জাতীয় পার্টি কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয় বলে জানিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, ‘যদি গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে প্রশ্ন আসে, একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক গণহত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দায়ী সংগঠনগুলোর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে। কারণ, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি গণহত্যা হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়।’

জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করছে বা করতে চায়, এমন কোনো দলকে আমরা নিষিদ্ধ করার পক্ষে নই। আওয়ামী লীগ সরকার যখন জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছে, আমরা তার প্রতিবাদ করেছি।’

আজ শনিবার জাতীয় পার্টির ছাত্রসংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় জি এম কাদের এ কথা বলেন।

জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ ও সমর্থন ছিল বলে আবারও উল্লেখ করেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুরে জাতীয় পার্টির দুজন নেতা শহীদ হয়েছেন। আক্ষেপ প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আন্দোলনে আমাদের অবদান শুধু অস্বীকার করাই হচ্ছে না, ছাত্র হত্যার মামলায় অন্যায়ভাবে আমাদের আসামিও করা হচ্ছে।’

জাতীয় পার্টি নির্বাচনে গিয়ে আওয়ামী লীগকে বৈধতা দিয়েছে, এমন অভিযোগ খণ্ডন করে জি এম কাদের বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির প্রায় ২৭০ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। বিভিন্নভাবে তাঁকে নির্বাচনে থাকতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি। তিনি বলেন, বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে না গেলেও ওই বছর স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল নির্বাচনে গিয়েছিল। তাহলে ২০১৪ সালের স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপিসহ অন্য দলগুলো কী আওয়ামী লীগ সরকারকে বৈধতা দেয়নি, এমন প্রশ্ন তুলেন তিনি।

জাতীয় ছাত্র সমাজের আহ্বায়ক মারুফ ইসলামের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মো.

আরিফ আলীর পরিচালনায় মতবিনিময় অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হকও বক্তব্য দেন। এ সময় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এম ক দ র আওয় ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সিআইএর গোপন অভিযান: ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়ালে পরিণতি কী হবে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বুধবার নিশ্চিত করেছেন, তিনি মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর অনুমোদন দিয়েছেন।

প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস প্রথম এ নির্দেশ দেওয়া নিয়ে খবর প্রকাশ করেছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের মূল লক্ষ্য হলো, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করা।

ট্রাম্প আরও বলেন, তাঁর প্রশাসন ভেনেজুয়েলায় স্থল হামলার পরিকল্পনার কথা ভাবছে। সম্প্রতি ক্যারিবীয় সাগরে ভেনেজুয়েলার জাহাজে একাধিক মার্কিন হামলা এবং এ অঞ্চলে সেনা মোতায়েন করার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা দ্রুত বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট মাদুরো বুধবার রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং আরও উত্তেজনা বাড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর মাদুরো বলেন, ‘আমরা এমন কোনো সরকার পরিবর্তন চাই না; যা আফগানিস্তান, ইরাক বা লিবিয়ার ব্যর্থ যুদ্ধের মতো হতে পারে। সিআইএ পরিচালিত অভ্যুত্থানও আমরা চাই না। লাতিন আমেরিকা এসব চায় না, এসবের প্রয়োজন নেই এবং এসব প্রত্যাখ্যানও করে।’

তাহলে ট্রাম্প প্রকৃতপক্ষে কী পরিকল্পনা করছেন? তাঁর পদক্ষেপগুলো কি আইনসংগত? ভেনেজুয়েলা কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে? লাতিন আমেরিকায় গোপন সিআইএ অভিযান কেমন হতে পারে, সে সম্পর্কে ইতিহাস কী বলে—এমন নানা প্রশ্ন ও বিষয় সামনে আসছে।

ট্রাম্প কী ঘোষণা করেছেন

একজন সাংবাদিক হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কেন সিআইএকে ভেনেজুয়েলায় যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন?’

‘আসলে আমি দুই কারণে অনুমোদন দিয়েছি’, ট্রাম্প বলেন। ‘প্রথমত, তারা (ভেনেজুয়েলা) তাদের কারাগারগুলো খালি করে বন্দীদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে। আরেকটি কারণ, মাদক। ভেনেজুয়েলা থেকে অনেক মাদক যুক্তরাষ্ট্রে আসছে, বেশির ভাগই সাগরপথে। এটা আপনারা লক্ষ্য করেছেন, কিন্তু আমরা স্থলপথে সেটাও রোধ করতে যাচ্ছি।’

সাংবাদিকেরা যখন জানতে চান, মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার অনুমতি সিআইএর আছে কি না; ট্রাম্প এর স্পষ্ট উত্তর দেননি। তিনি সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা পুরোপুরি অস্বীকারও করেননি।

‘ওহ, আমি এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না…এটা আমাকে জিজ্ঞাসা করা উপহাসের…এটা বিদ্রূপাত্মক প্রশ্ন তা নয়, কিন্তু উত্তর দেওয়া হাস্যকর হতে পারে। তবে আমি মনে করি, ভেনেজুয়েলা এখন চাপ অনুভব করছে’, ট্রাম্প বলেন।

সাংবাদিকেরা যখন জানতে চান, সিআইএর মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করার অনুমতি আছে কি না; ট্রাম্প সরাসরি উত্তর দেননি। তিনি সরকার পরিবর্তনের সম্ভাবনা পুরোপুরি অস্বীকারও করেননি।

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে কোন অভিযান চালিয়েছে

যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার জলসীমায় অন্তত পাঁচবার জাহাজে হামলা চালিয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, ওই জাহাজগুলোতে মাদক পরিবহন করা হচ্ছিল। হামলায় মোট ২৭ জন নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ হামলা মঙ্গলবার ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প তাঁর নিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার কর্তৃত্বের অধীন, আজ সকালে সেক্রেটারি অব ওয়ার ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে ইউএসসাউথকম এলাকায় মাদক পাচারে লিপ্ত একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠনের (ডিটিও) জাহাজে মারাত্মক হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, জাহাজে থাকা ছয় ‘পুরুষ মাদক সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছেন।

ভেনেজুয়েলার জাহাজে প্রথম মার্কিন হামলা হয়েছিল গত ২ সেপ্টেম্বর। এতে ১১ জন নিহত হন। পরে ১৫ ও ১৯ সেপ্টেম্বর আরও দুটি হামলা হয়। হামলায় তিনজন করে নিহত হন। চতুর্থ হামলা হয় ৩ অক্টোবর; যেখানে চারজন নিহত হন বলে জানান মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।

আসলে আমি দুই কারণে অনুমোদন দিয়েছি। প্রথমত, তারা (ভেনেজুয়েলা) তাদের কারাগারগুলো খালি করে বন্দীদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে। আরেকটি কারণ, মাদক। ভেনেজুয়েলা থেকে অনেক মাদক যুক্তরাষ্ট্রে আসছে, বেশির ভাগই সাগরপথে। কিন্তু আমরা স্থলপথে সেটাও রোধ করতে যাচ্ছি।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

তবে এ পর্যন্ত ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন কোনো প্রমাণ দেয়নি, জাহাজগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে মাদক পাঠানো হচ্ছিল।

প্রেসিডেন্ট কি কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া গোপন বা সামরিক অভিযান চালাতে পারেন

বিশেষজ্ঞরা আগে আল-জাজিরাকে বলেছেন, ভেনেজুয়েলার জাহাজে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা সম্ভবত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং তা মার্কিন সংবিধানের বিরোধী।

ভেনেজুয়েলায় কোনো স্থল অভিযান চালালে, সেটা সিআইএ বা মার্কিন সেনা যে–ই করুক; প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আইনগত ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য সমুদ্রপথে হামলার চেয়ে কঠিন হবে।

নেদারল্যান্ডসের লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সালভাদর সান্তিনো রেগিলমে গত মাসে আল-জাজিরাকে বলেছেন, সমুদ্রে প্রাণঘাতী অভিযান চালিয়ে কারও জীবন নেওয়ার আগে তাঁর বাঁচার অধিকারকে স্বীকার করতে হবে। সেনারা শুধু তখন শক্তি ব্যবহার করবেন, যখন তা সত্যি দরকার এবং ঠিক যতটুকু দরকার, ততটুকুই ব্যবহার করতে হবে।

রেগিলমে বলেন, ‘সমুদ্র আইনসংক্রান্ত জাতিসংঘ সনদ (ইউএনক্লস) ও ১৯৮৮ সালের জাতিসংঘ মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ সনদ জাহাজ হঠাৎ ধ্বংস করা নয়; বরং সামুদ্রিক কাজে সহযোগিতা করা, জাহাজে অভিযান ও সম্মতি নেওয়ার পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দেয়। কোনো অভিযানে সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারী নিহত হলে সঙ্গে সঙ্গে তার স্বাধীন ও স্বচ্ছভাবে তদন্ত করা উচিত।

আরও পড়ুনভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান চালাতে সিআইএকে অনুমোদন দিয়েছেন ট্রাম্প১৬ অক্টোবর ২০২৫ভেনেজুয়েলায় সম্ভাব্য মার্কিন হামলা মোকাবিলায় দেশটির নাগরিকেরা অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ