ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজ তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের (ট্রেক নম্বর-০৮১) পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের নামে সম্পত্তি (গুলশানের বাড়ি) বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ এবং এ কাজে ওবায়দুর রহমান নামে এক ব্যক্তির যোগসাজস তদন্ত করে খতিয়ে দেখার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গুলশানের জমি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ রোধ করতে বিএসইসির পক্ষ থেকে দুদককে এ অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট অ্যান্ড ইন্টারমিডিয়ারিজ অ্যাফেয়ার্স ডিভিশন থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দুদকে পাঠানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

পুঁজিবাজার চাঙা করতে বাজেটে থাকছে একগুচ্ছ প্রণোদনা

পুঁজিবাজার পরিস্থিতি উন্নয়নে প্রধান উপদেষ্টার ৫ নির্দেশনা

দুদকে পাঠানো বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের বিনিয়োগকারীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মতিঝিল পুলিশ স্টেশনে একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করে। পরবর্তীতে, মতিঝিল পুলিশ স্টেশন ডায়েরি দুদকে প্রেরণ করে। এ প্রেক্ষিতে, দুর্নীতি দমন কমিশন প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.

হারুনুর রশীদ ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে একটি জি আর মামলা করে (মামলা নম্বর-৫৩/২০২৩)।

সম্প্রতি, তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা চলতি বছরের ২৭ মার্চ চিঠির মাধ্যমে কমিশনকে অবহিত করে, এই ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির পরিচালনা পর্যদের সদস্যদের নামে সম্পত্তি (গুলশানের বাড়ি) বিক্রির অর্থ মালিকপক্ষ আত্মসাৎ করেছেন এবং এ অর্থ আত্মসাতের ব্যাপারে ওবায়দুর রহমান সহায়তা করেছেন।এর পরিপ্রেক্ষিতে এই ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা বিষয়টি তদন্তের অনুরোধ করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পাওনা ফেরতের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন, যা চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্যদের সদস্যরা উক্ত সম্পত্তি (গুলশানের বাড়ি) বিক্রয় করে বিক্রয়লব্ধ অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিতরণ করবে বলে তাদের মধ্যে সম্পাদিত একটি চুক্তিপত্র কমিশনে দাখিল করা হয়েছে।এমতাবস্থায়, উপযুক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের পাওনা ফেরতের নিমিত্ত এই ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির পরিচালনা পর্যদের সদস্যদের নামে সম্পত্তি বিক্রির অর্থ মালিকপক্ষের আত্মসাৎ ও ওবায়দুর রহমান নামে এক ব্যক্তির সহায়তার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হলো।

এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তামহা সিকিউরিটিজের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যদের নামে সম্পত্তি (লালমাটিয়ার জমি-বাড়িসহ অন্যান্য স্থাবর ও অস্থাবর) পুনরায় অবরুদ্ধ করতে দুদককে অনুরোধ করেছিল বিএসইসি।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে বিষয়ে সচেষ্ট রয়েছে বিএসইসি। তাই বিনিয়োগকারীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্তদের পাওনা ফেরত পেতে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্যদের সদস্যদের নামে সম্পত্তি বিক্রির অর্থ আত্মসাৎ রোধ করা এবং এ কাজে সহযোগিতাকারীর বিষয়টি তদন্ত করে খতিয়ে দেখার জন্য দুদককে অনুরোধ জানানো হয়েছে।”

তামহা সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে অভিযোগ
২০২১ সালে তামহা সিকিউরিটিজ অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে বিনিয়োগকারীর ৮৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ডুপ্লিকেট সফটওয়্যার ব্যবহার করে বিনিয়োগকারীদের সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ব্রোকারেজ হাউজটি দুইটি ব্যাক অফিস সফটওয়্যার ব্যবহার করে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ করেছে।এর মধ্যে একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের মিথ্যা ও ভুয়া বিবরণী ও পোর্টফোলিও স্টেটমেন্ট প্রদান করা হতো। হাউজটিতে গ্রহকদের মোট ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে গ্রাহকের সমন্বিত হিসাবে ঘাটতি ৯২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ও শেয়ারের বাজার মূল্যের ঘাটতি ৪৭ কোটি ১১ লাখ টাকা।

ওই বছরের ৯ ডিসেম্বর বিএসইসি ওই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন স্থগিত করে দেয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি তামহা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. হারুনুর রশিদ ও তার সহযোগীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

এদিকে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের দায়ে পুঁজিবাজারে শেয়ার লেনদেন ও ডিপোজিটরি পার্টিসিপেন্ট (ডিপি) স্থগিত হওয়া ব্রোকার হাউজ তামহা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

দুদকের অনুসন্ধানে উঠে আসে, ব্রোকারেজ হাউজটির একটি সফটওয়্যারে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের প্রকৃত হিসাব রাখা হতো, যা সিডিবিএলের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। ব্যাক অফিস সফটওয়্যারটি সিডিবিএলের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল না। এ ব্যাক অফিস সফটওয়্যারটি বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন-তামহা সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ, পরিচালক জাহানারা পারভীন ও ড. শাহনাজ বেগম, চারজন অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ (আব্দুর রহমান তালাল, সাঈদ চৌধুরী, মো. দেলোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান), অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. গোলাম রসুল, শেরাটন শাখার ইনচার্জ ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ এএম আলমগীর কবীর, শেরাটন শাখার ম্যানেজার ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. ওয়ারিছ উদ্দিন, অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. ফায়েজুর রহমান, সেটলমেন্ট অফিসার (সিডিবিএল অফিসার) ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ মো. শাহরিয়ার কবীর, অ্যাকাউন্টস এক্সিকিউটিভ ও অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ জি এম আজাদ হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের গাড়িচালক মো. মামুন হোসেন ও অফিস সহকারী মো. হাসান।

তামহা সিকিউরিটিজ ২০০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) নিবন্ধিত হয়।

ঢাকা/এনটি/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ও অথর ইজড র প র জ ন ট ট ভ অথর ইজড র প র জ ন ট ট ভ ম র পর প র ক ষ ত সফটওয় য র দ র রহম ন ব এসইস র কর ছ ন ন র পর তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিনিয়োগকারীদের সচেতনতায় নির্দেশিত প্রোগ্রাম প্রচারের অনুরোধ
  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
  • ২২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দেবে বিএসইসি
  • পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
  • বিএসইসির তদন্তের মুখে ভ্যানগার্ড ও ক্যাপিটেক অ্যাসেট
  • বেসরকারি সংস্থায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ