‘আমরা নীরব ছিলাম, ভয় আমাদের স্তব্ধ করে রেখেছিল’
Published: 12th, July 2025 GMT
‘সোহাগকে শত শত মানুষের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আমি সেখানে ছিলাম। সবাই তাঁর আর্তনাদ শুনেছে, কিন্তু আমরা সবাই নীরব ছিলাম। কেউ ভিডিও করছিল, কেউ দূর থেকে দেখছিল, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেনি। ভয় আমাদের স্তব্ধ করে রেখেছিল। সন্ত্রাসী আর চাঁদাবাজদের ভয় আমাদের সবাইকে পঙ্গু করে দিয়েছিল। এটি আমার জীবনে দুঃসহ স্মৃতি হয়ে থাকবে।’
বলছিলেন ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী পুরান ঢাকার এক রাসায়নিক ব্যবসায়ী।
গত বুধবার সন্ত্রাসীরা চাঁদার টাকা না পেয়ে সোহাগকে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে তুলে এনে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের কাছে নিয়ে পিটিয়ে এবং ইট-পাথর দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরান ঢাকার ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন ভাবি, আমরা যদি সেদিন চুপ না থাকতাম, একসঙ্গে প্রতিবাদ করতাম, তাহলে হয়তো সোহাগ বেঁচে থাকতেন। কিন্তু আমরা ভয়ের কারণে আগাতে পারিনি। এ কথা মনে পড়লে অনুশোচনা হয়। আমরা চাই এমন নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি না ঘটুক। চাঁদাবাজ আর সন্ত্রাসীদের যেন কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হয়।’
৪ নম্বর রজনী বোস লেনে ‘সোহানা মেটাল’ নামে দোকান আছে সোহাগের। ওই দোকানের পাশে দোকান আছে মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যবসায়ীর।
শরীয়তপুর স্টোর নামের ওই দোকানের মালিক ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে তাঁর দোকান থেকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছেন। মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সোহাগ মাঝেমধ্যে দোকানে আসতেন। গত বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আমি দোকানে কাজ করছিলাম। এমন সময় দেখি ২০ থেকে ২২ জন যুবক ও তরুণ এসে সোহাগকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় আমিসহ অন্যান্য দোকানদার সোহাগকে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলে, “চুপ করে দোকানে বসে থাক, নইলে খবর আছে।” এরপর তারা সোহাগকে চড়–থাপ্পড় ও কিলঘুষি দিয়ে টেনেহিঁচড়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের গেটের সামনে নিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর শুনতে পাই সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুরান ঢাকার তামা–কাঁসার এক ব্যবসায়ী বলেন, সোহাগ কয়েক মাস আগে ওই এলাকায় দোকান ভাড়া নেন। প্রায় চার মাস ধরে মাহমুদুল হাসান (মহিন), ছোট মনির, আলমগীরসহ কয়েকজন সোহাগের কাছে প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে বিএনপির এক নেতার মধ্যস্থতায় মাসে দুই লাখ টাকায় রফা হয়। গত বুধবার বিকেলে সোহাগের কাছে তারা চাঁদা নিতে আসে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায়।
ফ্ল্যাটে ঝুলছে তালাকেরানীগঞ্জ মডেল টাউন আবাসিক এলাকায় একটি বাড়ির নবম তলায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন সোহাগ। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটে তালা ঝুলছে।
বাড়ির অষ্টম তলার ভাড়াটে মো.
সারা দেশে হত্যা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনের সড়কে এ প্রতিবাদ সভা হয়।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিগবাতুল্লাহ, প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য়
এছাড়াও পড়ুন:
রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ: ডেরা রিসোর্টের লাইসেন্স বাতিল
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় অবস্থিত ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের নানা অনিয়ম নিয়ে রাইজিংবিডিতে ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ডেরা রিসোর্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক (সিনিয়র সহকারী সচিব) শেখ রাশেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করেন। নানা অনিয়মের কারণে তাদের লাইসেন্স নামঞ্জুর করা হয়েছে। রিসোর্টের লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘ফসলি জমি দখল করে ডেরা রিসোর্ট নির্মাণ, বিপাকে কৃষক’; ১৯ মার্চ ‘ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ডেরা রিসোর্ট, তদন্ত কমিটি গঠন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ডেরার লাইসেন্স নামঞ্জুর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ডেরা রিসোর্ট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ভোগান্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে ডেরা রিসোর্টের নানা অনিয়ম তুলে এনেছেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন লাইসেন্স বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এসব নির্দেশনা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করাটাই বড় কাজ। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে।”
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কপি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, “লাইসেন্সের বিষয়ে কোন নোটিশ এখনও পাইনি আমরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়েও জানা নেই। যদি লাইসেন্স বাতিল করে থাকে, তাহলে আমরা আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান করব।”
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এশিউর গ্রুপের অঙ্গসংগঠন ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাদীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঢাকা/চন্দন/এস