যে দেশের এক শহরে নিষিদ্ধ ক্রিকেট, সেই দেশই এখন টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে
Published: 12th, July 2025 GMT
২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে ইতালি—এই খবর শুনে কারও কারও মনে সবার আগে অন্য এক প্রশ্নের উদ্রেক হতে পারে; ইতালিও তাহলে ক্রিকেট খেলে!
আসলে ইতালি ফুটবল-পাগল দেশ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তা সবারই জানা। চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তাঁদের শীর্ষ ফুটবল লিগ সিরি আ বিশ্বের অন্যতম সেরা। ইতালিয়ান ফুটবলের ঐতিহ্য, সাফল্য এবং তাদের কিংবদন্তিদের তালিকার সঙ্গে খুব কম দেশেরই তুলনা চলে। আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর হালহকিকত সেভাবে জানা না থাকলে তাই ইতালির ক্রিকেট খেলার কথা শুনে বিস্মিত হওয়াটা খুব দোষের নয়। কেউ কেউ রসিকতা করে এখন বলতে পারেন, ইংল্যান্ডের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ফুটবল বিশ্বকাপ ও ক্রিকেটের বিশ্বকাপ জয়ের সুযোগ এখন ইতালির সামনে!
আরও পড়ুন২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিশ্চিত হলো কোন কোন দেশের৫ ঘণ্টা আগেএখনই এমন আশা অবশ্যই বাড়াবাড়ি। আইসিসি টি–টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে দেশগুলোর মধ্যে চার ধাপ এগিয়ে ২৮তম স্থানে উঠে এসেছে ইতালি। মোট ৯৬টি সহযোগী দেশের মধ্যে এই অবস্থান অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। সেটা যেমন ভালো খবর, তেমনি টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম খেলার সুযোগ পাওয়া নিশ্চিতভাবেই ইতালিতে ক্রিকেটের জোয়ার তৈরি করবে কচিকাঁচাদের মধ্যে। তবে এই ইতালিতেই কিন্তু গত বছর একটি শহরে ক্রিকেট খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
আদ্রিয়াটিক সাগরের উপকূলঘেঁষা মনফালকোনে শহরে ক্রিকেট নিষিদ্ধ করেছিলেন সেখানকার মেয়র। তখন বিবিসির প্রতিবেদনে জানা গিয়েছিল, মনফালকোনে শহরে ৩০ হাজারের কিছু বেশি মানুষের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশই বিদেশি এবং তাঁদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি মুসলিম। মনফালকোনের শহরের বাইরে ক্রিকেট খেলা একটি দলের অধিনায়ক মিয়া বাপ্পি তখন বিবিসিকে জানান, শহর কর্তৃপক্ষ তাঁদের বলেছেন, ‘ক্রিকেট ইতালির জন্য নয়।’
মনফালকোনে শহরের ভেতরে ক্রিকেট খেললে সর্বোচ্চ ১০০ ইউরো জরিমানা করা হয়। এই শহরের মেয়র আন্না মারিয়া চিসিন্ত ক্রিকেট নিষিদ্ধ করার কারণ জানতে চাইলে বিবিসিকে চিসিন্ত বলেছিলেন, নতুন একটি পিচ (ক্রিকেট খেলার জন্য) তৈরি করার মতো জায়গা বা অর্থ নেই। ক্রিকেট বলকেও তিনি ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। এই মেয়র তখন আরও বলেছিলেন, তিনি বাংলাদেশিদের তাদের প্রিয় খেলা ক্রিকেট খেলতে দিতে চান না, ‘তারা এ শহরকে কিছু দেয় না, আমাদের জনগোষ্ঠীকে কিছু দেয় না। ফল শূন্য।’
আরও পড়ুনওয়াসিম আকরামের রেকর্ডটি এখন ‘মানুষের আয়ে অবদান রাখা’ বুমরারও৪ ঘণ্টা আগেগোটা ইতালি বিচারে এটিকে কেউ কেউ বিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্তও ভাবতেও পারেন। কারণ, ইতালিতে ক্রিকেটের শিকড় পোঁতা বহু বছর আগে। ফুটবলের মতো খেলাটি ডালপালা গজিয়ে মহিরুহ আকার ধারণ করেনি ঠিকই, তবে দেরিতে হলেও এগোচ্ছে ইতালিয়ান ক্রিকেট। ৫ জুলাই বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতালিতে এখন ১০০টির বেশি ক্রিকেট ক্লাব রয়েছে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেটারের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের বেশি।
তবে এ সংখ্যাটা ক্ষুদ্র মনে হতে পারে ইতালিতে প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ খেলার সময়টা শুনলে—সর্বকালের অন্যতম সেরা নৌ কমান্ডার ব্রিটেনের লর্ড হোরাশিও নেলসনের নৌবহর থেকে নাবিকেরা নেমে ১৭৯৩ সালে নেপলসে প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিলেন। অর্থাৎ ক্রিকেটের শিকড় পোঁতার ২৩২ বছর পর খেলাটির শীর্ষ পর্যায়ের এক আসরে নাম লেখাল ইতালি। ফুটবলের জনপ্রিয়তার সঙ্গে দেশটিতে ক্রিকেটের কোনো তুলনা চলে না ঠিকই, কিন্তু একটি জায়গা ইতালি জাতীয় ফুটবল দল ও জাতীয় ক্রিকেট দল সমান—নীল জার্সির দুই দলকেই ‘আজ্জুরি’ নামে ডাকা হয়।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জায়গা পাওয়ার পর ইতালির খেলোয়াড়দের উদ্যাপন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীর বন্যা নিয়ন্ত্রণে রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
ফেনী ও আশপাশের জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে ‘ঢাকাস্থ ফেনীবাসী’ নামে একটি নাগরিক সংগঠন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ দাবি মানা না হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক ও রেলপথ অবরোধ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে অবস্থানেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ঢাকায় বসবাসরত ফেনী জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেন।
বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বিগত সরকার ফেনীর প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে, যার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। উপদেষ্টারা সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, কিন্তু কাজে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ফেনীবাসী ত্রাণ চায় না, অবিলম্বে বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা চায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সরকারের ঘোষণা না এলে ফেনীবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। একই সঙ্গে ভারতীয় পানি আগ্রাসনের ব্যাপারেও সরকারের পদক্ষেপ দাবি করেন তিনি।
মানববন্ধনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘মিথ্যা আশ্বাস আমরা শুনতে চাই না। আর যেন যখন-তখন বন্যায় না ডোবে, সে ব্যবস্থা চাই।’
সভাপতির বক্তব্যে সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে ফেনীর ছাগলনাইয়া ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিদারুল আলম মজুমদার বলেন, পানিসম্পদ উপদেষ্টা ও তাঁর মন্ত্রণালয় বন্যা নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
দিদারুল আলম বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নামে বিপুল অঙ্কের টাকার অপচয় এবং দায়িত্ব অবহেলার জন্য উপদেষ্টা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি করছি। অবিলম্বে স্থায়ীভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে রোডম্যাপ না হলে অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
মানববন্ধন থেকে সাতটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, যাতে উজানের পানি এসে ভাটি এলাকার বন্যার কারণ না হয়; ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী অঞ্চলের বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের রক্ষাকবচ বল্লামুখা বাঁধ ও মুছাপুর ক্লোজার অবিলম্বে পুনর্নির্মাণ; এই এলাকার শহর ও গ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে জলাধার উদ্ধার, পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা তৈরি, নদী খনন ও যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ; চব্বিশ সালের বন্যার পরে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত এক হাজার কোটি টাকার পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ এবং সঠিক তথ্য যাচাই করে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান; বন্যা উপদ্রব এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনতলা ভবন নির্মাণ, যাতে বন্যার সময় এগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়; পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনের আওতায় এবং ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেওয়া বন্ধ করা।
ফেনী কমিউনিটির মুখপাত্র বুরহান উদ্দিন ফয়সলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) পরিচালক ও দাগনভূঞা উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ, ফেনী ফোরামের সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসাইন, আইনজীবী জসিম উদ্দিন তালুকদার, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ নাজমুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজিম উদ্দিন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শাহ মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মনির উদ্দিন, পরশুরাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন পলাশ, ফেনী সদর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, শ্রমিক দল নেতা আবদুর রহিম, ফেনী এলিট ক্লাবের সভাপতি ফয়জুল্লাহ নোমানী, মনিপুর স্কুলের শিক্ষক রিয়াজুদ্দিন ও দেলোয়ার হোসেন, ফেনী সোসাইটি উত্তরার সহসাধারণ সম্পাদক এমরানুল হক, সোনালী ব্যাংকের সিবিএ নেতা ইউসুফ আলী, কর্মসংস্থান ব্যাংকের সিবিএ নেতা নাসিরুদ্দিন প্রমুখ।