জাতীয় পার্টি কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয়: জি এম কাদের
Published: 10th, May 2025 GMT
জাতীয় পার্টি কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘যদি গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে প্রশ্ন আসে, একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক গণহত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দায়ী সংগঠনগুলোর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে। কারণ, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গণহত্যা হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়।’
জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করছে বা করতে চায়, এমন কোনো দলকে আমরা নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। আওয়ামী লীগ সরকার যখন জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছে, আমরা তার প্রতিবাদ করেছি।’
আজ শনিবার জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় জি এম কাদের এ কথা বলেন।
জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ ও সমর্থন ছিল বলে আবারও উল্লেখ করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুরে জাতীয় পার্টির দুজন নেতা শহীদ হয়েছেন। আক্ষেপ প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আন্দোলনে আমাদের অবদান শুধু অস্বীকার করাই হচ্ছে না, ছাত্র হত্যার মামলায় অন্যায়ভাবে আমাদের আসামিও করা হচ্ছে।’
জাতীয় পার্টি নির্বাচনে গিয়ে আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিয়েছে, এমন অভিযোগ খণ্ডন করে জি এম কাদের বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির প্রায় ২৭০ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। বিভিন্নভাবে তাঁকে নির্বাচনে থাকতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি। তিনি বলেন, বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে না গেলেও ওই বছর স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে গিয়েছিল। তাহলে ২০১৪ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপিসহ অন্য দলগুলো কী আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দেয়নি, এমন প্রশ্ন তুলেন তিনি।
জাতীয় ছাত্র সমাজের আহ্বায়ক মারুফ ইসলামের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এম ক দ র আওয় ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
খলাপাড়ার গণহত্যা দিবস: স্বাধীনতার প্রান্তে শহীদ হন ১০৬ জন
১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা বাঙালি জাতির ইতিহাসে বেদনাবিধুর একটি দিন। এদিন, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের খলাপাড়া গ্রামের ন্যাশনাল জুট মিলস রক্তাক্ত হয়। মিলের ভেতর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী সন্দেহে আটক ১০৬ জন নিরীহ বাঙালিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
সেই থেকে প্রতিবছর ১ ডিসেম্বর শহীদদের স্মরণে কালীগঞ্জ গণহত্যা দিবস পালিত হয়ে আসছে। উপজেলা প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসমূহ শহীদদের গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। তারা দোয়া ও মোনাজাত করেন শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনায়।
আরো পড়ুন:
‘১৭ বছরে ৯৪ হাজার থেকে মুক্তিযোদ্ধা আড়াই লাখ করা হয়েছে’
১২৮ জুলাই যোদ্ধার গেজেট বাতিল
কালীগঞ্জে মুক্তিযুদ্ধের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম হুমায়ুন মাস্টার সেই দিনের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি জানান, ১৯৭১ সালের সেই সকালে মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা নাস্তার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তখনই পাশের ঘোড়াশাল ক্যাম্প থেকে নদী পার হয়ে হানাদার বাহিনী মিল চত্বরে প্রবেশ করে। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধানে অভিযান চালানোর নামে সেখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরস্ত্র বাঙালিদের ধরে ধরে জড়ো করে।
সকাল থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে চলে ব্রাশফায়ার। প্রাণহীন হয়ে পড়ে একের পর এক শরীর। ন্যাশনাল জুট মিলে নেমে আসে নীরবতা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গণহত্যা শেষে পাকবাহিনী মিলের দক্ষিণ পাশের দেয়াল ভেঙে পালিয়ে যায়। শহীদদের মরদেহ পড়ে ছিল মিলের সুপারি বাগানে। ভয় ও আতঙ্কে কেউ কাছে যাওয়ার সাহস পাননি। মরদেহগুলো শেয়াল-শকুনের খাদ্যে পরিণত হয়। স্বাধীনতার পর এলাকাবাসী মিল চত্বরে প্রবেশ করে বিকৃত অবস্থায় ১০৬ জন শহীদের মরদেহ উদ্ধার করেন। তারপর মিলের দক্ষিণ পাশে কবর খুঁড়ে একসঙ্গে শহীদদের সমাহিত করেন তারা।
শহীদদের স্মরণে মিল কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করেন একটি স্মৃতিস্তম্ভ ‘শহীদের স্মরণে ১৯৭১’। গণকবরের পাশেই পরবর্তীতে গড়ে ওঠে একটি পাকা মসজিদ-যেখানে প্রতিনিয়ত দেশের জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া হয়।
কালীগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এটিএম কামরুল ইসলাম বলেন, “খলাপাড়ার সেই ১০৬ শহীদের রক্তগাথা কেবল অতীত নয়-এটি জাতির কাছে এক চিরন্তন দায়বদ্ধতার স্মারক। নতুন প্রজন্মের কাছে এই ইতিহাস পৌঁছে দেওয়া আর শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতি ন্যায্য সম্মান জানানোই হোক আমাদের প্রতিদিনের অঙ্গীকার।”
ঢাকা/মাসুদ