শিশু সোলাইমান ইসলামের বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় হয়েছে। তাই বছরের শুরুতে তার বাবা-মা স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাকে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে ভর্তি করাতে যান। কিন্তু দেখা যায়, সোলাইমানের জন্মনিবন্ধন সনদে তার নামসহ বাবা-মায়ের নাম ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। ফলে তাকে জন্মনিবন্ধন সংশোধনের প্রয়োজন পড়ে। পরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন সংশোধনের আবেদন করতে গিয়ে দেখা যায়, ২০২১ সালে জন্মনিবন্ধন করার সময় ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি অন্য কারও। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে শিশুটির পরিবার। সোলাইমান সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের পাতকুড়া গ্রামের পায়েল আহমদ ও আছমিনা আক্তার দম্পতির ছেলে। কিন্তু সোলাইমান মধ্যনগর উপজেলার বাসিন্দা হওয়ার পরও মোবাইল নম্বর সংশোধনের জন্য প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে পার্শ্ববর্তী ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করতে হয়।
এদিকে মোবাইল নম্বরটি পরিবর্তন করার পর সোলাইমানের বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধনেও তাদের নামের ভুল ধরা পড়ে। এমনকি তাদের জন্মনিবন্ধন করার সময় মোবাইল নম্বরটিও অন্যের থাকায় বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন সংশোধন করাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে গত বৃহস্পতিবার তাদের আবারও ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মোবাইল নম্বর পরিবর্তনের জন্য আবেদন করতে হয়েছে। মোবাইল নম্বর সংশোধন হলেই জন্মনিবন্ধন সংশোধনের সুযোগ মিলবে তাদের। মাস দুয়েক সময় ধরে এভাবেই ভোগান্তি পোহাতে হয় সোলাইমানের পরিবারকে। জন্মনিবন্ধন সংশোধন না হওয়ায় এখনও সে বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়নি। শুধু এ সমস্যাই নয়; অনলাইনে মধ্যনগর উপজেলার ইংরেজি নাম বিভ্রাটের কারণে পাসপোর্ট তৈরিতেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মধ্যনগরবাসীকে।
মূলত মধ্যনগর থানার প্রশাসনিক কার্যক্রম ধর্মপাশা উপজেলা থেকে পরিচালিত হতো। কিন্তু এতে করে মধ্যনগরবাসীকে প্রশাসনিক সুবিধা পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হতো। প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতেই ২০২১ সালের ২৬ জুলাই মধ্যনগরকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। তবে প্রায় চার বছর হয়ে গেলেও অধিকাংশ নাগরিক সুবিধা নেই এ উপজেলায়। এখন পর্যন্ত উপজেলার প্রশাসনিক কাঠামোও তৈরি হয়নি। তবে ইউএনও পদায়নের মাধ্যমে শুধু দাপ্তরিক কার্যক্রম চালু রয়েছে। এতে কিছু ভোগান্তি অনেকাংশে কমলেও জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সংশোধন কার্যক্রম ধর্মপাশা থেকে সম্পন্ন করা হচ্ছে। ধর্মপাশা উপজেলা সদর থেকে মধ্যনগর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন হাওরবেষ্টিত, অনুন্নত যোগাযোগ এবং দূরবর্তী হওয়ায় জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন সংশোধন সেবা পেতে মধ্যনগরবাসীকে সময় ও অর্থ অপচয় করতে হচ্ছে। তাই মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নামে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইডি তৈরি এবং মধ্যনগর থেকেই এ সেবা প্রাপ্তির দাবি তুলেছেন মধ্যনগরবাসী।
ধর্মপাশা থেকে মধ্যনগর উপজেলার জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রম আলাদা করার জন্য মধ্যনগরবাসীর পক্ষ থেকে সদর ইউনিয়নের গলইখালী গ্রামের অসীম সরকার গত বৃহস্পতিবার বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, জন্মনিবন্ধন সার্ভারে মধ্যনগর উপজেলার নাম বা অপশন না থাকায় নতুন জন্মনিবন্ধনে উপজেলা হিসেবে ধর্মপাশা লিপিবদ্ধ হচ্ছে; যা ভবিষ্যতের জন্য ভোগান্তি ও ক্ষতির কারণ। জন্মনিবন্ধন সংশোধন করতে গিয়ে এ উপজেলাবাসীকে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। আমরা এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই। তিনি পাসপোর্ট ও ডাকঘরের সার্ভারেও মধ্যনগরের ইংরেজি নাম সংশোধন করার দাবি জানান।
ধর্মপাশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জনি রায় বলেন, কেউ আবেদন করলে তা অনলাইনেই পেয়ে যাই। উপযুক্ত কাগজপত্রাদি থাকলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই সংশোধন করে দেওয়া হয়। বয়স সংশোধনের ব্যাপারে উপযুক্ত প্রমাণাদি না পাওয়া পর্যন্ত কিছুটা দেরি হয়।
মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল রায় বলেন, মধ্যনগর উপজেলা নাগরিকদের এ জন্য চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রায় ৭ মাস আগে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলকে ধর্মপাশা উপজেলা থেকে মধ্যনগর উপজেলার জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন কার্যক্রম পৃথক্করণের জন্য দাপ্তরিকভাবে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এটি বাস্তবায়িত হয়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উপজ ল কর মকর ত র জন ম র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গুয়ার হাওরে গাঁজা সেবন ও বিশৃঙ্খলা করায় ৫ পর্যটককে কারাদণ্ড
সুনামগঞ্জে টাঙ্গুয়ায় হাওরে ঘুরতে এসে গাঁজা সেবন করে বিশৃঙ্খল আচরণ করার অভিযোগে পাঁচ পর্যটককে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
বুধবার (২৫ জুন) রাতে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর এলাকায় হাওর থেকে ওই পর্যটকদেরকে আটক করা হয়।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, মধ্যনগর এলাকায় টাঙ্গুয়ার হাওরে একটি পর্যটকবাহী হাউজবোটে গাঁজা সেবন করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করছেন কিছু পর্যটক, এ খবর পেয়ে মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। এ সময় পাঁচ পর্যটককে আটক করা হয়। পরে মাদক সেবন ও সংরক্ষণের দায়ে তাদেরকে ৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ টাকা অর্থদণ্ড দেন নির্বাহী মাজিস্ট্রেট ও মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল রায়।
দণ্ডিতরা হলেন—ইশাক হোসেন শান্ত, আনাফ রাজিন, আহমেদ মাহফুজ, নাসির হোসাইন এবং তাহসিন আহমেদ।
মধ্যনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জ্বল রায় বলেছেন, হাওরে ঘুরতে এসে গাঁজা সেবন করে বিশৃঙ্খলা করায় পাঁচ পর্যটককে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। হাওর ভ্রমণকালে কেউ আইন লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা/মনোয়ার/রফিক