জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যার ঘটনায় নিজের এবং মামলার প্রধান আসামির অপরাধ সম্পর্কিত ‘সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের’ শর্তে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ক্ষমা করার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গত বৃহস্পতিবার দুই পৃষ্ঠার এ লিখিত আদেশ দেন। যা শনিবার গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট ৫টি অভিযোগের ভিত্তিতে ১০ জুলাই তিন অভিযুক্ত- শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ এর ধারা ৩(২)(এ), ৩(২)(জি), ৩(২)(এইচ), ৪(১), ৪(২), ৪(৩) এর অধীনে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আদেশের দিন অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। অপর দুই আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পলাতক।

অভিযোগ গঠন করার পর তা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পড়ে শোনানো হয় এবং তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি দোষী স্বীকার করবেন কি না। তখন তিনি দোষ স্বীকার করেন এবং জানান যে, তিনি সংশ্লিষ্ট অপরাধসমূহ এবং এই অপরাধ সংঘটনে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির সম্পর্কে তার জ্ঞাতসারে জানা সব তথ্য ‘সৎভাবে ও সম্পূর্ণভাবে’ প্রকাশ করতে ইচ্ছুক। চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে তার আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ ক্ষমা প্রদান করার জন্য একটি আবেদন করেন ট্রাইব্যুনালে।

আদেশে এ বিষয়ে বলা হয়, প্রধান কৌঁসুলি এই শর্তে ক্ষমা প্রদানের বিষয়ে সম্মতি প্রদান করেন যে- অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ‘সম্পূর্ণ ও সত্য তথ্য প্রদান করবেন’, যা অভিযোগের অপরাধের বিচার কার্যক্রমে সহায়ক হবে। উপর্যুক্ত তথ্য ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ট্রাইব্যুনাল মনে করে যে, অভিযুক্ত চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ক্ষমা প্রদান করা উপযুক্ত এবং সেই মোতাবেক তাকে শর্তসাপেক্ষে ক্ষমা প্রদান করা হয়েছে যে- তিনি সংশ্লিষ্ট অপরাধসমূহ এবং সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তি সম্পর্কে তার জানা সব তথ্য ‘সম্পূর্ণ ও সত্যভাবে’ প্রকাশ করবেন। ‘অভিযুক্ত এ শর্তে ক্ষমা গ্রহণ করেছেন এবং সে অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল তাকে সাক্ষী হিসেবে পরবর্তীতে সাক্ষ্যদানের জন্য ডাকবে।’

আদেশে বলা হয়, ‘চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন যেহেতু ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং তা গ্রহণ করেছেন, তাই তাকে কারাগারে অন্যান্য বন্দিদের থেকে আলাদা রাখার প্রয়োজন। সে মোতাবেক সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো যেন তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাকে অন্য বন্দিদের থেকে আলাদা করে রাখা হয়।’

এই আদেশের একটি অনুলিপি সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করতে এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

গত ১০ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছিল।  

আদেশের সময় ট্রাইব্যুনাল সাবেক আইজিপিকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি অভিযোগ স্বীকার করছেন কি না? এরপরই মামুন নিজের অভিযোগ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। পরে আদালত মামুনের আবেদন মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন।

আদালতে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই গণঅভ য ত থ ন স ব ক আইজ প আবদ ল ল হ আল ম ম ন দ ল ল হ আল ম ম ন স ব ক র কর প রক শ অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ ‘ট্রেলারমাত্র’: তাজুল ইসলাম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের হত্যা করতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার যে অডিও রেকর্ড নিয়ে বিবিসি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেটি ‘ট্রেলারমাত্র’ বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

বুধবার বিকেলে বিবিসির ওই প্রতিবেদন ফেসবুকে জুড়ে দিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তাজুল ইসলাম লেখেন, ‘মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। নিজের চোখেই দেখে নিন। এই কল রেকর্ড উদ্ধার করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা। এটা ট্রেলারমাত্র। অনেক কিছু এখনো বাকি। অপেক্ষায় থাকুন।’

এদিকে সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের খবর সংগ্রহকারী প্রতিবেদকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় এই অডিও রেকর্ড নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। সেখানে তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তকালে শেখ হাসিনার কয়েকটি অডিও রেকর্ড জব্দ করে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেসব রেকর্ড যাচাই করে ফরেনসিক রিপোর্ট গ্রহণ করে। 

তিনি আরও বলেন, রিপোর্টে দেখা যায়, শেখ হাসিনা আন্দোলন চলাকালে লেথাল উইপন (মারণাস্ত্র) ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। তদন্ত সংস্থা তদন্ত প্রতিবেদনের সঙ্গে সেই অডিও রেকর্ডসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট প্রসিকিউশনের কাছে হস্তান্তর করে। প্রসিকিউশন এটিকে বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনালে ইতিমধ্যে দাখিল করেছে।

গাজী মোনাওয়ার হুসাইন বলেন, বিবিসি শেখ হাসিনার সেই অডিও রেকর্ডটি তাদের মতো করে অনুসন্ধান করে তারও সত্যতা পেয়েছে। বিবিসি নিশ্চিত করেছে, সেই অডিও রেকর্ড সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। প্রসিকিউশন মনে করে, বিবিসির সেই প্রতিবেদনের কারণে ট্রাইব্যুনালের বিচারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল।

এই প্রসিকিউটর জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেওয়ার দিন ধার্য আছে বৃহস্পতিবার। তিনি বলেন, আগামীকাল যদি ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করেন, তাহলে আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনা যে মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, সেই অডিও রেকর্ডটি সাক্ষ্য হিসেবে উপস্থাপন করবেন তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশের’ শর্তে রাজসাক্ষী মামুনকে ক্ষমার আদেশ ট্রাইব্যুনালের
  • ১১ জুলাইকে ‘প্রথম প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা উপদেষ্টা আসিফের
  • গণঅভ্যুত্থানে কুবি শিক্ষার্থীদের অবদানের স্বীকৃতি, ১১ জুলাইকে ‘প্রথম প্রতিরোধ দিবস’ ঘোষণা
  • দেশে যেন নতুন স্বৈরাচারের জন্ম না হয় : নাহিদ 
  • আমাদের নতুন সংবিধান প্রয়োজন: নাহিদ ইসলাম
  • নওগাঁয় ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণকাজ উদ্বোধন
  • সানেমের জরিপে নতুন বন্দোবস্ত নিয়ে পুরোনো বার্তা
  • শেখ হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ ‘ট্রেলারমাত্র’: তাজুল ইসলাম
  • গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ ‘ট্রেলারমাত্র’: তাজুল ইসলাম