‘ছেলেরে তো ফিইরা ফাইতাম না, খুনিগো ফাঁসি চাই’
Published: 12th, January 2025 GMT
‘আমার ছেলে কী দোষ করেছিল, কেন তাকে দুনিয়া থাইক্যা চলে যাইতে হইল? ছেলেরে তো আর ফিরে ফাইতাম না, খুনিগো ফাঁসি চাই। চারদিন পার হইয়া গেল পুলিশ কী করছে বুঝতে পারছি না। আমার ছেলে পুলিশে চাকরি করত, তারে কুপাইয়া মারল কারা? পুলিশের লোক হইয়াও যদি সঠিক বিচার না পায়, কী করব? আমার বলার কিছুই
নাই।’ গতকাল রোববার দুপুরে নিজ বাড়িতে এভাবেই আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়া পুলিশ সদস্য শফিকুল ইসলামের মা ফাতেমা খাতুন।
তিনি বলেন, ‘শুনছি, পিবিআই নাকি দুইডারে ধরছে। আমি ভাবছিলাম ২৪ ঘণ্টার ভিতরে আমার ছেলের খুনিদের পুলিশ ধরব, কিন্তু কই তারা (পুলিশ) কী করছে বুঝতে পারছি না।’ ক্ষোভ প্রকাশ করে ফাতেমা খাতুন জানান, পুলিশ এসে তাদের বাড়ির লোকজনকে জিজ্ঞাস করে কাউকে সন্দেহ করেন কিনা। অথচ সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, লোকটা দৌড় দিচ্ছে, দৌড় দেওয়া লোকটাকে ধরে জিজ্ঞাস করলেই তো সবকিছু বের হওয়ার কথা।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনার সদস্যরা যৌথ অভিযান চালিয়ে শনিবার বিকেল পর্যন্ত দুর্গাপুর উপজেলার পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে দু’জনকে আটক করেছে। তারা হলো– সাজিবুল ইসলাম ওরফে অপূর্ব ও বাকী বিল্লাহ। একই সঙ্গে হত্যায় ব্যবহৃত লাল রঙের একটি পালসার মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
জানা গেছে, নিহত শফিকুল ইসলাম জামালপুরে বেতারে এসআই পদে কর্মরত ছিলেন। গত ৮ জানুয়ারি ছুটিতে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে নিজ বাসায় এসেছিলেন। পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে বাগিচা পাড়ার নিজ বাসা থেকে বের হয়ে বাজারে গিয়েছিলেন তিনি। বাজার থেকে ফেরার পথে ৬টা ২০ মিনিটের দিকে পৌর শহরের উকিলপাড়া এলাকার পান মহল-সংলগ্ন গলির সড়কে তাঁকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে এলাকাবাসী তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ ঘটনায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তার বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে শুক্রবার দুর্গাপুর থানায় হত্যা মামলা করেন। এ ঘটনায় পিবিআই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে দুই যুবককে আটক করে।
ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল কালাম আযাদ ও জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহেব আলী পাঠান গত শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে নিহত পুলিশ সদস্যের গ্রামের বাড়িতে জানাজায় অংশ নেন ও নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তারা।
বাদী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কী কারণে আমার ছেলেকে মেরেছে, আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না। ছেলেকে আর ফিরে পাব না, কিন্তু হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। এভাবে যেন আর কোনো বাবা ছেলেহারা না হয়।’
অন্যদিকে নেত্রকোনা জেলা শহরের বড় বাজারের অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক দিলীপ কুমার রায় হত্যাকাণ্ডে গতকাল রোববার পর্যন্ত মামলা হয়নি। এ ঘটনায় কাউকে আটকও করতে পারেনি পুলিশ।
নিহত কলেজ শিক্ষকের শ্যালক সমকাল সুহৃদ সমাবেশ নেত্রকোনা জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, ‘সোমবার (আজ) আমার ভগ্নিপতির শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করা হবে। পরে বিষয়টি নিয়ে তাঁর পরিবার বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।’
দুর্গাপুর থানার ওসি মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়ার ভাষ্য, মামলাটি পিবিআইয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে। এরই মধ্যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশ, ডিবি, পিবিআই। গ্রেপ্তার দু’জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নেত্রকোনা সদর থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ জানান, কলেজ শিক্ষক হত্যাকাণ্ডে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। হত্যার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পিবিআই ময়মনসিংহ কার্যালয়ের পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার বলেন, এসআই শফিকুল ইসলাম হত্যায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
টঙ্গীতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ, সাউন্ড নিক্ষেপ
গাজীপুরের টঙ্গীতে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। এ ঘটনায় শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও গরম পানি নিক্ষেপ করেছে।
বুধবার সকাল ৯টার থেকে গাজীপুরা এলাকার সৃজন্স ড্রেসেস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে এই বিক্ষোভ শুরু করেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কারখানার কয়েক'শ শ্রমিক বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রায় এক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে শিল্প পুলিশ-২ এবং টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ কয়েক দফা চেষ্টা করেও শ্রমিকদের সরাতে ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দুই রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং গরম পানি ছিটিয়ে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে।
বিক্ষোভরত শ্রমিক শিল্পি আক্তার বলেন, ঈদের আগে আমাদের অর্ধেক বেতন আর অর্ধেক বোনাস দিয়ে কারখানা ছুটি দেয়। বলা হয়েছিল, ঈদের পরেই বাকী টাকা পরিশোধ হবে। কিন্তু এখনও কিছুই পাইনি। বাড়িওয়ালা তো আশ্বাসে ভাড়া নেয় না, দোকানও বাকির টাকা চায়। সরকার যদি আমাদের পাশে না দাঁড়ায়, আমরা কোথায় যাবো?
আরেক শ্রমিক রহমত বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বসে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ আমাদের ওপর গরম পানি ছুড়ে দেওয়া হলো। এভাবে কি শ্রমিকের ন্যায্য দাবি দমন করা যায়?
শ্রমিকদের দাবি, কারখানার মালিক পক্ষ গত ২০ এপ্রিল কিছু বোনাস পরিশোধ করলেও ২৮ এপ্রিলের মধ্যে পুরো বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখেনি। এতে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ–২ এর অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।