ক্ষমতার ভারসাম্য, রাজনীতিতে সহনশীলতা আনতে ‘সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি’ চান বিভিন্ন দলের নেতারা
Published: 12th, July 2025 GMT
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচন হলে জনমতের প্রতিফলন সঠিকভাবে ঘটে—এমন দাবি তুলেছেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাঁদের মতে, পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা গেলে নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক সংকট, পেশিশক্তি ও কালোটাকার দাপট অনেকটাই কমে আসবে। পাশাপাশি রাজনীতিতে সহনশীলতা ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা পাবে।
আজ শনিবার ‘গণ–অভ্যুত্থানের পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার, গণহত্যার বিচার এবং জাতীয় নির্বাচনের পদ্ধতি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। রাজধানীর বিজয়নগরে একটি রেস্টুরেন্টে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
পিআর পদ্ধতি ‘মাদার অব অল রিফর্ম’
গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি রেজাউল করিম বলেন, ‘আমাদের অতীতের আত্মত্যাগ বিফলে গেছে ভুল নীতি ও অসুস্থ রাজনীতির কারণে। জুলাই অভ্যুত্থানকেও আমরা ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। তাই প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার এখনই করতে হবে। পতিত স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করতে হবে।’
মুফতি রেজাউল করীমের মতে, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের কোনো বিকল্প নেই। এ পদ্ধতিকে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলের কার্যকর কৌশল হিসেবে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি হলো পরস্পর বিনাশী। কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর সংসদে উপস্থিতি জোরালো থাকে এবং সরকার গঠনে যেকোনো দলের সমর্থনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, সে জন্য দলগুলো সহাবস্থানে যেতে বাধ্য হয়।
পিআর পদ্ধতি হলে সরকার অস্থিতিশীল হবে, এমন অভিযোগের জবাবে সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, ‘ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন হওয়া আর রাজনৈতিক অস্থিতিশীল হওয়া এক কথা না। ইতালিতে ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন হলেও সেটি রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল দেশ না। আবার বাংলাদেশে ১৯৮১ সাল থেকেই প্রায় সব সরকার পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতাসীন ছিল। তাই বলে বাংলাদেশ রাজনৈতিক স্থিতিশীল দেশ হয়ে যায় নাই।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের বাস্তবতায় জুলাইয়ের চেতনা, আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন রক্ষায় পিআরই হলো একমাত্র সমাধান। পিআরই হলো “মাদার অব অল রিফর্ম।”’
‘সংস্কার না হলে জামায়াত নির্বাচনে যাবে না’
গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই আমরা এই পদ্ধতির কথা বলছি।’ তাঁর মতে, এটা নিয়ে আলোচনার জন্য একটা টিম গঠন করা দরকার, যারা জনগণের কাছে বিষয়টি তুলে ধরবে।
সংস্কার ছাড়া জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে যাবে না বলে উল্লেখ করে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘আপনারা বলছেন আমরা নির্বাচন চাচ্ছি না, পিআরের কথা বলে নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছি। আমরা বলতে পারি, আপনারা তো সংস্কার চাচ্ছেন না। আর সংস্কার না হলে তো আমরা নির্বাচনে যাব না।’
উচ্চকক্ষে পিআর হলে সংবিধান নিয়ে নয়ছয় হবে না
গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বর্তমানে যে নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু আছে, তাতে দলবাজি হয়, প্রার্থীর গুণাগুণ যাচাই হয় না। তিনি বলেন, ‘আমরা সংসদের উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির দাবি তুলেছি। এ ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে সংবিধানে বারবার হাত দেওয়া বন্ধ হবে।’
মান্না উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চান বলে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা আপার হাউসে (সংসদের উচ্চকক্ষে) পিআর পদ্ধতির কথা বলেছি। এটি বাস্তবায়ন হলে যখন তখন নয়ছয় করে সংবিধানে হাত দেওয়া বন্ধ করা যাবে।’ তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। আগামী দিনে যারা ক্ষমতায় যাবে, তারা সে আকাঙ্ক্ষাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলে যেতে পারবে না।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, আইনজীবী শিশির মনির, জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিল, জনতা পার্টি বাংলাদেশের গোলাম সারোয়ার মিলন, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য হাবিবুর রহমান, ইসলামি ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন প্রমুখ।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র রহম ন র জন ত ক ইসল ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে ‘সহযাত্রী’
আজকাল বৈবাহিক সম্পর্ক মানেই যেন তাড়াতাড়ি শুরু, দ্রুত শেষ! ঠিক এই সময়ে নির্মাতা মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত নাটক ‘সহযাত্রী’ দেখাচ্ছে ভিন্ন দৃষ্টান্ত। নাটকটি বলছে—দাম্পত্য জীবন মানে দায়িত্ব, বোঝাপড়া আর সহনশীলতা। বিচ্ছেদের নয়, বরং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার অনুপ্রেরণাই এর মূল বার্তা।
দর্শকরা বলছেন, “সহযাত্রী’ শুধুই একটি গল্প নয়, বরং স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, বোঝাপড়া এবং সহনশীলতার শিক্ষা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। ডিভোর্স নয়, বরং কীভাবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায়— সেই পথ বাতলাচ্ছে এই নাটক।”
আরো পড়ুন:
ফারুকীর রহস্যঘেরা ওয়েব সিরিজ ‘৮৪০’ ওটিটিতে
‘আমার শরীর দেখিয়ে কিছু প্রমাণ করার দরকার নেই’
গল্পে দেখা যায়, নিজের পছন্দে জয়-অবনী (ফারহান আহমেদ জোভান ও নাজনীন নিহা) বিয়ে করেন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তারা ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক তখনই গল্পে আসে ভিন্ন মোড়— তাদের মামা জানান, বিয়েতে কারো নিমন্ত্রণ করা হয়নি, তাই ডিভোর্স হবে জমকালো আয়োজনে! সেই আয়োজনেই শুরু হয় সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার নতুন যাত্রা।
চ্যানেল আইতে প্রচারের পর শনিবার দুপুরে সিনেমাওয়ালার ইউটিউব চ্যানেলে মুক্তি পায় নাটকটি। মাত্র দুই দিনেই এটি দুই মিলিয়নের বেশি দর্শক দেখেছেন। প্রায় পাঁচ হাজার দর্শক ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন ভিডিওতে। চাঁদনী সুলতানা নামে একজন লেখেন, “সহযাত্রী’ দেখার পর মনে হলো, ডিভোর্স কোনো সমাধান নয়। একটু বোঝাপড়া, ভালোবাসা আর ধৈর্য সম্পর্ককে সারাজীবন টিকিয়ে রাখতে পারে।”
উপমা পাল লিখেছেন, “নাটকটা দেখে চোখে জল এসে গেছে। কত সহজে আমরা সম্পর্ক ভেঙে ফেলি, অথচ সামান্য ধৈর্য রাখলেই সম্পর্ক বাঁচানো যায়। এমন গল্প আরো চাই।” তানভীর আহমেদ মন্তব্য করেছেন, “বর্তমানে যে হারে ডিভোর্স বাড়ছে, সেখানে এই নাটক অনেকের সম্পর্ক নতুনভাবে শুরু করার সাহস জোগাবে।”
সোনিয়া খন্দকার লিখেছেন, “সম্পর্ক বাঁচানোই আসল কাজ। ‘সহযাত্রী’ যেন আমাদের ঘরের আয়না হয়ে উঠেছে। এই সময়ে এমন শিক্ষণীয় নাটক নির্মাণের জন্য নির্মাতাকে স্যালুট।”
নাটকের মূল গল্পকার মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ, চিত্রনাট্য লিখেছেন জোবায়েদ আহসান। অভিনয়ে ছিলেন জোভান, নিহা ছাড়াও এজাজুল ইসলাম, সুষমা সরকার, তানজিম অনিক, জেবিন, তাবাসুম ছোঁয়াসহ অনেকে।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত