কাকরাইলে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
Published: 6th, February 2025 GMT
রাজধানীর কাকরাইল মোড় এলাকায় বাসের ধাক্কায় বাবুল ঘোষ (৬৫) নামের এক পথচারী নিহত হয়েছেন। তিনি ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকানের কর্মচারী ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
গুরুতর আহত অবস্থায় বাবুল ঘোষকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ইসলামিয়া হাসপাতাল নেওয়া হয়। সেখান থেকে রাত নয়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
উদ্ধারকারী পথচারী মো.
মো. ফিরোজ আরও বলেন, বাস ফেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন চালককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। বাসটি পুলিশ জব্দ করে।
বাবুল ঘোষের খালাতো ভাই জগদীশ ঘোষ জানান, বাবুল ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকানে কাজ করতেন। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার গোয়ালনগর এলাকায় থাকতেন। তাঁর বাবার নাম লক্ষ্মণ ঘোষ।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, মৃতদেহটি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। থানা–পুলিশ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬% স্নাতক ‘আংশিক বেকার’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করা প্রায় ৬৬ শতাংশ আংশিক বেকারত্বের (আন্ডার এমপ্লয়েড) মধ্যে রয়েছেন। অর্থাৎ তাঁরা টিউশনি, কল সেন্টার বা কোচিংয়ে ক্লাস নেওয়ার মতো কাজ করেন; পূর্ণকালীন কাজের (ফুলটাইম) সঙ্গে যুক্ত নন। ফল ভালো থাকলেও পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা তাঁদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হিসেবে সামনে এসেছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনে সরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের বার্ষিক উন্নয়ন সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের উপস্থাপনায় এসব তথ্য তুলে ধরেন গবেষকেরা। গতকাল ছিল দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের শেষ দিন। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক এ কে এনামুল হক। এ বছরের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য হলো ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়ন’।
প্রথম অধিবেশনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রিধারীদের কর্মসংস্থান নিয়ে উপস্থাপনা তুলে ধরেন বিআইডিএসের গবেষণা ফেলো তাহরীন তাহরিমা চৌধুরী। জাতীয় বিদ্যালয়ের অধীন ৫১৫টি কলেজ থেকে স্নাতক করা ১ হাজার ৬৩৯ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে ২০২১ সালে বিশ্বব্যাংকের করা জরিপের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে।
স্নাতক ডিগ্রিধারীদের কাছে কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে ৩৪৩ জন কাজে যুক্ত রয়েছেন বলে জানান। আর চাকরি খুঁজছেন বলে জানান ১ হাজার ৭৮ জন। তাঁদের মধ্যে ১১৩ জন পার্টটাইম বা খণ্ডকালীন কাজে যুক্ত। ৮২ জন কোনো কর্মক্ষেত্রে যুক্ত নন। অর্থাৎ প্রায় ৬৬ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী আংশিক বেকার।
আংশিক বেকারত্ব বা আন্ডার এমপ্লয়েড বলতে শ্রমশক্তিতে যুক্ত এমন মানুষদের বোঝায়, যাঁরা যোগ্যতা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত চাকরি খুঁজে পাননি।
উপস্থাপনায় বলা হয়, স্নাতক ডিগ্রিধারীদের ৬টি ভাগে বিভক্ত করে দেখা যায়, তাঁদের মধ্যে প্রায় ২৪ শতাংশ চাকরি করছেন। নিজের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১ দশমিক ৬ শতাংশ। টিউশনি করছেন প্রায় ৭ শতাংশ। খণ্ডকালীন কাজে যুক্ত সাড়ে ৫ শতাংশ। কাজ খুঁজছেন ৩৩ শতাংশ। আর দৈনিক মজুরিতে কাজে যুক্ত ২৯ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী।
যদিও বিশ্ব শ্রম সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলেই তাঁকে বেকার হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। তাই এসব স্নাতক ডিগ্রিধারী নিজেদের ‘বেকার’ মনে করলেও তাঁদের পূর্ণাঙ্গ বেকার হিসেবে গণ্য করা যায় না।
আর এসব স্নাতক ডিগ্রিধারীর ৬১ শতাংশেরই অনার্স বা মাস্টার্স পর্যায়ে কাজের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। অভিজ্ঞতা ছিল ৩৭ শতাংশের। এমনকি তাঁদের ৫৫ শতাংশের আইসিটি (তথ্যপ্রযুক্তি) নিয়ে কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না। গবেষণা প্রতিবেদনটির নীতি সুপারিশে বলা হয়, এসব স্নাতক ডিগ্রিধারী চাকরির পরীক্ষায় ডাক পেলেও পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় তাঁরা কাঙ্ক্ষিত চাকরি পাচ্ছেন না। তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পরিচালিত দুই হাজারের বেশি কলেজের সঙ্গে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংযোগ বৃদ্ধির পরামর্শ দেওয়া হয়।
এর আগে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংকের এক হিসাবে বলা হয়েছিল, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৬ শতাংশ স্নাতক ৩ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত বেকার থাকছেন।
গ্রামের তুলনায় শহরের শ্রমিকদের বেতন আড়াই গুণ বেশিসম্মেলনের দ্বিতীয় দিন প্রথম অধিবেশন ছিল দেশের শ্রমবাজার নিয়ে। এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক এস এম জুলফিকার আলী। এ অধিবেশনে চারটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়।
মজুরিবৈষম্য নিয়ে প্রথম উপস্থাপনা তুলে ধরেন বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো বদরুন্নেসা আহমেদ। এতে বলা হয়, ২০১৩ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শহরাঞ্চলে শ্রমিকদের গড় বেতন বৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১১ শতাংশ। কিন্তু একই সময়ে গ্রামের শ্রমিকদের বেতন গড়ে বেড়েছে মাত্র ৪ শতাংশ। অর্থাৎ গ্রামের তুলনায় শহরে বেতন বৃদ্ধির হার দ্বিগুণের বেশি। অর্থাৎ গ্রাম ও শহরের বেতনবৈষম্য প্রকট হয়ে উঠছে।
এতে আরও বলা হয়, শহর এলাকায় শ্রমিকের মাসিক গড় বেতন ৮ হাজার ৯৪৫ টাকা। আর গ্রামে মাত্র ৩ হাজার ৩৯০ টাকা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মহানগরের শ্রমিকেরা গ্রামীণ শ্রমিকদের তুলনায় গড়ে প্রায় ২১ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি মজুরি পান। যদিও শহরের শ্রমিকেরা গ্রামের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি সময় কাজ করেন। আর শহুরে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতাও কিছুটা বেশি। প্রতিবেদনটিতে ২০১৩, ২০১৭ ও ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য থেকে মজুরি হার নেওয়া হয়েছে।
এ গবেষণা থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যায় যে অর্থনৈতিক সুবিধা মূলত মহানগরেই সীমাবদ্ধ। ছোট শহরগুলো পিছিয়ে পড়ছে। ছোট শহরগুলোতে অবকাঠামো, শিল্প ও সেবা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি, যাতে মহানগরের ওপর চাপ কমে এবং ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন সম্ভব হয়।
অধিবেশনে নারীদের কর্মপরিবেশ নিয়ে আরেকটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন বিআইডিএসের গবেষণা সহযোগী কাশফী রায়ান। আর কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে উপস্থাপনা তুলে ধরেন জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো মোহাম্মদ গোলাম নবি মজুমদার।