বিন্দুমাত্র কালক্ষেপ না করে ‘অপারেশন সিঁদুর’–এর সাফল্যে উৎফুল্ল বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ময়দানে নেমে পড়ল। আজ মঙ্গলবার থেকেই দেশজুড়ে তারা শুরু করে দিচ্ছে ‘তেরঙা–যাত্রা’। মোট ১১ দিন বিভিন্ন রাজ্যে এ যাত্রার মধ্য দিয়ে তারা তুলে ধরবে সেনানিদের বিজয় গাথা।

গতকাল সোমবার বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব দিল্লিতে এক বৈঠকে এ রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সেই বৈঠকে অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা, রাজনাথ সিংসহ উপস্থিত ছিলেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব।

যদিও বিজেপির দাবি, রাজনৈতিক স্বার্থে তারা এ যাত্রায় শামিল হচ্ছে না। তেরঙা–যাত্রায় তাদের হাতে থাকবে দেশের জাতীয় পতাকা। যাত্রায় তারা তুলে ধরবে দেশের বীর সেনানিদের সাফল্যের কাহিনি। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বিভিন্ন মহলে যে ‘অপপ্রচার’ চলছে, এ যাত্রায় তার জবাব দেওয়া হবে। তুলে ধরা হবে ‘প্রকৃত সত্য’।

বিজেপির নেতারা বলেছেন, এ অভিযানের সাফল্য জাতিকে গর্বিত করেছে। সেই সাফল্যের ইতিবৃত্তই এ যাত্রায় তুলে ধরা হবে। বলা হবে, ঐক্যবদ্ধ ভারত কী করতে পারে। এ যাত্রার উদ্দেশ্য দেশপ্রেমে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা।

বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র প্রেম শুক্লা গণমাধ্যমকে বলেছেন, মঙ্গলবার (আজ) শুরু হয়ে এ যাত্রা শেষ হবে ২৩ মে। মোট ১১ দিনের এ যাত্রায় দেশবাসীকে বোঝানো হবে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের হাতে দেশের নিরাপত্তা কতটা সুরক্ষিত। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্ব কীভাবে দেশকে একজোট করে শত্রুর মোকাবিলায় সক্ষম হয়, দেশবাসীকে তা–ও বোঝানো হবে।

মাত্র চার দিনের মধ্যে ‘অপারেশন সিঁদুর’ স্থগিত হয়ে যাওয়া, যুদ্ধবিরতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা, বাণিজ্য স্বার্থে প্রত্যাঘাত বন্ধে রাজি হওয়া, কাশ্মীর সমস্যার আন্তর্জাতিকীকরণ, সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার দাবি ও প্রচেষ্টা নিয়ে মোদি সরকারকে নানা প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে। এ যাত্রায় বিজেপি নেতৃত্ব সেসব প্রচার ও প্রশ্নের উত্তর দেবে।

যদিও বিজেপির দাবি, রাজনৈতিক স্বার্থে তারা এ যাত্রায় শামিল হচ্ছে না। তেরঙা–যাত্রায় তাদের হাতে থাকবে দেশের জাতীয় পতাকা। এ যাত্রায় তারা তুলে ধরবে দেশের বীর সেনানিদের সাফল্যের কাহিনি। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে বিভিন্ন মহলে যে ‘অপপ্রচার’ চলছে, এ যাত্রায় তার জবাব দেওয়া হবে। তুলে ধরা হবে ‘প্রকৃত সত্য’।

প্রধানমন্ত্রী মোদি গতকাল সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে যা বলেছেন, যে সাফল্য দাবি করেছেন, এ যাত্রায় সেই সাফল্যই বর্ণিত হবে। বিরোধীদের সংগঠিত হওয়ার আগেই বিজেপি ময়দানে নেমে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

‘অপারেশন সিঁদুর’এর ‘সাফল্য’ বিজেপি নিশ্চিতভাবে কাজে লাগাবে বিহার নির্বাচনে। চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী আরও একবার বিহার সফরে যাবেন। বর্ষ শেষে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে জাতগণনার পাশাপাশি ‘অপারেশন সিঁদুর’ এর সাফল্য হতে চলেছে বিজেপির তুরুপের দুই তাস।

আরও পড়ুনপাকিস্তানে ভারতের অভিযানের নাম ‘অপারেশন সিঁদুর’ কেন০৭ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক স ফল য র র স ফল য

এছাড়াও পড়ুন:

কলাপাড়ায় আধিপত্য বিস্তারের জেরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-আগুন, আহত ৩    

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় একটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের মরিচবুনিয়া জেটি ঘাটে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর নাম শাহীন মৃধা। তিনি ধানখালী ইউনিয়নে আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরএনপিএল) নামের নির্মাণাধীন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহসহ বিভিন্ন মালামাল সরবরাহ করে আসছিলেন। সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম (মহসিন) ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রে মালামাল সরবরাহের একটি কাজ পেয়েছেন।

শাহীন মৃধার অভিযোগ, আমিনুলের লোকজন তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি তাঁর একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে তাঁর কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হামলায় স্থানীয় বাসিন্দা দোলন মৃধা (৩৫), মিরাজ হোসেন (৩৭) ও তাঁর গাড়িচালক রানা (৩২) আহত হয়েছেন।

তবে অভিযুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আমিনুল ইসলাম বলছেন, শাহীন মৃধা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিক সরবরাহে বাধা দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অনেক অভিযোগ আছে। তিনি আজকের হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শতাধিক মোটরসাইকেলে একদল যুবক ধানখালীর মরিচবুনিয়া এলাকায় যান। তাঁরা শাহীন মৃধার শ্রমিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়, তাঁর বসবাসের একটি ঘর ও শ্রমিকদের বসবাসের ছাউনিতে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনে ঘরে থাকা শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটরসহ আসবাব পুড়ে যায়।

খবর পেয়ে কলাপাড়া উপজেলা সদর থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আগুন নেভানোর জন্য রওনা হলে পথে ছয় লেন সড়ক এলাকায় একদল লোক আটকে দেয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে গেলে লোকজন সরে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

কলাপাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা আগুন লাগার খবর শুনে ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলাম। পথে কিছু লোক বাধা দিয়েছিল। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের আসতে দেখে সেসব লোক সটকে পড়ে। এরপর আমরা ঘটনাস্থলে যাই এবং আগুন নেভানোর কাজে অংশ নিই।’

ব্যবসায়ী শাহীন মৃধা অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার ইন্ধনে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসী যুবকেরা লাঠিসোঁটা, দেশি অস্ত্রশস্ত্রসহ দলবল নিয়ে এসে তাঁর কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন। একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এমনকি সন্ত্রাসীরা তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িটিও ভাঙচুর করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে তালাবদ্ধ করে হামলাকারী চক্র আগুন লাগিয়ে দেয়। আমি বের হতে না পারলে পুড়ে ছাই হয়ে যেতাম। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। এমন জাহিলি কাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’

অভিযোগের বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ‘আসলে শাহীন মৃধা আওয়ামী লীগের লোক। তাঁর সঙ্গে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিববুরের সুসম্পর্ক ছিল। সে নিজে বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। এলাকার লোকজন এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সব সময় অভিযোগ করে আসছে। আমি আরএনপিএল নামের নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে মালামাল সরবরাহের কার্যাদেশ পেয়েছি। এতে শাহীন মৃধা ক্ষুব্ধ হয়ে আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। এমনকি আমার শ্রমিকদের মালামাল সরবরাহে বাধা দিয়েছে। এসব নিয়ে শাহীন মৃধার বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছি।’ তিনি বলেন, তিনি এলাকায় থাকেন না। ঢাকায় বসবাস করেন। এখন এলাকায় যে ঘটনা ঘটেছে, তার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তিনি জানেন না। তাঁকে নিয়ে কোনো কথা বলে থাকলে তা উদ্দেশ্যমূলক। তিনি ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন।

কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটির পাশের স্থাপনায় চিহ্নিত একদল সন্ত্রাসী হামলা ও নাশকতা চালায়। বর্তমানে সেখানকার আগুন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ