আয়াতুল্লাহ খামেনি নিজেই যুদ্ধকক্ষ থেকে লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন: ইরানি পার্লামেন্ট স্পিকার
Published: 12th, July 2025 GMT
ইরান-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাত নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাঘের কালিবাফ বলেছেন, ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামেনি যুদ্ধকক্ষ থেকে ইরানের পাল্টা হামলার পুরো পরিকল্পনা ও পরিচালনার নেতৃত্ব দিয়েছেন। খামেনির নির্দেশে পরিচালিত ‘সুনির্দিষ্ট ও ফলপ্রসূ’ হামলার কারণেই ইসরায়েল ও ওয়াশিংটন মাত্র ১২ দিনের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছে।
গত ১৩ জুন ভোররাতে ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামলার প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন জেনারেল নিহত হন। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ইরান যেন সঙ্গে সঙ্গে পাল্টা হামলা চালাতে না পারে, সে জন্যই জেনারেলদের ‘নিশানা করে’ হত্যা করা হয়েছে।
তেহরান টাইমস জানায়, ইসরায়েলের হামলার আগে মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানকে আশ্বস্ত করেছিলেন, পরোক্ষ পারমাণবিক আলোচনা যত দিন চলবে, তত দিন যুদ্ধের কোনো আশঙ্কা নেই। ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে চলমান এই আলোচনার একটি পর্ব হামলার মাত্র কয়েক দিন আগেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে গত ২২ জুন ইরানে সরাসরি হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ওই দিন তারা ইরানের বেশ কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। যুদ্ধের শুরুর দিনগুলোতেই এসব স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
কালিবাফ বলেন, ‘আমাদের নেতা (আয়াতুল্লাহ খামেনি) হত্যাকাণ্ডের তিন-চার ঘণ্টার মধ্যেই নতুন কমান্ডার নিয়োগ দেন। তিনি তাঁদের ব্যক্তিগতভাবে তলব করেন, ব্রিফ করেন, নির্দেশনা দেন এবং সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়ে দেন।’
কালিবাফ ব্যাখ্যা করে বলেন, আয়াতুল্লাহ খামেনি ঠিক সেই ভূমিকাই পালন করেছেন, যেমনটি তিনি ১৯৮০-এর দশকে করেছিলেন, যখন সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ইরাক দক্ষিণ ইরানে হামলা চালিয়েছিল।
ইসরায়েলের বিমান হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন আয়াতুল্লাহ খামেনি। একটি ভিডিও বার্তায় তিনি ইরানের জনগণকে বলেন, ইসরায়েলকে তাদের অপরাধের জন্য ‘মূল্য দিতে হবে’ এবং এ জন্য তারা ‘দুর্দশাগ্রস্ত’ হবে।
যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই ইরান পাল্টা হামলা শুরু করে। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত ইসরায়েলে ঝাঁকে ঝাঁকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। হামলায় দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও কৌশলগত স্থাপনাগুলো নিশানা করা হয়। এই পাল্টা হামলা যুদ্ধের একেবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
ইরানের পাল্টা হামলার পরিণতি গোপন রাখতে ইসরায়েল সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ সফল হয়নি। যুদ্ধ চলাকালে ও পরবর্তী সময়ে উঠে আসা বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির পরিমাণ হিব্রু ভাষাভাষী গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের তুলনায় অনেক বেশি।
ইসরায়েল সম্পর্কে গভীরভাবে ওয়াকিবহাল এক মার্কিন বিশ্লেষক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা বলেন, তাঁর ধারণা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত এক-তৃতীয়াংশ তেল আবিব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের অন্তত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে বা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সামনে আসা আরও বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, তেল আবিবের কিরিয়া কম্পাউন্ডে অবস্থিত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় হামলার শিকার হয়েছে, যা মেরামত করতে কয়েক মাস লেগে যেতে পারে।
ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আমান, প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সদর দপ্তর, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউট, হাইফার তেল শোধনাগার এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রও ইরানের হামলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ বাঘের কালিবাফ বলেন, ইসরায়েল ক্ষয়ক্ষতির যে কথা স্বীকার করেছে, বাস্তবে তা সেটার চেয়ে অনেক বেশি। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের শেষ দিকে আমাদের প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।’
কালিবাফ দাবি করেন, ইসরায়েলে প্রকৃত নিহতের সংখ্যা সম্ভবত ৫০০-এর কম নয়। কিন্তু দেশটির সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা মাত্র ২৯।
তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পরোক্ষ কূটনৈতিক আলোচনা চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার তীব্র নিন্দা জানান মোহাম্মদ বাঘের কালিবাফ। তিনি বলেন, ‘কূটনৈতিক আলোচনার মাঝপথে এ ধরনের আগ্রাসন বিশ্বাসঘাতকতা।’
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে কাতারে অবস্থিত দেশটির আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান। এটা মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। ওই অভিযানে ইরান মোট ১৪টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যার মধ্যে ৬টি নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, সব ক্ষেপণাস্ত্রই নিশানায় আঘাত হানার আগেই প্রতিহত করা হয়েছে। একটি ক্ষেপণাস্ত্র খালি মাঠে পড়েছে।
মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, আল উদেইদ ঘাঁটির অন্তত একটি গম্বুজাকৃতির কাঠামো (জিওডেসিক ডোম) সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ওই কাঠামোর ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত সংবেদনশীল সামরিক যোগাযোগের সরঞ্জাম ছিল, যা গোপন সামরিক অভিযানের জন্য ব্যবহার করা হতো।
আরও পড়ুনইসরায়েলের পাঁচটি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র০৫ জুলাই ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল র গ রস ত ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুলের ভাইয়ের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাই মির্জা ফয়সল আমিনের ওপর হামলা হয়েছে। এসময় তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। মির্জা ফয়সল আমিন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
শনিবার রাত পৌনে ৯টায় বালিয়াডাঙ্গী সমির উদ্দিন স্মৃতি মহাবিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
হামলাকারীরা ফয়সল আমিনকে লক্ষ্য করে চেয়ার ও বাঁশ নিক্ষেপ করে এবং তাঁর ব্যবহৃত গাড়িটি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় জেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় আট বছর পরে গতকাল বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দিনভর ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল ঘোষণা নিয়ে শুরু হয় উত্তেজনা। ফলাফল ঘোষণার দাবিতে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ফয়সল আমিনসহ জেলার অন্য নেতাদের দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। ফলাফল ঘোষণা না করা পর্যন্ত কাউকে স্থান ত্যাগ করতে দেবেন না বলে স্লোগান দিতে থাকেন। অবরুদ্ধ থাকার পর রাত পৌনে ৯টার দিকে ফয়সল আমিন ফলাফল ঘোষণা করেন। পরে তিনি গাড়িতে উঠতে গেলে ঘটে বিপত্তি। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তাঁর ওপর চড়াও হয়।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তাঁকে লক্ষ্য করে চেয়ার ছুড়ে মারা হচ্ছে। তিনি দ্রুত গাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন। হামলাকারীরা তাঁর গাড়িতে হামলা চালায়। ভাঙচুর করে। সঙ্গে থাকা অন্য নেতাকর্মীরা তাঁকে রক্ষার চেষ্টা করেন। এই হট্টগোলে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন।
গাড়ির মালিক ও তাঁর সফরসঙ্গী মো. রাশেদ বলেন, ‘আমার গাড়িটি ভাঙচুর করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলেও ততক্ষণে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি মো. শওকত আলী সরকার বলেন, আমরা তদন্ত শুরু করেছি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ কুমার দেবনাথ বলেন, আমরা হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছি।