তিন বছরের বেশি সময় ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিভাগ চলছে একটি ক্যাথল্যাব দিয়ে। একটি ক্যাথল্যাবে দুই শতাধিক রোগীর বিভাগের এনজিওগ্রাম, স্ট্যান্টিংসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবা দেওয়া কঠিন। ইতিমধ্যে ক্যাথল্যাবটি সক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহার করা হয়ে গেছে। এটি কোনো কারণে বিকল হলে বন্ধ থাকে সেবা।

এই অবস্থায় নতুন একটি ক্যাথল্যাব বরাদ্দ হলেও আড়াই মাসেও সেটা চট্টগ্রাম পৌঁছেনি, যার কারণে চমেক হৃদ্‌রোগ বিভাগের রোগীদের ১৫ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত ক্যাথল্যাব সেবার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এ জন্য রোগীর জটিলতাও বাড়ছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অব্যবহৃত একটি ক্যাথল্যাব চমেক হাসপাতালে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় ৮ মে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব মো.

শাহাদত হোসেন কবির স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, মানিকগঞ্জ হাসপাতালের দুটি ক্যাথল্যাবের মধ্যে একটি চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করা প্রয়োজন। এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। এ বিষয়ে ন্যাশনাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি)  চিফ টেকনিক্যাল ম্যানেজারকে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু এত দিনেও কারিগরি কাজ শেষ হয়নি। নিমিউ অ্যান্ড টিসির কারিগরি দলের চমেক হৃদ্‌রোগ বিভাগ পরিদর্শনের কথা রয়েছে। গত সপ্তাহে আসার কথা থাকলেও তাঁরা আসেনি। এ ছাড়া অন্যান্য দাপ্তরিক কাজও শেষ হয়নি এখনো।

জানতে চাইলে চমেক হৃদ্‌রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক নূর উদ্দিন তারেক প্রথম আলোকে বলেন, নিমিউয়ের লোকজন এসে দেখে যাওয়ার কথা। ক্যাথল্যাবটি আসবে আসবে করছে অনেক দিন থেকে। কিন্তু এখনো আসেনি। তিনি আরও বলেন, একটি ক্যাথল্যাব দিয়ে ওয়ার্ড চালাতে গিয়ে অনেক রোগীকে অপেক্ষায় থাকতে হয়। অনেক সময় এক মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যে ক্যাথল্যাবটি চলছে সেটিও সক্ষমতার বেশি সেবা দিয়ে ফেলেছে। মাঝেমধ্যে বিকল হলে সমস্যায় পড়তে হয়।

চমেক হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিভাগে বর্তমানে ১৬০ শয্যার বিপরীতে ২৫০ জন পর্যন্ত রোগী থাকে। একটিমাত্র ক্যাথল্যাব দিয়ে দিনে গড়ে ৮টি এনজিওগ্রাম, দু–তিনটি রিং পরানো হয়। এ ছাড়া সপ্তাহে এক দুটি পেস মেকার লাগানো হয়।

২০২১ সালে স্থাপিত বর্তমান ক্যাথল্যাবটি গত বছর জানুয়ারিতে একবার বিকল হয়েছিল। সেবার প্রায় তিন সপ্তাহ বন্ধ ছিল কার্যক্রম। তখন বাইরে দৌড়াতে হয়েছিল রোগীদের। এখনো হাসপাতালে অপেক্ষায় না থেকে অনেক রোগীকে বেসরকারি হাসপাতালের দ্বারস্থ হতে হয়। তবে গরিব রোগীদের জন্য এটা কঠিন।

চমেক হাসপাতালে এনজিওগ্রাম করতে তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে বলার পর জুন মাসে জসিম উদ্দিন নামে এক রোগী বেসরকারি একটি হাসপাতাল থেকে সেবাটি নেন। তাঁর খরচ পড়ে ২২ হাজার টাকা। চমেক হাসপাতালে এনজিওগ্রামে খরচ ছয় থেকে সাত হাজার টাকা।

ক্যাথল্যাব সব সময় খালি না থাকায় হার্টঅ্যাটাকের রোগীদের জরুরি সেবা দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না বলে চিকিৎসকেরা জানান। যদি হার্টঅ্যাটাকের রোগীদের সঙ্গে সঙ্গে ক্যাথল্যাবে নিয়ে রিং পরানো যায় তাহলে ক্ষতি অনেক কম হয় বলে জানান সহযোগী অধ্যাপক নূর উদ্দিন তারেক।

বর্তমান ক্যাথল্যাবটির মেরামত মেয়াদ ২০২৭ পর্যন্ত রয়েছে। কিন্তু এটি এখনই পর্যাপ্ত সেবা দিয়ে ফেলেছে বলে চিকিৎসকেরা জানান। এর আগে ২০২২ সালে একটি ক্যাথল্যাব নষ্ট হয়। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মেরামতযোগ্য সময় পার হয়ে যাওয়ায় ওই ক্যাথল্যাব মেরামত করতে এখন তিন কোটি টাকার মতো দরকার। মেরামতে না গিয়ে বিকল্প হিসেবে মানিকগঞ্জের অব্যবহৃত ক্যাথল্যাব আনার সিদ্ধান্ত হয়।

মানিকগঞ্জের ক্যাথল্যাব আনার বিষয়ে আগামীকাল রোববার ঢাকায় নিমিউ এর একটি সভা রয়েছে। ওই সভায় যোগ দিতে যাচ্ছেন চমেক হাসপাতালের একজন প্রতিনিধি। ওই সভার পর জানা যাবে কবে নাগাদ ক্যাথল্যাবটি চট্টগ্রাম আসবে।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করি সহসা এই ক্যাথল্যাব চলে আসবে। এটা ওখানে খোলা হয়নি এখনো। ওই ক্যাথল্যাব এলে আমাদের জট কমে যাবে।’ এ ছাড়া এর পর আরও একটি নতুন ক্যাথল্যাব আসবে বলে তিনি জানান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ ম র মত

এছাড়াও পড়ুন:

হবিগঞ্জে সেপটিক ট্যাংকে নেমে দুই নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু

হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে নির্মাণাধীন একটি ভবনের সেপটিক ট্যাংকে নেমে দুই নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে পৌরসভার সাবাসপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- চুনারুঘাট উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের পঞ্চাশ গ্রামের মানিক মিয়া (৫৫) ও বানিয়াচং উপজেলার কাটখাল গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৩০)।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নির্মাণাধীন একটি ভবনের সেপটিক ট্যাংকের সাটারিং খোলার জন্য নিচে নামেন দুই শ্রমিক। এ সময় বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তারা। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ভবন নির্মাণের ঠিকাদার।

আরো পড়ুন:

নালা থেকে উদ্ধার করা সেই শিশুকে বাঁচানো যায়নি 

মিরসরাইয়ের মেলখুম ট্রেইলে ২ তরুণের মৃত্যু 

শায়েস্তাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীলিপ কান্ত নাথ বলেন, ‘‘সেপটিক ট্যাংকে নেমে দুই নির্মাণশ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’’

ঢাকা/মামুন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ