একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের খালাসসহ সারা দেশে অরাজক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ভুলিয়ে দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে যেসব অপশক্তি তৎপর রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক কমরেড ইকবাল কবির জাহিদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মো.

শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী। এর আগে আজ সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারকে খালাস দেন।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী, আলবদর–আলশামস বাহিনী গঠন করে খুন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের সবার বিচার এখনো সম্পন্ন হয়নি। দীর্ঘ সময় পরে হলেও যাদের বিচার হয়েছে, তাদের সবার রায় বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে কার্যকর করেনি। গণ অভ্যুত্থানপরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার বিগত আমলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আজহারুল ইসলামের সেই রায় বাতিল করে তাঁকে বেকসুর খালাস দেওয়ায় দেশবাসীর মনে প্রশ্ন, বর্তমান সরকারের সময়েও বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে কি না।

দেশে গণতন্ত্রের স্বার্থে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রশ্নে একাত্তরের গণহত্যাকারী ও তাদের সহযোগীদের বিচার নিশ্চিত করা এবং চব্বিশের গণহত্যাকারীদের বিচারপ্রক্রিয়া দৃশ্যমান করার দাবি জানিয়েছে বাম জোট। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ভুলিয়ে দিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে যেসব অপশক্তি তৎপর রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য এবং একাত্তর ও চব্বিশের গণহত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জোটের নেতারা।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত আওয়ামী শাসনামলে যেমন বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে, গণগ্রেপ্তার, গায়েবি মামলা, গণহারে আসামি করে ফরমায়েশি রায়ে নাগরিকদের হয়রানি করা হয়েছে, জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে পুরে রাখা হয়েছে। গণ–অভ্যুত্থানের পর গণহত্যার জন্য প্রকৃত দায়ীদের চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির নামে মামলা না করে ঢালাও–গণহারে মামলা দিয়ে বাস্তবে বিচারপ্রক্রিয়াকে দুর্বল বা প্রকৃত অর্থে বিচারকে অস্বীকার করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ঢালাও গণমামলার আসামিদের কাছ থেকে পুলিশ ও কিছু রাজনৈতিক দলের লোকজনকে চাঁদাবাজির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

বিগত আমলে যেমন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় গণহারে সবাইকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, একইভাবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও বেশ কিছু মামলায় সবাইকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে—এমন অভিযোগ করে বাম জোট বলেছে, এতে করে বিচার ও আইনের শাসন সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা ও অবিশ্বাস তৈরি হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের পথে এক অশনিসংকেত।

সচিবালয়, এনবিআরসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করে জোটের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল দেশে গণতান্ত্রিক আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে। কিন্তু সর্বত্র অরাজক পরিস্থিতি দেখে দেশবাসী উদ্বিগ্ন ও হতাশাগ্রস্ত এই ভেবে যে এত রক্তপাত ও আত্মত্যাগের পরেও গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার অধরাই থেকে যাবে কি না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ম গণত ন ত র ক জ ট র গণহত য সরক র আজহ র

এছাড়াও পড়ুন:

সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন দাবি

সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য সময়ের দাবি। দীর্ঘদিন ধরে মনোনয়নের মাধ্যমে নারী সংসদ সদস্যদের নির্বাচিত করা হলেও তা নারীর নেতৃত্ব বিকাশে পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি করছে না। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সংসদে নারীর সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন নারী নেতৃবৃন্দ। 

শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সমাবেশে বক্তারা এ দাবি জানান। ‘জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি ভোটের দাবিতে’ এ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। সমাবেশ শেষে একটি র্যা লি শহীদ মিনার থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘নারী আন্দোলন কোনো একক সংগ্রাম নয়, এটি সমাজেরই অংশ। কাউকে পিছিয়ে রেখে গণতন্ত্র এগোয় না। নারীর এক-তৃতীয়াংশ আসনে সরাসরি নির্বাচনের দাবি আমরা বারবার জানিয়ে আসছি। এখনই সময় এ দাবি বাস্তবায়নের।’

সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘সংসদে নারীর মনোনীত হয়ে আসার পদ্ধতি বাতিল করে ভোটের মাধ্যমে সরাসরি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। নারী নেতৃত্বের বিকাশে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।’

আন্দোলন সম্পাদক ও বেলাবো জেলাশাখার সভাপতি  রাবেয়া খাতুন শান্তি বলেন, জন্মসূত্রে মানুষ স্বাধীন, সার্বজনীন মানবাধিকারের আদর্শকে ধারণ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কাজ করছে, নারী আন্দোলন বৃথা যায়নি। আজকের নারীর সিদ্ধান্তগ্রহণ ও পালনের সক্ষমতা নারী আন্দোলনের ফসল। আজ মানবিক বিপর্যয় চরমে, এমতাবস্থায় নারীর ন্যায্য হিস্যা আদায়ে সংসদে এক তৃতীয়াংশ নারী আসন সংখ্যা বৃদ্ধি সহ সরাসরি নির্বাচনে গুরুত্ব দিতে হবে।  

প্রশিক্ষণ, সম্পাদক, গবেষণা ও পাঠাগার উপ-পরিষদ ও নারায়ণগঞ্জ জেলাশাখার সভাপতি রীনা আহমেদ বলেন, বর্তমানে নারী সমাজের প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু  নারী সাংসদদের এসব নিয়ে কাজ করতে তেমন কথা বলতে শুনিনা। নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী কাজের বাস্তবায়নে নারী সাংসদদের গুরুত্ব দিতে হয়।  তিনি এ সময় নারী কমিশনের সদস্যদের প্রতি সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের দিকটি  সরকারের নিকট জোরালোভাবে  তুলে ধরার উপর গুরুত্বরোপ করেন। 

ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস বলেন, ৫৫ বছরে নারীর রাজনৈতিক ভূমিকা খুব বেশি অগ্রসর হয়নি, সমান মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। জাতীয় সংসদে দেশের রাজনৈতিক নারীকে শুধু নির্বাচিত হলেই হবে না, তাকে কাজের সুযোগ দিতে হবে। সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নারীর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় নারীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। এর বিকল্প নাই। 

বক্তারা আরও বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ছাড়া গণতন্ত্র অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। শুধু মনোনয়ন নয়, সংবিধান অনুযায়ী সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন ব্যতীত রাজনৈতিক এজেন্ডাও সফল হবে না।

মহিলা পরিষদের অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামীর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও টঙ্গী জেলাশাখার সভাপতি আনোয়ারা বেগম, নারী শ্রমিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ও মহিলা পরিষদের  জাতীয় পরিষদ সদস্য সাহিদা পারভীন শিখা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন দাবি
  • নোবেল শান্তির জন্য ট্রাম্পের চেয়ে আর ‘যোগ্য’ কে আছেন!
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৮০০ ছাড়াল
  • ইসরায়েল–যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার কে এই আলবানিজ
  • সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে: মামুনুল হক
  • বিবৃতিদাতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শাস্তি দাবি সাদা দলের
  • জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু
  • জুলাই গণহত্যার দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হলেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী মামুন
  • জুলাই গণহত্যার দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হলেন চৌধুরী মামুন
  • ইসরায়েলের সমালোচনা করায় জাতিসংঘ প্রতিনিধির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা