বাংলাদেশি সংগীতাঙ্গনের বহু তারকা সুরের ভুবন থেকে পা রেখেছেন রুপালি পর্দায়। কেউ হয়েছেন দর্শকদের ভালোবাসার পাত্র, কেউ হারিয়ে গেছেন। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়— গানের মানুষদের পর্দার মানুষ হয়ে ওঠার এই যাত্রা কতটা সফল?

সাম্প্রতিক সময়ে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন সংগীতশিল্পী প্রীতম হাসান ও জেফার রহমান। শিহাব শাহীন পরিচালিত ‘তুমি আমি শুধু’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক তাদের। প্রীতম এর আগেই নাটকে অভিনয় করে আলোচনায় এসেছেন। জেফারের এটি প্রথম চলচ্চিত্র। নির্মাতা ও দর্শক আশাবাদী নতুন জুটিকে ঘিরে।

সংগীতে একসময় তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া আসিফ আকবরও পর্দায় নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। ‘গহীনের গান’ নামে সংগীতনির্ভর সিনেমায় ছিলেন প্রধান চরিত্রে। যদিও অভিনয়ের মূল ধারায় আসিফকে স্থায়ী করতে পারেনি।

ব্যান্ডদল ‘সোলস’-এর জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী পার্থ বড়ুয়া অভিনয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ‘আয়নাবাজি’, ‘ভুবন মাঝি’, ‘গণ্ডি’, ‘জেকে ১৯৭১’– এসব সিনেমায় তার উপস্থিতি প্রশংসিত হয়েছে। এমনকি তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মেড ইন চিটাগং’।

লোকসংগীতের সম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম অভিনয় করেছেন ‘মমতাজ’, ‘গরীবের রানী’, ‘রঙিন বউ’-এর মতো কিছু চলচ্চিত্রে। তবে তার মূল অবস্থান সংগীতেই থেকে গেছে, পর্দায় প্রভাব ফেলতে পারেননি।

এসডি রুবেলও নিয়মিতভাবে সিনেমায় কাজ করলেও দর্শকপ্রিয়তা অর্জনে খুব একটা সফল নন। ‘বিচার চাই’, ‘প্রেমের বাঁশি’, ‘মন আমার ছোট্ট নয়’সহ বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সর্বশেষ নিজেই পরিচালনা করেছেন ‘বৃদ্ধাশ্রম’।

অভিনয়ে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে সফল নামগুলোর একটি ফজলুর রহমান বাবু। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ‘মণপুরা’, ‘অজ্ঞাতনামা’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’সহ অসংখ্য সিনেমায় অভিনয় করে পেয়েছেন জাতীয় স্বীকৃতি ও জনপ্রিয়তা।

গায়ক থেকে অভিনেতা হয়ে উঠেছেন তাহসান রহমান খান। নাটক দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে সিনেমার দর্শকপ্রিয় মুখ হয়েছেন তিনি। ‘যদি একদিন’, ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’, ‘ছক’সহ একাধিক সিনেমায় তার অভিনয় প্রশংসিত।

আঁখি আলমগীর ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ সিনেমায় শিশু শিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। পরবর্তীতে ‘এক কাপ চা’ সিনেমায় অতিথি চরিত্রে দেখা যায় তাকে।

অন্যদিকে, প্রয়াত জাফর ইকবাল ছিলেন এই যাত্রার পুরোধা। গিটারিস্ট ও গায়ক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ১৯৭০ সালে ‘আপন পর’ সিনেমা দিয়ে হয়ে ওঠেন রোমান্টিক হিরো। এরপর দীর্ঘদিন ঢাকাই সিনেমার সুপারস্টার ছিলেন তিনি।

উপমহাদেশের সংগীত কিংবদন্তি রুনা লায়লা ১৯৯৭ সালে চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় ‘শিল্পী’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। তবে সেটিই তার একমাত্র চলচ্চিত্র।

গানের সুর দিয়ে মন জয় করা যায়, কিন্তু পর্দায় আলো ছড়াতে লাগে চোখের ভাষা, অভিনয়ের দক্ষতা। যারা সেটা পেরেছেন, তারাই হয়ে ওঠেন সত্যিকারের পর্দার মানুষ।

ঢাকা/রাহাত//

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র পর দ য় কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

আসর নামাজের শেষ সময় কখন

ইসলামে প্রতিটি নামাজের সময় সূর্যের গতির ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত। আসরের নামাজের সময় শুরু ও শেষ—দুটোই সূর্যের অবস্থান দেখে নির্ধারিত হয়। আসর নামাজের গুরুত্ব কোরআনে বিশেষভাবে উল্লেখ আছে, ‘সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ কায়েম করো।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ৭৮)

আসরের নামাজের শুরু সময়

আসর নামাজের সময় শুরু হয়, যখন কোনো বস্তুর ছায়া তার প্রকৃত দৈর্ঘ্যের সমান হয় (জোহরের ছায়া বাদে)। অর্থাৎ যখন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ে এবং ছায়া বাড়তে শুরু করে, তখন আসর সময় শুরু হয়।

হাদিসে এসেছে, ‘আসর নামাজের সময় সেই সময় পর্যন্ত থাকে, যতক্ষণ না সূর্যের রং হলুদ হয়ে আসে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৬১৩)

আসর নামাজের শেষ সময়

আসর নামাজের দুটি সময়সীমা আছে:

ক. মাকরুহ (অপছন্দনীয়) হওয়ার আগপর্যন্ত বৈধ সময়। আসর নামাজের শেষ বৈধ সময় হলো সূর্য হলুদ হওয়ার আগপর্যন্ত, অর্থাৎ সূর্য যখন দিগন্তের দিকে ঝুঁকে পড়ে কিন্তু এখনো তীব্র আলো দিচ্ছে। এ সময় পর্যন্ত নামাজ পড়া সুন্নত অনুযায়ী বৈধ ও উত্তম।

খ. মাকরুহ সময়, অর্থাৎ সূর্যাস্তের কাছাকাছি সময়। যখন সূর্যের রং ফ্যাকাশে বা লালচে হয়ে যায়, তখন পর্যন্ত আসর নামাজ আদায় করা যায়, কিন্তু এটি মাকরুহ সময়।

আরও পড়ুনমাগরিবের নামাজের সময় কতক্ষণ থাকে০৫ অক্টোবর ২০২৫

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সূর্য হলুদ হয়ে যাওয়ার আগে আসরের এক রাকাত পায়, সে আসর নামাজ পেয়ে গেছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৯)

এর মানে সূর্যাস্তের ঠিক আগে পর্যন্ত (অর্থাৎ সূর্যের ফ্যাকাসে আলো থাকা পর্যন্ত) নামাজ আদায় বৈধ, কিন্তু বিলম্ব করা অনুচিত।

ফিকহ অনুযায়ী পার্থক্য

বিভিন্ন মাজহাব আসরের শুরু সময় নিয়ে সামান্য ভিন্নমত পোষণ করে।

১. হানাফি মাজহাবের মতে, আসরের শুরু সময় হলো যখন বস্তুর ছায়া তার প্রকৃত দৈর্ঘ্যের দ্বিগুণ হয়, আর শেষ সময় সূর্যাস্তের আগপর্যন্ত।

২. শাফেয়ি, মালিকি, হাম্বলি মাজহাবের মতে, আসরের শুরু সময় হলো যখন বস্তুর ছায়া তার এক গুণ হয় আর শেষ সময় সূর্যাস্তের আগপর্যন্ত। (আল-মাওসুআহ আল-ফিকহিয়্যাহ, কুয়েত, ২৭/৭৪, ২০০১)

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ আলেম হানাফি মাজহাব অনুসারে নামাজের সময়সূচি নির্ধারণ করেন। তাই অনেক ক্যালেন্ডারে আসরের সময় একটু পরে দেখা যায়।

আরও পড়ুনতাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় কখন হয়০৪ অক্টোবর ২০২৫ঘড়ির সময়

আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার হিসাবে, আসর নামাজের সময় সূর্যের উচ্চতা (solar altitude) প্রায় ৪৫ থেকে শূন্যের মধ্যে পড়ে। সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে ঢলে যায় এবং ছায়া বাড়ে, তখন সূর্যের রশ্মি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ভেঙে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে আলো ধীরে ধীরে নরম হয়।

বাংলাদেশে আসর নামাজের সময় সাধারণত—

গ্রীষ্মে: বেলা ৩:৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিবর্তিত হয়

শীতে: বেলা ৩:০০ থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিবর্তিত হয়

সূর্যাস্তের সময় অনুযায়ী সামান্য পরিবর্তিত হয়। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, সালাতের সময়সূচি ২০২৪ সংস্করণ, ঢাকা)

আসর নামাজের শেষ সময় সূর্যাস্তের ঠিক আগপর্যন্ত, তবে সূর্য হলুদ হওয়ার আগে পড়া উত্তম। নবী করিম (সা.) নামাজে বিলম্ব করাকে অপছন্দ করতেন।

আরও পড়ুনচাশতের নামাজের ওয়াক্ত কখন হয়১৬ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ