Prothomalo:
2025-05-29@02:03:23 GMT

গণহত্যার প্রহরী

Published: 26th, May 2025 GMT

কলাকেন্দ্রে কালো দেয়ালের আবহে মিশে ছিল ধোঁয়াটে হলুদ আলো, আর তার মধ্যেই চলছিল প্রদর্শনী ‘কালের হালখাতা’। এই প্রদর্শনীতে শিল্পী সাইদুল হক জুইস এক হিসাবরক্ষকের ভূমিকায়, তবে তাঁর খাতায় লেখা হচ্ছে মানুষের রক্তের হিসাব। প্রদর্শনীটি গণহত্যাকে কেন্দ্র করে নির্মিত। এটি একাধারে গভীর শোকের প্রকাশ এবং রাষ্ট্রীয় ও সাম্রাজ্যিক দানবীয়তার বিরুদ্ধে এক তীক্ষ্ণ অবস্থান।

এই প্রদর্শনীতে শিল্পী কাজ করেছেন গণহত্যা নিয়ে। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ের নিহত মানুষেরা যেন বর্তমান দর্শকদের সামনে উপস্থিত হয়ে তাঁদের চেতনার পরীক্ষা নিতে এসেছে। লালমাটিয়ার কলাকেন্দ্রে সাইদুল হক জুইসের শিল্পকর্ম নিয়ে ‘কালের হালখাতা’ নামে অনুষ্ঠিত হয় এই শিল্প প্রদর্শনী।

প্রদর্শনীর জন্য কলাকেন্দ্রের গ্যালারি পরিণত হয়েছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত এক পরিসরে। আলো ছিল নরম ও উষ্ণ, আর তা আছড়ে পড়ছিল দেয়ালে ঝোলানো ইনস্টলেশনগুলোর ওপর। শিল্পী এমন এক ভিজ্যুয়াল পরিবেশ তৈরি করেছিলেন, যেখানে লাল কাপড়ের ওপরে কাগজের ম্যাশ দিয়ে তৈরি লাশের ফরম ছিল। কখনো তা মনে করিয়ে দিচ্ছিল চিঠি, কখনো নিখোঁজ বা নিহতের তালিকা, কখনোবা কেবল একের পর এক কাফন মোড়ানো মানুষ।

ব্যক্তি অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক উপলব্ধি ও ইতিহাসের গভীর স্মৃতিকে একই সূত্রে বেঁধে রেখেছিল জুইসের শিল্পকর্মগুলো।

প্রদর্শনীর আরেক অংশে ছিল তারের তৈরি এক ভেঙে পড়া শহরের জাল। সেই কাঠামোর ভেতরে বসে ছিল কার্ডবোর্ডে গড়া কালো কাক। যেন তারা গণহত্যার চাক্ষুষ সাক্ষী, ধ্বংসপ্রাপ্ত সভ্যতার একমাত্র জীবিত প্রহরী।

শিল্পীর ব্যবহৃত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল মুখোশ। প্রদর্শনীতে উপস্থিত মুখোশগুলোর চোখ শূন্য, মৃত ও ক্লান্ত। প্রতিটি মুখোশ যেন রাষ্ট্রীয় ও সাম্রাজ্যিক নিপীড়নের প্রতীক। একটি মুখোশের মুখে ছিল মানবহাড়, যার ওপর বসে ছিল কাক। চিত্রটি যেন সেই শোষকের রূপ, যে মানুষকেই খাদ্যে পরিণত করে। আরেকটি মুখোশে আঁকা ছিল মানচিত্র, কিন্তু তা কেটে টুকরা টুকরা করে ফেলা; শাসকের লোভী বিভাজনের নিদর্শন। একটি মুখোশের চোখ ছিল চরম অন্ধকারে; যেন এক প্রগাঢ় শূন্যতা। সেই মুখ থেকে বের হচ্ছিল তারে মোড়ানো কুণ্ডলি, যেন এক গুমরে ওঠা আর্তনাদ। কুণ্ডলির নিচে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে ছিল অসংখ্য হাত; ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উঠে আসার আকুতি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণহত য

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় হত্যাযজ্ঞ: ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৮০০ বিচারক-আইনজীবীর চিঠি

ফিলিস্তিনের গাজায় ‘গণহত্যা’ চালানোর দায়ে ইসরায়েল সরকার ও মন্ত্রীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে চিঠি দিয়েছেন দেশটির ৮০০-এর বেশি আইনজীবী, শিক্ষক ও সাবেক বিচারপতি। চিঠিতে ইসরায়েলের সংঘটিত ‘আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন’ বন্ধে দৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, গাজায় গণহত্যা চালানো হচ্ছে। সেখানে গণহত্যার একটি গুরুতর ঝুঁকি বিদ্যমান। এতে আরও বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।

প্রধানমন্ত্রী স্টারমারকে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, গাজাবাসীর নিশ্চিহ্ন হওয়া ঠেকাতে জরুরি ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

চিঠিতে ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের সাম্প্রতিক মন্তব্য তুলা ধরা হয়। সম্প্রতি তিনি বলেছিলেন, ‘(গাজা) উপত্যকার সব ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় ইসরায়েল। হামাস নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত গাজা দখল, খালি করা ও অবস্থান চলবে।’

যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট ও অন্যান্য আদালতের সাবেক বিচারপতিসহ বিশিষ্ট আইনজীবীরা ওই চিঠিতে সই করেছেন। সেখানে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার নেতাদের সাম্প্রতিক একটি বিবৃতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বিবৃতিতে এসব দেশের নেতারা গাজায় চলমান ভোগান্তিকে ‘অসহনীয়’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, এই বিবৃতি ইঙ্গিত দেয় সংশ্লিষ্ট সরকারগুলো প্রয়োজনে পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

চিঠিতে যুক্তরাজ্যের সরকারকে মৌলিক আন্তর্জাতিক আইনি দায়বদ্ধতা পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরি, নিঃশর্ত ও বাধাহীনভাবে মানবিক সহায়তা আবার চালু করতে সব ধরনের উপায় ব্যবহার করা উচিত।

এসব বিষয় বাস্তবায়নে ‘অবৈধ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত’ ইসরায়েলের মন্ত্রী, অন্যান্য বেসামরিক ও সামরিক ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যুক্তরাজ্যের সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে বিদ্যমান যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য সম্পর্ক পর্যালোচনা, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং যুক্তরাজ্য-ইসরায়েল ঘনিষ্ঠ অংশীদারত্ব গড়ে তোলার পরিকল্পিত রোডম্যাপ স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য গত সপ্তাহে ইসরায়েলের সঙ্গে একটি নতুন বাণিজ্যচুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ হামলার অন্যতম বড় লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে স্কুল ও হাসপাতালগুলো। এর আগে গত বছরের আগস্টে গাজা নগরের আল-তাবিন স্কুলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এ হামলায় ফজরের নামাজ আদায় করতে স্কুলটিতে জড়ো হওয়া শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছিলেন।

আজ মঙ্গলবার সকালে উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায় একটি পরিবারের বাড়িতে হামলা চালানো হলে আরও ১৯ জন নিহত হন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৫৫ জনের প্রাণহানি হয়েছে। এ নিয়ে উপত্যকাটিতে ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার ফিলিস্তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে জনগণকে কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না: জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
  • ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের দুয়োধ্বনির শিকার বামপন্থীরা 
  • শাপলার গণহত্যার সমর্থক শাহবাগীদেরও বিচার করতে হবে: হেফাজতে ইসলাম
  • ‘রক্তের ওপর দাঁড়ানো সরকার আমাদের সঙ্গে বেইমানি করছে’
  • ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ৮০০ বিচারক-আইনজীবীর চিঠি
  • জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল খালাস পাওয়ায় বাম জোটের উদ্বেগ
  • গাজায় হত্যাযজ্ঞ: ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৮০০ বিচারক-আইনজীবীর চিঠি
  • প্রজেক্ট এসথার: যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদিবাদ রক্ষায় রহস্যময় অস্ত্র
  • ইসরায়েলকে থামাতেই হবে