‘রক্তের ওপর দাঁড়ানো সরকার আমাদের সঙ্গে বেইমানি করছে’
Published: 27th, May 2025 GMT
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম খালাস পাওয়ার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এই রায় দেওয়ার পর বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে কলাভবন হয়ে শাহবাগ প্রদক্ষিণ করে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে এসে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা।
এ সময় তাঁরা ‘ইন্টেরিম সরকার, গণহত্যার পাহারাদার’, ‘একাত্তরের শত্রু যারা, বাংলাদেশের শত্রু তারা’, ‘হাসিনা–আজহার, এই বাংলার গাদ্দার’, ‘জামায়াত–শিবির রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘মুক্তিযুদ্ধ হারেনি, হেরে গেছে হাসিনা’সহ নানা স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ মিছিলের পর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিমুল কুম্ভকার বলেন, ‘আজ গণ–অভ্যুত্থানের ১০ মাস পরে দেখতে পেলাম একাত্তরের গণহত্যার দায়ে সাজাপ্রাপ্ত আলবদর কমান্ডার আজহার বেকসুর খালাস পেল। যার মাধ্যমে রক্তের ওপর দাঁড়ানো এই সরকার আমাদের সঙ্গে বেইমানি করছে।’
ছাত্র ইউনিয়নের এই নেতা বলেন, ‘এই সরকারের আমলে একের পর এক মব জাস্টিস, সন্ত্রাসী মুক্তি ও একাত্তরের গণহত্যাকারীদেরও মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। একাত্তরে যারা দালালি করেছে, বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে, তাদের এ দেশে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।’
সরকারকে হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, ‘একজন মানবতাবিরোধী ও গণহত্যাকারীর সঙ্গে আপস করা যাবে না। যদি করেন, তাহলে আপনাদের অবস্থা পতিত হাসিনার মতো হবে।’
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম খালাস পাওয়ার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা। আজ মঙ্গলবার টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
সুদানের এল-ফাশের শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা চলছে। কৃত্রিম ভূ–উপগ্রহের ছবি বিশ্লেষণ করে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা এমন দাবি করেছেন। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সসের (আরএসএফ) লড়াই চলছে। গত রোববার তারা এল-ফাশের দখল করে। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছরের দীর্ঘ অবরোধের পর পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটিটিও ছিনিয়ে নেয় তারা।
শহরটি পতনের পর থেকে সেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, যৌন সহিংসতা, ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলা, লুটপাট এবং অপহরণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার যোগাযোগব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
এল-ফাশের থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাওইলা শহরে জীবিত বেঁচে ফেরা কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে এএফপির সাংবাদিক কথা বলেছেন। সেখানে গণহত্যা হয়েছে জানিয়ে তাঁরা বলেন, শহরটিতে মা-বাবার সামনেই শিশুদের গুলি করা হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে পালানোর সময় সাধারণ মানুষকে মারধর করে তাঁদের মূল্যবান সামগ্রী লুট করা হয়েছে।
পাঁচ সন্তানের মা হায়াত শহর থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের একজন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে থাকা তরুণদের আসার পথেই আধা সামরিক বাহিনী থামিয়ে দেয়। আমরা জানি না, তাদের কী হয়েছে।’
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যানিটারিয়ান রিসার্চ ল্যাব বলেছে, গত শুক্রবার পাওয়া কৃত্রিম উপগ্রহের ছবিতে ‘বড় ধরনের কোনো জমায়েত চোখে পড়েনি।’ এ কারণে মনে করা হচ্ছে, সেখানকার জনগণের বড় একটি অংশ হয় ‘মারা গেছে, বন্দী হয়েছে কিংবা লুকিয়ে আছে।’ সেখানে গণহত্যা অব্যাহত থাকার বিভিন্ন ইঙ্গিত স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, আল-ফাশের থেকে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ পালিয়েছে। এখনো কয়েক হাজার মানুষ শহরটিতে আটকা পড়েছে। আরএসএফের সর্বশেষ হামলার আগে সেখানে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ বসবাস করত।
শনিবার বাহরাইনে এক সম্মেলনে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুল বলেন, সুদান একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। আরএসএফ নাগরিকদের সুরক্ষার অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু তাদের এই কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।