয়ালে ঝোলানো ইনস্টলেশনগুলোর ওপর। শিল্পী এমন এক ভিজ্যুয়াল পরিবেশ তৈরি করেছিলেন, যেখানে লাল কাপড়ের ওপরে কাগজের ম্যাশ দিয়ে তৈরি লাশের ফরম ছিল। কখনো তা মনে করিয়ে দিচ্ছিল চিঠি, কখনো নিখোঁজ বা নিহতের তালিকা, কখনোবা কেবল একের পর এক কাফন মোড়ানো মানুষ।

ব্যক্তি অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক উপলব্ধি ও ইতিহাসের গভীর স্মৃতিকে একই সূত্রে বেঁধে রেখেছিল জুইসের শিল্পকর্মগুলো।

প্রদর্শনীর আরেক অংশে ছিল তারের তৈরি এক ভেঙে পড়া শহরের জাল। সেই কাঠামোর ভেতরে বসে ছিল কার্ডবোর্ডে গড়া কালো কাক। যেন তারা গণহত্যার চাক্ষুষ সাক্ষী, ধ্বংসপ্রাপ্ত সভ্যতার একমাত্র জীবিত প্রহরী।

শিল্পীর ব্যবহৃত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল মুখোশ। প্রদর্শনীতে উপস্থিত মুখোশগুলোর চোখ শূন্য, মৃত ও ক্লান্ত। প্রতিটি মুখোশ যেন রাষ্ট্রীয় ও সাম্রাজ্যিক নিপীড়নের প্রতীক। একটি মুখোশের মুখে ছিল মানবহাড়, যার ওপর বসে ছিল কাক। চিত্রটি যেন সেই শোষকের রূপ, যে মানুষকেই খাদ্যে পরিণত করে। আরেকটি মুখোশে আঁকা ছিল মানচিত্র, কিন্তু তা কেটে টুকরা টুকরা করে ফেলা; শাসকের লোভী বিভাজনের নিদর্শন। একটি মুখোশের চোখ ছিল চরম অন্ধকারে; যেন এক প্রগাঢ় শূন্যতা। সেই মুখ থেকে বের হচ্ছিল তারে মোড়ানো কুণ্ডলি, যেন এক গুমরে ওঠা আর্তনাদ। কুণ্ডলির নিচে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ছিল অসংখ্য হাত; ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উঠে আসার আকুতি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণহত য

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছাড়াল
  • গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের ‘কঠোরতম ভাষায়’ নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব
  • যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
  • ‘গাজায় গণহত্যা চলছে, আমি সেই গণহত্যার নিন্দা করছি’