রাজধানীর কাকরাইল মোড় এলাকায় বাসের ধাক্কায় বাবুল ঘোষ (৬৫) নামের এক পথচারী নিহত হয়েছেন। তিনি ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকানের কর্মচারী ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহত অবস্থায় বাবুল ঘোষকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ইসলামিয়া হাসপাতাল নেওয়া হয়। সেখান থেকে রাত নয়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

উদ্ধারকারী পথচারী মো.

ফিরোজ খান প্রথম আলোকে জানান, কাকরাইল মোড় দিয়ে বাবুল ঘোষ  রাস্তা পার হচ্ছিলেন। তখন ভিক্টর পরিবহনের একটি বাস তাঁকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

মো. ফিরোজ আরও বলেন, বাস ফেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন চালককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। বাসটি পুলিশ জব্দ করে।

বাবুল ঘোষের খালাতো ভাই জগদীশ ঘোষ জানান, বাবুল ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকানে কাজ করতেন। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার গোয়ালনগর এলাকায় থাকতেন। তাঁর বাবার নাম লক্ষ্মণ ঘোষ।

ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, মৃতদেহটি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। থানা–পুলিশ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কারাবন্দী সাংবাদিকদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসকে সিপিজের চিঠি

বাংলাদেশে কারাবন্দী সাংবাদিকদের মুক্তি দিতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা অলাভজনক আন্তর্জাতিক সংগঠনটি মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে এ আহ্বান জানিয়েছে। সিপিজের ওয়েবসাইটে চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে।

১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে সিপিজের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় পরিচালক বেহ লি ইয়ি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠিটি লিখেছেন।

চিঠিতে বলা হয়, সিপিজের কাছে থাকা তথ্য-উপাত্ত অনুসারে বাংলাদেশে বর্তমানে হত্যার অভিযোগে চার সাংবাদিক কারাগারে বন্দী আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর সপক্ষে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের ঘাটতি আছে। মনে হচ্ছে, তাদের সংবাদ প্রতিবেদন ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কারণে প্রতিহিংসামূলকভাবে এসব মামলা করা হয়েছে।

সিপিজের চিঠিতে নাম উল্লেখ করা চার সাংবাদিক হলেন ফারজানা রূপা, শাকিল আহমেদ, মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত। এতে বলা হয়েছে, বারবার এই সাংবাদিকদের জামিনের আবেদন নাকচ করা হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যরা কাশিমপুর কারাগারের পরিস্থিতি নিয়ে যে ধরনের বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে বন্দীদের মানবাধিকার নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তাঁরা (বন্দী সাংবাদিকেরা) ৩৬ বর্গফুট (৩ দশমিক ৩৪ বর্গমিটার) আকারের অত্যন্ত ছোট কক্ষে বন্দী আছেন। কক্ষগুলোতে দরজার পরিবর্তে ধাতব বেষ্টনী দেওয়া। এতে তাঁদের ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে থাকতে হয়, সঙ্গে রয়েছে মশার উপদ্রব। তাঁরা কংক্রিটের মেঝেতে ঘুমান, কোনো ম্যাট্রেস নেই। কারাগার থেকে সরবরাহ করা খাবারের পরিমাণ অপর্যাপ্ত। প্রায়ই সেগুলো খাওয়ার উপযোগী থাকে না।

কারাগারের চিকিৎসাসেবা পর্যাপ্ত নয় উল্লেখ করে চিঠিতে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, কারাগারে কোনো স্থায়ী চিকিৎসক নেই, নিয়মিত পরীক্ষার সুবিধা নেই এবং পরিবার থেকে সরবরাহ করা না হলে বন্দীরা ওষুধ পান না। যাঁরা ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ এবং স্লিপ অ্যাপনিয়ার (ঘুমের সময় শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা) মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের কয়েক মাস ধরে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি।

২০২৪ সালের নভেম্বরে দ্য ডেইলি স্টারকে মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ওই সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নির্বিচার হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে এবং তাঁর সরকার তা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। অথচ গত বছর প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পরই ওই চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৯ নং অনুচ্ছেদ এবং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনেন্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত রাখার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টির উল্লেখ করে সিপিজের চিঠিতে বলা হয়, বিচারব্যবস্থা বারবারই গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা এবং দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে স্বাধীন সাংবাদিকতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার–সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা পূরণ করার জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দিয়েছে সিপিজে।

আরও পড়ুনসাংবাদিকদের নিরাপদে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার আহ্বান সিপিজের১৭ জুলাই ২০২৪

চিঠিতে মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে বলা হয়, ‘আমরা আপনাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি, যা বাংলাদেশে কারাবন্দী সব সাংবাদিককে তাঁদের পরিবারের কাছে ফেরার এবং নতুন করে কাজ শুরু করার সুযোগ দেবে।’

সিপিজে মনে করে, বাস্তব সংস্কার নিশ্চিত করার জন্য অতীতের চর্চাগুলো থেকে একেবারে বের হয়ে আসা প্রয়োজন। অতীতের দমনমূলক কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি করা যাবে না।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যখন আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, তখন সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহের অধিকারের প্রতি সম্মান রাখাটা সব রাজনৈতিক দলের জন্য জরুরি।

আরও পড়ুনঅধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে০১ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ