কীভাবে জীবন সহজ করছে অনলাইনে কেনাকাটা
Published: 13th, May 2025 GMT
শপিং করতে সবারই ভালো লাগে। তা যদি ঘরে বসে করা যায়, তাহলে তো কথাই নেই। সময় বাঁচে, ঝামেলাও কম– এ কারণে বাংলাদেশে অনলাইন শপিংয়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তবে অনলাইন শপিংয়ে ক্রেতারা ঠিক কী চান? কোন বিষয়গুলো তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ? সম্প্রতি এমন কিছু প্রশ্নের উত্তর মিলেছে গবেষণায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড.
ক্রেতা সন্তুষ্টির ছয় বিষয়
গবেষণায় উঠে এসেছে ক্রেতা সন্তুষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি বিষয়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো হাতের নাগালে থাকা দাম। এরপর সহজ ওয়েবসাইট বা অ্যাপ্লিকেশন। দ্রুত ডেলিভারি। পণ্যের গুণমানের প্রতি আস্থা এবং ফ্লেক্সিবল রিটার্ন/রিফান্ড পলিসি ও কাস্টমার সার্ভিস (কম গুরুত্বপূর্ণ)।
অধ্যাপক মুজারেবার ভাষ্য, ‘বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত হবে দাম ও বিশ্বাসযোগ্যতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা।’
গবেষণায় দেখা গেছে, একদিকে সহজ অ্যাপ্লিকেশন ও প্রতিযোগিতামূলক দামের জন্য এগিয়ে রয়েছে ‘দারাজ’। আবার অন্যদিকে অথেন্টিক ও যাচাইযোগ্য পণ্য সরবরাহে নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম ‘রকমারি’। তবে সবদিক থেকে এগিয়ে আছে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ‘সাজগোজ লিমিটেড’। কম দামে পণ্য, দ্রুত ডেলিভারি, বিশ্বাসযোগ্যতা, সহজ অ্যাপ্লিকেশন ও ঝামেলাবিহীন রিটার্ন পলিসি নিয়ে ‘সাজগোজ’ প্রতিটি মানদণ্ডেই গ্রাহকদের মন জিতে নিয়েছে। ‘সাজগোজ’ প্রমাণ করেছে অনলাইনে ক্রেতারা কী চান, তারাই সবচেয়ে ভালো বোঝে।
সাজগোজ দ্রুত ডেলিভারিতে সর্বোচ্চ স্কোর করেছে। প্রায় ৯৩ শতাংশ ব্যবহারকারী তাদের সন্তুষ্টি জানিয়েছেন। বলেছেন, তাদের অর্ডার দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেছে।
সাজগোজের সিইও এবং কো-ফাউন্ডার নাজমুল শেখ বলেন, ‘এ গবেষণায় এমন স্বীকৃতি পেয়ে আমরা গর্বিত। আমরা চাই, অনলাইন শপিং হোক সহজ, দ্রুত ও নির্ভরযোগ্য। এ গবেষণা বলছে আমরা ঠিক পথে আছি। এটা গ্রাহকদের জন্য আমাদের আরও ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।’
২০১৩ সালে বিউটি ব্লগ হিসেবে যাত্রা শুরু করে ‘সাজগোজ’। সে সময় প্ল্যাটফর্মটিতে স্কিনকেয়ার টিপস ও পণ্যের রিভিউ শেয়ার করা হতো। এটি ধীরে ধীরে ব্র্যান্ডটির প্রতি গ্রাহকদের আস্থা তৈরি করে। পরে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে রূপ নিলে সাজগোজ অথেন্টিক ও যাচাইযোগ্য পণ্য বিক্রির ওপর জোর দেয়। তাদের পণ্য সংগ্রহ করা হয় যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, যুক্তরাজ্য ও কোরিয়ার নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারীদের কাছ থেকে। পণ্যের গুণগত মানের ক্ষেত্রে আপসহীন অবস্থানই বাজারে তাদের আলাদা করেছে।
আরও বেশি গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে ‘সাজগোজ’ নিয়েছে বহুমাধ্যমভিত্তিক বিপণন কৌশল। এর মাধ্যমে ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন, অফলাইন স্টোরে গ্রাহকদের একটি সমন্বিত সেবা দেওয়া হয়। রাজধানীর ব্যস্ত শপিংমল যমুনা ফিউচার পার্ক ও সীমান্ত সম্ভারে রয়েছে সাজগোজের স্টোর। এ কৌশলটি সাজগোজকে আরও বেশি গ্রাহকের কাছে নিয়ে গেছে। পাশাপাশি তাদের ব্র্যান্ডের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে সাহায্য করেছে।
অনলাইন রিসোর্স ও ডেটা বিশ্লেষণ প্ল্যাটফর্ম ডিমান্ডসেইজ জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী অনলাইন শপিং করেছে ২৭১ কোটি মানুষ। এ সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। এ বছর তা আরও কয়েক কোটি বাড়বে। বলা যায় প্রতিদিনই আরও বেশি গ্রাহক অনলাইন শপিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন। তাই বার্তাটি বেশ স্পষ্ট। গ্রাহক চান এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যারা তাদের সময়, অর্থ এবং বিশ্বাসের যথাযথ গুরুত্ব দেবে। যারা এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখছে, তারাই এগিয়ে থাকবে। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম ই কম র স প গ র হকদ র গ র হক র হক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও’ দাবিতে খানির কর্মসূচি
পবিত্র ঈদুল আজহার পরপরই অস্বাভাবিক হারে চালের দাম বাড়া এবং সার্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক—খানি। সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপের দাবিতে আজ সোমবার ঢাকাসহ আটটি বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন করেছে নেটওয়ার্কটির সদস্য সংগঠনগুলো।
'ভাতের পাতে স্বস্তি ফেরাও' স্লোগানে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, কৃষকের স্বার্থরক্ষা এবং রেশনিং ব্যবস্থাসহ একাধিক দাবির কথা তুলে ধরেন।
পরিকল্পনা কমিশনের সর্বশেষ (জুন ২০২৫) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের খাদ্য মূল্যস্ফীতির মধ্যে চালের একক প্রভাব প্রায় ৪০ শতাংশ। অথচ বোরো মৌসুমে উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও বাজারে কোনো স্বস্তি মিলছে না।
ময়মনসিংহের ফুলপুরে থানার সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে কৃষক জহর আলী বলেন, ‘যে ভাত আমরা ফলাই, তাই আবার চড়া দামে কিন্না খাই। আমাদের দেখার কেউ নাই?’ রিকশাচালক সিকান্দার বললেন, সারাদিনে যা আয় করি, তার অর্ধেক যায় চাল কিনতে। আমরা ৪০ টাকা কেজিতে চাল চাই।
নোয়াখালীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত কর্মসূচিতে খানির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম মাসুদ বলেন, আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্যহীনতার কারণে সাধারণ মানুষ এখন মাছ, মাংস, ডাল বাদ দিয়ে কেবল ভাতনির্ভর খাদ্য গ্রহণ করছে। যা দীর্ঘমেয়াদে পুষ্টিহীনতা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।
জাতিসংঘ খাদ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, দেশের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে এবং প্রতি ১০ জনে ৩ জন প্রয়োজনীয় খাদ্য সংস্থান করতে পারছেন না। নিম্ন আয়ের মানুষের ক্ষেত্রে এই হার ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।
সংগঠনটি সংকট উত্তরণে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করে। দাবিগুলো হলো- কৃষকের কাছ থেকে সরকারের সরাসরি চাল ক্রয়ের আওতা বৃদ্ধি, দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু; ক্ষুদ্র কৃষকের স্বার্থ রক্ষায় বাজার, উৎপাদন ও ভোগক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগ; টিসিবি ও ওএমএস কর্মসূচির আওতা বাড়িয়ে প্রয়োজনভিত্তিক সহায়তা সিন্ডিকেট রোধ ও কার্যকর বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা।
বরিশালের অশ্বিনী কুমার টাউন হলে আয়োজিত মানববন্ধনে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সম্পাদক রণজিৎ দত্ত বলেন, মিল পর্যায়ে খরচ বৃদ্ধি, ধানের দামে অস্থিরতা, মজুতদারির অপচেষ্টা ও বাজার নজরদারির ঘাটতির কারণে চালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। এতে কৃষক ন্যায্য দাম পাচ্ছে না, আবার ভোক্তা কিনছেন অতিরিক্ত দামে।
তিনি বলেন, খাদ্যে ব্যয় কমিয়ে এনে মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পুষ্টিহীনতায় না পড়ে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, সরকার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে চালের বাজার স্থিতিশীল করবে এবং দেশের সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।