‘সোহাগকে শত শত মানুষের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আমি সেখানে ছিলাম। সবাই তাঁর আর্তনাদ শুনেছে, কিন্তু আমরা সবাই নীরব ছিলাম। কেউ ভিডিও করছিল, কেউ দূর থেকে দেখছিল, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেনি। ভয় আমাদের স্তব্ধ করে রেখেছিল। সন্ত্রাসী আর চাঁদাবাজদের ভয় আমাদের সবাইকে পঙ্গু করে দিয়েছিল। এটি আমার জীবনে দুঃসহ স্মৃতি হয়ে থাকবে।’

বলছিলেন ভাঙারি পণ্যের ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী পুরান ঢাকার এক রাসায়নিক ব্যবসায়ী।

গত বুধবার সন্ত্রাসীরা চাঁদার টাকা না পেয়ে সোহাগকে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে তুলে এনে মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকের কাছে নিয়ে পিটিয়ে এবং ইট-পাথর দিয়ে আঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই ঘটনায় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার কথা জানা গেছে। নিহত লাল চাঁদ একসময় যুবদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরান ঢাকার ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন ভাবি, আমরা যদি সেদিন চুপ না থাকতাম, একসঙ্গে প্রতিবাদ করতাম, তাহলে হয়তো সোহাগ বেঁচে থাকতেন। কিন্তু আমরা ভয়ের কারণে আগাতে পারিনি। এ কথা মনে পড়লে অনুশোচনা হয়। আমরা চাই এমন নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি না ঘটুক। চাঁদাবাজ আর সন্ত্রাসীদের যেন কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি হয়।’

৪ নম্বর রজনী বোস লেনে ‘সোহানা মেটাল’ নামে দোকান আছে সোহাগের। ওই দোকানের পাশে দোকান আছে মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যবসায়ীর।
শরীয়তপুর স্টোর নামের ওই দোকানের মালিক ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে তাঁর দোকান থেকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছেন। মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সোহাগ মাঝেমধ্যে দোকানে আসতেন। গত বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আমি দোকানে কাজ করছিলাম। এমন সময় দেখি ২০ থেকে ২২ জন যুবক ও তরুণ এসে সোহাগকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় আমিসহ অন্যান্য দোকানদার সোহাগকে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলে, “চুপ করে দোকানে বসে থাক, নইলে খবর আছে।” এরপর তারা সোহাগকে চড়–থাপ্পড় ও কিলঘুষি দিয়ে টেনেহিঁচড়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের গেটের সামনে নিয়ে যায়। ঘণ্টাখানেক পর শুনতে পাই সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে।’

‘চাঁদা না দেওয়ায় হত্যা’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুরান ঢাকার তামা–কাঁসার এক ব্যবসায়ী বলেন, সোহাগ কয়েক মাস আগে ওই এলাকায় দোকান ভাড়া নেন। প্রায় চার মাস ধরে মাহমুদুল হাসান (মহিন), ছোট মনির, আলমগীরসহ কয়েকজন সোহাগের কাছে প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে বিএনপির এক নেতার মধ্যস্থতায় মাসে দুই লাখ টাকায় রফা হয়। গত বুধবার বিকেলে সোহাগের কাছে তারা চাঁদা নিতে আসে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায়।

ফ্ল্যাটে ঝুলছে তালা

কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন আবাসিক এলাকায় একটি বাড়ির নবম তলায় স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন সোহাগ। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটে তালা ঝুলছে।

বাড়ির অষ্টম তলার ভাড়াটে মো.

আলী নুর বলেন, ‘সোহাগ ভাই খুব শান্ত স্বভাবের ছিলেন। ঈদ ও বিভিন্ন উৎসবে প্রতি ফ্ল্যাটে খাবার ও উপহারসামগ্রী পাঠাতেন। গত সোমবার সকালে দোকানে যাওয়ার সময় সোহাগ ভাইয়ের সাথে আমার শেষ কথা হয়। তিনি খুব চাপা স্বভাবের ছিলেন।’

ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

সারা দেশে হত্যা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনের সড়কে এ প্রতিবাদ সভা হয়।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সিগবাতুল্লাহ, প্রকাশনা সম্পাদক আজিজুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

তরুণ প্রজন্ম নির্বাচনী ভাগ বাটোয়ারায় বিশ্বাস করে না: নাহিদ ইসলাম

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা কোনো দলের বিরুদ্ধে কথা বলি না, আমরা বলি পুরনো বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে। যারা মাফিয়া সিস্টেমকে টিকিয়ে রাখতে চান, চাঁদাবাজিকে টিকিয়ে রাখতে চান, তাদেরকে জনগণ আর মেনে নেবে না। এই তরুণ প্রজন্ম নির্বাচনী ভাগ বাটোয়ারায় বিশ্বাস করে না। আমরা বলেছি, রাষ্ট্র সংস্কার ও দেশ পুনর্গঠন করতে হবে। 

শনিবার ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার ফয়লা বাজারে পথসভায় তিনি এ সব কথা বলেন। 

জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, ‘আমরা গণঅভ্যুত্থান করেছিলাম মাফিয়া, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি সিস্টেমের বিরুদ্ধে। চাঁদাবাজি, দুর্নীতি এখনও দূর করতে পারিনি। তাই আবারও এসেছি, আপনারা আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। এই চাঁদাবাজ ও দুর্নীতিবাজ সিস্টেমের পরিবর্তন করব, শহীদদের প্রতি এইটা আমাদের প্রতিজ্ঞা।’ তিনি আরও বলেন, জুলাই সনদ অবশ্যই বাস্তবায়ন হতে হবে। সেটা জুলাই-আগস্ট মাসের মধ্যেই হতে হবে।

পুলিশ-প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, পুলিশ-প্রশাসনকে জনগণের পক্ষে ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। যদি তারা দলবাজ প্রশাসনের মত আচরণ করে, তাহলে মনে রাখবেন ফ্যাসিবাদের সময় যারা দলবাজ হয়েছিল, তাদের ও আপনাদের পরিণতি একই হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব শেখ আখতার হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে হাসিনা পালিয়েছে কিন্তু তার সিস্টেম রয়ে গেছে। চাঁদার জন্য ঢাকায় একজনকে পাথর দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রামপালে এখন ঘের দখল চলে। কোথাকার কোন পালিয়ে থাকা নেতারা ঘেরের দখল নিতে চায়।’ 

আখতার হোসেন আরও বলেন, ‘যদি কেউ ঘের দখল, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, কমিশন এর রাজনীতি করতে চায় দেশের মানুষ যেভাবে শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছে সেভাবে তাদেরও বিদায় করবে। মোংলা বন্দর নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানান তিনি। 

আগামীর বাংলাদেশে যেন কোনো গুম-খুন না হয় সেজন্য সব ক্ষেত্রে সংস্কার দরকার জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘একটি দল মনে করে শুধু নির্বাচন হলেই সব সংস্কার হয়ে যাবে। শেখ হাসিনাও তাই মনে করতেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করা না হলে, পুলিশকে যদি নিরপেক্ষ না করা যায় শুধু নির্বাচন দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাই সংস্কারের পরই নির্বাচন দিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ